৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউর ৪৪ তলা একটি আকাশচুম্বী ভবনে কর্মরত শত শত কর্মচারীর জন্য গত সোমবার সন্ধ্যাটা হঠাৎ করেই বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছিল। মিডটাউন ম্যানহাটানের প্রাণকেন্দ্রে বড় বড় করপোরেট দপ্তরে ঠাসা এই আকাশচুম্বী ভবনে এমন সন্ধ্যা আগে কখনো আসেনি।

জুলাইয়ের গরমে সেদিন সন্ধ্যায় যখন অন্যরা বাড়ির পথ ধরেছেন, তখন পার্ক অ্যাভিনিউ টাওয়ারের কর্মীরা জীবন বাঁচাতে দৌড়াচ্ছেন, কেউ কেউ সম্মেলনকক্ষের দরজা টেবিল দিয়ে আটকে দিয়েছেন, আর প্রিয়জনদের কাছে আগাম বিদায়ের বার্তা পাঠাচ্ছেন।

ভবনের দ্বিতীয় তলায় কর্মরত জেসিকা চেন যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি আমার মা–বাবাকে লিখেছিলাম, আমি তাঁদের ভালোবাসি, এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’

সেই সন্ধ্যায় সুউচ্চ ওই ভবনের ভেতরে থাকা জেসিকা চেন ও অন্যরা হঠাৎ করে লবির দিক থেকে ভেসে আসা গুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন।

ওই গোলাগুলিতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নিউইয়র্কের এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ চারজন নিহত হন, গুরুতর আহত একজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এলোপাতাড়ি গুলি

তাণ্ডব শুরুর ঠিক কয়েক মুহূর্ত আগে, স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে ২৭ বছর বয়সী এক ব্যক্তি গাড়ি চালিয়ে ম্যানহাটানের অন্যতম ব্যস্ত এলাকায় ঢোকেন। তার আগে তিনি গাড়িতে করে কলোরাডো, নেব্রাস্কা ও আইওয়া হয়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছেন।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, লাস ভেগাসের বাসিন্দা শেন টামুরা তাঁর কালো রঙের বিএমডব্লিউ গাড়িটি পার্ক অ্যাভিনিউতে আগে থেকে পার্ক করে রাখা অন্য একটি গাড়ির পাশে পার্ক করেন। তিনি গাড়িটি যেখানে পার্ক করেন, সেটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা রকফেলার সেন্টার ও সেন্ট প্যাট্রিকস ক্যাথেড্রাল থেকে মাত্র কয়েক ব্লক দূরে।

জুলাইয়ের গরমে সেদিন সন্ধ্যায় যখন অন্যরা বাড়ির পথ ধরেছেন, তখন পার্ক অ্যাভিনিউ টাওয়ারের কর্মীরা জীবন বাঁচাতে দৌড়াচ্ছেন, কেউ কেউ কনফারেন্স কক্ষের দরজা টেবিল দিয়ে আটকে দিয়েছেন, আর প্রিয়জনদের কাছে আগাম বিদায়ের বার্তা পাঠাচ্ছেন।

জ্যাকেট, বোতামওয়ালা শার্ট ও সানগ্লাস পরা ওই ব্যক্তি ডান হাতে একটি অ্যাসল্ট-ধাঁচের রাইফেল ধরে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে থাকেন সুউচ্চ ওই ভবনের দিকে। তিনি জানতেন, ওই ভবনেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ফুটবল লিগের (এনএফএল) প্রধান কার্যালয়।

কিন্তু ওই ব্যক্তি এনএফএল কার্যালয় পর্যন্ত যেতে পারেননি। বরং তিনি পৌঁছে যান ৩৪৫ পার্ক অ্যাভিনিউর দরজায়, যেটি নিউইয়র্ক নগরের একটি ব্লকজুড়ে বিস্তৃত।

নিউইয়র্ক নগর পুলিশ কমিশনার জেসিকা টিশ বলেন, তিনি ভবনের লবি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ শুরু করেন। এ যেন কোনো শুটিং গেম।

প্রথমে টামুরা সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তার ঠিক পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। পরে তিনি ডান দিকে ঘুরে ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে দেখেন এবং গুলি চালান। তাঁর গুলিতে নিউইয়র্ক পুলিশের কর্মকর্তা ৩৬ বছর বয়সী দিদারুল ইসলাম নিহত হন।

নিউইয়র্ক নগরের মেয়র এরিক অ্যাডামস বলেছেন, নিহত দিদারুলের স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। তাঁর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা।

কেউ কেউ পেছনের দরজা দিয়ে বাইরে চলে গিয়েছিল, একেবারে রাস্তায়। আর আমিসহ বাকিরা দৌড়ে কনফারেন্স কক্ষে ঢুকেছিলাম।জেসিকা চেন, আক্রান্ত ভবনের দ্বিতীয় তলার কর্মী

মেয়র অ্যাডামস বলেন, ‘তিনি (টামুরা) ভবনের ভেতরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই ডান পাশের প্রবেশপথের দিকে গুলি ছোড়া শুরু করেন।’

কর্তৃপক্ষ বলছে, টামুরা সময় নষ্ট না করে এরপর লবিতে থাকা একজন নারীকে গুলি করেন। ওই নারী একটি স্তম্ভের পেছনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এরপর তিনি গুলি করতে করতে লবি ধরে এগোতে থাকেন।

ওপরের তলায় ব্ল্যাকস্টোন নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মী ওয়েসলি লেপাটনার গুলিতে প্রাণ হারান। এ ছাড়া এনএফএলের একজন কর্মী হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন।

আরও পড়ুনম্যানহাটানে বন্দুকধারীর হামলায় নিহত পুলিশ কর্মকর্তা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত২৯ জুলাই ২০২৫

ভুল লিফটে চড়া

গুলির শব্দ যখন চারদিকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল, তখন একজন নিরাপত্তাকর্মী সম্ভাব্য আরও রক্তপাত ঠেকাতে লিফট চলাচলব্যবস্থা অচল করে দিতে অ্যালার্ম সিস্টেম চালু করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন।

মেয়র অ্যাডামস বলেন, কিন্তু ওই নিরাপত্তারক্ষী কাউন্টারের পেছনে আশ্রয় নেওয়ার সময় তাঁকে হত্যা করা হয়। নিহত নিরাপত্তারক্ষীর নাম আল্যান্ড এটিয়েন।

এরপর বন্দুকধারী ভবনের একটি লিফটের দিকে এগিয়ে যান। পুলিশ বলেছে, তিনি যখন লিফটের জন্য অপেক্ষা করছিলেন, তখন এক নারী তাঁর সামনে পড়ে যান। তবে ওই নারী কোনোভাবে অক্ষত অবস্থায় সেখান থেকে সরে যেতে পেরেছিলেন।

গুলির শব্দ যখন চারদিকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল, তখন একজন নিরাপত্তাকর্মী সম্ভাব্য আরও রক্তপাত ঠেকাতে লিফট চলাচল ব্যবস্থা অচল করে দেওয়ার জন্য অ্যালার্ম সিস্টেম চালু করার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন।

লিফট আসার পর ওই ব্যক্তি সেটিতে ওঠেন। কিন্তু লিফটি তাঁকে তাঁর গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। কারণ, তিনি ভুল লিফটে উঠেছিলেন। ফলে তিনি এনএফএলের কার্যালয়ে নয় বরং ৩৩তম তলায় অবস্থিত আবাসন কোম্পানি রুডিন ম্যানেজমেন্টের কার্যালয়ে পৌঁছে যান। ওই ভবনটি এই কোম্পানির মালিকানাধীন।

আতঙ্ক ধরানো ই–মেইল এবং সাহায্যের জন্য দৌড়াদৌড়ি

লবিতে যখন বিশৃঙ্খলা চলছিল, তখন ওই ভবনের কর্মীরা দ্রুত ই–মেইল এবং মাইক্রোসফট টিমসের মাধ্যমে বার্তা পাঠাতে থাকেন, নিচতলায় একজন বন্দুকধারী আছেন। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে এমনটাই বলেছেন ব্ল্যাকস্টোনের একজন কর্মী।

জেসিকা চেন এবিসি নিউজকে বলেন, তিনি আকাশচুম্বী ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রায় ১৫০ জনের সঙ্গে একটি প্রেজেন্টেশন দেখছিলেন, ঠিক তখনই তাঁরা প্রথমবার গুলির শব্দ শুনতে পান।

জেসিকা বলেন, ‘কেউ কেউ পেছনের দরজা দিয়ে বাইরে চলে গিয়েছিলেন, একেবারে রাস্তায়। আর আমিসহ বাকিরা দৌড়ে কনফারেন্স কক্ষে ঢুকেছিলাম।’

আমার মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা করুন। আমি দুঃখিত।শেন টামুরা, হামলাকারী

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যায়, ব্ল্যাকস্টোনের আতঙ্কিত কর্মীরা সোফা, টেবিল এবং অন্যান্য আসবাবপত্র দিয়ে একটি দরজার সামনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন।

ইএসপিএনের খবরে বলা হয়, এনএফএল অফিসে থাকা কর্মীরা লিগের পক্ষ থেকে গুলি–সংক্রান্ত সতর্কবার্তা পেয়েছিলেন। ওই বার্তায় তাঁদের ফোন ‘সাইলেন্স মোডে’ রাখার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী না আসা পর্যন্ত লুকিয়ে থাকতে বলা হয়।

আরও পড়ুননিউইয়র্কের ম্যানহাটানে বন্দুকধারীর গুলিতে পুলিশসহ নিহত ৫২৯ জুলাই ২০২৫দিদারুল ইসলাম.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ল শ কর মকর ত ন উইয়র ক ভবন র দ র জন য ত কর ম কর ম র র কর ম র দরজ

এছাড়াও পড়ুন:

আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স ক্যাথলিক গির্জার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে কোনো একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, তা নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। নিজের এ মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিশাল এক পোস্ট দিয়েছেন তিনি।

জেডি ভ্যান্স বলেন, তাঁর যে মন্তব্য নিয়ে কথা হচ্ছে, সেটি মূল বক্তব্য থেকে কেটে নেওয়া একটি অংশ। কোন প্রসঙ্গে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন, সেটা দেখানো হয়নি।

গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে তরুণদের সংগঠন ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’র একটি অনুষ্ঠানে এক তরুণীর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ভ্যান্স তাঁর স্ত্রী উষা একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত উষা হিন্দু সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছেন।

স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।

স্ত্রী একদিন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করবেন, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা ভিডিও ভাইরাল হওয়া পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, ভ্যান্সের এ মন্তব্য কি তাঁর স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তনের জন্য চাপ দেওয়ার ইঙ্গিত।

জবাব দিতে এক্স পোস্টে ভ্যান্স বলেন, একটি পাবলিক ইভেন্টে তাঁকে তাঁর আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি ওই প্রশ্ন এড়িয়ে যেত চাননি, উত্তর দিয়েছেন।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, ‘প্রথমেই বলি, প্রশ্নটি আসে আমার বাঁ পাশে থাকা একজনের কাছ থেকে, আমার আন্তধর্মীয় বিয়ে নিয়ে। আমি একজন পাবলিক ফিগার, লোকজন আমার ব্যাপারে জানতে আগ্রহী এবং আমি প্রশ্নটি এড়িয়ে যেতে চাচ্ছিলাম না।’

এ বছর জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে জেডি ভ্যান্স ও তাঁর স্ত্রী উষা ভ্যান্স

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মামদানিকে বারাক ওবামার ফোন, করলেন নির্বাচনী প্রচারের প্রশংসা
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • নিউইয়র্কের এত ইহুদি কেন জোহরান মামদানির পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • সোনার টয়লেট ‘আমেরিকা’ নিলামে উঠছে, সর্বনিম্ন দর কত জানেন
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • ভোটের আগে মামদানি-কুমোর এগিয়ে থাকার লড়াই
  • এনএফএলের দলের নাম কীভাবে বেঙ্গলস হলো
  • তিন জরিপে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে এগিয়ে মামদানি
  • নিউইয়র্কের ইহুদি ভোটারদের মন জয় করতে কী কৌশল নিচ্ছেন জোহরান মামদানি