রেললাইনে হাতির পাল, ট্রেনচালকের দক্ষতায় যেভাবে রক্ষা পেল
Published: 23rd, July 2025 GMT
ছয় দিন আগে ভারতের ঝাড়গ্রামে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যায় তিনটি হাতি। ঠিক একই ধরনের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল বাংলাদেশের চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনেও। ট্রেনচালকের বিচক্ষণতায় শেষ পর্যন্ত রক্ষা পায় হাতির পাল। তবে ট্রেনের একটানা হুইসেলে ‘বিরক্ত’ হয়ে হাতির দল ট্রেনের বগিতে ধাক্কা দিয়েছে। এ ঘটনায় যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অবশ্য তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য এলাকায় এ ঘটনা ঘটে গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টা ২৫ মিনিটে। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসছিল সৈকত এক্সপ্রেস। যাত্রী ছিল প্রায় ৫০০। এই ট্রেনের লোকোমাস্টার (ট্রেনচালক) ছিলেন আবদুল আউয়াল এবং গার্ড (পরিচালক) সাখাওয়াত হোসেন। তাঁদের ধারণা, হাতির পালটিতে ৪ থেকে ৫টি হাতি ছিল।
গতকাল রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ট্রেনচালক আবদুল আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, রাত আটটায় কক্সবাজার থেকে ছাড়ার নির্ধারিত সময় ছিল সৈকত এক্সপ্রেসের। কিন্তু ট্রেন ছাড়তে ছাড়তে প্রায় ৫০ মিনিট দেরি হয়ে যায়। ট্রেনে নিয়ে আসার পথে হারবাং-লোহাগাড়া সেকশনের চুনতি অভয়ারণ্যে রেললাইনের ওপর একটি হাতি চোখে পড়ে। ওই এলাকায় চার কিলোমিটার পথে ট্রেনের গতি থাকে ২০ কিলোমিটার।
আবদুল আউয়াল বলেন, ধীরগতিতে চালানোর কারণে এবং ট্রেনের হেডলাইটের আলোতে রেলপথের ওপর হাতিকে দেখতে পান। কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েছিলেন। তবে দেখার সঙ্গে সঙ্গে ‘ব্রেক’ চাপতে থাকেন। একপর্যায়ে জরুরি ব্রেকে চাপ দেন। এতে কাজ হয়। হাতি যেখানে অবস্থান করছিল, তার ঠিক আগে গিয়ে ট্রেন থামে। হাতির কোনো বিপদ না হওয়ায় স্বস্তি পান। এরপর হাতি যাতে সরে যায় এ জন্য ঘনঘন হুইসেল দিতে থাকেন। এতে হাতি নিচে নেমে যায়।
হাতি নেমে যাওয়ার পর ১-২ মিনিট পর ট্রেনের গার্ড সাখাওয়াত হোসেন ফোনে করে জানান, হাতির পাল ট্রেনের বগিতে ধাক্কা দিচ্ছে। এতে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম। এর মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই। দ্রুত ট্রেন চালিয়ে এলাকা ত্যাগ করি।আবদুল আউয়াল, ট্রেনচালকতবে স্বস্তির মুহূর্ত হঠাৎ উবে যায় বলে জানান ট্রেনচালক আবদুল আউয়াল। তিনি বলেন, ‘হাতি নেমে যাওয়ার পর ১-২ মিনিট পর ট্রেনের গার্ড সাখাওয়াত হোসেন ফোনে করে জানান, হাতির পাল ট্রেনের বগিতে ধাক্কা দিচ্ছে। এতে কিছুটা বিচলিত হয়ে পড়েছিলাম। এর মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেন ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিই। দ্রুত ট্রেন চালিয়ে এলাকা ত্যাগ করি।’
কক্সবাজার থেকে আসা সৈকত এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম স্টেশনে এসে পৌঁছায় রাত একটায়। ট্রেনচালক আবদুল আউয়াল বলেন, এই রেলপথে কিন্তু আগেও ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মারা গিয়েছিল। আবার একই ধরনের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত কিছু হয়নি। পরবর্তী সময়ে আবার ঘটতে পারে। তাই এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, হাতির ক্ষতি না হয়, সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটিতে প্রায় ৫০০ যাত্রী ছিল। এই আন্তনগর ট্রেনে বগি ছিল ১৭টি। শেষ বগিটি ছিল গার্ডের। ট্রেনের গার্ডের দায়িত্বে ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, হঠাৎ ট্রেন থেমে গিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনচালক ফোন করে জানান, রেললাইনের ওপর হাতি আছে। তাই সতর্কতা হিসেবে তাঁর (গার্ডের) বগির ডান পাশের দরজা বন্ধ করে দেন। এরপর বাঁ পাশের দরজায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছিলেন।
হুট করে একটি হাতি ছুটে এসে বগিতে ধাক্কা দেয় জানিয়ে ট্রেনের গার্ড সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘দ্রুত বাঁ পাশের দরজা বন্ধ করে দিই। কিন্তু হাতি ক্রমাগত দরজা ও বগিতে আঘাত করতে থাকে। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে। ট্রেনচালককে ফোন দিয়ে দ্রুত ট্রেন ছাড়তে বলি। এরপর কোনো রকম পার হয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। হাতিও রক্ষা পেয়েছে। মানুষেরও কিছু হয়নি।’
বিচক্ষণতার সঙ্গে ট্রেন থামানো এবং এতে হাতি রক্ষা পাওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলে জানান ট্রেনচালক আবদুল আউয়াল। সৈকতে এক্সপ্রেসের যাত্রী সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নের বাসিন্দা রিদুয়ান কবির প্রথম আলোকে বলেন, চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে হঠাৎ ট্রেনটি থেমে যায়। ট্রেন থেমে যাওয়ার পর যাত্রীরা রেললাইনের পশ্চিম পাশে ব্যারিয়ারের ভেতর একটি হাতি দেখতে পান। তখন হাতিটি রেললাইনের নিচে ছিল। যাত্রীদের কেউ কেউ হাতি দেখে আতঙ্কে চিৎকার করতে থাকেন। পরে হাতিটি কাছে এসে ট্রেনের একপাশে ধাক্কা দিতে থাকে। এ সময় দৃশ্যটি যাত্রীদের কেউ কেউ নিজেদের মুঠোফোনে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। পাঁচ মিনিট পর ট্রেনটি চুনতি অভয়ারণ্য এলাকা ত্যাগ করে।
চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী বাহার উদ্দিন আজ বুধবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, অভয়ারণ্য রেঞ্জ কার্যালয়ের উত্তর পাশে রেললাইনের উভয় পাশে থাকা ব্যারিয়ারের ভেতর হাতির পায়ের ছাপ দেখা গেছে। রেঞ্জ কার্যালয়ের ৫০০ মিটার উত্তরে রেললাইনে ব্যারিয়ার নেই। সম্ভবত হাতিটি ওই এলাকা দিয়ে ঢুকে কিছুটা দক্ষিণে চলে আসে। অভয়ারণ্য এলাকায় ২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করে। চালক দূর থেকে হাতি দেখতে পেয়ে গতি আরও কমিয়ে দেন। হাতির কাছাকাছি এসে ট্রেন থেমে যায়। এরপর হাতিটি ট্রেনে ধাক্কা দেয়। ট্রেন ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর হাতিটি রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সঙ্গে লাগোয়া আন্ডারপাসের লোহার বেষ্টনী ভেঙে পূর্ব দিকে চলে যায়।
দ্রুত বাঁ পাশের দরজা বন্ধ করে দিই। কিন্তু হাতি ক্রমাগত দরজা ও বগিতে আঘাত করতে থাকে। এ সময় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে। ট্রেনচালককে ফোন দিয়ে দ্রুত ট্রেন ছাড়তে বলি। এরপর কোনো রকম পার হয়েছি।সাখাওয়াত হোসেন, ট্রেনের গার্ডগত বছরের ১৩ অক্টোবর রাত সাড়ে আটটার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসা ঈদ স্পেশাল-১০ ট্রেনের ধাক্কায় একটি বন্য হাতি আহত হয়। দুর্ঘটনার দুই দিন পর ১৫ অক্টোবর বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাতিটির মৃত্যু হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন য প র ণ প শ র দরজ ত য গ কর পর হ ত আতঙ ক ধরন র র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
যাত্রাবাড়ীতে বিদ্যুৎমিস্ত্রিকে পিটিয়ে হত্যা
রাজধানীতে হাত ও পা বেঁধে রড দিয়ে পিটিয়ে আনোয়ার হোসেন (৪৩) নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে যাত্রাবাড়ীর কাউন্সিল শরিফ পাড়ায় বাসের অবকাঠামো তৈরির একটি কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বিদ্যুৎমিস্ত্রি ছিলেন আনোয়ার হোসেন। তাঁর কর্মস্থল ছিল পুরান ঢাকার সদরঘাটে। পারিবারিক সূত্র জানায়, আনোয়ার হোসেন স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে রাজধানীর মাতুয়াইলের মৃধাবাড়ি এলাকায় থাকতেন।
আনোয়ারের ভাই দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল ভোরে আনোয়ার বাসা থেকে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে বের হন। পরে খবর পান, তাঁর ভাইকে কাউন্সিল উত্তর শরিফ পাড়ায় বাসের অবকাঠামো তৈরির গ্যারেজে নিয়ে হাত–পা বেঁধে রাখা হয়েছে। এরপর সেখানে গিয়ে আনোয়ারের হাত–পা বাঁধা ও রক্তাক্ত মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পান তাঁর মা।
লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়েছে বলে মৃত্যুর আগের তাঁর মাকে জানিয়েছিলেন আনোয়ার। তাঁর ভাই এ কথা জানিয়ে বলেন, এর কিছুক্ষণ পরই ঘটনাস্থলেই আনোয়ারের মৃত্যু হয়। এরপর যাত্রাবাড়ীর থানা-পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।
গতকাল সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ভোরে সঙ্গী সুমনকে নিয়ে আনোয়ার বাসের কাঠামো তৈরির কারখানায় চুরি করতে যান। এ সময় সেখানে থাকা লোকজন তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করে। তাঁর সঙ্গী সুমন পালিয়ে যান।