বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত প্রতিনিয়ত বিস্তৃত হচ্ছে, রোগীর চাপ বাড়ছে, বাজেট বৃদ্ধি পাচ্ছে, অবকাঠামো আধুনিক হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসনিক কাঠামোয় সেই উন্নয়ন দেখা যায় খুবই কম। দেশের অধিকাংশ হাসপাতালে এখনো চিকিৎসকদেরই প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। চিকিৎসা ও প্রশাসন দুটি ভিন্ন পেশাগত ক্ষেত্র হলেও বাস্তবে একজন চিকিৎসকের কাঁধেই রোগী দেখা থেকে শুরু করে আর্থিক ব্যবস্থাপনা, জনবল নিয়ন্ত্রণ, ক্রয় কার্যক্রম, পরিষেবা তদারকি পর্যন্ত সব দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়। ফলে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয় এবং হাসপাতালের সার্বিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এই বাস্তবতায় প্রতিটি হাসপাতালে পৃথক প্রশাসনিক ক্যাডার নিয়োগ এখন সময়ের দাবি।

চিকিৎসাবিজ্ঞান ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা একই দক্ষতার মাধ্যমে পরিচালনা করা সম্ভব নয়। একজন চিকিৎসকের মূল দায়িত্ব রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা প্রদান ও জরুরি সেবায় মনোনিবেশ করা। তিনি প্রশাসনিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। হাসপাতালের বাজেট প্রণয়ন, টেন্ডার ব্যবস্থাপনা, হিসাবরক্ষণ, মানবসম্পদ পরিচালনা, সরবরাহ ও আইনগত নথিপত্র পরিচালনার মতো বিষয়গুলো বিশেষ দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা দাবি করে। কিন্তু এসব দায়িত্ব নিতে গিয়ে চিকিৎসকদের সময় এবং মনোযোগ বিভক্ত হয়ে পড়ে, যার প্রভাব সরাসরি রোগীর সেবায় পড়ে।

অন্যদিকে উপজেলা ও জেলা হাসপাতালগুলোতে দালালদের দৌরাত্ম্য উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। রোগী ভর্তি, পরীক্ষা–নিরীক্ষা, ওষুধ সংগ্রহ ও বহির্বিভাগ থেকে ব্যক্তিগত ক্লিনিকে পাঠানোর মতো অনৈতিক কর্মকাণ্ডে দালালচক্র সক্রিয় থাকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারলেও অনেক সময় আইনগত সীমাবদ্ধতা বা প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেন না।

ফলে প্রতিটি ঘটনায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতি প্রয়োজন হয় এবং অভিযান ছাড়া স্থায়ী সমাধান আসে না। যদি হাসপাতালে নিজস্ব প্রশাসনিক ক্যাডার থাকত, তারা নিয়মিত তদারকি, আইন প্রয়োগ, অভিযোগ নিষ্পত্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার মাধ্যমে দালালচক্র নিয়ন্ত্রণে আরও দ্রুত এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারতেন। এতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমে যেত এবং হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী হতো।

প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ওষুধসংকট, যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন নষ্ট অবস্থায় পড়ে থাকা, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতায় অব্যবস্থা, স্টাফ অনুপস্থিতি, অপচয় এবং ক্রয় অনিয়মের মতো সমস্যা তৈরি হয়। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা না থাকায় রোগীরা ভোগান্তির শিকার হন। দক্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা থাকলে এসব সমস্যার সমাধান আরও দ্রুত ও কার্যকরভাবে করা সম্ভব।

আন্তর্জাতিকভাবে দেখা যায়, উন্নত স্বাস্থ্যব্যবস্থায় হাসপাতাল পরিচালনা করে পেশাদার প্রশাসনিক টিম। চিকিৎসক কেবলমাত্র চিকিৎসাসেবায় মনোনিবেশ করেন। ইংল্যান্ড, জাপান, সিঙ্গাপুরসহ বহু দেশে হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে পৃথক স্বাস্থ্য প্রশাসন ক্যাডার রয়েছে। এতে সেবা কার্যক্রম হয় আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক, পাশাপাশি চিকিৎসকেরা তাদের মূল দায়িত্বে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করতে পারেন।

বাংলাদেশেও প্রতিটি হাসপাতালে প্রশাসনিক ক্যাডার নিয়োগ করলে সুশৃঙ্খল বাজেট ব্যবস্থাপনা, মানসম্মত ক্রয় ও সরবরাহ, স্টাফ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ এবং সেবার মান উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি দুর্নীতি, অপব্যবহার এবং অদক্ষতার সুযোগ কমে যাবে। রোগী সেবা হবে আরও দ্রুত, সহজ এবং জনবান্ধব।

স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের সঠিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসনকে পেশাদার হাতে তুলে দিতে হবে। চিকিৎসকেরা চিকিৎসায় এবং প্রশাসনিক ক্যাডাররা ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পালন করলে হাসপাতালগুলো হবে আরও কার্যকর, স্বচ্ছ ও আধুনিক। সময় এসেছে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় কাঠামোগত পরিবর্তন আনার এবং একটি পৃথক প্রশাসনিক ক্যাডার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নত ও টেকসই করার।

রাইসুল ইসলাম রিফাত নকলা, শেরপুর।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক র

এছাড়াও পড়ুন:

চায়ের রাজ্যে শীতের ধাপট 

মৌলভীবাজারে জেঁকে বসেছে শীত। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত চায়ের রাজ্য হিসেবে পরিচিত জেলার শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

মৌলভীবাজার জেলা পাহাড়, হাওর এবং চা বাগান বেষ্টিত। ফলে ভোর থেকেই কুয়াশা ও শিশিরের সঙ্গে প্রচণ্ড ঠান্ডায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সন্ধ্যায় শীত আরো তীব্র হয়ে উঠছে। চা শ্রমিক অধ্যুষিত মৌলভীবাজারের বিভিন্ন রেলস্টেশন ও ফুটপাতে শীতের পোশাকের চাহিদা বেড়েছে চোখে পড়ার মতো।

আরো পড়ুন:

দিনাজপুরের তাপমাত্রা ১৪.২ ডিগ্রি, তেঁতুলিয়ার কত? 

পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নেমেছে ১২ ডিগ্রিতে

এদিকে, গ্রামীন জনপদে নতুন ধান ঘরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে নবান্নের আনন্দ বইছে। গোলায় ধানের সুঘ্রাণ আর পিঠা-পুলিতে গ্রামের প্রতিটি ঘরে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা নামলেই শহরের অলিগলিতে পিঠার দোকানগুলোতে ভিড় জমছে।

তীব্র শীতের মাঝেও জীবিকার টানে সকাল থেকেই কাজে বের হচ্ছেন শ্রমজীবী মানুষ। মৌলভীবাজার শহরের রিকশাচালক ছাতির মিয়া বলেন, “বেলা বাড়ার সঙ্গে রোদের দেখা মেলায় শীতের দাপট কিছুটা কমেছে। যে কারণে স্বস্তিতে কাজ করতে পারছি।”

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক দিলীপ বৈষ্ণব জানান, আজ ভোর ৬টা এবং সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ঢাকা/আজিজ/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ