ছয় দিন আগে ভারতের ঝাড়গ্রামে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যায় তিনটি হাতি। ঠিক একই ধরনের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল বাংলাদেশের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনেও। ট্রেনচালকের বিচক্ষণতায় শেষ পর্যন্ত রক্ষা পায় হাতির পাল। তবে ট্রেনের একটানা হুইসেলে ‘বিরক্ত’ হয়ে হাতির দল ট্রেনের বগিতে ধাক্কা দিয়েছে। এ ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য এলাকায় এ ঘটনা ঘটে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টা ২৫ মিনিটে। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসছিল সৈকত এক্সপ্রেস। যাত্রী ছিল প্রায় ৫০০। এই ট্রেনের লোকোমাস্টার (ট্রেনচালক) ছিলেন আবদুল আউয়াল এবং গার্ড (পরিচালক) সাখাওয়াত হোসেন। তাঁদের ধারণা, হাতির পালটিতে ৪ থেকে ৫টি হাতি ছিল।

গতকাল রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ট্রেনচালক আবদুল আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, রাত আটটায় কক্সবাজার থেকে ছাড়ার নির্ধারিত সময় ছিল সৈকত এক্সপ্রেসের। কিন্তু ট্রেন ছাড়তে ছাড়তে প্রায় ৫০ মিনিট দেরি হয়ে যায়। ট্রেনে নিয়ে আসার পথে হারবাং-লোহাগাড়া সেকশনের চুনতি অভয়ারণ্যে রেললাইনের ওপর একটি হাতি চোখে পড়ে। ওই এলাকায় চার কিলোমিটার পথে ট্রেনের গতি থাকে ২০ কিলোমিটার।

আবদুল আউয়াল বলেন, ধীরগতিতে চালানোর কারণে এবং ট্রেনের হেডলাইটের আলোতে রেলপথের ওপর হাতিকে দেখতে পান। কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। তবে দেখার সঙ্গে সঙ্গে ‘ব্রেক’ চাপতে থাকেন। একপর্যায়ে জরুরি ব্রেকে চাপ দেন। এতে কাজ হয়। হাতি যেখানে অবস্থান করছিল, তার ঠিক আগে গিয়ে ট্রেন থামে। হাতির কোনো বিপদ না হওয়ায় স্বস্তি পান। এরপর হাতি যাতে সরে যায় এ জন্য ঘনঘন হুইসেল দিতে থাকেন। এতে হাতি নিচে নেমে যায়।

হাতি নেমে যাওয়ার পর ১-২ মিনিট পর ট্রেনের গার্ড সাখাওয়াত হোসেন ফোনে করে জানান, হাতির পাল ট্রেনের বগিতে ধাক্কা দিচ্ছে। এতে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম। এর মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই। দ্রুত ট্রেন চালিয়ে এলাকা ত্যাগ করি।আবদুল আউয়াল, ট্রেনচালক

তবে স্বস্তির মুহূর্ত হঠাৎ উবে যায় বলে জানান ট্রেনচালক আবদুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘হাতি নেমে যাওয়ার পর ১-২ মিনিট পর ট্রেনের গার্ড সাখাওয়াত হোসেন ফোনে করে জানান, হাতির পাল ট্রেনের বগিতে ধাক্কা দিচ্ছে। এতে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম। এর মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই। দ্রুত ট্রেন চালিয়ে এলাকা ত্যাগ করি।’

কক্সবাজার থেকে আসা সৈকত এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম স্টেশনে এসে পৌঁছায় রাত একটায়। ট্রেনচালক আবদুল আউয়াল বলেন, এই রেলপথে কিন্তু আগেও ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মারা গিয়েছিল। আবার একই ধরনের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত কিছু হয়নি। পরবর্তী সময়ে আবার ঘটতে পারে। তাই এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, হাতির ক্ষতি না হয়, সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটিতে প্রায় ৫০০ যাত্রী ছিল। এই আন্তনগর ট্রেনে বগি ছিল ১৭টি। শেষ বগিটি ছিল গার্ডের। ট্রেনের গার্ডের দায়িত্বে ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, হঠাৎ ট্রেন থেমে গিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনচালক ফোন করে জানান, রেললাইনের ওপর হাতি আছে। তাই সতর্কতা হিসেবে তাঁর (গার্ডের) বগির ডান পাশের দরজা বন্ধ করে দেন। এরপর বাঁ পাশের দরজায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছিলেন।

হুট করে একটি হাতি ছুটে এসে বগিতে ধাক্কা দেয় জানিয়ে ট্রেনের গার্ড সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘দ্রুত বাঁ পাশের দরজা বন্ধ করে দিই। কিন্তু হাতি ক্রমাগত দরজা ও বগিতে আঘাত করতে থাকে। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে। ট্রেনচালককে ফোন দিয়ে দ্রুত ট্রেন ছাড়তে বলি। এরপর কোনো রকম পার হয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। হাতিও রক্ষা পেয়েছে। মানুষেরও কিছু হয়নি।’

বিচক্ষণতার সঙ্গে ট্রেন থামানো এবং এতে হাতি রক্ষা পাওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলে জানান ট্রেনচালক আবদুল আউয়াল। সৈকতে এক্সপ্রেসের যাত্রী সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের বাসিন্দা রিদুয়ান কবির প্রথম আলোকে বলেন, চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে হঠাৎ ট্রেনটি থেমে যায়। ট্রেন থেমে যাওয়ার পর যাত্রীরা রেললাইনের পশ্চিম পাশে ব্যারিয়ারের ভেতর একটি হাতি দেখতে পান। তখন হাতিটি রেললাইনের নিচে ছিল। যাত্রীদের কেউ কেউ হাতি দেখে আতঙ্কে চিৎকার করতে থাকেন। পরে হাতিটি কাছে এসে ট্রেনের একপাশে ধাক্কা দিতে থাকে। এ সময় দৃশ্যটি যাত্রীদের কেউ কেউ নিজেদের মুঠোফোনে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। পাঁচ মিনিট পর ট্রেনটি চুনতি অভয়ারণ্য এলাকা ত্যাগ করে।

চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী বাহার উদ্দিন আজ বুধবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, অভয়ারণ্য রেঞ্জ কার্যালয়ের উত্তর পাশে রেললাইনের উভয় পাশে থাকা ব্যারিয়ারের ভেতর হাতির পায়ের ছাপ দেখা গেছে। রেঞ্জ কার্যালয়ের ৫০০ মিটার উত্তরে রেললাইনে ব্যারিয়ার নেই। সম্ভবত হাতিটি ওই এলাকা দিয়ে ঢুকে কিছুটা দক্ষিণে চলে আসে। অভয়ারণ্য এলাকায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে। চালক দূর থেকে হাতি দেখতে পেয়ে গতি আরও কমিয়ে দেন। হাতির কাছাকাছি এসে ট্রেন থেমে যায়। এরপর হাতিটি ট্রেনে ধাক্কা দেয়। ট্রেন ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর হাতিটি রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সঙ্গে লাগোয়া আন্ডারপাসের লোহার বেষ্টনী ভেঙে পূর্ব দিকে চলে যায়।

দ্রুত বাঁ পাশের দরজা বন্ধ করে দিই। কিন্তু হাতি ক্রমাগত দরজা ও বগিতে আঘাত করতে থাকে। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে। ট্রেনচালককে ফোন দিয়ে দ্রুত ট্রেন ছাড়তে বলি। এরপর কোনো রকম পার হয়েছি।সাখাওয়াত হোসেন, ট্রেনের গার্ড

গত বছরের ১৩ অক্টোবর রাত সাড়ে আটটার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ঈদ স্পেশাল-১০ ট্রেনের ধাক্কায় একটি বন্য হাতি আহত হয়। দুর্ঘটনার দুই দিন পর ১৫ অক্টোবর বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাতিটির মৃত্যু হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন য প র ণ প শ র দরজ ত য গ কর পর হ ত আতঙ ক ধরন র র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

গিল-সুন্দর-জাদেজার সেঞ্চুরিতে ভারতের জয়ের সমান এক ড্র

ম্যান্ডেটরি শেষ এক ঘণ্টার খেলা যখন শুরু হবে ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস এগিয়ে গেলেন ভারতীয় দুই ব্যাটসম্যানের দিকে। উদ্দেশ্য ড্র মেনে নিয়ে করমর্দন করা। কিন্তু রবীন্দ্র জাদেজা ও ওয়াশিংটন সুন্দর ফিরিয়ে দিলেন স্টোকসকে। না, ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্ট জয়ের কোনো সম্ভাবনাই ছিল না জাদেজা-সুন্দরের ভারতের। ৮৯ ও ৮০ রানে দাঁড়ানো দুই ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরির এত কাছে থেকে ফিরতে চাননি বলেই ফিরিয়ে দিয়েছেন স্টোকসের প্রস্তাব।

এরপর যা হলো সেটিকে হাস্যকর বলাই ভালো। প্রায় অন্ধকার হয়ে আসা মাঠে বল করলেন হ্যারি ব্রুক ও জো রুটের মতো অনিয়মিত স্পিনাররা। আর জাদেজা ও সুন্দর মেরেকেটে দ্রুতই তুলে নিলেন সেঞ্চুরি। প্রথমে সেঞ্চুরিতে পৌঁছালেন জাদেজাই। ব্রুককে ছক্কা মেরেই পঞ্চম টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিলেন।

প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা সুন্দর তিন অঙ্ক ছুঁলেন ১৫ বল পর ব্রুকের বলেই ২ রান নিয়ে। এরপরই দুই দলের খেলোয়াড়েরা হাত মিলিয়ে ড্র মেনে মাঠ ছাড়েন। আর তাতে ওভালে সিরিজের শেষ ম্যাচটাই হয়ে গেল সিরিজ নির্ধারণী। চার ম্যাচ শেষে ইংল্যান্ড এগিয়ে ২-১ ব্যবধানে।

শেষটা অদ্ভুতুড়ে হলেও জাদেজা ও সুন্দরের অবশ্য সেঞ্চুরি পাওনা হয়েই গিয়েছিল। সকালে লোকেশ রাহুল ও শুবমান গিলের বিদায়ের পর শেষ দুই সেশনে কী প্রতিরোধটাই গড়েছেন দুজন। ইনিংস হারের শঙ্কা উড়িয়ে ম্যাচটা ড্র করে ভারতকে সিরিজে টিকিয়ে রাখার পুরস্কারই তো সেঞ্চুরিতে পেলেন দুজন।

ম্যাচটা যখন শেষ হলো ভারতের স্কোর ৪২৫/৪। ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে চেয়ে দলটি এগিয়ে গিয়েছিল ১১৪ রানে। স্টোকস যখন প্রথমবার ড্রর প্রস্তাব দিলেন তখন দলটি এগিয়ে ছিল ৭৫ রানে। পঞ্চম উইকেটে ২০৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়া জাদেজা ১৮৫ বলে ১০৭ ও সুন্দর ২০৬ বলে ১০১ রানে অপরাজিত ছিলেন।

আজ শেষ দিনটা ভারত শুরু করে ২ উইকেটে ১৭৪ রান নিয়ে। ৩১১ রানের ঘাটতি নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা দলটি  গতকাল শূন্য রানেই প্রথম ২ উইকেট হারিয়ে ইনিংস ব্যবধানে হারার শঙ্কায় পড়ে। তবে গিল-রাহুল সেদিন আর উইকেট পড়তে দেননি। দলটি তৃতীয় উইকেট হারায় ১৮৮ রানে। ভারতের ওপেনার লোকেশ রাহুলকে এলবিডব্লু করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। ১০ রানের জন্য সেঞ্চুরির পাননি রাহুল। তবে ১৮৮ রানের জুটিতে তাঁর সঙ্গী শুবমান গিল সেঞ্চুরি তুলেই ফিরেছেন, করেছেন ১০৩ রান। এই সিরিজে যা ভারত অধিনায়কের চতুর্থ সেঞ্চুরি। তাতে এক সিরিজে অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ডে দুই কিংবদন্তি স্যার ডন ব্র্যাডম্যান ও সুনীল গাভাস্কারের পাশে বসেছেন গিল।

গিল ফেরেন ২২২ রানে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে। ভারত তখন পিছিয়ে ৮৯ রানে। এরপর আর উইকেট হারায়নি ভারত।

সংক্ষিপ্ত স্কোরভারত: ৩৫৮ ও ১৪৩ ওভারে ৪২৫/৪ (গিল ১০৩, জাদেজা ১০৭*, সুন্দর ১০১, রাহুল ৯০; ওকস ২/৬৭, স্টোকস ১/৩৩, আর্চার ১/৭৮)।
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৬৬৯।
ফল: ড্র
সিরিজ: ৫-ম্যাচ সিরিজে ইংল্যান্ড ২-১-এ এগিয়ে।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: বেন স্টোকস।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রেমের টানে চীনা যুবকের বাংলাদেশে এসে বিয়ে
  • চার দিনের জ্বরে ভুগে মারা গেল কিশোর
  • নারী এশিয়ান কাপে বাংলাদেশের ম্যাচ কবে, কোথায়
  • সাংলাং থেকে বেডং, সমুদ্র আমাদের সাথী  
  • আর রাহিকুল মাখতুম: এক আশ্চর্য সিরাতগ্রন্থ
  • ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার
  • লাইভ কনসার্টে পোশাক বিড়ম্বনায় জেনিফার লোপেজ (ভিডিও)
  • কুয়েট শিক্ষক সমিতির আন্দোলন স্থগিত, ১৬০ দিন পর মঙ্গলবার শুরু হচ্ছে ক্লাস
  • ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থও দেখতে হবে
  • গিল-সুন্দর-জাদেজার সেঞ্চুরিতে ভারতের জয়ের সমান এক ড্র