মধ্যপ্রাচ্যে কয়েক দিন ধরে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্য যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধের প্রভাব অনলাইন ও সাইবার দুনিয়াতেও প্রভাব ফেলেছে। ইসরায়েল ইরানের একাধিক সামরিক ও পারমাণবিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানোর পর থেকেই ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সাইবার যুদ্ধ চালাচ্ছে দুই দেশের হ্যাকাররা।
ইসরায়েলে সাইবার হামলা১৩ জুন ইরানের বিরুদ্ধে বোমা হামলা শুরু করার পর থেকে ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে সাইবার হামলা প্রায় ৭০০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলভিত্তিক সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা র্যাডওয়্যার। দ্য জেরুজালেম পোস্টের তথ্যমতে, ইসরায়েলি অবকাঠামোর নেটওয়ার্ক লক্ষ্য করে আক্রমণ বেড়েছে। ইরানপন্থী হ্যাকার গোষ্ঠীর প্রতিশোধমূলক অভিযান পরিচালনা করছে বলে ইসরায়েল অভিযোগ করেছে। ডিডিওএস আক্রমণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে অনুপ্রবেশের প্রচেষ্টা চলছে। ডেটা চুরি ও ম্যালওয়্যার আক্রমণ বেড়েছে।
ইসরায়েলের টেলিযোগাযোগব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে সাইবার হামলার ঘটনা ঘটেছে। ইরান–সমর্থিত হান্ডালা হ্যাকার গ্রুপ ইসরায়েলের একটি মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্কে হামলা চালিয়ে গ্রাহকদের কাছে বিশাল ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভুয়া সতর্কীকরণ বার্তা পাঠিয়েছে। শুধু তা–ই নয়, ইসরায়েলি হোম ফ্রন্ট কমান্ডের ছদ্মবেশে আতঙ্কজনক বিভিন্ন বার্তাও পাঠাচ্ছে তারা।
হান্ডালা হ্যাকার গ্রুপ ১৬ জুন ইসরায়েলের বৃহত্তম জ্বালানি সংস্থা ডেলেক ও নির্মাণ সংস্থা ওয়াইজিনিউ ইদানসহ বেশ কয়েকটি ইসরায়েলি সংস্থা থেকে দুই টেরাবাইটের বেশি তথ্য চুরি করেছে বলে জানা গেছে।
ইরানে সাইবার হামলাইরানে সাইবার হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের প্রেডেটরি স্প্যারো হ্যাকিং গ্রুপ ইরানের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ নোবিটেক্স থেকে প্রায় ৯ কোটি ডলারের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা চুরি করেছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ইরানের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক সেপাহর তথ্য ধ্বংসের তথ্যও প্রকাশ করেছে তারা। হ্যাকার দলটির দাবি, ব্যাংকটি ইরানের সামরিক বাহিনীকে অর্থায়নে সহায়তা করছে। হ্যাকিংয়ের কারণে ব্যাংকের ওয়েবসাইট অফলাইন হয়ে যায়। ব্যাংকটির লন্ডনভিত্তিক সহযোগী প্রতিষ্ঠান ব্যাংক সেপাহ ইন্টারন্যাশনাল পিএলসি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য প্রকাশ করেনি।
ইরানের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন টিভি স্টেশনকে লক্ষ্য করেও সাইবার হামলা চালানো হয়েছে। এই সাইবার হামলায় হ্যাকাররা ইরান সরকারের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে বিদ্রোহ করার আহ্বান জানিয়ে ভিডিও সম্প্রচার করেছে। তবে এই সাইবার হামলার দায় কোনো হ্যাকার দল স্বীকার করেনি।
হোয়াটসঅ্যাপের বার্তার মাধ্যমে তথ্য প্রকাশের ভয়ে ইরান সরকার তার নাগরিকদের হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার না করার জন্য সতর্ক করেছে। তবে হোয়াটসঅ্যাপের মালিকানাধীন মেটার এক মুখপাত্র এই দাবিকে মিথ্যা বলে অভিহিত করেন। ইরান সরকার এরই মধ্যে ইসরায়েল–সংশ্লিষ্ট সাইবার আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় নিজের সীমান্তের মধ্যে ইন্টারনেট বন্ধ বা নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানা গেছে। ক্লাউডফ্লেয়ার ও নেটব্লকসের ইন্টারনেট পর্যবেক্ষকদের তথ্যমতে, রাতের বেলা ইরানে ইন্টারনেট ট্রাফিক হঠাৎ কমে যায়। প্রায় শূন্যের কাছাকাছি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেখা যায়। ক্লাউডফ্লেয়ার তেহরানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম খবরঅনলাইন নিউজ এজেন্সির একটি টেলিগ্রাম পোস্ট উদ্ধৃত করে জানায়, ইরানের যোগাযোগ মন্ত্রণালয় শত্রুদের অপব্যবহার রোধ করার জন্য ইন্টারনেট অ্যাকসেস সাময়িকভাবে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।
সূত্র: সিএনএন, রয়টার্স, দ্য রেজিস্টার, নিউআরব, রেডস্কাইঅ্যালায়েন্স, এসসিওয়ার্ল্ড ও এসইসিঅ্যালায়েন্স
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বনানীতে গুলিবিদ্ধ সেই হাসপাতালকর্মীর মৃত্যু
রাজধানীর বনানীতে গুলিতে আহত হওয়া বক্ষব্যাধি হাসপাতালের এক সাবেক কর্মী চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা গেছেন। সোমবার রাত সোয়া ১০টার দিকে তিনি মারা যান।
নিহত জামান হোসেন (৪০) বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ছিলেন এবং একসময় চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংগঠনের (অফিস ক্লাব) সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
জামান হোসেনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সোমবার রাত সোয়া ১০টার দিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি বনানী থানা-পুলিশকে জানানো হয়েছে।
জামানের বড় ভাই সালাউদ্দিন জানান, গত শুক্রবার রাত সোয়া আটটার দিকে বনানী থানাধীন বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির অফিস ক্লাবের সামনে চা খেতে যান জামান। এ সময় হঠাৎ মুখোশধারী দুই দুর্বৃত্ত দূর থেকে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়।
জামানের ডান চোখের পাশে গুলি লাগে। পরে আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
নিহত জামান হোসেন মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারে থাকতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলায়।