‘বোরকা পরে খাটের নিচে লুকিয়ে ডা. আমিরুলকে হত্যা করে তার পিএ’
Published: 2nd, September 2025 GMT
নাটোরে আলোচিত চিকিৎসক ডা. এএইচএম আমিরুল ইসলামকে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএ) আসাদুল ইসলাম আসাদ হত্যা করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনার রাতে আসাদ বোরকা পরে খাটের নিচে লুকিয়ে থেকে সুযোগ বুঝে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নাটোর শহরের জনসেবা ক্লিনিকে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন প্রেস ব্রিফিং করে এ সব তথ্য জানান। আসাদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
আরো পড়ুন:
নড়াইলে ডাকাতিকালে কুপিয়ে হত্যা: ৫ জনের যাবজ্জীবন
পরিবারের দাবি ‘এটি হত্যা’
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) নাটোরে জনসেবা ক্লিনিক থেকে ডা.
পুলিশ সুপার জানান, হত্যার পর থেকে তথ্য ও প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় যৌথভাবে কাজ করার একপর্যায়ে হাসপাতালের স্টাফ আসাদুল ইসলাম আসাদকে মূল আসামি হিসেবে শনাক্ত করা হয়। আসাদ বগুড়ার ধুনট উপজেলার বাসিন্দা। ২০২৪ সালে এসএসসি পাসের পর তিনি বগুড়ায় টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে চাকরি শুরু করেন। পরে নাটোরে জনসেবা ক্লিনিকে ডা. আমিরুল ইসলামের পিএ হিসেবে তিন বছর ধরে কর্মরত ছিলেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বলেন, ‘‘কর্মরত অবস্থায় হাসপাতালের এক নারী স্টাফকে ঘিরে ডা. আমিরুল, ওই নারী এবং আসাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের একপর্যায়ে গত ২৫ আগস্ট ডা. আমিরুল ওই নারী স্টাফ এবং আসাদকে মারধর করেন। আসাদকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর আসাদ বগুড়ায় ফিরে গেলেও তার মধ্যে প্রতিহিংসার জন্ম হয়। প্রতিশোধ নিতে তিনি বগুড়া থেকে বোরকা ও দুটি ছুরি কিনে নাটোরে ফিরে আসেন।’’
পুলিশ সুপার আরো বলেন, ‘‘রবিবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যায় বোরকা পরে আসাদ ডা. আমিরুল ইসলামের চেম্বারের কক্ষে প্রবেশ করেন এবং খাটের নিচে লুকিয়ে থাকেন। রাত ১টার দিকে ডা. আমিরুল নিজের কক্ষে ফিরে আসেন এবং ওষুধ সেবন শেষে ঘুমিয়ে পড়েন। ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে গভীর ঘুমের মধ্যে থাকা ডা. আমিরুলের ওপর আসাদ ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং তাকে হত্যা করেন। পরে ভোর সোয়া ৬টার দিকে ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে যান আসাদ।’’
পুলিশ সুপার জানান, যাওয়ার পথে তিনি বোরকাটি সিংড়া আইসিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এলাকার নদীতে এবং ছুরি দুটি নন্দীগ্রাম এলাকায় ফেলে দেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও প্রতিহিংসার জেরে আসাদ এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। মূলত ক্ষোভ থেকে হত্যা করেছেন।’’
আসাদ আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
ঢাকা/আরিফুল/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য আম র ল ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার তিন দিন পর হেনস্তাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তার নাজিম উদ্দিন (৪৫) ওই বাসের কন্ডাক্টর ও চালকের সহকারী বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাসে এক তরুণী তাঁর পোশাক নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ করছেন। বাসে ওঠার পর সামনের আসনে বসা ওই ব্যক্তি তাঁর পোশাক নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তরুণী প্রতিবাদ জানাতে সামনে এগিয়ে যান এবং প্রশ্ন করেন, ‘আমার পোশাক নিয়ে আপনার সমস্যা কী?’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ওই ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে তরুণীকে চড় মারেন। মুহূর্তেই তরুণী জুতা খুলে পাল্টা আঘাত করেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনই বাসের সামনের দিকে পড়ে যান। তরুণী নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও প্রতিরোধ করেন।
ঘটনার ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই তরুণীর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ ঘটনাটিতে উভয় পক্ষের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
নাজিম উদ্দিনকে আটক করার সঙ্গে যুক্ত র্যাব-৪–এর মেজর আবরার ফয়সাল সাদী প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীকে কটূক্তি ও হেনস্তা করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর হেনস্তকারী ব্যক্তিকে আটক করতে র্যাব-৪–এর একটি দল অভিযান শুরু করে। গতকাল সন্ধ্যায় নাজিম উদ্দিনকে শনাক্ত করে আটক করা হয়। পরে তাঁকে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করা হয়।
যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক প্রথম আলোকে বলেন, হেনস্তার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে আজ শুক্রবার সকালে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাজিম উদ্দিন ধানমন্ডি ১৫ থকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় চলাচলরত রমজান পরিবহনের কন্ডাক্টর। ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির জের ধরে তাঁদের দুজনের মধ্যে মারামারি হয়। ছাত্রীটি মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।
আজ সন্ধ্যায় পাঠানো র্যাব-৪–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রমজান পরিবহনের একটি বাস ধানমন্ডি ১৫ থেকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় যাচ্ছিল। বাসটি বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ের সামনে পৌঁছালে চালকের সহকারী মো. নিজাম উদ্দিন বাসটির যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর দিকে তাকিয়ে তাঁর পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এতে ওই তরুণী প্রতিবাদ করায় নাজিম উদ্দিন তাঁর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং তাঁকে চড় মারেন। একপর্যায়ে তরুণীও আত্মরক্ষার্থে নিজের পায়ের জুতা খুলে অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনকে আঘাত করেন।