মুরাদনগরে সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় আসকের নিন্দা, দ্রুত বিচার দাবি
Published: 29th, June 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগরে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের এক নারীকে ধর্ষণ ও সহিংসতার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। একইসঙ্গে এ ঘটনার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছে মানবাধিকারভিত্তিক সংগঠনটি।
আজ রোববার এক সংবাদ বিবৃতিতে আসক বলেছে, এ ঘটনা শুধু একটি ভয়াবহ অপরাধই নয়, বরং নারীর প্রতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ ও বিদ্বেষের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। যা দেশের সংবিধান, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের মৌলিক ভিত্তিকে চরমভাবে লঙ্ঘন করে।
সংগঠনটি জানিয়েছে, গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ জুন রাতে বাহেরচর পাচকিত্তা গ্রামে ফজর আলী নামের এক রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি ঘরের দরজা ভেঙে এই নারীকে ধর্ষণ করে। এরপর ওই নারীর ওপর সহিংস আচরণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ঘটনার সময় ভুক্তভোগী নিজ পরিবারে অবস্থান করছিলেন এবং প্রতিবেশীরা চিৎকার শুনে উপস্থিত হয়ে তাকে উদ্ধার করেন। এ ধরনের পাশবিক ও মধ্যযুগীয় বর্বরতা সভ্য সমাজে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
আসক মনে করে, এই অপরাধের পেছনে কেবল ব্যক্তি নয়, বরং সরকারের নির্লিপ্ততা ও দীর্ঘদিন ধরে বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে ব্যর্থতা কাজ করছে। একজন নারী তার নিজ ঘরে, নিজ পরিচয়ে সুরক্ষিত না থাকলে, তা রাষ্ট্রের চরম ব্যর্থতা ও নিরাপত্তাহীনতা নির্দেশ করে। অতীতে নারীদের ওপর হামলা, নিপীড়ন নির্যাতনের ঘটনায় বিচার বিলম্বিত বা অপরাধীদের রক্ষা করার যে প্রবণতা দেখা গেছে, এই ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা বলে বিবেচিত হতে পারে।
বিবৃতিতে আসক জোর দাবি জানাচ্ছে, এ ঘটনার যথাযথ ও দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে অভিযুক্তকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ক্ষতিপূরণ প্রদান, প্রয়োজনীয় আইনি, মানসিক ও স্বাস্থ্য সহায়তা অবিলম্বে প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র মনে করে, এ ধরনের পৈশাচিক ঘটনার যথাযথ ও কঠোর বিচার না হলে নারীর মর্যাদা, অধিকার রক্ষা এবং আইনের শাসন ভেঙে পড়বে। রাষ্ট্রকে অবশ্যই কঠোর বার্তা দিতে হবে যে, এমন বর্বরতার কোনো স্থান এই দেশে নেই।
বিবৃতিতে আসক রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানায়, দায়সারা নয় বরং ঘটনার প্রতিটি দিক স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে অভিযুক্তকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মুরাদনগরের ঘটনার প্রতিবাদে তারকারা কে কী লিখলেন
কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে দরজা ভেঙে এক তরুণীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগে ক্ষোভে ফুঁসছে পুরো দেশ। ভয়ংকর সেই ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই নেট দুনিয়ায় চলছে তীব্র প্রতিক্রিয়া, প্রতিবাদ আর ধিক্কার।
এই বিভৎস ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন দেশের শোবিজ অঙ্গনের তারকারাও। একের পর এক তারকা নিজেদের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে ক্ষোভ প্রকাশ করে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
অভিনেতা ও শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর লিখেছেন, "দেশের প্রতিটি মানুষ যেনো শান্তিতে বসবাস করতে পারে। প্রতিটি নারী যেনো নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে। প্রতিটি অন্যায়ের সঠিক বিচার হোক। আর প্রতিটি ধর্ষকের হোক ফাঁসি। মুরাদনগরের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা জানাচ্ছি।"
অভিনেত্রী তমা মির্জা ক্ষোভ ঝেড়ে লিখেছেন, "মুরাদনগর, কুমিল্লা! বিভৎসতা! লজ্জা!"
অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদের পোস্টে উঠে আসে হতাশা ও অসহায়তা, "মানুষ আর মানুষ নেই। পৃথিবী শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ আর কোনো মানুষ থাকবে না, খুব শিগগিরই।"
চিত্রনায়িকা প্রার্থনা ফারদিন দীঘি হ্যাশট্যাগ দিয়ে আহ্বান জানিয়েছেন সচেতনতায়, #ধর্ষণকে_না_বলুন #এর_বিরুদ্ধে_রুখে_দাঁড়ান #নীরবতাই_সমর্থন #ধর্ষণ_বন্ধ_করুন
নুসরাত ফারিয়া এক বাক্যে প্রতিবাদ জানিয়েছেন-
"Stop Rape."
সংগীতশিল্পী ও অভিনেত্রী পারশা মাহজাবীন পূর্ণীর মন্তব্য আরও গভীর,
"বিবস্ত্র বাংলাদেশ।"
অভিনেতা জিয়াউল রোশান একটি দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, "ধর্ষকদের একটাই শাস্তি-জনসম্মুখে ফাঁসি। তারা কোন দল বা ধর্মের সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। শুধু চাই, তাদের যেনো আর কোনো নারীকে ছোঁয়ার সুযোগ না থাকে।"
অভিনেতা আরশ খান লিখেছেন, "কাপুরুষত্ব যখন চরমে পৌঁছায়, তখন তা কুপুরুষত্বে রূপ নেয়। জন্মপরিচয়হীন না হলে একজন নারীর সঙ্গে এমন পাশবিক আচরণ করা সম্ভব না। একবার জারজ সবসময়ই জারজ থাকে।"
‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ খ্যাত শিমুল শার্মার প্রতিবাদ ছিল কবিতা,
"কোথায় স্বর্গ? কোথায় নরক? কে বলে তা বহুদূর?
মানুষেরই মাঝে স্বর্গ-নরক, মানুষেতে সুরাসুর।"
অভিনেতা সাইদুর রহমান পাভেল ফেসবুক লাইভে এসে বললেন, "ধর্ষকদের প্রকাশ্যে ফাঁসি দিন। ওদের বাঁচিয়ে রাখার কোনো মানে নেই। দেশের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এখন মনে হচ্ছে ভুল করছি, ভুল করেছে সবাই।"