ঢাকাই চলচ্চিত্রের একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক ওমর সানী। যিনি একসময় পর্দায় এলেই দর্শকদের হৃদয়ে আলোড়ন তুলতেন, সেই তিনি আজ অনেকটা নীরব, আড়ালে। অভিনয়ে এখন আর আগের মতো নিয়মিত নন, তবে এখনো অপেক্ষা করেন একটি ভালো গল্প, একটি ভালো সিনেমার জন্য।

“আমাদের দেশে এখন ৫৫ পেরোলেই আমরা হয়ে যাই বয়স্ক। অথচ পাশের দেশে এই বয়সে অনেকে ক্যারিয়ার শুরু করেন,”—বলতে বলতে কণ্ঠে যেন ভেসে আসে আক্ষেপের সুর।

ওমর সানী বলেন, “আমি এখনো সিনেমা ছাড়িনি। কাজের অফার আসে, কিন্তু গল্পে মন ভরে না বলেই নিজেই না করে দেই।”

আরেকটু খোলাসা করে তিনি বলেন, “শিল্পী সমিতিতে আমি এখন এক মরা মানুষ। থাকলে সবাই জিজ্ঞেস করে নির্বাচন করব কি না। না থাকলে কেউ কিছু বলবে না। তাই, মিশাকে বলেছি, আমার মেম্বারশিপটা বাদ দিতে। আমার এখন আর ইচ্ছাও নেই, সেই ইচ্ছাটা যেন মরে গেছে।”

ওমর সানীর কথায় ঘনীভূত হয় অভিমান। তিনি বলেন,“নব্বইয়ের দশকে এ ক্যাটাগরির শিল্পী ছিল ১০০ জনের বেশি। এখন আছে হাতেগোনা কয়েকজন। যারা আছে, তারা থেকেও নেই। এখন অনেকেই ভাইরাল হতে সমিতির পেছনে ছুটছে। টার্গেট—চেয়ার, তারপর সেটাকে নানা কাজে ব্যবহার করা। এই খারাপ রাজনীতি শিল্পী সমিতিকে ধ্বংস করেছে।”

ওমর সানীর নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে তৈরি হয়েছে ‘গরিবের রানী’সহ কয়েকটি চলচ্চিত্র। পর্দার বাইরে থেকেও তিনি ছিলেন সিনেমার ভেতরে। ছেলেকে পাঠিয়েছেন চলচ্চিত্র ও প্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনা করতে। আশা করেছিলেন, হয়ত ছেলে একদিন হাল ধরবে পারিবারিক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের।

কিন্তু বাস্তবতা আবারও অন্যকিছু বলে দেয়। তিনি বলেন, “সেদিন এফডিসিতে নির্বাচনের সময় শাকিব খানের ওপর হামলা হলো। আমার ছেলে তখন আমার সঙ্গেই ছিল। ভয়ে কাঁপছিল। বলছিল, বাবা, আমার কপাল ভালো না। আমি আর সিনেমায় কাজ করতে পারব না। চলচ্চিত্র নিয়ে পড়াশোনা করেও সে মুখ ফিরিয়ে নিল।”

ওমর সানী সর্বশেষ ‘ডেড বডি’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন। বর্তমানে নানারকম ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি।

ঢাকা/রাহাত/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র ওমর স ন

এছাড়াও পড়ুন:

ধারদেনা করে শুরু, এখন তিনি কোটিপতি পোনাচাষি

একসময় পাবনার বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের জগন্নাথপুর পূর্ব পাড়ার আবদুর রশিদের জীবন ছিল অভাবে ভরা। কখনো অন্যের জমিতে কাজ করে, কখনো ফেরি করে মাছ বিক্রি করে দিন চলত তাঁর। সেই অবস্থা থেকে এখন কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক আবদুর রশিদ।

আবদুর রশিদ জানান, নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) মাছ চাষের একটি বিজ্ঞাপন দেখে তাঁর উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নের শুরু। ওই বিজ্ঞাপনে অনুপ্রাণিত হয়ে গরু বিক্রি ও ধার–দেনা করে সাত হাজার টাকা জোগাড় করেন। সেই টাকায় শুরু করেন মাছের পোনা উৎপাদন। এরপর আর তাঁকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তিনি এলাকার পোনাচাষিদের কাছে অনুপ্রেরণা। তবে তাঁর এই ব্যবসার প্রসার ঘটে ২০০৭ সালের পর থেকে।

আবদুর রশীদ জানান, বিয়ের এক বছরের মাথায় সন্তান জন্ম নেয়। কিন্তু সেই সময় সন্তানের দুধ কেনার আর্থিক সামর্থ্যও ছিল না তাঁর। একমাত্র সম্বল ছিল একটি ছাপড়া টিনের ঘর। তখন বিটিভিতে রেণু পোনা চাষের বিজ্ঞাপন তাঁকে নতুন স্বপ্ন দেখায়। তিনি তখন এলাকার একজনের কাছ থেকে ৮ শতাংশ জমির একটি পুকুর ইজারা নেন দেড় হাজার টাকায়। এরপর বাবার কাছ থেকে গরু বিক্রি ও ধার–দেনা করে কয়েক হাজার টাকা নিয়ে ওই পুকুরে ডিমপোনা ছাড়েন। তাতে মাত্র পাঁচ মাসেই প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো লাভ হয় তাঁর।

প্রথম বছরের লাভের টাকা দিয়ে আরও তিনটি পুকুর ইজারা নিয়ে পোনা চাষ শুরু করেন রশিদ। তাতে মাস ছয়েক পর তিনি সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ করেন ৫৫ হাজার টাকা। স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা প্রোগ্রামস ফর পিপলস ডেভেলপমেন্টের (পিপিডি) পরামর্শে ও সহযোগিতায় এভাবেই তিনি ধাপে ধাপে পোনা চাষের খামার বা পুকুরের আওতা বাড়ান। এখন তাঁর নিজস্ব মালিকানায় আছে তিনটি পুকুর। আর ইজারা নিয়েছেন আরও ২২টি পুকুর। নিজের ও ইজারায় নেওয়া মোট ২৫টি পুকুরে বছরে পাঁচ থেকে সাত ধাপে ৪০০ থেকে ৪৫০ কেজি কার্প জাতীয় মাছের ডিমপোনা ছাড়েন তিনি। প্রতি কেজি ডিমপোনার দাম পড়ে প্রায় ৫ হাজার টাকা। এক মাসেই এসব পোনা এক থেকে দেড় ইঞ্চি আকারের হয়। তখন থেকেই শুরু হয় বিক্রি। পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের খামারিরা আবদুর রশিদের কাছ থেকে সারা বছরজুড়ে পোনা কেনেন।

আবদুর রশিদ জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি বছরে প্রায় ৫০ লাখ টাকার পোনা বিক্রি করেন। সব খরচ বাদ দিয়ে তাতে বছরে তাঁর লাভ থাকে ২৫ লাখ টাকার মতো। সেই অর্থে সংসার খরচ মিটিয়ে প্রতিবছর কিছু কিছু জমি কেনেন। এখন তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ কয়েক কোটি টাকার। একসময়ের ছাপড়া টিনের ঘরের মালিক আবদুর রশিদ তিন বিঘা জমির ওপর গড়ে তুলেছেন বাড়ি। আর কৃষিজমি আছে পাঁচ বিঘা। নিজের পাঁচ সন্তান এখন তাঁর এই পোনা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে জানান আবদুর রশিদ নিজেই।

সম্প্রতি কথা হয় আবদুর রশিদের দুই ছেলে নাজমুল হোসেন ও সেলিম হোসেনের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, এখন আমরাও খামারের কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। পোনা চাষ আমাদের পরিবারের ভাগ্য বদলে দিয়েছে।

আর আবদুর রশিদ বলেন, ‘খালি হাতে শুরু করিছিলাম। পরিশ্রম বৃথা যায়নি। মাছের পোনা চাষে পরামর্শ নেওয়ার জন্য এখন এলাকার অনেকেই আমার কাছে আসেন। আমি তাঁদের সাধ্যমতো সহায়তা করার চেষ্টা করি। পোনা বিক্রি করে এখন আমার প্রতিবছর ভালো লাভ হয়। সেই লাভের টাকায় জমি কিনি।’

আবদুর রশিদ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা পিপিডির মৎস্য কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী বলেন, ‘একটি ছোট পুকুর দিয়ে পোনা চাষ শুরু করেছিলেন। এখন ২৫টি পুকুরে চাষ করেন। শুরু থেকেই আমরা তাঁকে এই কাজে পরামর্শ দিয়েছি। নানা প্রশিক্ষণেও অংশ নিয়েছেন। এখন তিনি এলাকার একজন সফল উদ্যোক্তা। স্থানীয়ভাবে অনেকেই তাঁর দেখানো পথে পোনা চাষে এগিয়ে এসেছেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ধারদেনা করে শুরু, এখন তিনি কোটিপতি পোনাচাষি