জীবন বীমা করপোরেশনের নতুন ‘পেনশন বিমা’ নিয়ে বিতর্ক
Published: 21st, October 2025 GMT
জীবন বিমা খাতের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা জীবন বীমা করপোরেশন (জেবিসি) গত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন পেনশন বিমা পলিসি চালু করেছে। এর নাম ‘জেবিসি পেনশন বিমা’। কিন্তু এই পলিসি চালু করার এখতিয়ার জেবিসির আছে কি না—এখন সেটি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।
আগে জেবিসির একই ধরনের পেনশন বিমা পলিসি ছিল। ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর যা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই পলিসি এখন নতুন নামে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এই নতুন পলিসির অনুমোদন দিয়েছে।
নতুন পেনশন নিয়ে জেবিসি বলছে, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, প্রবাসী, ব্যবসায়ী, ঠিকাদারসহ অন্যান্য পেশাজীবী, অর্থাৎ যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিকই জেবিসি পেনশন বিমার গ্রাহক হতে পারবেন।
২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার চার ধরনের স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করে। সেই চারটি স্কিম হলো—প্রগতি, প্রবাস, সুরক্ষা ও সমতা। দুই বছরে সর্বজনীন পেনশনের চারটি স্কিমে ২১৩ কোটি টাকা চাঁদা জমা পড়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমে কিছুটা ধীরগতি আসে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এই কর্মসূচির গুরুত্ব বুঝে এর প্রসারে নতুন করে উদ্যোগ নেয়। ২৬ অক্টোবর খুলনায় পেনশন মেলা অনুষ্ঠিত হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদ মেলার উদ্বোধন করবেন।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এক বছরে কয়েকবার সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রশংসা করে বক্তব্য দিয়েছেন। অর্থ উপদেষ্টার মতে, এই সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি দেশে টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্নযখন সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার কার্যক্রম আরও প্রসারিত করতে চায়, তখনই দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় বিমা সংস্থা জেবিসি নতুন করে ‘পেনশন বিমা’ চালু করেছে। এ পরিস্থিতিতে জেবিসির উদ্যোগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন তুলেছে প্রধানত জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।
জেবিসি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আওতাধীন সংস্থা। অন্যদিকে সর্বজনীন পেনশন পরিচালনা করছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। এর চেয়ারম্যান হচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা। এই পর্ষদের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন অর্থসচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ও শ্রমসচিব।
জেবিসির চেয়ারম্যান মো.
এ ছাড়া পর্ষদে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের একজন শিক্ষক, একজন সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ ও বিমা একাডেমির পরিচালক। এই পর্ষদই জেবিসি পেনশন বিমা চালুর উদ্যোগ নেয়।
পেনশন কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়াজাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। সংস্থার সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘পেনশনের সমান্তরাল স্কিম না থাকাই যৌক্তিক। আমাদের আইনের সঙ্গে জেবিসির এই পলিসি সাংঘর্ষিক কি না, তা আমরা যাচাই-বিশ্লেষণ করব।’
সংস্থার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দীন খান আরও স্পষ্টভাবে বলেন, ‘জেবিসি “পেনশন” শব্দ ব্যবহার করে পলিসি তৈরি করতে পারে না। সংস্থাটি কেন এমন করেছে, তা আমি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের সঙ্গে আলোচনা করব।’
তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক বলেন, ‘জেবিসির পর্ষদই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি খোঁজ নেব।’
জেবিসি ও আইডিআরএর ব্যাখ্যাজেবিসির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ফোনে পাওয়া যায়নি। তাঁদের বার্তা পাঠানো হলেও জবাব পাওয়া যায়নি। জেবিসির মহাব্যবস্থাপক (উন্নয়ন) মাজেদুল ইসলাম সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগের পেনশন বিমা বন্ধ করা হলেও আমরা গবেষণা করে দেখেছি, জেবিসি পেনশন বিমা চালু করা সম্ভব। আইডিআরএর অনুমোদন নিয়েই এটি চালু করা হয়েছে।’
আইডিআরএর সদস্য (লাইফ) আপেল মাহমুদ বলেন, ‘জেবিসি এটা করতে পারে।’
অর্থ উপদেষ্টার ফেরার অপেক্ষাসালেহউদ্দিন আহমেদ ১৩ থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সভায় অংশ নিতে গেছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন, তিনি দেশে ফিরে জেবিসির নতুন পেনশন বিমা ও জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের স্কিমগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবেন।
২০২১ সালে জেবিসি ‘বঙ্গবন্ধু সর্বজনীন পেনশন বিমা (লাভসহ)’ নামে পলিসি চালু করেছিল। এরপর সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করলে একই ধরনের নাম থাকায় দুটি কার্যক্রম পাশাপাশি চলতে থাকে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর জেবিসি পুরোনো পলিসির নাম পরিবর্তন করে রাখে ‘মেয়াদি সুবিধাযুক্ত পেনশন বিমা’।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প নশন ব ম ব যবস থ র সদস য নত ন প সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জীবন বীমা করপোরেশনের নতুন ‘পেনশন বিমা’ নিয়ে বিতর্ক
জীবন বিমা খাতের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সংস্থা জীবন বীমা করপোরেশন (জেবিসি) গত রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন পেনশন বিমা পলিসি চালু করেছে। এর নাম ‘জেবিসি পেনশন বিমা’। কিন্তু এই পলিসি চালু করার এখতিয়ার জেবিসির আছে কি না—এখন সেটি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।
আগে জেবিসির একই ধরনের পেনশন বিমা পলিসি ছিল। ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর যা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই পলিসি এখন নতুন নামে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এই নতুন পলিসির অনুমোদন দিয়েছে।
নতুন পেনশন নিয়ে জেবিসি বলছে, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, প্রবাসী, ব্যবসায়ী, ঠিকাদারসহ অন্যান্য পেশাজীবী, অর্থাৎ যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিকই জেবিসি পেনশন বিমার গ্রাহক হতে পারবেন।
২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার চার ধরনের স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করে। সেই চারটি স্কিম হলো—প্রগতি, প্রবাস, সুরক্ষা ও সমতা। দুই বছরে সর্বজনীন পেনশনের চারটি স্কিমে ২১৩ কোটি টাকা চাঁদা জমা পড়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমে কিছুটা ধীরগতি আসে। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার এই কর্মসূচির গুরুত্ব বুঝে এর প্রসারে নতুন করে উদ্যোগ নেয়। ২৬ অক্টোবর খুলনায় পেনশন মেলা অনুষ্ঠিত হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদ মেলার উদ্বোধন করবেন।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এক বছরে কয়েকবার সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রশংসা করে বক্তব্য দিয়েছেন। অর্থ উপদেষ্টার মতে, এই সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি দেশে টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্নযখন সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার কার্যক্রম আরও প্রসারিত করতে চায়, তখনই দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় বিমা সংস্থা জেবিসি নতুন করে ‘পেনশন বিমা’ চালু করেছে। এ পরিস্থিতিতে জেবিসির উদ্যোগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন তুলেছে প্রধানত জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।
জেবিসি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আওতাধীন সংস্থা। অন্যদিকে সর্বজনীন পেনশন পরিচালনা করছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। এর চেয়ারম্যান হচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা। এই পর্ষদের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন অর্থসচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ও শ্রমসচিব।
জেবিসির চেয়ারম্যান মো. মোখলেস উর রহমান, যিনি জনপ্রশাসনসচিব থাকাকালেই এই পদে ছিলেন। বর্তমানে তিনি পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে বদলি হয়েছেন। তবু চেয়ারম্যান পদে বহাল আছেন। জেবিসির পরিচালনা পর্ষদে বিমা খাতের বিশেষজ্ঞ কেউ নেই। চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) থেকে শুরু করে অধিকাংশ সদস্যই বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বা অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা।
এ ছাড়া পর্ষদে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের একজন শিক্ষক, একজন সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ ও বিমা একাডেমির পরিচালক। এই পর্ষদই জেবিসি পেনশন বিমা চালুর উদ্যোগ নেয়।
পেনশন কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়াজাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। সংস্থার সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘পেনশনের সমান্তরাল স্কিম না থাকাই যৌক্তিক। আমাদের আইনের সঙ্গে জেবিসির এই পলিসি সাংঘর্ষিক কি না, তা আমরা যাচাই-বিশ্লেষণ করব।’
সংস্থার নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দীন খান আরও স্পষ্টভাবে বলেন, ‘জেবিসি “পেনশন” শব্দ ব্যবহার করে পলিসি তৈরি করতে পারে না। সংস্থাটি কেন এমন করেছে, তা আমি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের সঙ্গে আলোচনা করব।’
তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক বলেন, ‘জেবিসির পর্ষদই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি খোঁজ নেব।’
জেবিসি ও আইডিআরএর ব্যাখ্যাজেবিসির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ফোনে পাওয়া যায়নি। তাঁদের বার্তা পাঠানো হলেও জবাব পাওয়া যায়নি। জেবিসির মহাব্যবস্থাপক (উন্নয়ন) মাজেদুল ইসলাম সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগের পেনশন বিমা বন্ধ করা হলেও আমরা গবেষণা করে দেখেছি, জেবিসি পেনশন বিমা চালু করা সম্ভব। আইডিআরএর অনুমোদন নিয়েই এটি চালু করা হয়েছে।’
আইডিআরএর সদস্য (লাইফ) আপেল মাহমুদ বলেন, ‘জেবিসি এটা করতে পারে।’
অর্থ উপদেষ্টার ফেরার অপেক্ষাসালেহউদ্দিন আহমেদ ১৩ থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বার্ষিক সভায় অংশ নিতে গেছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশা করছেন, তিনি দেশে ফিরে জেবিসির নতুন পেনশন বিমা ও জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের স্কিমগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবেন।
২০২১ সালে জেবিসি ‘বঙ্গবন্ধু সর্বজনীন পেনশন বিমা (লাভসহ)’ নামে পলিসি চালু করেছিল। এরপর সরকার সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করলে একই ধরনের নাম থাকায় দুটি কার্যক্রম পাশাপাশি চলতে থাকে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর জেবিসি পুরোনো পলিসির নাম পরিবর্তন করে রাখে ‘মেয়াদি সুবিধাযুক্ত পেনশন বিমা’।