Prothomalo:
2025-11-04@14:10:03 GMT

মায়াপাশে বাঁধা প্রাণ

Published: 21st, June 2025 GMT

বাংলা সাহিত্যে নির্মলেন্দু গুণ এক প্রথিতযশা নাম—একজন কবি, যিনি তাঁর দ্রোহ, প্রেম ও নিসর্গ—মানবতাবাদী চেতনার জন্য আদৃত ও আলোচিত। তাঁর কবিতায় যেমন থাকে তীব্র রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, তেমনি এক কোমল, কামনাময় প্রেমের সুর। এই দুই ধারা মিলে তাঁর রচনায় যে আবেগময় ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূগোল নির্মিত হয়, তার সবচেয়ে নিরাভরণ ও আত্মবিকীর্ণ প্রকাশ আমরা দেখি তাঁর কাব্যোপন্যাস আই লাভ ইউতে।

বইটির কেন্দ্রীয় চরিত্র কৌশিকী রায়। তিনি কি বাস্তব জীবনের কেউ, নাকি কেবল কবির কল্পনায় নির্মিত প্রেমমূর্তি—এ প্রশ্ন পাঠকের কাছে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে যখন বোঝা যায়, কৌশিকী আসলে এক চিরপ্রার্থিত, অধরা প্রেমের প্রতীক।

বইটি গদ্য ও কবিতার সংমিশ্রণে রচিত অন্তর্জাগতিক স্বীকারোক্তি। প্রেমিক সত্তার গভীর আত্মপ্রকাশ এই রচনায় পাঠককে শুরু থেকেই এক অন্তর্লোক ভ্রমণের আহ্বান জানায়। এর ভাষা গভীরভাবে ব্যক্তিক, প্রাঞ্জল ও হৃদয়সন্ধানী। গদ্যরীতিকে কবিতার ছন্দে রূপান্তর করে গুণ পাঠকের মনে সৃষ্টি করেছেন এক অলঙ্ঘ্য কাব্যিক আবহ, যা প্রায় প্রতিটি অনুচ্ছেদে কাব্যের স্বাদ এনে দেয়।

বইয়ের কোনো কোনো অধ্যায়ে কবি যখন নিজের প্রেম ও হাহাকারের ব্যাখ্যা দেন, তখন ভাষা নয়, যেন হৃদয়ের রক্তক্ষরণ পাতায় পাতায় ঝরে পড়ে। এই কাব্যগদ্য তাই কেবল পাঠ নয়, বরং অনুভবের অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে।

এখানে প্রেম নিছক রোমান্টিক নয়, এতে রয়েছে শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক স্তরের সমান উপস্থিতি। শরীরের স্বীকারোক্তি যেমন আছে, তেমনি আছে আত্মার নিরাভরণ সমর্পণ। কৌশিকীর প্রতি ভালোবাসা কবির একান্ত ব্যক্তিগত অনুভব হয়েও তাই পাঠকের কাছে সর্বজনীন আবেগে রূপান্তরিত হয়।

নির্মলেন্দু গুণের প্রেম এখানে কেবল আবেগের বহিঃপ্রকাশ নয়; বরং তা এক গূঢ়, আত্মমগ্ন যাত্রা। কাব্যোপন্যাসটি হয়ে উঠেছে এমন এক কাব্যগদ্য যেখানে হৃদয়ের সমস্ত উত্তাপ, প্রত্যাশা, বেদনা ও অপূর্ণতা অখণ্ড প্রেমস্বরে উচ্চারিত হয়েছে। কৌশিকী কখনো দূরের তারার মতো অধরা, কখনোবা আত্মার অন্তর্গত অবিচ্ছেদ্য সত্তা।

এ গ্রন্থের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক এর ভাষা। এটি যেন কবিতা ও গদ্যের মাঝামাঝি ধূসর অঞ্চল থেকে জন্ম নেওয়া স্বর। ইংরেজি শব্দের আধিক্য বইটিকে কিছুটা কণ্টকিত করলেও সেই কাঁটা অতিক্রম করে যে ফুল পাওয়া যায় তার সুবাস সুদূরপ্রসারী।

পাঠক অনুভব করেন, এই রচনা নিছক কল্পনার সৃষ্টি নয়। বরং এতে মিশে আছে কবির ব্যক্তিগত অভিমান, হাহাকার, আকাঙ্ক্ষা ও একাকিত্ব। এটি যেন নির্মলেন্দু গুণের এক সাহিত্যিক আত্মজীবনী, যেখানে প্রেম নিজেই একটি চরিত্র হয়ে উঠেছে।

এমন প্রেম সাহিত্যে বিরল নয়, তবে নির্মলেন্দু গুণের গদ্য-ছন্দে তা নতুন মাত্রা লাভ করেছে। কারণ, এই প্রেমের মধ্যে নিহিত রয়েছে কবির কবি হয়ে ওঠার গল্প, তাঁর ভাষা ও যন্ত্রণার শরিক হয়ে ওঠার প্রক্রিয়া।

বিষয়বস্তু ও কৃৎকৌশল, টুইস্ট ও কন্ট্রাস্ট, বহুমাত্রিক বিচ্ছুরণ ও পরিমিতি বোধ, চমৎকারিত্ব ও রহস্যময়তা—নানা দিক বিবেচনায় এ উপন্যাস গুণের রচনার এক উজ্জ্বল উদাহরণ।

বইটির শেষাংশে যখন কৌশিকী বিদেশ চলে যায়, তখন প্রেমিক কবির হৃদয়ে যে হাহাকার জন্ম নেয়, তা কেবল বিচ্ছেদজনিত বেদনা নয়, বরং এক অস্তিত্বজনিত নিঃসঙ্গতা। কৌশিকীর চলে যাওয়া কবির কাছে এক অপূর্ণতার পরিণতি—একটি এমন আকাঙ্ক্ষার বিসর্জন, যার ধ্বনি দীর্ঘদিন তাঁর কবিতার তন্ত্রীতে ধ্বনিত হবে। এই হাহাকার নিঃশব্দ, অথচ তীব্র; ব্যক্তিক অথচ সর্বজনীন। পাঠক তখন উপলব্ধি করেন—এই প্রস্থান আসলে কবির হৃদয়ে এক নতুন ‘অনুপস্থিত উপস্থিতি’র জন্ম দিয়েছে।

শেষ পৃষ্ঠাগুলো তাই পাঠকের ভেতর রেখে যায় এক দীর্ঘশ্বাস, এক অপরিণত অথচ অনিবার্য বিদায়ের সুর। যে সুরে নির্মলেন্দু গুণের প্রেমিক সত্তা বলে ওঠে, ‘কেন এসেছিলে, কেন চলে গেলে, মায়াপাশে বেঁধে প্রাণ.

..।’

আই লাভ ইউ একজন প্রেমিক কবির গভীরতম নিশ্বাস, যা পাঠকের হৃদয়ে দীর্ঘ সময়জুড়ে অনুরণন তুলতে থাকবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

আই লাভ ইউ

নির্মলেন্দু গুণ

প্রকাশক: শাপলা প্রকাশন 

প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ

মূল্য: ৩৫০ টাকা; পৃষ্ঠা: ১৭৬

প্রকাশ: জানুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার

বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি বাড়িতে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার মশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইতালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

বিস্ফোরণে আতাউর রহমান (৩৫) নামের একজন গুরুতর আহত হন। তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আতাউর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামের বাসিন্দা। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।।

গতকালের ওই ঘটনার পরপরই ছোট ইতালি গ্রামের বিস্ফোরণস্থল ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‍্যাব ও ডিবি সদস্যরা। উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি তাজা হাতবোমা। বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এসে উদ্ধার হওয়া হাতবোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করেন। পরে বাড়িটি সিলগালা করা হয়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে আতাউর রহমানসহ কুমিল্লা থেকে আসা চার ব্যক্তি ছোট ইতালি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেনের বাড়িতে ওঠেন। মুক্তারের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪৫) মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মুক্তারের বাড়ির ভেতরে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হন। পরে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে রক্তাক্ত অবস্থায় আতাউর রহমানকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশকে খবর দেওয়ার পর মুক্তার হোসেনের তিন সহযোগী দ্রুত পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন আহত আতাউরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেরাজুল হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত হাতবোমা ও কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। বাগবাড়ি তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাদিক বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন। মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনার সঙ্গে আগামী নির্বাচনে নাশকতার পরিকল্পনার যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘কাণ্ডজ্ঞান’ নিয়ে কটাক্ষের শিকার মাধুরী
  • ফিফপ্রোর একাদশ: মেসি–রোনালদোর জায়গা হয়নি, ইয়ামাল সর্বকালের সর্বকনিষ্ঠ
  • নেপালে তুষারধসে ৭ পর্বতারোহীর মৃত্যু
  • অস্কার মনোনীত অভিনেত্রী ডায়ান মারা গেছেন
  • এক যে আছে মন
  • নিউ ইয়র্কে মেয়র নির্বাচন আজ, কুওমোকে সমর্থন ট্রাম্পের
  • ফিলিস্তিনি বন্দীকে নির্যাতনের ভিডিও ফাঁস, ইসরায়েলে সেনাবাহিনীর সাবেক প্রসিকিউটর গ্রেপ্তার
  • ত্রাস সৃষ্টি, টার্গেট কিলিং: ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের অন্ধকারাচ্ছন্ন ভাবমূর্তি
  • ঢাবি থেকে ড. জাকির নায়েককে ডক্টরেট দেওয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের
  • বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার