Prothomalo:
2025-11-02@11:10:44 GMT

মায়ের হাতের রান্না

Published: 13th, July 2025 GMT

স্কুল থেকে বাসায় ফিরলে আম্মা বলতেন, ‘খেতে আয়; আজকে খুব ভালো জিনিস রান্না করেছি।’

আমি বলতাম, ‘বুঝেছি, তোমার ভালো জিনিস মানে তো লাউ না হলে টাটকিনি মাছ।’

আম্মা আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করতেন। তাঁর ধৈর্যের কমতি ছিল না। কত কিছু রান্না করে আমাকে খুশি করতে চাইতেন। এরপর কলেজে উঠতে না উঠতেই আম্মা মারা গেলেন। ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলীতে আমাদের বাড়িটা ফাঁকা হয়ে গেল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে হলে চলে এলাম।

অল্প দিনেই আম্মার হাতের রান্না লাউ–চিংড়ি, লাউ–শোল মাছ, লাউয়ের টক, টাটকিনি মাছ ভুনা, ইলিশ মাছের ঝোল, ইলিশ পোলাও, বেগুনভাজা, শিম দিয়ে মাগুর–শিং মাছের ঝোল, চিতল মাছের কোফতা, চিংড়ি মাছের মালাইকারি, মাছের ঝোলে ডালের বড়ি, বেগুনখাসি, কচুর লতি দিয়ে ইলিশ মাছের মাথা, কচুর গোড়ার শক্ত অংশ ভেজে নারকেল দিয়ে রান্না, নারকেলভর্তা, ডাল চচ্চড়ি, থানকুনিপাতা ভাজা, কুমড়া ফুলের বড়া, মচমচে পরোটা, কোরবানির গরুর ভুঁড়ি রান্না মিস করতে শুরু করলাম।

আম্মা মজার দুধ–চা বানাতেন। তাঁর চা বানানোর একটা ছোট্ট হাঁড়ি ছিল; রান্নার ফাঁকে ফাঁকে চা বানিয়ে খেতেন। মাঝেমধ্যে সকালের নাশতায় ডালপুরি বানাতেন; এখনো সেই ডালপুরির স্বাদ মুখে লেগে আছে। এই পৃথিবীতে তা আর কখনো পাব না! নারকেল, শর্ষেবাটা আর লাউপাতা দিয়ে ‘ভেদা’ নামের খাবারটা রান্না হলে ছোটবেলা স্কুল থেকে ফিরে আমি খুশি হতাম। গরম ভাত দিয়ে ভেদা খেতে কী যে স্বাদ, বোঝাব কী করে!

শীতের দিনে মজা করে পাঙাশ মাছ রান্না করতেন। তখন আমি পাঙাশ একদমই পছন্দ করতাম না। এখন বুঝি কী অমৃত হারিয়েছি। রুই–কাতলা মাছও খেতাম না; কেমন একটা গন্ধ লাগত। এ কারণে আমাদের পুকুরের রুই–কাতলা মাছ আম্মা তেঁতুল ও চিনি দিয়ে টক–মিষ্টি করে রান্না করে দিতেন, যা ছিল সুস্বাদু।

আমড়া আর নারকেলের দুধ দিয়ে একটা মিষ্টি মিষ্টি স্বাদের টক রান্না করতেন। শীতের দিনে বানাতেন খেজুর রসে ভেজানো দুধ–চিতই পিঠা। এরপর ভেজানো পিঠার ওপর দুধের সর দিয়ে পরিবেশন করতেন। আমি শুধু সর খেতাম; পিঠা খেতাম না।

সকালের নাশতায় বানাতেন ভাপা পিঠা, ধোঁয়া ওঠা সেই পিঠা ফুঁ দিয়ে খেতে কী যে মজা লাগত। মা কোরানো নারকেল বেটে কড়াইতে দিয়ে নেভানো চুলায় বসিয়ে রাখতেন। তাতে যে তেল হতো, সেটা আমরা চুলে দিতাম আর তেলের নিচে বাদামি রঙের একটা ক্ষার জমত, যেটা দিয়ে গরম ভাত খেতে খুব উপাদেয় ছিল।

আরও কত রকমারি রান্না করতেন—খেজুরের রসের পায়েস আর নালি গুড়, চাল কুমড়ার মোরব্বা, বরই শুকিয়ে গুড় দিয়ে মিষ্টি আচার। একবার আম্মা এক কড়াই চালতার আচার বানিয়ে মিটসেফে রেখেছিলেন। আচারের আসল মসলাটা তখনো দেওয়া হয়নি। পরের দিন আসল মসলা বানিয়ে মেশানোর জন্য মিটসেফ খুলে দেখেন কড়াইয়ে কোনো আচার নেই। আমরা সব খেয়ে ফেলেছি।

আম্মাকে হারিয়েছি অনেক বছর আগে; কিন্তু আম্মার হাতের রান্নার স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। আগে বুঝিনি আম্মার সব রান্নায় ‘ভালোবাসা’ নামের যে মসলাটা মেশাতেন, তার উৎস কোথায়। তখনই বুঝেছি, যখন আমার মেয়ে বলেছে, ‘আম্মু, তুমি না রান্না করলে আমি গরুর মাংস খাব না।’ কিংবা যেদিন ওর বন্ধুদের দাওয়াত করে বলেছে, ‘তোমাদের আমার আম্মুর হাতের চিকেন বিরিয়ানি খাওয়াব’ অথবা যেদিন স্কুল থেকে এসে বলেছে, ‘আমার বন্ধুরা বলেছে তোমার আম্মুর বানানো স্যান্ডউইচ খুব মজা হয়।’ আমি আসলে রান্না শিখেছিই আমার ছেলেমেয়ের জন্য। আমি যখন বুঝেছি ওরা আমার হাতের রান্না আগ্রহ নিয়ে খায়, আমি তখন থেকে রান্নাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি।

আমার ছেলেমেয়েও আমার মতোই খাওয়া নিয়ে ওদের আম্মুকে জ্বালায়। প্রতিদিনের স্বাভাবিক খাবার, যেমন ভাত, মাছ, সবজি, ডাল ইত্যাদি একেবারেই খেতে চায় না; খায়ও না। ওরাও আমার মতোই ওদের আম্মুকে বলে, ‘তোমার কাছে ভালো খাবার মানে কী, তা আমরা জানি। এগুলো কি কোনো ভালো খাবার হলো!’ এ জন্যই মেয়েকে বিদেশে পড়তে পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত ছিলাম। কিন্তু মেয়ে যখন ফোন করে বলে, ওর এখন বাসার খাবার খেতে খুব ইচ্ছা করে, আমার চোখে পানি চলে আসে—আমার মতো আমার মেয়েও মায়ের হাতের রান্না মিস করে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র ম আম ম র র আম ম ন রক ল করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

বায়ার্নের টানা ১৪ ম্যাচ জয়ের অবিশ্বাস্য রেকর্ড

জার্মান ফুটবলের পরাশক্তি বায়ার্ন মিউনিখ আবারও ছুঁয়ে দেখল ইতিহাস। চলতি ডিএফবি পোকাল তথা জার্মান কাপের ২০২৫-২৬ আসরে আরেকটি দারুণ জয় তুলে নিয়ে তারা টানা ১৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার গৌরব অর্জন করেছে। এর মাধ্যমে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের ইতিহাসে নতুন এক রেকর্ড গড়ে নিজেদের নাম স্বর্ণাক্ষরে খোদাই করল তারা।

ভিনসেন্ট কোম্পানির অধীনে এই মৌসুমে বায়ার্ন যেন অন্য গ্রহের এক দল। গ্রীষ্মের ট্রান্সফার উইন্ডোতে লুইস দিয়াজ ও নিকোলাস জ্যাকসনের মতো তারকাদের দলে টেনে শক্তি বাড়ায় জার্মান জায়ান্টরা। এরপর থেকেই তারা খেলছে দুরন্ত ছন্দে। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ১৪ ম্যাচে জয়!

আরো পড়ুন:

রোহিতের সেঞ্চুরির ‘হাফ-সেঞ্চুরি’, ঢুকলেন এলিট ক্লাবে

রশিদ-জাম্পাকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশের রিশাদ

এর আগে বায়ার্ন মিউনিখ ও এসি মিলান যৌথভাবে ১৩ ম্যাচ টানা জয়ের রেকর্ডের মালিক ছিল। তবে জার্মান কাপে বুধবার দিবাগত রাতে কোলনের বিপক্ষে ৪-১ গোলের জয়ে সেই রেকর্ড ভেঙে এককভাবে শীর্ষে উঠে গেছে বাভারিয়ানরা।

সে ম্যাচে লুইস দিয়াজ শুরুতেই গোল করে এগিয়ে দেন দলকে। এরপর হ্যারি কেন ৩৮ ও ৬৪ মিনিটে জোড়া গোল করে ব্যবধান বাড়ান। আর ৭২ মিনিটে মাইকেল ওলিসে গোল করে বায়ার্নের উৎসবে যোগ দেন।

ম্যাচ শেষে বায়ার্নের ডিফেন্ডার জোনাথান তা বলেন, “আমরা সব সময় ক্ষুধার্ত, জয়ের ক্ষুধায়। কখনও সন্তুষ্ট থাকি না। আজকের জয় উপভোগ করছি। তবে কাল থেকেই পরের ম্যাচের প্রস্তুতি শুরু হবে।”

আগামী ১ নভেম্বর বুন্দেসলিগায় বায়ার লেভারকুসেনের মুখোমুখি হবে বায়ার্ন মিউনিখ। এরপর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস লিগে ৫ নভেম্বর তাদের অপেক্ষা করছে আরও বড় চ্যালেঞ্জ, প্যারিসে পিএসজির বিপক্ষে লড়াই। বর্তমানে দুই দলই চ্যাম্পিয়নস লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে। ফলে ম্যাচটি হয়ে উঠবে মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের এক মহারণ।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম দেখায় প্রেম নাকি ঝগড়া? আসছে ইয়াশ–তটিনীর ‘তোমার জন্য মন’
  • জেমিনিতে যুক্ত হলো গুগল স্লাইডস তৈরির সুবিধা, করবেন যেভাবে
  • নড়াইলে ৩ দিন ধরে স্কুলছাত্রী নিখোঁজ
  • রোহিতের পর কোহলির রেকর্ডও কাড়লেন বাবর, পাকিস্তানের সিরিজ জয়
  • নাজমুলই থাকছেন টেস্ট অধিনায়ক
  • বন্দীদের ফুল দিয়ে বরণ, চালু হলো ফেনীর দ্বিতীয় কারাগার
  • সিলেটে বাসদ কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান, আটক ২২
  • যাত্রাবাড়ীতে বিদ্যুৎমিস্ত্রিকে পিটিয়ে হত্যা
  • বোনকে খুন করে লাশ বস্তায় ভরেন, পুলিশ জিজ্ঞেস করলে জানান বস্তায় গম
  • বায়ার্নের টানা ১৪ ম্যাচ জয়ের অবিশ্বাস্য রেকর্ড