আশানুরূপ উৎপাদনেও হতাশ মানিকগঞ্জের পাট চাষিরা
Published: 31st, August 2025 GMT
দেশের অর্থনীতিতে ঐতিহ্যবাহী ফসল ‘সোনালি আঁশ’ খ্যাত পাটের ব্যাপক গুরুত্ব রয়েছে। মানিকগঞ্জের গ্রামীণ অর্থনীতিতেও পাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে চলতি মৌসুমে আশানুরূপ উৎপাদন হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। ন্যায্য দাম না পাওয়ায় হতাশ চাষিরা।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় জানায়, কৃষকের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। চলতি বছর মানিকগঞ্জে ৪ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে ১৭ হাজার মেট্রিক টন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উৎপাদন আশানুরূপ হলেও বাজার ব্যবস্থাপনা দুর্বল হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন না।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলার ঐতিহ্যবাহী ঘিওর উপজেলার প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো পাটের হাট ভোর থেকেই জমে ওঠে। কৃষকরা নৌকা, রিকশা, ভ্যান ও ছোট ছোট যানবাহনে করে হাটে আনেন পাট। তাদের আনা সোনালি আঁশে ভরে ওঠে পুরো বাজার। বর্তমানে মণপ্রতি পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকায়। দাম মোটামুটি স্থিতিশীল হলেও কৃষকের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না।
পাট চাষে খরচ বেড়ে যাওয়ায় লাভ তেমন থাকছে না বলে অভিযোগ কৃষকদের। ঘিওরের কৃষক রায়হান বলেন, “পাট রোপণ, পরিচর্যা, কাটা, ধোয়া, শুকানো সব কাজেই প্রচুর শ্রম দিতে হয়। শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে, অথচ পাটের দাম বাড়েনি। ফলে লাভের অংশ প্রায় থাকেই না।”
অপর কৃষক নুর ইসলাম বলেন, “সারা বছর পরিশ্রম করেও ন্যায্য দাম পাই না। দেশে পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়ানো এবং বিদেশে রপ্তানি নিশ্চিত করলেই কৃষক উপকৃত হবে।”
এদিকে পাটের হাট নিয়ে হাটের ব্যবসায়ী ও পাইকাররা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, দেশের অভ্যন্তরে পাটকলগুলোতে চাহিদা থাকায় আশপাশের জেলা থেকেও ঘিওর হাটে পাট নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। এই হাট থেকে পাটের যোগান পায় নারায়াণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, যশোরসহ বিভিন্ন জেলার পাটকলগুলো। অথচ হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য নেই কোনো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নেই। হাটের রাস্তা-ঘাটও খুবই খারাপ।
হাটের ইজারাদার মো.
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটির সমন্বয়কারী নজরুল ইসলাম বলেন, “সোনালি আঁশের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে শুধু উৎপাদন নয়, ন্যায্য দাম ও বাজার নিশ্চিত করাও জরুরি। সরকার প্রণোদনা, রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটজাত দ্রব্য ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করলে আবারও পাট হতে পারে কৃষকের সুখ-সমৃদ্ধির প্রতীক।
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, “পাট রপ্তানি বাড়াতে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ চলছে। কৃষকদের জন্য প্রণোদনার বিষয়টিও সরকারকে জানানো হয়েছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের মাধ্যমে চাহিদা বাড়াতে হবে।”
ঢাকা/চন্দন/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন শ চ ত কর ম ন কগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের দিন অমোচনীয় কালি সরবরাহ না হলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে: ছাত্রদল
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে অমোচনীয় কালি সরবরাহ না করলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতারা। এ ছাড়া এমফিল কোর্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রদলকে ভোট প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তাঁরা।
রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর আচরণবিধিবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় ছাত্রদলের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শামসুল আরেফিন বলেন, ‘নির্বাচনে যদি কোনো ধরনের অনিয়মের ঘটনা ঘটে, তাহলে আমরা একচুল ছাড় দেব না। আমি প্রতিজ্ঞা করছি, যদি কোনো ধরনের অনিয়ম হয়— কোনো ছাড় হবে না। নির্বাচনের সময় অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। যদি নির্বাচন কমিশন অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকবে।’
ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ‘ম্যানুয়ালি’ ভোট গণনার দাবি জানিয়ে শামসুল আরেফিন বলেন, ‘কত ব্যালট ছাপানো হলো, কত ভোট গণনা হলো, কত ব্যালট নষ্ট হলো—এসব তথ্য স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রকাশ করতে হবে। কারণ, আমরা ডাকসুতে ব্যালট কেলেঙ্কারির অভিযোগ সম্পর্কে জানি।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ বিধিমালায় এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা না দিয়ে ছাত্রদলকে ‘মাইনাস’ করার একটি মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জকসু গঠন ও পরিচালনা বিধিমালায় বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ভোটার কিংবা প্রার্থী ছাড়া কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। অন্যদিকে এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থীর যোগ্যতা না দিয়ে আমাদের মাইনাস করা ছিল মাস্টারপ্ল্যান—আর সেই মাস্টারপ্ল্যান সফল হয়েছে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, প্রক্টর, সিন্ডিকেটের সদস্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর নির্বাচন কমিশনার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।