ট্রাম্পের আশ্রয় নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করলেন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালত
Published: 4th, July 2025 GMT
মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করা ব্যক্তিদের আশ্রয় প্রার্থনার অধিকার সীমিত করতে চাওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ স্থগিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এক ফেডারেল বিচারক। প্রতিবছর অন্তত ৫০০ বাংলাদেশি এই সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা করেন।
স্থানীয় সময় বুধবার ওয়াশিংটনের ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের বিচারক র্যান্ডলফ ড্যানিয়েল মস ১৪ দিনের জন্য এ আদেশ স্থগিত করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসন এ সময়ে আপিল না করলে ১৬ জুলাই থেকে আদেশটি কার্যকর হবে এবং আশ্রয় চাওয়ার অধিকার ফিরে আসবে।
তবে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র আবিগেইল জ্যাকসন এক বিবৃতিতে জানান, ট্রাম্প প্রশাসন এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে। তাঁর ভাষায়, ‘একজন জেলা বিচারকের রায় রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সীমান্ত রক্ষার ক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করছে।’
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার বিচারক মসকে কটাক্ষ করে ‘মার্ক্সবাদী’ বলে মন্তব্য করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মিলার লেখেন, ‘এই রায় ভবিষ্যতে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ করে দেবে।’
বিচারক মস তাঁর ১২৮ পৃষ্ঠার রায়ে বলেন, ‘এই নির্বাহী আদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন ও জাতীয়তা আইন (আইএনএ) এবং সংবিধানের পরিপন্থী। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে প্রত্যেক ব্যক্তির আশ্রয় চাওয়ার অধিকার আছে, সে বৈধভাবে এসেছেন কি না, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।’
আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) গত ফেব্রুয়ারিতে এই মামলা করেছিল। সংস্থাটি জানায়, ট্রাম্পের আদেশ আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ আইন লঙ্ঘন করে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর নীতির কারণে সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশের হার ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। আদালতের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের জুন মাসে সীমান্তে ৬ হাজারের কম আটকের ঘটনা ঘটেছে, যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার ইঙ্গিত দেয়।
দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে বহু মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের আশায় মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে হেঁটে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এই পথে এশিয়া থেকেও প্রায় ৫ শতাংশ অভিবাসনপ্রত্যাশী আসেন।
উল্লেখ্য, বিচারক র্যান্ডলফ ড্যানিয়েল মস সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রশাসনের সময়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র প রব শ র ব চ রক
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামানের জামায়াতে যোগদানের খবরে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া
দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতরুজ্জামান বিএনপি থেকে সর্বশেষ বহিষ্কার হন ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। দলে না থাকলেও রাজনীতি থেকে সরে যাননি। বিশেষ করে নানা ইস্যুতে টক শো বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা বলে আলোচনায় ছিলেন। আলোচিত এই নেতা জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়ে নতুন করে আলোচনায় ফিরেছেন। এ নিয়ে তাঁর নিজ জেলা কিশোরগঞ্জে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামানের বাড়ি জেলার কটিয়াদীতে। কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়নে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে টানা দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে পরাজিত হন। তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন। আজ শনিবার দুপুরে তাঁর জামায়াতে যোগদানের খবর ছড়িয়ে পড়ে। ফুল হাতে জামায়াতের আমিরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
জামায়াতে যোগদানের বিষয়টি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপাতত কিছু বলা সম্ভব নয়। আপনাদের নিয়ে বসব। খোলামেলা কথা বলব।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে রাজধানীর মগবাজারে জামায়াতের কার্যালয়ে গিয়ে দলের আমির শফিকুর রহমানের কাছে ফরম পূরণ করে জামায়াতে যোগ দেন আখতারুজ্জামান। জামায়াতের বিজ্ঞপ্তিতে আখতারুজ্জামানের বিষয়ে বলা হয়, ‘দলের নীতি ও আদর্শ, দেশপ্রেম এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জামায়াতে ইসলামীর অবিচল অবস্থানের প্রতি গভীর আস্থা রেখে সংগঠনের প্রাথমিক সহযোগী সদস্য ফরম পূরণ করেন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন।...জামায়াতে ইসলামীর নিয়মনীতি, আদর্শ, দলীয় শৃঙ্খলা ও আনুগত্যের প্রতি সর্বদা অনুগত থাকার অঙ্গীকার করেন।’
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জামায়াতের কটিয়াদী উপজেলা আমির মোজাম্মেল হক জোয়ারদার বলেন, ‘সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। তবে জামায়াতের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তাঁর যোগ দেওয়ার বিষয়টি প্রচার করা হয়েছে। আগে লিখিতভাবে অবহিত হই। তারপর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাব।’
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জামায়াতের আমিরের সঙ্গে ফুল হাতে আখতারুজ্জামানের একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়ায় আলোচনার জন্ম দেয়। প্রথমে ছবিটি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হলেও পরে সবাই বিশ্বাস করেন। কেউ কেউ বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিলেও অনেকে সমালোচনা করেছেন।
কটিয়াদী উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এই লোকের (আখতারুজ্জামান) রাজনৈতিক ক্যারিয়ার অনেক আগেই শেষ। এখন নতুন করে কোথাও যোগ দিয়ে কতটা সুবিধা করতে পারেন, সময় বলে দেবে।’
আরও পড়ুনজামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান২ ঘণ্টা আগেনাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির কয়েকজন নেতা বলেন, আখতারুজ্জামান একরোখা স্বভাবের মানুষ। মুখে কিছু আটকায় না। প্রতিবারই টক শোতে দলের বিরুদ্ধে কথা বলে কেন্দ্রের রোষানলে পড়েছেন। বিএনপি থেকে এক-দুবার নয়, পাঁচবার বহিষ্কার করা হয়েছে। নতুন দলেও তাঁর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হবে টক শোতে কথার বলার কারণে। বিএনপি বারবার বহিষ্কার করে ফিরিয়ে নিলেও জামায়াত সেই সুযোগ না-ও দিতে পারে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দলীয় পরিচয়ে আখতারুজ্জামান রাজনৈতিক মাঠে ফিরতে চাচ্ছেন—এমন আভাস এক বছর আগে থেকেই পাওয়া যাচ্ছিল। তিনি আবার বিএনপিতে ফিরতে চেয়েছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবি তুলেছেন। এবারের নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী জালাল উদ্দিনের পক্ষে কাজ করার ঘোষণাও দেন। দুই সপ্তাহ আগে তাঁর অনুগতরা সভা করে তাঁকে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি তোলেন। এর মধ্যে আজ তিনি জামায়াতে যোগ দিলেন।