জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের মধ্য থেকে ১৬ জন শহীদের পরিবারকে সম্মাননা স্মারক হিসেবে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এ ছাড়া জুলাইয়ে আহত একজন যোদ্ধার হাতেও একই সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকে ১ লাখ টাকা করে মোট ১৭ লাখ টাকা পেয়েছেন। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন মনোনীত শহীদ পরিবারদের এ সম্মাননা দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।

জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা-২০২৫–এর অংশ হিসেবে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে এ সম্মাননা জানানো হয়। জুলাই বিপ্লবের শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণে এবং তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় আজ শনিবার বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) মিলনায়তনে এটির আয়োজন করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এতে জুলাই চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করেছে জ্বালানি বিভাগ।

অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, তাঁর ছেলের বিদেশে চলে যাওয়ার কথা ছিল। সরকারি চাকরি করার কথা ছিল না। তবু সে আন্দোলনে গিয়েছিল বৈষম্য, দুর্নীতি, অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। গত বছর ১৮ জুলাই ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের কাছে তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়। বাবা কাছে সন্তানের লাশ সবচেয়ে ভারী।

আহত জুলাই যোদ্ধা হোসাইন আহমেদ নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী এলাকায় তাঁর হাতে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে পুলিশ, এ কারণে তাঁর হাত প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মৃত ভেবে তাঁকে গাড়িতে তোলা হয়। তারপর তাঁর ভাইয়েরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তাঁর ডান হাতটি অস্ত্রোপচারে কেটে ফেলতে হয়েছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতি ও জুলাই আন্দোলন দুটি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ব্যাপার। তাই যারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়াটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আর নিজের দায়িত্ব সর্বতোভাবে পালন করাটাই দেশপ্রেম। দেশের উন্নয়নের অন্যতম মূল চালিকা শক্তি জ্বালানি। সততার সঙ্গে কাজ করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও তা মনে রাখবে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন, জুলাই থেকে শেখার হলো নিজ নিজ দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করা। এগুলো ঠিকঠাক করা হলে মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন হয় না, বৈষম্য তৈরি হয় না। শুধু রাজনীতিবিদ নয়, অন্যায় করলে সরকারি কর্মচারীরাও নিরাপদ নয়, এটা জুলাই দেখিয়ে দিয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতিকে কারাগারে যেতে হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো.

রেজানুর রহমান। তিনি বলেন, ৩৬ দিনের আন্দোলন দুর্নীতি ও অহংকারকে সরিয়ে দিয়েছে। তাই শপথ নিতে হবে; সত্য প্রকাশে অটল থাকব, দুর্নীতি থেকে দূরে থাকব, অহংকার থেকে দূরে থাকব। তিনি জুলাই আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে দেশ গঠনে কাজ করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন পেট্রোবাংলার ইমাম মো. আবদুল হাই। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয় গাজি সানাউল্লাহ পরিচালিত এক বিশেষ দোয়া মাহফিল ও মোনাজাতের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানে একজন জুলাই শহীদের পরিবার উপস্থিত হতে পারেনি। সম্মাননা গ্রহণ করেছেন ১৫ শহীদ পরিবার। এ ছাড়া আহত যোদ্ধা হিসেবে সম্মাননা গ্রহণ করেছেন হোসাইন আহমেদ। জ্বালানি বিভাগের বিভিন্ন কোম্পানির পক্ষ থেকে এ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে