পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুইটি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে বেআইনিভাবে ইউনিটহোল্ডাদের ৪৫ কোটি ৭ লাখ টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান অ্যালায়েন্স ক্যাপিটাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের বিরুদ্ধে। এ বিষয়টি এখোনো তদন্তাধীন রয়েছে। এ অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় মিউচুয়াল ফান্ড দুইটির ইউনিটহোল্ডাররা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

তাই এমন পরিস্থিতিতে অ্যালায়েন্স ক্যাপিটাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের সব পরিচালকসহ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) ব্যাংক হিসাব এবং ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই) পরিচালিত হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

আরো পড়ুন:

বাকৃবিতে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিষয়ে কর্মশালা

প্রবাসী আয় বৈধ চ্যানেলে পাঠানোর বিষয়ে জানাতে হবে আয়কর রিটার্নে

সম্প্রতি দুদকের সচিব বরাবর এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে অভিযুক্তদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করতে বিএসইসি অনুরোধ জানিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিএসসি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আলিয়েন্স ক্যাপিটাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এমটিবি ইউনিট ফান্ড এবং অ্যালায়েন্স সন্ধানী লাইফ ইউনিট ফান্ড হতে ইউনিটহোল্ডারের অর্থ বেআইনিভাবে আত্মসাৎ করায় প্রতিষ্ঠানটির ২০১৪ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও খন্দকার আসাদুল ইসলামের সব ব্যাংক হিসাব এবং ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন বন্ধ করা প্রয়োজন।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, আলিয়েন্স ক্যাপিটাল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এমটিবি ইউনিট ফান্ড এবং অ্যালায়েন্স সন্ধানী লাইফ ইউনিট ফান্ডসমূহের ট্রাস্টি বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি পিএলসি (বিজিআইসি) দুই মাসের মধ্যে স্ট্যাটুটরি অডিটর ছাড়া কমিশনের প্যানেলভুক্ত কোনো নিরীক্ষক দ্বারা ভ্যালুয়েশন (পুনর্মূল্যায়ন) করাবে এবং পরবর্তী এক মাসের মধ্যে ফান্ডসমূহের ভবিষ্যৎ নিয়ে ইউনিটহোল্ডারদের সাথে সভা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক কমিশনকে অবহিত করবে।তাই উক্ত পুনর্মূল্যায়ন প্রতিবেদনের বিষয়ে ইউনিটহোল্ডারদের সিদ্ধান্তের ওপর কমিশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় পর্যন্ত সব ব্যাংক হিসাব ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালিত হিসাব হতে অর্থ উত্তোলন বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, এমটিবি ইউনিট ফান্ড এবং অ্যালায়েন্স সন্ধানী লাইফ ইউনিট ফান্ড থেকে বেআইনিভাবে ইউনিটহোল্ডাদের ৪৫ কোটি ৭ লাখ টাকা লোপাটের বিষয়টি বিএসইসির তদন্তে উঠে এসেছে। এ অনিয়মের ঘটনায় সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এবং এর প্রধান নির্বাহী ও অন্যান্য কর্মকর্তার পাশাপাশি ফান্ড দুটির ট্রাস্টি, নিরীক্ষক ও কাস্টডিয়ানের দায় খুঁজে পেয়েছে বিএসইসি।এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বেশকিছু আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি সম্পদ ব্যবস্থাপক হিসেবে ইউনিটহোল্ডারদের অর্থ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব যথাযথভাবে পরিপালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।বিধিমালা লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠানটি দুইটি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে বড় অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে এবং ব্যক্তিস্বার্থে তা পাচার করেছে।সম্পদ ব্যবস্থাপক ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ানের কাছে ফান্ডের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেনের নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

আরো জানা গেছে, গত ২০২১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ অর্থ স্থানান্তরের ঘটনা ঘটেছে।মিউচুয়াল ফান্ডের এ অর্থ বিনিয়োগকারীদের টাকা এবং খন্দকার আসাদুল ইসলাম সেটি পাচার করেছেন বলে বিএসইসির তদন্তে উঠে এসেছে। এ বিষয়ে কমিশনের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং কমিশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সম্পদ ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে অর্থ পাচারের বিষয়ে ব্যাখ্যা ও পূর্ণাঙ্গ তথ্য চাওয়া হয়েছে।কিন্তু তদন্ত কমিটি এ বিষয়ে খন্দকার আসাদুল ইসলামের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পায়নি।বিনিয়োগকারীদের অর্থ ব্যবহারের বিষয়ে তিনি কমিটিকে কোনো ধরনের নির্ভরযোগ্য প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ মুহূর্তে আইনি ও ফৌজদারি কার্যক্রম এড়ানোর উদ্দেশ্যে আসাদুল ইসলামের দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ কারণে তিনি যাতে পালাতে না পারেন সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ২০২৩ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক এবং ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি।

মঙ্গলবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়টি সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। তাই বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগে কথা বলে পরে জানাতে পারব।”

ঢাকা/এনটি/এসবি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউন ট ফ ন ড পর চ ল ত ব এসইস র অর থ অর থ ব ব ষয়ট তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ

‎পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

আরো পড়ুন:

সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা

পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা

‎গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ‎বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

‎সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি। 

এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর‍্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

‎ঢাকা/এনটি/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
  • ২২ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ দেবে বিএসইসি
  • পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
  • বিএসইসির তদন্তের মুখে ভ্যানগার্ড ও ক্যাপিটেক অ্যাসেট
  • দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে পুঁজিবাজার ও বন্ডকে ব্যবহারের প্রস্তাব
  • ৫ কোম্পানির শেয়ার কারসাজি: ৩ জনকে দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড