যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি থেকে ভিয়েতনাম কতটা লাভবান হবে
Published: 13th, July 2025 GMT
ভিয়েতনামের পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান থান কং গার্মেন্ট অ্যাডিডাস, ক্যালভিন ক্লেইন ও কলাম্বিয়ার মতো বড় ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক তৈরি করে। তারা আশা করেছিল, ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি হয়ে যাওয়ায় স্বস্তি পাওয়া যাবে।
৯ জুলাইয়ের সময়সীমার মধ্যে যে দুটি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি হয়েছিল, ভিয়েতনাম তার মধ্যে একটি। ফলে উচ্চ শুল্কের খড়্গ এড়ানো গেছে, ভিয়েতনামের ব্যবসায়ীরা এমনটাই মনে করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের আশার সেই বেলুন চুপসে যাচ্ছে। খবর ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
চুক্তির বিস্তারিত কিছুই এখনো পরিষ্কার নয়। ট্রাম্প যেখানে ভিয়েতনামের পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছেন। ২ এপ্রিল ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। সেই তুলনায় এই ২০ শতাংশ অনেক কম। কিন্তু কোনো পক্ষই চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রকাশ করেনি। হ্যানয় শুধু বলছে, ‘ন্যায়সংগত ও ভারসাম্যপূর্ণ বাণিজ্য কাঠামো’ ঠিক করা গেছে।
সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে চুক্তির একটি অংশ নিয়ে। সেখানে বলা হয়েছে, যেসব পণ্য অন্য দেশ থেকে ঘুরপথে ভিয়েতনামের মাধ্যমে রপ্তানি হবে (ট্রান্সশিপমেন্ট), সেগুলোর ওপর ৪০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসতে পারে। তবে ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে, তা বলা হয়নি।
থান কং গার্মেন্টের চেয়ারম্যান ত্রান নু তুং বলেন, ‘চীনের কাঁচামাল দিয়ে ভিয়েতনামে তৈরি পোশাক যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করতে গেলে কত শুল্ক দিতে হবে—২০, ৩০ না ৩৫ শতাংশ? কেউ তা জানে না। আমাদের শুধু অপেক্ষা করতে হবে।’
তুং আরও বলেন, এখন যে শুল্ক আছে, সেটা ১৫ থেকে ১৭ শতাংশের মতো। ট্রাম্পের ২০ শতাংশ প্রস্তাবিত হার খুব একটা বেশি নয়, কিন্তু ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ হিসেবে ধরা হলে বাড়তি চাপ পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির দিক থেকে ভিয়েতনাম এখন তৃতীয় বৃহত্তম—চীন ও মেক্সিকোর পরই তার স্থান। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য উদ্বৃত্ত দাঁড়িয়েছে ১২৩ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার। কিন্তু এত বড় রপ্তানিনির্ভর দেশের (রপ্তানি-জিডিপি অনুপাত ৯০ শতাংশের কাছাকাছি) জন্য ট্রাম্পের এই অনিশ্চিত শুল্কনীতি বড় ধাক্কা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
সমস্যা আরও যে কারণে ঘনীভূত হয়েছে, তা হলো দেশটিতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ এসেছে চীন থেকে—গত বছর নতুন প্রকল্পের এক-তৃতীয়াংশই ছিল চীনভিত্তিক। বাজারে অনেক দিন ধরেই জল্পনাকল্পনা, চীনা কোম্পানিগুলো মার্কিন শুল্ক এড়াতে ভিয়েতনামকে ‘বাইপাস পথ’ হিসেবে ব্যবহার করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ শব্দের সংজ্ঞা যদি কেবল চীনের পণ্যে ‘মেড ইন ভিয়েতনাম’ মোড়ক লাগিয়ে রপ্তানি করা বোঝায়, তাহলে অত প্রভাব পড়বে না। চীনা কাঁচামালের একটি নির্দিষ্ট মাত্রার ব্যবহারও যদি এই শ্রেণিতে ফেলা হয়, তাহলে অনেক ভিয়েতনামী কোম্পানি সমস্যায় পড়বে।
একজন আমেরিকান ব্যবসায়ী হ্যানয় থেকে বলেন, চীনা কাঁচামাল বাদ দিয়ে পোশাক তৈরি সম্ভব নয়। শুধু ভিয়েতনাম নয়, কোনো দেশেই এখন তা সম্ভব নয়, এটাই বাস্তবতা।
আরেকটি বড় প্রশ্ন হচ্ছে, ভিয়েতনামের জন্য যে ২০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হলো, সেটা কি প্রতিবেশীদের তুলনায় ভালো, নাকি খারাপ। ‘চায়না প্লাস ওয়ান’ কৌশলের কারণে অনেক কোম্পানি এখন চীন ছেড়ে ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ বা ফিলিপাইনমুখী। এখন কারা কতটা সুবিধা পেল, ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের ধারা তার ভিত্তিতেই ঠিক হবে।
ট্রাম্প ইতিমধ্যে নতুন সময়সীমা ঘোষণা করেছেন, আগামী ১ আগস্ট। তার আগেই অন্যান্য দেশকে চুক্তি করতে হবে। ডেজান শিরা অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের মার্কো ফোস্টার বলছেন, ভিয়েতনাম জিতল কী হারল, তা নির্ভর করছে বাকিরা কী চুক্তি করছে, তার ওপর।
চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ভিয়েতনামে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ২১ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৫০ কোটি। গত বছরের তুলনায় যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা এখনো আসছেন। দেশটিতে উৎপাদন খরচ কম, কর সুবিধা বেশি।
তবে হানি-ক্যান-ডু কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ গ্রিনস্পনের সাবধান বাণী, ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হলেও মার্কিন বাজারে দাম বাড়বে। পরিণামে মূল্যস্ফীতি বাড়বে আর ক্রেতারা কম কিনবে। ফলে ব্যবসা ও চাকরি—দুটিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
তুং জানিয়েছেন, সময়সীমার আগে মার্কিন ক্রেতারা হুড়াহুড়ি করে কার্যাদেশ দিয়েছে। সে কারণে তৃতীয় প্রান্তিকে কার্যাদেশ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমে গেছে। তাঁর মতে, ভিয়েতনামের পোশাকশিল্পের প্রায় ৭০ শতাংশ কাঁচামাল, যেমন তুলা, সুতা, চেইন, ইলাস্টিক—চীন থেকে আসে। ফলে চীনকে বাদ দিয়ে চলা সম্ভব নয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র
এছাড়াও পড়ুন:
কিলঘুষিতে আহত গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি
গোপালগঞ্জের সাভানা ইকোপার্ক ও রিসোর্টের মেইন গেটের সামনে দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়েছেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মিকাইল হোসেন (৩২)। তাকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে সদর উপজেলার বড় ডুমরাশুর এলাকায় অবস্থিত পার্কের গেটের সামনে তার ওপর হামলা হয়।
আরো পড়ুন:
গবিতে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীকে মারধর, থানায় অভিযোগ
নোয়াখালীতে গণপিটুনিতে যুবক নিহত, পরিবারের দাবি, পরিকল্পিত হত্যা
আহত মিকাইল হোসেন জানান, বিকেলে সাতপাড় এলাকায় গোপালগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. কে এম বাবরের নির্বাচনী জনসভায় যান। সেখান থেকে সন্ধ্যার দিকে কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে সাভানা পার্কে ঘুরতে যান। তখন সাভানা পার্কের এক স্টাফের সঙ্গে পার্কের ভেতরে মটোরসাইকেল ঢুকানো নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়।
তিনি জানান, পার্কের ম্যানেজারসহ অন্যরা বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। রাতে পার্ক থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় দুর্বৃত্তরা তার ওপর হামলা চালায়। তাকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে ও কিলঘুষি মেরে আহত করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
গোপালগঞ্জের বৌলতলী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক আফজাল হোসেন জানান, পার্কের এক স্টাফের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ছাত্রদলের সভাপতির সঙ্গে থাকা এক যুবক ওই স্টাফকে থাপ্পড় মারেন। পরে মিকাইল পার্ক থেকে বের হয়ে চলে আসার সময় স্থানীয় লোকজন ও পার্কের স্টাফরা তার ওপর হামলা করে। থানায় কোনো অভিযোগ হয়নি।
ঢাকা/বাদল/মাসুদ