‘মহিমান্বিত তিনি, যাঁর হাতে সর্বময় কর্তৃত্ব; তিনি সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন, তোমাদের পরীক্ষা করার জন্য—কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। যিনি স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন সপ্ত আকাশ। দয়াময় আল্লাহর সৃষ্টিতে তুমি কোনো খুঁত দেখতে পাবে না। তুমি আবার তাকিয়ে দেখো, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি? অতঃপর তুমি বারবার দৃষ্টি ফেরাও, সে দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসবে।’ (সুরা মুলক, আয়াত: ১-৪)

নবীজি (সা.

) বলেছেন, ‘শিগগিরই তোমরা জান্নাতিদের জাহান্নামিদের থেকে পৃথকভাবে চিনতে পারবে।’ সাহাবিরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! কীভাবে চিনব?’ তিনি বললেন, ‘ভালো প্রশংসা ও মন্দ প্রশংসার মাধ্যমে। তোমরা পৃথিবীতে একে অন্যের বিরুদ্ধে আল্লাহর সাক্ষী হবে।’ (ইবনে মাজাহ: ৩৪১৯)

একটি জানাজার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় লোকজন সেই মৃত ব্যক্তির উত্তম প্রশংসা করল। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘অবধারিত হয়েছে।’ এরপর আরেকটি জানাজার পাশে গেলে লোকজন তার নিন্দা করল। তখন তিনি আবার বললেন, ‘অবধারিত হয়েছে।’ হজরত উমর (রা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী অবধারিত হয়েছে?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘যার প্রশংসা করা হয়েছে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়েছে। আর যার বদনাম করা হয়েছে, তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়েছে। তোমরা পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী।’ (বুখারি: ১৩৬৭)

জাহান্নামিদের পরিচয় সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন, ‘যারা কুফরি করে এবং আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩৯) ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে অনন্তকাল থাকবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৯৩) ‘যারা সুদ খায়, তারা জাহান্নামি; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৭৫) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সুদগ্রহীতা, সুদদাতা, সুদের সাক্ষী এবং সুদের লেখক—এদের সবাই জাহান্নামি।’ (বুখারি ও মুসলিম) ‘ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতা উভয়েই জাহান্নামি।’ (তাবরানি: ২০২৬, দায়লামি: ৩৩১৪)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন, ‘যারা পরকালকে অবিশ্বাস করে, এতিমকে নির্যাতন করে, মিসকিনের প্রতি সদয় হয় না, নামাজে অলসতা করে, লোকদেখানোর জন্য সৎকাজ করে এবং সামান্য উপকার করতেও কার্পণ্য করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি।’ (সুরা মাউন, আয়াত: ১-৭) 

‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না, নিঃসন্দেহে তা অশ্লীলতা ও জঘন্য পথ।’ (সুরা ইসরা, আয়াত: ৩২) ‘যারা পাপকর্ম করে এবং যাদের পাপরাশি তাদের ঘিরে ফেলে, তারাই জাহান্নামের বাসিন্দা; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৮১) 

‘যে সীমা লঙ্ঘন করে এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দেয়, জাহান্নামই হবে তার আশ্রয়।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত: ৩৭-৩৯) ‘ধ্বংস তাদের জন্য, যারা মানুষের সম্মুখ ও পশ্চাতে নিন্দা করে এবং সম্পদ জমা করে ও তা বারবার গণনা করে। সে মনে করে, এই সম্পদ তাকে অমর করে রাখবে। কখনো না! অবশ্যই সে হুতামা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে।’ (সুরা হুমাজাহ, আয়াত: ১-৪) 

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি বৈধ উপায়ে উপার্জন না করে হারাম পথে চলে, সে ব্যক্তি জাহান্নামি; যে প্রতারক ছোট বিষয়েও লোভ করে, সে ব্যক্তি জাহান্নামি; যে ব্যক্তি সম্পদ ও পরিবারের ব্যাপারে তোমার সঙ্গে প্রতিদিন প্রতারণা করে, সে ব্যক্তি জাহান্নামি; এ ছাড়া যে ব্যক্তি কৃপণ; যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে ও গালিগালাজ করে; তারা জাহান্নামি। (মুসলিম: ২৮৬৫, ৭০৯৯) 

‘প্রত্যেক অবাধ্য, মূর্খ ও অহংকারী ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে।’ (বুখারি ও মুসলিম) ‘জাহান্নামি মানুষের পরিচয় হলো তারা রূঢ় স্বভাবের ও অহংকারী।’ (বুখারি: ৪৯১৮)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য আল ল হ বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প কেন ভারতের ওপর এমন চাপ দিচ্ছেন, কী বলছেন রাজনৈতিক নেতারা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর বিরোধী দল কংগ্রেস বিজেপি সরকারকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছে। কংগ্রেস পার্টির এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, এখন দেশকে মোদির ‘বন্ধুত্বের মূল্য’ দিতে হচ্ছে।

কংগ্রেস ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে টেক্সাসে অনুষ্ঠিত ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের পক্ষে মোদির প্রচার চালানোকে আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছে।

কংগ্রেস বলেছে, ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। এর সঙ্গে দণ্ড জরিমানাও দিয়েছেন। এখন দেশ মোদির বন্ধুত্বের খেসারত দিচ্ছে। মোদি ট্রাম্পের প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ও ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ভারতকে শাস্তি দিলেন। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের পাশাপাশি ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি ও অস্ত্র কেনার কারণে ভারতকে অতিরিক্ত জরিমানাও দিতে হবে।

ট্রাম্প আরও বলেন, ভারত ও চীন রাশিয়ার যুদ্ধ খরচ বহন করছে। সেই যুদ্ধ এরই মধ্যে তিন বছর ধরে চলছে। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, আবার প্রেসিডেন্ট হলে শপথ নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি যুদ্ধ শেষ করে দেবেন।

ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ভারত সব সময় রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র কিনেছে এবং রাশিয়ার জ্বালানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা। এমন এক সময়ে তারা এই কাজ করেছে, যখন সবাই চাইছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হোক। তাই আগামী ১ আগস্ট থেকে ভারতকে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ও অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হবে।

কংগ্রেস–দলীয় সংসদ সদস্য মাল্লু রবি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের হুমকিতে আমরা উদ্বিগ্ন। শুনে মনে হচ্ছে, তিনি যেন ভারতকে হুমকি দিচ্ছেন। আমাদের উচিত উপযুক্ত জবাব দেওয়া।’

কংগ্রেসের আরেক নেতা রাজীব শুক্লা এই পদক্ষেপকে ‘একেবারে ভুল’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘সরকার যাঁকে বন্ধু মনে করত, সেই ট্রাম্প এখন আমাদের আঘাত করেছেন। এর ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমরা সংসদে এ বিষয়ে কথা বলব। এত বন্ধুত্বের পরও ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে এমন করলেন কেন?’

আম আদমি পার্টির (এএপি) সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রতিদিন ভারতের অপমান করছেন। ট্রাম্প তো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলকে পর্যন্ত ভারত থেকে আইফোন তৈরি না করতে হুমকি দিয়েছেন। এমনকি তিনি বলেছেন, তিনি পাকিস্তানকে ভালোবাসেন। এটি নিয়ে ভারতের ভাবা উচিত। মোদির উচিত, এ বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ জানানো এবং তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করা।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, ট্রাম্প প্রায়ই তাঁর বক্তব্য থেকে পেছনে সরে আসেন। তাই ভারতের সরকার কী বলে, তা না জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন।

বিজেপি–দলীয় আরেক সংসদ সদস্য প্রবীণ খান্ডেলওয়াল বলেন, ‘এটি দুঃখজনক। আমি নিশ্চিত, ভারত সরকার এর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। ব্যবসা ও শিল্প খাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।’

বিজেপির হেমাং যোশি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট একতরফা বিবৃতি দিতে থাকেন। ভারতের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে কিছু না বলা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করা উচিত। আগেও তিনি এক কথা বলেছিলেন, পরে আবার নিজেই তা বদলে ফেলেছিলেন।’

বিজেপির আরেক সংসদ সদস্য প্রতাপ সারাঙ্গি বলেন, ‘ভারত শক্তিশালী পাল্টা কৌশল তৈরি করবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী, মোদির নেতৃত্বে আমেরিকার এই পদক্ষেপ সফল হতে দেওয়া হবে না। আমরা উপযুক্ত জবাব দেব।’

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে গত ২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের ওপরই পাল্টা শুল্ক বসিয়েছেন। তাঁর দাবি, এসব দেশ আগে থেকেই মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক বসিয়ে আসছিল।

আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’১৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনজাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সব পদক্ষেপ নেবে নয়াদিল্লি১৫ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ