জুলাই সনদের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। এ গুরুত্বপূর্ণ মোড় দিয়ে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় শাহবাগ অবরোধ করা হয়। রাতে বিরতির পর শুক্রবার (১ আগস্ট) সকাল ৮টায় আবার অবরোধ করা হয়। আজ রাত ১টা পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
শুক্রবার সকালে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবরোধ চলছিল। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে যানবাহন চলাচলের জন্য পকেটে গেট করা হয়েছে। সেদিক দিয়ে থেমে থেমে যানবাহন চলাচল করছে।
জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখপাত্র মো.
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন আছেন হাসান সিকদারের মা। হাসান সিকদার রাইজিংবিডিকে বলেছেন, গতকাল থেকে এ রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করা হচ্ছে। আমাদের বাসা রায়েরবাগ, সেখান থেকে আজকে মাকে দেখতে আসলাম। আজ যানজট কম পেয়েছি, কিন্তু গতকাল ৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করে তারপর আসতে পেরেছিলাম। এসব আন্দোলন বন্ধ করতে সরকারের আরো কঠোর হওয়া উচিত।
আন্দোলনকারীরা ‘জুলাই সনদ’ নামে একটি প্রস্তাবিত ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছেন, যেখানে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থনে নিহতদের ‘জুলাই শহীদ (জাতীয় বীর)’ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা (বীর)’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের আজীবন সম্মান, চিকিৎসা, শিক্ষা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান এবং সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, শহীদ পরিবার ও আহতদের কল্যাণ রাষ্ট্রের ‘অবিচ্ছেদ্য কর্তব্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এদের প্রতি অবহেলা বা অধিকারহরণকে রাষ্ট্রদ্রোহ বা বিশেষ অপরাধ হিসেবে গণ্য করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও তোলা হয়েছে।
জুলাই যোদ্ধাদের ভাষ্য, এখনো জুলাই সনদ না হওয়ায় আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছেন। বারবার এ দাবি জানানো হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি।
তারা বলছেন, জুলাই সনদ আমাদের দাবি নয়, এটি আমাদের অধিকার। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। জুলাই সনদ নিয়ে আশ্বাস পূরণ না হলে শাহবাগে অস্থায়ী মঞ্চ তেরি করে অবস্থান করবেন বলেও হুমকি দিয়েছেন তারা।
ঢাকা/রায়হান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ল ই সনদ শ হব গ আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।
রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।
বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।
বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।
বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।
এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।
অবরোধকারীদের দাবি
অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।