Prothomalo:
2025-11-27@07:10:49 GMT

সাব্বির এখন আর ‘বেওয়ারিশ’ নন

Published: 27th, November 2025 GMT

সাব্বির হোসেন মুন্না বাড়ি ফিরে আসবেন—এই অপেক্ষায় দিন গুনছিলেন মা মুক্তা বেগম। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও সন্ধান মেলেনি তাঁর। ‘ছেলে হয়তো কোথাও আছে’ এতটুকু আশা ছিল মায়ের বুকে। গত বছরের ৫ আগস্ট সকাল থেকেই এই আশায় বসে ছিলেন তিনি।

১৬ মাস পর মা মুক্তা বেগমের অপেক্ষার শেষ হয়েছে। গত সোমবার তিনি জানতে পেরেছেন, ছেলে আর ফিরবেন না কোনো দিন। তাঁকে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে জুরাইন কবরস্থানে। এখন কবরের সন্ধান পেয়েছেন, এটুকুতেই সান্ত্বনা খুঁজছেন তিনি।

গত বছরের ৫ আগস্ট জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের চূড়ান্ত দিনে ভোরে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ২৪ বছর বয়সী সাব্বির। এরপর আর ফেরেননি।

তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের দমন–পীড়নে কয়েক শ মানুষ নিহত হন ৫ আগস্টের আগেই। সেদিন শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার আগে–পরেও পুলিশের গুলিতে নিহত হন অনেকে।

নিহত সবার পরিচয় তখন জানা যায়নি। বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে সাব্বিরও ছিলেন, তা এখন ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেল।

শেষ হলো অপেক্ষা

মুঠোফোনে মুক্তা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এত দিন আশায় ছিলাম। মনে হইছিল অন্য কোথাও আছে। কিন্তু পাইলাম না। পরে শুনলাম, ছেলে নাই। এখন অন্তত জানতেছি—লাশটা কই আছে।’

ডিএনএ পরীক্ষায় মুক্তা বেগম নিশ্চিত হয়েছেন নিখোঁজ ছেলে সাব্বির আর ফিরবে না। ‘বেওয়ারিশ’ হিসেবে যে লাশটি জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে, তা সাব্বিরের। ৪৭৭ দিন বা প্রায় ১৬ মাস পর ছেলের এই খোঁজ পাওয়াটাই এখন এ পরিবারের একমাত্র সান্ত্বনা।

গত বছরের ১৮ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় মুক্তা বেগম সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন। এতে উল্লেখ করা হয়, ২৪ বছর বয়সী ছেলে সাব্বির ৫ আগস্ট কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হন।

রোড নং-১১, লাইন উত্তর (পশ্চিম ১০), কবর নং-২০, জুরাইন কবরস্থান—চিরকুটে লেখা এই ঠিকানায় দাফন করা হয়েছে সাব্বিরের লাশ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ৫ আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

মায়ের লাশ তুলে লেপ–কাঁথায় মোড়ালো ছেলে

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মোথাজুরী এলাকায় ঘটেছে চাঞ্চল্যকর ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। পারিবারিক কবরস্থান থেকে নিজের মায়ের লাশ তুলে এনে ঘরে মশারী টানিয়ে লেপ–কাঁথা দিয়ে মুড়িয়ে রেখেছে সজিব হোসেন নামের এক মাদকাসক্ত ছেলে। ঘটনাটি জানাজানি হতেই এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র কৌতুহল।

এলাকাবাসী, মৃতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোথাজুরী এলাকার আনতাজ আলীর মৃত্যুর পর তার স্ত্রী খোদেজা বেগম একমাত্র ছেলে সজিবকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। অসৎ সঙ্গে পড়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে সজিব। প্রায়ই মায়ের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ ও শারীরিক নির্যাতন করত। 

গত শনিবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে মা–ছেলের মধ্যে তীব্র বাক-বিতণ্ডা হয়। পরে অভিমান ও মানসিক যন্ত্রণায় খোদেজা বেগম গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। 

ময়নাতদন্ত শেষে রবিবার সন্ধ্যায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। কিন্তু রাতের কোনো একসময় সজিব গোপনে কবর খুঁড়ে লাশ তুলে নিজ ঘরে নিয়ে আসে। সেখানে মশারী টানিয়ে লেপ–কাঁথা দিয়ে লাশ ঢেকে রাখে। 

সোমবার সকালে কবরস্থানে গিয়ে কবর খোলা দেখে এলাকাবাসীর সন্দেহ হয়। পরে তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, সজিব ঘর বন্ধ করে রেখেছে। আচরণেও অস্বাভাবিকতা দেখা যাচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় সজিবের ঘরের তালা ভেঙে ঘরে ঢোকে। ঘরের ভেতর মশারীর নিচে লেপ–কাঁথায় মোড়া অবস্থায় পাওয়া যায় খোদেজা বেগমের লাশ। লাশ থেকে তখন দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল।

এর আগের রাতে সজিব তার মামা আব্দুল মান্নান মিয়াকে ফোন দিয়ে ‘মাকে কেন দাফন করা হলো’ এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দাফনকাজে অংশ নেওয়া স্বজনদের প্রাণনাশের হুমকিও দেন। এতে পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে ভয়–আতঙ্ক তৈরি হয়।

এ ঘটনা জানাজানি হলে আশপাশের বহু মানুষ ভিড় করে লাশ দেখতে। খোদেজার বড় ভাই আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, ‘‘সজিব আমাকে ফোন করে বলেছে মাকে কেন মাটি দিলেন? সে আমাকে খুন করার হুমকিও দিয়েছে। আমারা বর্তমানে চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি।’’

কালিয়াকৈর থানাধীন ফুলবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুরুজ জামান বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও মর্মান্তিক। স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় লাশটি পুনরায় দাফন করা হয়েছে।”

ঢাকা/রেজাউল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মায়ের লাশ তুলে লেপ–কাঁথায় মোড়ালো ছেলে