ফেসবুকে রক্তমাখা ছুরি দেখিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে হত্যার হুমকি, এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার
Published: 28th, June 2025 GMT
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রক্তমাখা ছুরি দেখিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, দেশের প্রধান বিচারপতি ও সেনাপ্রধানকে হত্যার হুমকি দেওয়া আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর নাম মো. আলমগীর। গতকাল শুক্রবার রাতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি সদর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আলমগীর রক্তমাখা একটি ছুরি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি ও সেনাপ্রধানকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। ভিডিওতে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করতে দেখা যায় তাঁকে।
ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুর আহমেদ আজ শনিবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, রক্তমাখা একটি ছুরি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যার হুমকি দেওয়ার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর পুলিশ আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁকে ফটিকছড়ি থানায় হওয়া একটি বিস্ফোরক মামলায় আদালতে পাঠানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে মানবপাচার চক্রের ৪ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
যশোর সদরের বড়মেঘলা গ্রামের জাফর হোসেনসহ কয়েকজনকে মিথ্যা প্রলোভনে রাশিয়ায় নিয়ে যুদ্ধে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগে মানবপাচার চক্রের চার সদস্যের বিরুদ্ধে বুধবার আদালতে মামলা হয়েছে। জাফরের ভাই বজলুর রহমান এ মামলাটি করেছেন। পাচারের শিকার জাফরসহ অনেককেই বর্তমানে রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেন যুদ্ধে জোরপূর্বক অবতীর্ণ করানো হচ্ছে এবং তাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার বাঙ্কারে আটকে রাখা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার কাজী রেফাত রেজওয়ান সেতু মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অভিযোগ আমলে নিয়ে যশোরের মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ড. মো. আতোয়ার রহমান বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডি পুলিশকে আদেশ দিয়েছেন।
মামলায় আসামিরা হলেন, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কলাবাড়িয়া পশ্চিম পাড়ার আশরাফ মোল্যার ছেলে ও ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম আবুল হাসান, তার পার্টনার ঢাকার দক্ষিণখান থানার আশকোনার শহিদুল ইসলামের মেয়ে ফাবিহা জেরিন তামান্না, চট্টগ্রামের লোহাগড়া থানার মাঝেরপাড়ার মো. ইসহাকের ছেলে আলমগীর হোসেন দেলোয়ার ও ঢাকার নয়া পল্টনের মাহাতাব সেন্টার ভবনের ভ্যাকেশন প্লানারের মালিক শফিকুর রহমান।
বাদী বজলুর রহমান মামলায় উল্লেখ করেছেন, আসামি এস এম আবুল হাসান এবং ফাবিহা জেরিন তামান্না তার ভাই জাফর হোসেনকে রাশিয়ায় ক্লিনার অথবা সেফের সহকারী পদে মাসিক এক লাখ ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোট সাত লাখ ১০ হাজার টাকা নেন। বলা হয়, সরাসরি রাশিয়ায় যাওয়া সম্ভব না। তাই প্রথমে তাকে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর সৌদি আরব থেকে ভিসা সংগ্রহ করে নেওয়া হবে রাশিয়ায়। ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর উল্লেখিত আসামিদ্বয় জাফর হোসেনসহ চাকরি প্রত্যাশী ১০ জনকে প্রথমে সৌদি আরবে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে তাদেরকে গ্রহণ করেন আসামি শফিকুর রহমান। ২ মাস থাকার পর একই বছরের ২২ ডিসেম্বর জাফর হোসেনসহ ১০ জনকে রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গ শহরে নিয়ে যান শফিকুর রহমান। রাশিয়ায় যাবার পর অপর আসামি আলমগীর হোসেন দেলোয়ারসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাদেরকে গ্রহণ করে নিজেদের হেফাজতে রাখেন। এরপর আলমগীর হোসেন দেলোয়ার এবং তার সঙ্গীরা তাদেরকে জানান, আর্মি ক্যাম্পে ক্লিনার বা সেফের সহকারী হিসেবে কাজ করার আগে সকলকে আর্মি ক্যাম্পে ২০ দিনের ট্রেনিং সম্পন্ন করতে হবে। একথা বলে তারা জাফর হোসেনসহ ১০ জনকে রাশিয়ার একটি আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যান।
সেখানে যাওয়ার পর জাফর হোসেনসহ অন্যরা জানতে পারেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে অংশগ্রহণ করাতে ২০২৬ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ১ বছরের জন্য জনপ্রতি ১৪ হাজার ডলারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন আসামি আলমগীর হোসেন দেলোয়ার ও শফিকুর রহমান। ফলে তারা রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করতে বাধ্য হন।
বিষয়টি জানতে পেরে নিজের জীবন রক্ষার্থে আকরাম হোসেন নামে এক যুবক কৌশলে আর্মি ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যান এবং পরে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর জাফর হোসেনসহ অন্যরা রাশিয়ার আর্মির নির্যাতনের কারণে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে বাধ্য হন। জাফর হোসেন বর্তমানে ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক শহরের একটি যুদ্ধক্যাম্পের মাটির নিচের বাংকারে অবস্থান করছেন। সেখানে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় তার ডান পায়ের পাজর ও উরুতে বোমার স্প্লিন্টার বিদ্ধ হলে তিনি গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসা শেষে পুনরায় তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। সর্বশেষ জাফর হোসেনের সাথে সোহান মিয়া নামে এক যুবক গত ২০ জুন ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন। বিষয়টি হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েজ মেসেজের মাধ্যমে ভাই বজলুর রহমানকে জানিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্যে আকুতি জানান জাফর হোসেন।