কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত পর্যটকদের সবচেয়ে পছন্দের জায়গার একটি। অথচ সৈকতের এই দুই কিলোমিটার এলাকায় উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সৈকত দিয়ে পর্যটকদের হাঁটাচলা করাও কঠিন হয় উঠেছে। এক সপ্তাহ ধরে ময়লা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি হুমকিতে পড়েছে বিশ্বের বৃহত্তম এ সৈকতের পর্যটন নিরাপত্তা, সৌন্দর্য ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই ভবিষ্যৎ। 
পরিবেশবাদীরা বলছেন, হোটেল-মোটেলের বর্জ্য ও দূষিত পানি সমুদ্রে যাওয়ার কারণে সেই পানি থেকে উৎকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে যেমন দূষিত হচ্ছে প্রকৃতি, তেমনি পর্যটকদের জন্য তৈরি হচ্ছে প্রাণঘাতী ফাঁদ। 
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সৈকতের কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সৈকতের ডিভাইন ইকো রিসোর্টের পাশ ঘেঁষে হোটেল-মোটেল জোনের ময়লা পানি সরাসরি সমুদ্রে চলে যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, কয়েক বছর আগেও এই এলাকায় পানি প্রবাহিত হতো পাশের একটি ছড়ার মাধ্যমে। সেটি প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফের সামনে দিয়ে মিশত সাগরে। সম্প্রতি ছড়াটিতে বালুর বস্তা দিয়েছে ক্যাফে কর্তৃপক্ষ। এর পর সেই পানি নিষ্কাশনে বালিয়াড়ি কেটে তৈরি করা হয়েছে নালা। ফলে বৃষ্টির পানি, জোয়ার-ভাটা এবং ঢলের সময় এটি রূপ নেয় প্রবল স্রোতের এক বিপজ্জনক পথে। কয়েক দিনেই নালাটি হয়ে উঠেছে আরও চওড়া ও গভীর। 
প্যাসিফিক বিচ লাউঞ্জ ক্যাফের স্বত্বাধিকারী জাবেদ ইকবাল বলেন, ছড়াটির পানি যখন শুকায় তখন বিশ্রী গন্ধ হয়। হোটেলের যত স্যুয়ারেজ লাইন সব এই ছড়া দিয়ে সমুদ্রে নামে। ফলে পর্যটকদের চলাচলে সমস্যা হয়। 
ডিভাইন ইকো রিসোর্টের স্বত্বাধিকারী মোয়াজ্জেম হোসেন শাওন বলেন, কক্সবাজার সৈকতের এসব সমস্যা পর্যটনের স্বার্থে দ্রুতই সমাধান করা প্রয়োজন। 
পর্যটক ও স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন আবাসিক ও কলকারখানার পানি এসে সমুদ্রে মিশছে। ফলে সমুদ্রের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। 
পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের চেয়ারম্যান মুজিবুল হক বলেন, সৈকতের আশপাশে গড়ে তোলা অনেক স্থাপনা এখনও যুক্ত করা হয়নি শহরের মূল ড্রেনেজ ব্যবস্থার সঙ্গে। এতে কৃত্রিম নালার পানি সমুদ্রে পড়ে দূষণ তৈরি করছে। এ ছাড় সেই নালাগুলোর কারণে তীরে গুপ্তখাল সৃষ্টি হচ্ছে, যা পানির নিচে দেখা যায় না। পর্যটকরা এটা না জেনে ওই জায়গায় গোসল করছে। ফলে তাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে। 
পরিবেশ অধিদপ্তর-কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো.

জমির উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন 
বলেন, ‘জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার ভিজিলেন্স 
টিম কাজ করছে। বিষয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করা হবে।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর যটক পর ব শ স কত র

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
  • অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন
  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • কক্সবাজার সৈকতে ঘোড়া, কুকুর ও গরু, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খুলছে শনিবার, জাহাজ চালাবেন না মালিকরা