নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ইরানের মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মদি তেহরান থেকে প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন বলে জানিয়েছে নোবেল কমিটি। গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে নোবেল কমিটি এ কথা জানায়।

নারী ও মানবাধিকারের পক্ষে লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে নার্গিসকে ২০২৩ সালে শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়। বিখ্যাত এই মানবাধিকারকর্মী গত এক দশকের বেশির ভাগ সময় কারাবন্দী ছিলেন। গত ডিসেম্বরে চিকিৎসাজনিত কারণে তাঁকে তেহরানের এভিন কারাগার থেকে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়। তবে তাঁর আইনজীবীরা বারবার আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছেন, যেকোনো সময় তাঁকে আবারও গ্রেপ্তার করা হতে পারে।

নরওয়ের নোবেল কমিটির সভাপতি ইয়র্গেন ওয়াটনে ফ্রাইদনেস বিবৃতিতে বলেন, তিনি নার্গিস মোহাম্মদির কাছ থেকে একটি ‘জরুরি ফোনকল’ পেয়েছেন। ৫৩ বছর বয়সী নার্গিস তাঁকে জানিয়েছেন, তাঁর জীবনের নিরাপত্তা এখন চরম হুমকির মুখে পড়েছে।

ফ্রাইদনেস বলেন, তাঁর নিজের ভাষায়, ‘আমি শাসকগোষ্ঠীর এজেন্টদের কাছ থেকে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে “শারীরিকভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার” হুমকি পেয়েছি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, নার্গিস মোহাম্মদিকে দেওয়া হুমকি থেকে এটি স্পষ্ট যে তিনি যদি ইরানের অভ্যন্তরে সব ধরনের জনসম্পৃক্ততা এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক প্রচার বা গণমাধ্যমে অংশগ্রহণ থেকে নিজেকে দূরে না রাখেন, তাহলে তাঁর নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।

কমিটি জানায়, তারা নার্গিস মোহাম্মদিসহ দেশটির শাসকগোষ্ঠীর সমালোচক যেসব নাগরিক এ ধরনের হুমকিতে রয়েছেন, তাঁদের নিয়ে ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। কর্তৃপক্ষের প্রতি তাদের আহ্বান, ‘তাঁদের কেবল প্রাণ রক্ষাই নয়, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও নিশ্চিত করতে হবে।’

নার্গিস মোহাম্মদি ইরানে মৃত্যুদণ্ডের বিস্তৃত ব্যবহার এবং নারীদের বাধ্যতামূলক পোশাকবিধির বিরুদ্ধে সোচ্চার। এ কারণে তাঁকে একাধিকবার বিচারের মুখোমুখি এবং কারাবরণ করতে হয়েছে।

ইরানে নারীদের ওপর নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্যই নার্গিস মোহাম্মদিকে মূলত নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কার গ্রহণের সময় তিনি কারাগারে থাকায় সন্তানেরা তাঁর পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র গ স ম হ ম মদ ম নব ধ ক র প রস ক র

এছাড়াও পড়ুন:

ফেনীর বন্যা নিয়ন্ত্রণে রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি

ফেনী ও আশপাশের জেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ব্যবস্থা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে ‘ঢাকাস্থ ফেনীবাসী’ নামে একটি নাগরিক সংগঠন। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ দাবি মানা না হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়ক ও রেলপথ অবরোধ এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে অবস্থানেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধন থেকে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ঢাকায় বসবাসরত ফেনী জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ মানববন্ধনে অংশ নেন।

বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, বিগত সরকার ফেনীর প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে, যার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। উপদেষ্টারা সুন্দর সুন্দর কথা বলেন, কিন্তু কাজে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ফেনীবাসী ত্রাণ চায় না, অবিলম্বে বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ব্যবস্থা চায়। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে সরকারের ঘোষণা না এলে ফেনীবাসীকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। একই সঙ্গে ভারতীয় পানি আগ্রাসনের ব্যাপারেও সরকারের পদক্ষেপ দাবি করেন তিনি।

মানববন্ধনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘মিথ্যা আশ্বাস আমরা শুনতে চাই না। আর যেন যখন-তখন বন্যায় না ডোবে, সে ব্যবস্থা চাই।’

সভাপতির বক্তব্যে সরকারের ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে ফেনীর ছাগলনাইয়া ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দিদারুল আলম মজুমদার বলেন, পানিসম্পদ উপদেষ্টা ও তাঁর মন্ত্রণালয় বন্যা নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।

দিদারুল আলম বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নামে বিপুল অঙ্কের টাকার অপচয় এবং দায়িত্ব অবহেলার জন্য উপদেষ্টা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের পদত্যাগ দাবি করছি। অবিলম্বে স্থায়ীভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে রোডম্যাপ না হলে অবরোধসহ কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

মানববন্ধন থেকে সাতটি দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো বন্যা নিয়ন্ত্রণে স্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, যাতে উজানের পানি এসে ভাটি এলাকার বন্যার কারণ না হয়; ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী অঞ্চলের বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের রক্ষাকবচ বল্লামুখা বাঁধ ও মুছাপুর ক্লোজার অবিলম্বে পুনর্নির্মাণ; এই এলাকার শহর ও গ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে জলাধার উদ্ধার, পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা তৈরি, নদী খনন ও যত্রতত্র স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ; চব্বিশ সালের বন্যার পরে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত এক হাজার কোটি টাকার পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ এবং সঠিক তথ্য যাচাই করে যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান; বন্যা উপদ্রব এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনতলা ভবন নির্মাণ, যাতে বন্যার সময় এগুলো আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়; পানি উন্নয়ন বোর্ডের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইনের আওতায় এবং ভারতীয় পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেওয়া বন্ধ করা।

ফেনী কমিউনিটির মুখপাত্র বুরহান উদ্দিন ফয়সলের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) পরিচালক ও দাগনভূঞা উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি মেসবাহ উদ্দিন সাঈদ, ফেনী ফোরামের সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসাইন, আইনজীবী জসিম উদ্দিন তালুকদার, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ নাজমুল হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজিম উদ্দিন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শাহ মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা মনির উদ্দিন, পরশুরাম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন পলাশ, ফেনী সদর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, শ্রমিক দল নেতা আবদুর রহিম, ফেনী এলিট ক্লাবের সভাপতি ফয়জুল্লাহ নোমানী, মনিপুর স্কুলের শিক্ষক রিয়াজুদ্দিন ও দেলোয়ার হোসেন, ফেনী সোসাইটি উত্তরার সহসাধারণ সম্পাদক এমরানুল হক, সোনালী ব্যাংকের সিবিএ নেতা ইউসুফ আলী, কর্মসংস্থান ব্যাংকের সিবিএ নেতা নাসিরুদ্দিন প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ