শুরুতে নাটক, এরপর সিনেমা। প্রথম সিনেমা ‘ব্যাচেলর’ মুক্তির সময় কটে গেছে ২৪ বছর। লম্বা রেসের ঘোরার মতোই ছুটে চেলেছেন তিনি। দুই দেশ মিলে সিনেমার তালিকাও বেশ লম্বা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এক দশক ধরে ভারতেও অভিনয় করছেন তিনি। বলিউডেও শুরু করেছেন কাজ। টালিউড তো তার জায়গায় আরও শক্তিশালী। সেখানে তার স্বীকৃতিও মিলেছে বেশ। পেয়েছেন ভারতের ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও।
জয়া অহসান অভিনীত অন্যতম সিনেমা হল- ‘ব্যাচেলর’, ‘ডুবসাঁতার’, ‘গেরিলা’, ‘আবর্ত’, ‘একটি বাঙালি ভূতের গপ্পো’, ‘দেবী’, ‘রাজকাহিনি’, ‘কণ্ঠ’, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি’, ‘ঈগলের চোখ’, ‘বিসর্জন’, ‘খাঁচা’, ‘এক যে ছিল রাজা’, ‘ক্রিসক্রস, ‘বিজয়া’, ‘জিরো ডিগ্রি’, ‘পুত্র’, ‘ক্রিসক্রস’।
দুইদিন এক সাক্ষাৎকারে জয়া আহসানের জানতে পাওয়া হয় তার সেরা সিনেমার কথা। সঞ্চালকের প্রশ্ন শুনে খানিকটা দ্বিধায় পড়ে যান তিনি। কিছুক্ষণ ভেবে জয়া বলেন, ‘এভাবে বলা কঠিন। কারণ, আমি যতগুলো সিনেমায় অভিনয় করেছি সবগুলোই আমার কাছে সমান।’ কিন্তু উপায় নেই বলতেই হবে। তাৎক্ষণিকভাবে যদি ‘গেরিলা’, ‘বিসর্জন’, ‘ডুবসাঁতার’ সিনেমার কথা বলে থেকে যান জয়া। এছাড়া অন্য এক সাক্ষাৎকারে ‘কণ্ঠ’ ও ‘আবর্ত’ সিনেমার কথাও বলেছিলেন জয়া।
‘গেরিলা’
গেরিলা সিনেমা মুক্তির সাল ২০১১। নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত এই চলচ্চিত্রটি মূলত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত। এতে অভিনয় করেছেন সহস্রাধিক শিল্পী। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান, ফেরদৌস, এটিএম শামসুজ্জামান, রাইসুল ইসলাম আসাদ, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, শতাব্দী ওয়াদুদ, শম্পা রেজা, গাজী রাকায়েত প্রমুখ।
‘ডুবসাঁতার’
নূরুল আলম আতিক পরিচালিত ‘ডুবসাঁতার’ সিনেমাটি মুক্তি পায় ২০১০ সালে। এ সিনেমায় ‘রেণু’ চরিত্রে দেখা গেছে তাকে। জয়া আহসান ছাড়াও এতে আরও অভিনয় করেছেন শেহজাদ চৌধুরী, অমোক ব্যাপরী, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, শাহরিয়ার শুভ, বোংশু হোর, শ্রাবন্তী দত্ত তিন্নি, স্বাধীস খসরু, সুষমা সরকার, স্বাগতাসহ আরও অনেকে।
‘বিসর্জন’
পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত সিনেমা ‘বিসর্জন’ পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পায় ২০১৭ সালে। এতে জয়া আহসানের সঙ্গে অভিনয় করেছেন আবির চট্টোপাধ্যায়। ৬৪ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে ২০১৭ সালে। এতে আরও অভিনয় করেছেন কৌশিক গঙ্গোপধ্যায়, অরুণ গুহঠাকুরতা, লামা হালদারসহ আরও অনেকে।
‘কণ্ঠ’
২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পায়। এটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। এই চলচ্চিত্রের অনুপ্রেরণা একজন ক্যান্সার রোগ থেকে আরোগ্য লাভকারী শ্রী বিভূতি চক্রবর্তী। এখানে রমিলা চরিত্রে অভিনয় করেছেন জয়া আহসান। তার সঙ্গে ছিলেন শিবপ্রসাদ মুখার্জি, পাওলি দাম, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, চিত্রা সেন, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়সহ আরও অনেকে।
‘অর্ধাঙ্গিনী’
২০২৩ সালের পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পায় জয়া আহসান অভিনীত সিনেমা ‘অর্ধাঙ্গিনী’। এটি কাহিনী, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। প্রযোজনা করেছেন সুরিন্দর সিং ও নিসপাল সিং। এতে জয়া আহসানের সঙ্গে অভিনয় করেছেন, কৌশিক সেন, চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়, অম্বরীশ ভট্রাচার্য, লিলি চক্রবর্তী, পূরব শীল আচার্য, অরুণ গুহঠাকুরতা দামিনী বেণী বসুসহ আরও অনেকে।
অভিনয়ের পাশাপাশি ‘দেবী’ নামে একটি সিনেমা প্রযোজনাও করেছেন তিনি। এ পর্যন্ত পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, দু’বার বাচসাস পুরস্কার, তিনবার ভারতের ফিল্মফেয়ার এবং একবার টেলিসিনে পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা অর্জন করেছেন এই গুণী শিল্পী।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জয় আহস ন চলচ চ ত র আরও অন ক প রস ক র পর চ ল আহস ন
এছাড়াও পড়ুন:
নামাজ না পড়ার পরিণতি
নামাজ ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ। আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য, আর ইবাদতের সবচেয়ে বড় নিদর্শন হলো নামাজ। যে ব্যক্তি নামাজ পরিত্যাগ করে, সে আসলে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হলো নামাজ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮২)
অর্থাৎ নামাজ ছেড়ে দেওয়া মানে ইসলাম থেকে দূরে সরে যাওয়া।
কোরআনে নামাজ না পড়ার শাস্তিআল্লাহ তাআলা অনেক আয়াতে নামাজ প্রতিষ্ঠার আদেশ দিয়েছেন এবং নামাজ ত্যাগকারীদের সম্পর্কে কঠোর সতর্কতা দিয়েছেন।
১️. সুরা মারইয়াম: ‘তাদের পর এমন এক প্রজন্ম এল, যারা নামাজ নষ্ট করল এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। তারা শিগগিরই গোমরাহির শাস্তির সম্মুখীন হবে।’ (আয়াত: ৫৯)
২️. সুরা মুদ্দাসসির: ‘তোমাদেরকে কী জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছে?’ তারা বলবে, ‘আমরা নামাজ আদায় করতাম না।’ (আয়াত: ৪২-৪৩)
এই আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, নামাজ না পড়া জাহান্নামে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
৩️. সুরা ত্বাহা: ‘আমার স্মরণের জন্য নামাজ কায়েম করো।’ (আয়াত: ১৪) অর্থাৎ, নামাজ না পড়া মানে আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া।
আরও পড়ুন‘যাও, আবার নামাজ পড়ো, কারণ তুমি নামাজ পড়োনি’১৮ অক্টোবর ২০২৫হাদিসে নামাজ না পড়ার শাস্তিরাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নামাজ ছেড়ে দিলে মানুষ কুফরির কাছাকাছি চলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮২)
‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করে, তার ওপর আল্লাহর কোনো দায়িত্ব নেই।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০২৩)
অর্থাৎ সে আল্লাহর রহমত ও রক্ষার বাইরে চলে যায়।
আরেক হাদিসে এসেছে, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ প্রথমে নামাজের হিসাব নেবেন। যদি নামাজ ঠিক থাকে, তবে বাকি কাজও ঠিক থাকবে; আর যদি নামাজ নষ্ট হয়, তবে সব কাজই নষ্ট হবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৪১৩)
দুনিয়ায় নামাজ না পড়ার পরিণতি১️. হৃদয়ের কঠোরতা: আল্লাহর ভয় ও রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।
২️. অশান্তি ও হতাশা: নামাজ আল্লাহর স্মরণ; তা না থাকলে মন অশান্ত থাকে।
৩️. রিজিকে অবারকতা: রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নামাজ রিজিক বৃদ্ধি করে।’ নামাজ না পড়লে তার উল্টো ঘটে।
৪️. অন্ধকার ও হতাশ মৃত্যু: হাদিসে এসেছে, ‘নামাজ হলো কবর ও আখিরাতে আলো।’ (সহিহ মুসলিম, ২২৩)
পরকালে নামাজ না পড়ার শাস্তি১️. জাহান্নামের আগুনে দগ্ধ হওয়া। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা নামাজ আদায় করে না, তাদের জন্য আফসোস! (ওয়াইল)’ (সুরা মাউন, আয়াত: ৪–৫)
২️. হিসাবের দিন প্রথম প্রশ্নেই ব্যর্থতা: নামাজ ঠিক না থাকলে সব আমল বাতিল হবে।
৩️. চিরন্তন আফসোস: কিয়ামতের দিন তারা বলবে: ‘হায়, যদি আমি নামাজ আদায় করতাম, তাহলে আজ এই অবস্থা হতো না!’
আরও পড়ুন‘হে আমার সন্তান, নামাজ কায়েম করো’১৭ অক্টোবর ২০২৫ফকিহদের বিশ্লেষণইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল (রহ.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ত্যাগ করে, সে কাফের।’ (আল-মুগনি, খণ্ড ২, পৃ. ৪৪৩)
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেছেন, ‘যে নামাজ ছেড়ে দেয়, তাকে তাওবা করতে বলা হবে; তাওবা না করলে শাস্তি দেওয়া হবে, তবে কাফের গণ্য হবে না।’ (ফাতহুল কাদির, খণ্ড ১, পৃ. ২৯৪)
ইমাম শাফেয়ি ও মালেকি মত অনুযায়ী, ‘নামাজ না পড়া বড় গুনাহ, তবে ঈমান অস্বীকার না করলে সে ইসলাম থেকে বের হয় না।’ (আল-মাজমু, খণ্ড ৩, পৃ. ১২)
নামাজ ত্যাগকারীর জন্য উপদেশআল্লাহর দরজা সর্বদা খোলা। যে ব্যক্তি তাওবা করে আবার নামাজে ফিরে আসে, আল্লাহ তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘তুমি বলো, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর সীমালঙ্ঘন করেছে, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করেন।’ (সুরা যুমার, আয়াত: ৫৩)
নামাজ শুধু একটি ফরজ ইবাদত নয়, মুসলমানের জীবনের মেরুদণ্ড। যে নামাজ পড়ে, সে আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকে; আর যে নামাজ ত্যাগ করে, সে নিজের জীবনের আলো নিভিয়ে দেয়।
তাই আসুন, আমরা সবাই প্রতিজ্ঞা করি, আজ থেকেই নিয়মিত নামাজ পড়ব, কারণ নামাজই আমাদের কবরের আলো, দুনিয়ার শান্তি, আর আখিরাতের মুক্তির চাবিকাঠি।
আরও পড়ুনজীবনকে ছন্দে ফেরাবে ‘ধীর নামাজ’২৪ মে ২০২৫