কুমিল্লার মুরাদনগরে ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা দেখতে আসা দর্শকদের চাপা দিয়েছে একটি বাস। এতে গিয়াস উদ্দিন (৪০) নামের একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন, যাঁদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার ডি আর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠের পাশে মুরাদনগর-ইলিয়টগঞ্জ সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত গিয়াস উদ্দিন দুলারামপুর গ্রামের শহীদ মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় অটোরিকশাচালক ছিলেন। গুরুতর আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার গকুলনগর গ্রামের আবদুস সোবহানের ছেলে শাহজালাল (৪৫), পরমতলা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে গোলাম রব্বানী (১৮), দড়িকান্দি গ্রামের রশিদ মিয়ার ছেলে সাইদুল (৩০) এবং মুরাদনগর সদরের অনিল চন্দ্র বর্মণের ছেলে ঋত্বিক চন্দ্র বর্মণ (২০)।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, গতকাল উপজেলা যুবদলের পৃষ্ঠপোষকতায় মুরাদনগর ড্রাগন ফুটবল একাডেমি আয়োজিত মাদকবিরোধী ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা চলছিল ডি আর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে। ফাইনাল খেলায় দুলারামপুর ফুটবল একাডেমি বনাম ধনিরামপুর ফুটবল একাডেমির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। খেলাটি দেখতে আশপাশের ভবনের ছাদ ও মাঠের চারপাশে কয়েক হাজার মানুষের ভিড় জমে। এত মাঠের পূর্ব পাশ ঘেঁষে থাকা মুরাদনগর-ইলিয়টগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ইলিয়টগঞ্জ এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি বাস দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে ছিল। খেলার এক পর্যায়ে চালক গাড়িটি চালাতে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং দর্শকদের ওপর বাসটি তুলে দেন। এতে ঘটনাস্থলে গিয়াস উদ্দিন নিহত হন। গুরুতর আহত হন আরও চারজন। এ ছাড়া অন্তত আরও ১০ জন দর্শক সামান্য আহত হন।

দুর্ঘটনার জন্য আয়োজকেরা পুলিশ ও প্রশাসনের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করেছেন। তবে পুলিশ বলছে, আয়োজকেরা তাদের কাছ থেকে অনুমতি নেননি এবং নিরাপত্তা চাননি।

মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, দুই মাস ধরে এই খেলা চলছে, আজকে ছিল টুর্নামেন্টের ফাইনাল। আজকের খেলায় প্রায় এক লাখ দর্শকের ঢল নামে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে দাওয়াত করা হয়েছিল। পাশাপাশি তাঁদের কাছ থেকে নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে থানার ওসির পক্ষ থেকে মাত্র একজন এসআই ও তিনজন কনস্টেবল পাঠানো হয়। তাঁরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা রাখেননি, যদিও থানা থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে এই খেলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বাসটি আধা ঘণ্টা যানজটে আটকে ছিল। হঠাৎ এটি দর্শকদের ওপর উঠিয়ে দিয়ে একজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। স্থানীয় লোকজন বাসের চালক ও হেলপারকে পিটিয়ে পুলিশে দিলেও তাঁদের হেফাজতে নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। যার কারণে আমাদের মনে সন্দেহ জাগে, এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। এ ছাড়া বাসটির মালিক একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেও জানতে পেরেছি। আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার চাই।’

তবে পুলিশ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মুরাদনগর থানার ওসি মো.

জাহিদুর রহমান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো প্রকার নিরাপত্তা বা অতিরিক্ত ফোর্স চাওয়া হয়নি। এখানে এত মানুষের ঢল নেমেছে, সেই হিসেবে আয়োজকদেরও কোনো প্রস্তুতি ছিল না। আমি আজ সারা দিন কুমিল্লা শহরে ছিলাম, মাত্র থানায় এসেছি। এখনো পুরো ঘটনা জানিও না।’ তিনি আরও বলেন, ‘চালক ও হেলপারকে কেউ আমাদের কাছে সোপর্দ করেননি। তবে ঘটনার পর পুলিশ বাসটিকে জব্দ করে হেফাজতে নিয়েছে।’

বিএনপি নেতার অভিযোগ প্রসঙ্গে ওসি মো. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘যারা অভিযোগ তুলছে, তারা এর আগেও আমার বিরুদ্ধে মিছিল, মানববন্ধন করেছে এবং মামলাও করেছে। খেলার বিষয়ে আমার কাছে লিখিতভাবে কোনো নিরাপত্তা চাওয়া হয়নি। তবে পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে দেখবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র দনগর গ র তর ফ টবল উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে