‘সংঘবদ্ধ চক্রান্তে’ গ্রেপ্তার হয়েছেন, ওসির শাস্তি ও তদন্ত দাবি
Published: 24th, June 2025 GMT
‘সংঘবদ্ধ চক্রান্তে’ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহমুদুল হকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর তাঁকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি হেয়াৎ মামুদ ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ দাবি করেন।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জুলাই আন্দোলনের একটি হত্যা মামলায় মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করে নগরের হাজীরহাট থানা-পুলিশ। পরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গত রোববার সন্ধ্যায় তিনি জামিনে কারামুক্ত হন। মাহমুদুল হক রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে মাহমুদুল হক বলেন, ২০১২ সালে দুজন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেখে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন। তখন দুজনকে চূড়ান্ত করা হয় ও দুজনকে অপেক্ষমাণ রাখা হয়। চূড়ান্ত তালিকার একজন চাকরিতে যোগদান না করলে নিয়মানুযায়ী তাঁকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁকে নিয়োগ দেয়নি। এ নিয়ে তিনি উচ্চ আদালতে যান এবং রায় নিয়ে ২০১৯ সালে প্রভাষক পদে যোগদান করেন।
মাহমুদুল হক অভিযোগ করেন, অপেক্ষমাণ তালিকা জালিয়াতি করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ওই সময় তাঁর পদে অন্য একজন শিক্ষক নিয়োগ পান। এর পর থেকে ওই শিক্ষক তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন চক্রান্ত করে আসছেন। তবে ওই শিক্ষকের নাম প্রকাশ করেননি মাহমুদুল হক। তিনি বলেন, কে সেই ষড়যন্ত্রকারী, তা তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসুক।
মাহমুদুল হক দাবি করেন, ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে তিনি সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সে সময় তাঁরা কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে ৭০৯ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্র প্রকাশ করেন। ওই সময় জাতীয় পতাকা অবমাননার একটি মামলার বাদী তিনি। ওই মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নাজমুল হাসান কলিমুল্লাহসহ ১৯ জন অভিযুক্ত হন। এসব কারণে একটি সংঘবদ্ধ চক্রান্ত তাঁর বিরুদ্ধে তৈরি হয়েছিল।
মাহমুদুল হক বলেন, তিনি একজন অধিকারকর্মী। আবু সাঈদ হত্যার পর তিনি প্রতিবাদ করেছিলেন, ফেসবুকে লিখেছিলেন। অথচ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অটোচালক মানিক হত্যা মামলায় তাঁকে ১৯ নম্বর আসামি করা হয়েছিল। রংপুর শহরে মাহমুদুল হক হত্যা মামলাতেও অভিযোগপত্রে তাঁর নাম দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যাঁরা এভাবে ভিকটিম হচ্ছেন, মামলা বাণিজ্যের শিকার হচ্ছেন, পুলিশকে টাকা দিচ্ছেন, মামলায় নাম দিতে, মামলায় নাম বাদ দিতে, অভিযোগপত্র নাম দিতে, অভিযোগপত্র নাম বাদ দিতে টাকা দিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন, কারাগারে গিয়ে তাঁদের যন্ত্রণা বুঝেছি। ব্যক্তিগতভাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে পরিবারকে নিঃস্ব করে দেওয়া হচ্ছে। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না।’
মাহমুদুল হক ‘মিথ্যা ও ভুয়া’ মামলাগুলোর তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা পুলিশের যে আচরণ দেখেছি দীর্ঘ সময়ে, সেই পুলিশের আচরণ এখনো পরিবর্তন হয়নি। আমরা পুলিশের সংস্কার চাই। সংস্কার না হলে আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারব না, স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারব না।’
নিজের বিরুদ্ধে হওয়া দুটি মামলাকে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক উল্লেখ করে মামলা দুটি থেকে তাঁর নাম প্রত্যাহারের দাবি জানান মাহমুদুল হক। একই সঙ্গে ‘হয়রানিমূলক ও প্রতিহিংসামূলক’ মামলায় গ্রেপ্তার করায় হাজীরহাট থানার সাবেক ওসি আবদুল আল মামুন শাহকে প্রত্যাহার করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। এ ঘটনার তদন্ত করে তাঁকে গ্রেপ্তারের পেছনে কারা কারা জড়িত ছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত ও শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান মাহমুদুল হক। তিনি বলেন, ‘তাঁদের শাস্তির আওতায় আনা না হলে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব এবং ব্যক্তিগতভাবে আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হব।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধ: বিএনপিতে যোগ দিলেন যে কারণে
জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ সম্প্রতি বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। দলের প্রাথমিক সদস্য ফরম পূরণ করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে তুলে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগদান করেন তিনি।
স্নিগ্ধর হঠাৎ বিএনপিতে যোগদান নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিএনপিতে যোগদান বিষয়ে তিনি নিজেই মুখ খুলেছেন।
বৃহস্পতিবার এ প্রসঙ্গে ফেসবুক পেজে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধর স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো:
‘‘আসসালামু আলাইকুম
আমি মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। জুলাইয়ের পর থেকে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানের যে জোয়ার উঠেছে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে, সেই তরুণদের একজন প্রতিনিধি হিসেবে আমিও সামাজিকভাবে নানা কার্যক্রমের প্রতিনিধিত্ব করেছি। পাশাপাশি তরুণদের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে রাজনৈতিক পরিবর্তনের যে প্রচেষ্টা চলছে সেই লক্ষ বাস্তবায়নে রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছি।
আপনারা জানেন যে আমি বা আমার ভাইদের কেউই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম না, মুগ্ধ একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবেই দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। তাই আমি মনে করি মুগ্ধসহ সকল শহিদ কোন রাজনৈতিক দলের নয়, তারা সকল মানুষ এবং দেশের সম্পদ।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এবং এই নতুন বাস্তবতায় সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত জায়গা থেকে বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করছি। এবং সম্পূর্ণ নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যেতে চাই।
অরাজনৈতিক প্লাটফর্ম থেকে জুলাইকে নানাভাবে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছি, এখন সময় এসেছে রাজনৈতিকভাবে জুলাইয়ের প্রতিনিধিত্ব করার। আমার রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার পিছনে অন্যতম কয়েকটি কারণ হলো-
সর্বোচ্চ জায়গা থেকে জুলাইকে প্রতিনিধিত্ব করা। জুলাই শহিদ, আহত যোদ্ধা, শহিদ পরিবার এবং সর্বোপরি জুলাইয়ের ভয়েস হয়ে উঠা, রাজনীতিতে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করা এবং বাংলাদেশপন্থী ও জুলাইপন্থী সকল অংশীজনের মধ্যে ঐক্য গড়ে তোলা। রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগদান কারার পিছনে আমার কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত বিএনপির দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে তাছাড়া বিএনপির রাজনৈতিক দর্শন এবং রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা রূপরেখা ২০২৩ এর অনেক জায়গা আছে যেগুলো নিয়ে সরাসরি কাজ করতে আমি আগ্রহী।
দ্বিতীয়ত আমি মনে করি, সকল পরিসরে জুলাইয়ের প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজন। তাই আমি বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত হচ্ছি। এতে করে জুলাইয়ের ঐক্য শক্তিশালী এবং দীর্ঘায়িত হবে বলে আমি মনে করি।
তাছাড়া বিএনপির সন্মানিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান চাচ্ছেন যে আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের হয়ে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করি যা আমারও অন্যতম রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার একটি। এর মাধ্যমে জাতীয়তাবাদী দল এবং তরুণদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরীতে ভূমিকা রাখতে পারবো বলে আমি মনে করি।
তবে সর্বোপরি আমি সকল রাজনৈতিক দল এবং বাংলাদেশ ও জুলাইপন্থী সকলের সাথে কাজ করে যেতে চাই। রাজনৈতিক ঐক্যের মাধ্যমে সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মান আমার রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার আরেকটি অন্যতম লক্ষ্য। আমার এই পথচলাই সকলের সহযোগিতা ও পরামর্শ কামনা করছি। মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানসহ জনমানুষের সকল সংগ্রাম চির অম্লান হোক।
আরেকটি বিষয়, এতদিন যত দায়িত্ব আমি পালন করেছি সব দায়িত্ব নিষ্ঠা এবং সততার সাথে পালন করেছি। যদি কোন অভিযোগ থাকে দয়া করে অভিযোগে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রমাণসহ উপস্থাপন করবেন এবং গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। নতুন বাংলাদেশে সবাই মিলে এতটুকু সংস্কার তো আমরা আশাই করতে পারি।’’
ঢাকা/নঈমুদ্দীন//