জুলাই শহীদ ১৬ পরিবারকে জ্বালানি বিভাগের আর্থিক সহায়তা
Published: 26th, July 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের মধ্য থেকে ১৬ জন শহীদের পরিবারকে সম্মাননা স্মারক হিসেবে আর্থিক সহায়তার চেক তুলে দিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এ ছাড়া জুলাইয়ে আহত একজন যোদ্ধার হাতেও একই সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকে ১ লাখ টাকা করে মোট ১৭ লাখ টাকা পেয়েছেন। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন মনোনীত শহীদ পরিবারদের এ সম্মাননা দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।
জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা-২০২৫–এর অংশ হিসেবে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে এ সম্মাননা জানানো হয়। জুলাই বিপ্লবের শহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণে এবং তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় আজ শনিবার বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) মিলনায়তনে এটির আয়োজন করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এতে জুলাই চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করেছে জ্বালানি বিভাগ।
অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, তাঁর ছেলের বিদেশে চলে যাওয়ার কথা ছিল। সরকারি চাকরি করার কথা ছিল না। তবু সে আন্দোলনে গিয়েছিল বৈষম্য, দুর্নীতি, অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে। গত বছর ১৮ জুলাই ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের কাছে তাঁর ছেলেকে হত্যা করা হয়। বাবা কাছে সন্তানের লাশ সবচেয়ে ভারী।
আহত জুলাই যোদ্ধা হোসাইন আহমেদ নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী এলাকায় তাঁর হাতে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে পুলিশ, এ কারণে তাঁর হাত প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মৃত ভেবে তাঁকে গাড়িতে তোলা হয়। তারপর তাঁর ভাইয়েরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। তাঁর ডান হাতটি অস্ত্রোপচারে কেটে ফেলতে হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব সাইফুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতি ও জুলাই আন্দোলন দুটি সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ব্যাপার। তাই যারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়াটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আর নিজের দায়িত্ব সর্বতোভাবে পালন করাটাই দেশপ্রেম। দেশের উন্নয়নের অন্যতম মূল চালিকা শক্তি জ্বালানি। সততার সঙ্গে কাজ করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মও তা মনে রাখবে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন, জুলাই থেকে শেখার হলো নিজ নিজ দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করা। এগুলো ঠিকঠাক করা হলে মানুষের অধিকার ক্ষুণ্ন হয় না, বৈষম্য তৈরি হয় না। শুধু রাজনীতিবিদ নয়, অন্যায় করলে সরকারি কর্মচারীরাও নিরাপদ নয়, এটা জুলাই দেখিয়ে দিয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতিকে কারাগারে যেতে হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো.
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন পেট্রোবাংলার ইমাম মো. আবদুল হাই। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয় গাজি সানাউল্লাহ পরিচালিত এক বিশেষ দোয়া মাহফিল ও মোনাজাতের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানে একজন জুলাই শহীদের পরিবার উপস্থিত হতে পারেনি। সম্মাননা গ্রহণ করেছেন ১৫ শহীদ পরিবার। এ ছাড়া আহত যোদ্ধা হিসেবে সম্মাননা গ্রহণ করেছেন হোসাইন আহমেদ। জ্বালানি বিভাগের বিভিন্ন কোম্পানির পক্ষ থেকে এ আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
লাইলীকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান আনোয়ার
বরগুনার বিষখালী নদীর পাড়ে বেড়ে উঠেছেন লাইলী বেগম। বাবার মৃত্যুর পর ভাইয়েরা অসুস্থ মায়ের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান, তখন কন্যা হয়েও লাইলী সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। অভাব, ক্ষুধা আর সমাজের অবহেলা তার নিত্যসঙ্গী হয়। তারপরও থেমে যাননি লাইলী।
জীবনের চাকা ঘুরাতে, মাছ ধরা থেকে বর্গাচাষ—সবই করেছেন লাইলী। গত ২১ বছর ধরে নদী ও সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছেন। বরগুনা জেলার সরকারিভাবে নিবন্ধিত একমাত্র নারী জেলে তিনি। এই লাইলীকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র ‘উত্তরের বৈঠা’। এটি নির্মাণ করেছেন আনোয়ার হোসেন।
পরিচালক আনোয়ার হোসেন
আরো পড়ুন:
জসীমের কবরে রাতুলকে সমাহিত করে দুই ভাইয়ের আবেগঘন পোস্ট
নীনার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার খবরে কী বলেছিলেন ক্রিকেটার ভিভ?
এ নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেন পরিচালক আনোয়ার হোসেন। তরুণ এই নির্মাতা বলেন, “এই চলচ্চিত্র শুধু একজন নারী জেলের গল্প নয়, এটি একজন মানুষের বেঁচে থাকার অদম্য চেষ্টা, একাকিত্বে গড়ে ওঠা সাহসিকতার প্রতিচ্ছবি। লাইলী বেগম যখন নদীতে জাল ছুঁড়ে দেন, সেই মুহূর্তে তিনি শুধু মাছ খোঁজেন না—তিনি খুঁজে ফেরেন নিজের অবস্থান, নিজের সম্মান, আর অস্তিত্বের উত্তর।”
লাইলীর চোখ দিয়ে বাস্তবতা দেখাতে চেয়েছেন নির্মাতা। তার ভাষায়, “এই ফিল্মে আমি কোনো কৃত্রিম কণ্ঠ বা নাটকীয় ভাষা ব্যবহার করিনি। কারণ আমি চেয়েছি দর্শক যেন লাইলীর চোখ দিয়েই এই বাস্তবতা দেখেন। তার নীরবতা, তার কথাবার্তা, তার দৃষ্টি—সবই যেন একেকটি দৃশ্যপট হয়ে ওঠে। একজন নির্মাতা হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল শুধু একটি ফ্রেম তৈরি করে দেওয়া, বাকিটা বলে গেছেন লাইলী নিজেই—তার জীবনযাত্রা, নদী এবং অব্যক্ত যন্ত্রণা দিয়ে।”
‘লাইলী’-কে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চান পরিচালক। তা জানিয়ে আনোয়ার হোসেন বলেন, “এই ফিল্মটি তাদের জন্য, যারা নিঃশব্দে লড়াই করেন এবং যারা কখনো আলোয় আসেন না। এখানে আমি সংক্ষিপ্ত আকারে প্রামাণ্য চিত্রটি তৈরি করেছি, পূর্ণদৈর্ঘ্য আকারে তৈরি করার প্রস্তুতি চলছে। আপনাদের সহযোগিতা ও আগ্রহ আমাকে অনুপ্রাণিত করবে। এই জীবন সংগ্রামের কথা বিশ্ব দরবারে নিয়ে যেতে চাই।”
সমাজের বাঁকা চোখ উপেক্ষা করে লাইলী প্রমাণ করেছেন, নারীর স্থান কেবল ঘরে নয়, সাহস আর সংগ্রামেও। লাইলী কেবল একজন নারী জেলে নন, এক অনুপ্রেরণার নাম। নারী চাইলে সব পারে—লাইলী তা নিঃশব্দে প্রমাণ করেছেন বলেও মনে করেন নির্মাতা।
ঢাকা/শান্ত