সাড়ে ৮ বছরে মাইন বিস্ফোরণে হতাহত ৫৭, পা হারিয়েছেন ৪৪ জন
Published: 1st, July 2025 GMT
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার চেরারমাঠ এলাকার বাসিন্দা বদি আলম। ২০১৮ সালে মিয়ানমার সীমান্তে ঝাড়ুফুল কাটতে গিয়ে স্থলমাইন বিস্ফোরণে হারিয়েছেন তাঁর দুই পা। এর পর থেকেই চলাফেরা করতে পারেন না তিনি। উপার্জন না থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবন কাটছে তাঁর।
বদি আলমের মতো স্থলমাইন বিস্ফোরণের শিকার হয়ে অসহায় দিন কাটছে বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকার অনেক বাসিন্দার। পুলিশ ও স্থানীয় মানুষের তথ্য, গত সাড়ে আট বছরে মাইন বিস্ফোরণে হতাহত হয়েছেন নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম, দোছড়ি, সদর এবং রুমার রেমাক্রীপ্রাংসা ইউনিয়নের অন্তত ৫৭ জন। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ৫ জন, পা হারিয়েছেন ৪৪ জন।
মাইন বিস্ফোরণে আহত বদি আলমের স্ত্রী গুল ফরাস জানান, পাঁচ ছেলেমেয়ে রয়েছে তাঁদের। স্বামী বদি আলম আহত হওয়ার পর তিনি দিনমজুর হিসেবে কাজ করে সংসারের খরচ চালাচ্ছেন। কিছুদিন ধরে তাঁর এক কিশোর ছেলেও সংসারের জন্য উপার্জন করছে। ভাঙাচোরা একটি বাড়ি ও ভিটা ছাড়া সম্বল কিছুই নেই। তাই পরিবার নিয়ে খুবই অর্থকষ্টে দিন যাচ্ছে তাঁদের।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চাকঢালা আমতলী এলাকার ফরিদুল আলম ২০১৭ সালে মাইন বিস্ফোরণে পা হারান। তখন তাঁর বয়স ১৬ বছর। এখন একটি বেসরকারি সংস্থার দেওয়া কৃত্রিম পা ও লাঠিতে ভর করে চলাফেরা করেন, কিন্তু ভারী কাজকর্ম করতে পারেন না। বাবা মারা গেছেন। তিন ভাই ও তিন বোনের সবাই আলাদাভাবে বসবাস করেন। এক ভাইয়ের ঘরে বসবাস করছেন তিনি। জানতে চাইলে বলেন, ‘খুব অসহায় জীবন যাপন করছি। বেশি দূরে হাঁটাচলা করতে পারি না। কেউ একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিল ভালো হতো।’
চেরারমাঠ এলাকার বাসিন্দা সোনা আলী (৫০ ) ও সুরত আলীও (৪৫) মাইন বিস্ফোরণে পা হারিয়েছেন। তাঁরা জানান, বিস্ফোরণে আহত হওয়ার পর একদিকে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে। অন্যদিকে নিজেদের বেঁচে থাকতে হচ্ছে দুঃসহ জীবন নিয়ে। কোনো কাজকর্ম করতে না পেরে পরিবারের বোঝা হয়ে থাকা কষ্টের বলে জানান দুজন।
পুলিশ ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে রোহিঙ্গারা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হয়। তখন থেকেই সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি ঘটনার শিকার হচ্ছেন নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চাকঢালা, আশাতলী, জামছড়ি, ফুলতলী ও জারুলিয়াছড়ি সীমান্তের মানুষ। আগে এসব সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) নিয়ন্ত্রণ ছিল। তবে ২০২৩ সাল থেকে এসব সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরকান আর্মি (এএ)।চাকঢালার এক বাসিন্দা আমির উদ্দিন (২৭) সীমান্তের শূন্যরেখায় গিয়ে একটি মাইন বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানান তাঁর স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার। বলেন, শাশুড়ি ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে ছোট্ট একটি ঝুপড়িতে থাকেন তিনি। স্বামী নিখোঁজের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি অবহিত করেন। কিন্তু চার মাস পার হলেও স্বামীর খোঁজ মেলেনি। স্থানীয় ইউপি সদস্য ফরিদুল আলম বলেন, বিস্ফোরণে হতাহত পরিবারগুলোকে অসহায় জীবন যাপন করতে হচ্ছে। বিশেষ করে যাঁরা পা হারিয়েছেন, তাঁদের কষ্ট খুব বেশি।
পুলিশ ও স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে রোহিঙ্গারা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য হন। তখন থেকেই সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি ঘটনার শিকার হচ্ছেন নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চাকঢালা, আশাতলী, জামছড়ি, ফুলতলী ও জারুলিয়াছড়ি সীমান্তের মানুষ। আগে এসব সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) নিয়ন্ত্রণ ছিল। তবে ২০২৩ সাল থেকে এসব সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরকান আর্মি (এএ)। গত বছর বান্দরবান পার্বত্য জেলার সঙ্গে মিয়ানমারের ২১০ কিলোমিটার সীমান্ত আরাকান আর্মি দখলে নেয়। এর পর থেকেই স্থলমাইনের বিস্ফোরণের ঘটনা বেড়েছে।
বিজিবির টহল ফাঁকি দিয়ে সেখানে গিয়ে লোকজন বিস্ফোরণে আহত হচ্ছেন, পা হারাচ্ছেন। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম না করলে সমস্যা হতো না। সীমান্ত এলাকার মানুষকে সব সময় সতর্ক করা হচ্ছে। যাঁরা শুনছেন না, তাঁরা হতাহত হচ্ছেনকর্নেল মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ, অধিনায়ক, রামু সেক্টর-কক্সবাজারআইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, ২০১৭ সালের আগে সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ছিল খুবই কম। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে দুটি ঘটনা ঘটে। তখন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে বিজিবি থেকে মিয়ানমারের বিজিপির কাছে প্রতিবাদ জানানো হতো। তবে এখন সীমান্তের ওপারের নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির হাতে থাকায় আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানানো সম্ভব হয় না।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার তথ্য অনুযায়ী, মাইন বিস্ফোরণে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে শুধু নাইক্ষ্যংছড়িতে ১৩ জন পা হারিয়েছেন। গত বছরে ১০টি মাইন বিস্ফোরণের ঘটনায় পা হারান ১০ জন। ২০২৩ সালে মাইন বিস্ফোরণে চারজন পা হারিয়েছেন। ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পা হারিয়েছেন ৯ জন। ২০১৭ সালে মাইন বিস্ফোরণে পা হারান ৮ জন। ২০১৭ সালে মাইন বিস্ফোরণে নিহত হন ৩ জন, এর পরের বছরগুলোয় দুজন নিহত হয়েছেন। ২০১৭ সালে নিহত ব্যক্তিরা সবাই রোহিঙ্গা। এর বাইরে ২০১৭ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত আরও ছয়জনের আহত হওয়ার তথ্য জানা গেছে। ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর ভালুকখাইয়া এলাকায় সীমান্ত পারাপারের সময় মাইন বিস্ফোরণে আহত হয়ে একটি হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার চেরারমাঠ এলাকার বাসিন্দা বদি আলম ২০১৮ সালে মিয়ানমার সীমান্তে ঝাড়ু কাটতে গিয়ে স্থলমাইন বিস্ফোরণে দুই পা হারান। এরপর থেকেই চলাফেরা করতে পারেন না তিনি। সম্প্রতি তোলা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এসব স ম ন ত র ২০১৭ স ল ক ন আর ম এল ক র পর থ ক পর ব র হত হত
এছাড়াও পড়ুন:
৫৩-তে পৌঁছালেন জয়া আহসান
জয়া আহসানের নামের পাশে লেখা আছে—গেরিলা, দেবী, জিরো ডিগ্রী থেকে তাণ্ডব, উৎসবের মতো সিনেমার নাম। শুধুতে ঢাকাই চলচ্চিত্রেই তিনি সরব তা কিন্তু নয় ওপার বাংলার বিসর্জন, বিজয়া, রাজকাহিনী, অর্ধাঙ্গিনী, ক্রিসক্রস, দশম অবতার-এর নায়িকা তিনি। বলছি জয়া আহসানের কথা। আজ তার জন্মদিন। শুভজন্মদিন জয়া আহসান।
উইকিপিডিয়ার তথ্য, ১৯৭২ সালের ১ লা জুলাই জন্মগ্রহন করেছেন জয়া আহসান। হিসাব অনুযায়ী ৫৩তে পৌঁছালেন নায়িকা। যদিও জন্মসাল নিয়ে দ্বিমত আছে। জয়া আহসান একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন তার জন্ম ১৯৮৩ সালে।
মডেলিং দিয়ে যাত্রা শুরু জয়ার। এরপর নাটক ও সিনেমায় কাজ করে প্রতিটি ধাপে নিজেকে বারবার প্রমাণ করেছেন তিনি। ঢালিউড থেকে টলিউড, সেখান থেকে বলিউডেও পৌঁছে গেছেন জয়া। বাংলাদেশেরই এই সময়ের সবচেয়ে প্রতিভাবান অভিনেত্রীও বলা হয় জয়া আহসানকে।
আরো পড়ুন:
‘নাটকটি দেখে চোখের পানি ধরে রাখা সম্ভব না’
বুবলীর যে গুণে মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পড়েছিলেন তাপস
গল্পনির্ভর সিনেমায় তিনি অসাধারণ আর বাণিজ্যিক সিনেমায় অনন্য। বিশেষত করে নারীকেন্দ্রিক সিনেমাগুলোতে নিজের অভিনয়সত্তাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন জয়। অভিনয়ের জন্য জয় অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড সহ অসংখ্য সম্মাননা এবং অগণিত দর্শকের ভালোবাসা।
জয়া আহসান বলিউড অভিনেতা পঙ্কজ ত্রিপাঠির বিপরীতে কড়ক সিং-এ অভিনয় করেছেন।
জয়া অভিনীত একক নাটক ও টেলিফিল্ম
১.তারপর ও আঙ্গুরলতা নন্দকে ভালোবাসে(২০০৯)
২.গরম ভাত অথবা নিছক ভূতের গল্প(২০০৭)
৩.হাটকুঁড়া(২০০৬)
৪.তারপর পারুলের দিন(২০০৮)
৫.না কমলা না মেহেরজান(২০১২)
৬.ফেরার কোনো পথ নেই থাকে না কোন কালে(২০১০)
৭.অফবিট(২০০৫)
৮.পাঞ্জাবীওয়ালা(২০০৯)
৯.স্বপ্নসিঁড়ি(২০০৪)
১০.আমাদের গল্প(২০১২)
১১. সম্পর্কের দানা(২০০৯)
১২.লীলাবতী(২০০৬)
১৩.নো ম্যানস ল্যান্ড(২০০৬)
১৪.মায়েশা(২০০৯)
১৫.এ জার্নি বাই বোট(২০১০)
১৬.অবাক সন্দেশ(২০০৮)
১৭.বিকল পাখির গান(২০০৯)
১৮.জোৎস্না নদী ও রহিমের কিছু দৃশ্যকাব্য(২০১২)
জয়া অভিনীত ধারাবাহিক নাটক
১.এনেছি সূর্যের হাসি(২০০৫)
২.টু-লেট(২০০৮)
৩.শঙ্খবাস(২০০৭)
৪.চৈতা পাগল(২০১০)
৫.৬৯(২০০৫)
৬.সংশয়(২০০৩)
জয়া অভিনীত সিনেমা
১.গেরিলা(২০১১)
২.বিসর্জন(২০১৭)
৩.খাঁচা(২০১৭)
৪.ডুবসাঁতার(২০১০)
৫.ফিরে এসো বেহুলা(২০১২)
৬.বিজয়া(২০১৯)
৭.এক যে ছিল রাজা(২০১৮)
৮.জিরো ডিগ্রী(২০১৫)
৯.দেবী(২০১৮)
১০.ভালোবাসার শহর(২০১৭)
১১.আবর্ত(২০১৩)
১২.রাজকাহিনী(২০১৫)
১৩.বিনিসুতোয়(২০২১)
১৪.অর্ধাঙ্গিনী(২০২৩)
১৫.বিউটি সার্কাস(২০২২)
ঢাকা/লিপি