সড়ক বন্ধ করে ফুটবল খেলা দেখার সময় বাসচাপায় নিহত ১, আহত ১৪
Published: 27th, July 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগরে ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা দেখতে আসা দর্শকদের চাপা দিয়েছে একটি বাস। এতে গিয়াস উদ্দিন (৪০) নামের একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন, যাঁদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার ডি আর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠের পাশে মুরাদনগর-ইলিয়টগঞ্জ সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত গিয়াস উদ্দিন দুলারামপুর গ্রামের শহীদ মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় অটোরিকশাচালক ছিলেন। গুরুতর আহত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার গকুলনগর গ্রামের আবদুস সোবহানের ছেলে শাহজালাল (৪৫), পরমতলা গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে গোলাম রব্বানী (১৮), দড়িকান্দি গ্রামের রশিদ মিয়ার ছেলে সাইদুল (৩০) এবং মুরাদনগর সদরের অনিল চন্দ্র বর্মণের ছেলে ঋত্বিক চন্দ্র বর্মণ (২০)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, গতকাল উপজেলা যুবদলের পৃষ্ঠপোষকতায় মুরাদনগর ড্রাগন ফুটবল একাডেমি আয়োজিত মাদকবিরোধী ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা চলছিল ডি আর উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে। ফাইনাল খেলায় দুলারামপুর ফুটবল একাডেমি বনাম ধনিরামপুর ফুটবল একাডেমির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। খেলাটি দেখতে আশপাশের ভবনের ছাদ ও মাঠের চারপাশে কয়েক হাজার মানুষের ভিড় জমে। এত মাঠের পূর্ব পাশ ঘেঁষে থাকা মুরাদনগর-ইলিয়টগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ইলিয়টগঞ্জ এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি বাস দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে ছিল। খেলার এক পর্যায়ে চালক গাড়িটি চালাতে গেলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং দর্শকদের ওপর বাসটি তুলে দেন। এতে ঘটনাস্থলে গিয়াস উদ্দিন নিহত হন। গুরুতর আহত হন আরও চারজন। এ ছাড়া অন্তত আরও ১০ জন দর্শক সামান্য আহত হন।
দুর্ঘটনার জন্য আয়োজকেরা পুলিশ ও প্রশাসনের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করেছেন। তবে পুলিশ বলছে, আয়োজকেরা তাদের কাছ থেকে অনুমতি নেননি এবং নিরাপত্তা চাননি।
মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, দুই মাস ধরে এই খেলা চলছে, আজকে ছিল টুর্নামেন্টের ফাইনাল। আজকের খেলায় প্রায় এক লাখ দর্শকের ঢল নামে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে দাওয়াত করা হয়েছিল। পাশাপাশি তাঁদের কাছ থেকে নিরাপত্তা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে থানার ওসির পক্ষ থেকে মাত্র একজন এসআই ও তিনজন কনস্টেবল পাঠানো হয়। তাঁরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা রাখেননি, যদিও থানা থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে এই খেলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বাসটি আধা ঘণ্টা যানজটে আটকে ছিল। হঠাৎ এটি দর্শকদের ওপর উঠিয়ে দিয়ে একজনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। স্থানীয় লোকজন বাসের চালক ও হেলপারকে পিটিয়ে পুলিশে দিলেও তাঁদের হেফাজতে নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। যার কারণে আমাদের মনে সন্দেহ জাগে, এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। এ ছাড়া বাসটির মালিক একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেও জানতে পেরেছি। আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত ও বিচার চাই।’
তবে পুলিশ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মুরাদনগর থানার ওসি মো.
বিএনপি নেতার অভিযোগ প্রসঙ্গে ওসি মো. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘যারা অভিযোগ তুলছে, তারা এর আগেও আমার বিরুদ্ধে মিছিল, মানববন্ধন করেছে এবং মামলাও করেছে। খেলার বিষয়ে আমার কাছে লিখিতভাবে কোনো নিরাপত্তা চাওয়া হয়নি। তবে পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করে দেখবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম র দনগর গ র তর ফ টবল উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত, সচিব কমিটি উপদেষ্টা পরিষদে পাঠাবে
পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে অধ্যাদেশের খসড়াটি সচিব কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের জন্য যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উপদেষ্টাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের কাঠামো ও কার্যক্রমের খসড়া তৈরি করেছে।
খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এই কমিশনের চেয়ারপারসন হবেন। সদস্য থাকবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ; গ্রেড-২ পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা; অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরিদর্শক পদমর্যাদার নিচে নন এমন একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা; পুলিশ একাডেমির একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ; আইন, অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ের একজন কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক; ১৫ বছর অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন একজন মানবাধিকারকর্মী।
আরও পড়ুনপুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে স্বাধীন কমিশন অপরিহার্য৮ ঘণ্টা আগেকমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন।কমিশনের চেয়ারপারসন আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতির সমপদমর্যাদার হবেন। সদস্যরা যোগদানের দিন থেকে চার বছর নিজ নিজ পদে থাকবেন। মেয়াদ শেষে কোনো সদস্য আবার নিয়োগের যোগ্য হবেন না।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, পুলিশ কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ প্রতিপালনে বাধ্যবাধকতার বিষয়ে বলা হয়েছে—এই কমিশন যেকোনো কর্তৃপক্ষ বা সত্তাকে কোনো নির্দেশ দিলে উক্ত কর্তৃপক্ষ বা সত্তা অনধিক তিন মাসের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। তবে কমিশনের নির্দেশ বা সুপারিশ বাস্তবায়নে কোনো অসুবিধা হলে সে ক্ষেত্রে নির্দেশ বা সুপারিশ পাওয়ার অনধিক তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে হবে। কমিশন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে যে নির্দেশ বা সুপারিশ পাঠাবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ বা সুপারিশ কমিশন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করে কমিশনকে জানাতে হবে।
আরও পড়ুনকোনো দল নয়, পুলিশের আনুগত্য থাকবে আইন ও দেশের প্রতি৯ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।এই কমিশনের সদস্য পদে নিয়োগের সুপারিশ প্রদানের জন্য সাত সদস্যের সমন্বয়ে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হবে। খসড়া অধ্যাদেশে প্রধান বিচারপতির মনোনীত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপারসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির মনোনীত একজন সরকারদলীয় এবং একজন বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যকে বাছাই কমিটিতে রাখার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ন্যূনতম পাঁচ সদস্যের উপস্থিতিতে বাছাই কমিটির কোরাম হওয়া ও বাছাই কমিটির বাছাই প্রক্রিয়া শুরুর ৩০ দিনের মধ্যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা বলা হয়েছে খসড়া প্রস্তাবে।
আরও পড়ুন‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা১৭ ঘণ্টা আগেপুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ খসড়ায় কমিশন প্রতিষ্ঠা, কার্যালয়, সদস্যদের নিয়োগ, মেয়াদ, কমিশনের সদস্য হওয়ার জন্য কারা অযোগ্য, সদস্যদের পদত্যাগ, অপসারণ, পুলিশি কার্যক্রমে দক্ষতা বৃদ্ধি, শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান-নিষ্পত্তি, পুলিশ সদস্যদের সংক্ষোভ নিরসন, পুলিশপ্রধান নিয়োগ, আইন-বিধি, নীতিমালা প্রণয়ন ও গবেষণা বিষয়েও প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
পুলিশ কমিশন গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যের পর জুলাই জাতীয় সনদেও এটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুনমাঝেমধ্যে শুনতে হয়, ‘উনি কি আমাদের লোক’: আইজিপি১৭ ঘণ্টা আগে