চালের দাম কমেছে, স্থিতিশীল সবজির বাজার
Published: 12th, September 2025 GMT
চালের দামের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত আগস্টে বেসরকারিভাবে ৫ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। আমদানি করা চালের সরবরাহ ভালো থাকায় দামও কমতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে এখন প্রতি কেজি চালের দাম ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর নিউ মার্কেট হাজারীবাগসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
এখন বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৬ থেকে ৮২ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৮০ থেকে ৮৬ টাকা। এ হিসেবে নাজিরশাইল চালের দাম কমেছে প্রতি কেজিতে ৪ টাকা। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৭৪ থেকে ৭৯ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭৬ থেকে ৮২ টাকা। মাঝারি মানের ব্রি-২৮ জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৯ থেকে ৬১ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬১ থেকে ৬৪ টাকা। পাইজাম চালের দাম এখন ৫৯ থেকে ৬০ টাকা প্রতি কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬১ থেকে ৬২ টাকা। স্বর্ণা ও গুটি চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা কেজি দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকার সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নাগালের মধ্যে রাখতে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী, গত ১২ আগস্ট আমদানিকারকদের ইমপোর্ট পারমিশন (আইপি) দেওয়া শুরু করে কৃষি মন্ত্রণালয়। ২০ আগস্টের পর ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়।
আগামী আমন মৌসুমের আগে পর্যন্ত বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেসরকারিভাবে ৫ লাখ টন চাল আমদানির জন্য ২৪২টি প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে আমদানি অনুমতিপত্র (আইপি) জারির জন্য লিখিত অনুরোধ জানায় খাদ্য মন্ত্রণালয়। সরকারিভাবে আরো ৪ লাখ টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা টিসিবি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিসহ বিভিন্নভাবে ভর্তুকি মূল্যে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করবে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা।
স্থিতিশীল আছে সবজিসহ মুদিপণ্যের দাম
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সরবরাহ ভালো থাকায় এবং বাজারে শীতকালীন সবজি আসতে শুরু করায় দাম কিছুটা কমতে শুরু করছে। এখন বাজারে দেশি শশা ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, দেশি গাজর ১০০ থেকে ১১০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, কাঁচা পেঁপে ৩০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, কাকরোল ৭০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, টমেটো ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, সিম ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, কাঁচামরিচ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং প্রতি পিস জালি কুমড়া ও লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা এবং দেশি আদা ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল
মাঝারি আকারের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে। প্রতি কেজি চাষের পাঙাস ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, মাঝারি আকারের কৈ ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা, দেশি শিং ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় আকারের পাবদা ৫০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ ২ হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে এখন প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০ থেকে ৩৩০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কী বলছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা
রাজধানীর হাজারীবাগ কাঁচাবাজারের কেনাকাটা করতে আসা শিক্ষার্থী আল সাদী রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, আমাদের মতো শিক্ষার্থী যারা ঢাকায় ব্যাচেলর থাকেন, তারা চাহিদা অনুযায়ী কিছু কিনতে পারছেন না। কারণ, আমাদেরকে পরিবার থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়, যা দিয়ে পড়াশোনা খরচ, বাসাভাড়া ও খাবার খরচ মেটাতে হয়। আজ অবশ্য কয়েক সপ্তাহের তুলনায় চালের দাম সামান্য কম দেখলাম। সরকারকে বলব, সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
রাজধানীর নিউ মার্কেটের নাদির রাইস এজেন্সির স্বত্বাধিকারী নাদিম মুন্সী রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, মানভেদে চালের দাম প্রতি বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। সরকার আমদানির অনুমতি দেওয়ায় চালের দাম কমেছে। তা নাহলে যে হারে দাম বাড়তেছিল, তাতে সাধারণ মানুষের অনেক কষ্ট হত। এখন ভারত থেকে চাল আমদানি বেড়েছে। এভাবে আমদানি অব্যাহত থাকলে আরো দাম কমবে বলে আশা করছি।
ঢাকা/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ ল আমদ ন র ২০০ ট ক ৭০ ট ক ৮০ থ ক দ ম কম ৬০ ট ক ৮০ ট ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
২০২৬ সালে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম আরও ৭% কমতে পারে, বাংলাদেশে কেন কমছে না
চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, চলতি বছরে সামগ্রিকভাবে পণ্যমূল্য ৭ শতাংশ কমবে। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালে পণ্যমূল্য আরও ৭ শতাংশ কমবে। এ দাম হবে ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব নেই। দেশে মূল্যস্ফীতির হার এখনো ৮ শতাংশের ঘরে। যদিও একসময় তা দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গিয়েছিল। গত সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষকে এখনো বাড়তি দামেই পণ্য ও সেবা কিনতে হচ্ছে। আগামী বছর নিত্যপণ্যের দাম কমবে কি না, সেই নিশ্চয়তাও নেই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশে এর প্রভাব কম।
বিশ্বব্যাংকের ‘কমোডিটি মার্কেটস আউটলুক অক্টোবর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ২০২৫ সালের শুরু থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। যার মূল কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করেছে জ্বালানির দাম কমে যাওয়া। সেই সঙ্গে আরও কিছু কারণ চিহ্নিত করেছে তারা। সেগুলো হলো চীনে তেলের চাহিদা বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়া এবং বিশ্ববাজারে সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় তেলের দামে বড় ধরনের পতন ঘটা। খাদ্যপণ্যের দাম বছরের শুরু থেকে ধীরে ধীরে কমতে থাকে, কিন্তু বছরের প্রথমার্ধে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পানীয় পণ্যের দাম হঠাৎ অনেকটা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সোনার দাম রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূলত রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে মানুষ সোনার দিকে ছুটেছেন।
বিশ্ববাজারে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে জ্বালানি তেলের দাম। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে জ্বালানির দাম আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে আরও ১০ শতাংশ কমবে। ২০২৭ সালে তা আবার প্রায় ৬ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ২০২৬ সালে কৃষিপণ্য, খাদ্য ও কাঁচামালের দাম কমবে। চলতি বছরেও এসব পণ্যের দাম কমেছে।
জ্বালানি তেলবিশ্বব্যাংকের ২০২৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ায় গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়লেও তেলের দাম কমে যাবে এবং সেই প্রভাবকে ছাপিয়ে যাবে। ২০২৫ সালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম হতে পারে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬৮ ডলার; ২০২৪ সালের ৮১ ডলারের তুলনায় যা বেশ কম। ২০২৬ সালে এই দাম আরও কমে ব্যারেলপ্রতি গড়ে ৬০ ডলারে নামতে পারে ধারণা করা হচ্ছে।
এই পূর্বাভাস অনুযায়ী, তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির হার আরও কমবে—মূলত চীনের চাহিদা কমে যাওয়া, বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ির দ্রুত প্রসার ও বৈশ্বিক তেল সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
২০২৫ সালে বৈশ্বিক তেলের বাজারে সরবরাহ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৬ সালে তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০২০ সালের সর্বোচ্চ মাত্রার তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি হবে এ সরবরাহ।
কৃষিপণ্যবিশ্বব্যাংক গ্রুপের পূর্বাভাস অনুযায়ী, কৃষিপণ্যের মূল্যসূচক ২০২৫ সালে স্থিতিশীল আছে। ২০২৬ সালে তা সামান্য ২ শতাংশ ও ২০২৭ সালে আরও ১ শতাংশ কমবে।
খাদ্যপণ্যের দাম, যেমন শস্য, তেল, প্রোটিনজাত খাবারসহ অন্যান্য খাদ্যের দাম সাম্প্রতিক সীমার কাছাকাছি থাকবে। তবে মাঝেমধ্যে সামান্য কিছুটা ওঠানামা থাকবে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, প্রধান ফসলগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির হার আবার দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতায় ফিরে আসছে।
২০২৫ সালের বাকি সময়ে সয়াবিনের দাম কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের যে সয়াবিন সাধারণত চীনে রপ্তানি হয়, তা এবার কম দামে অন্য ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হতে পারে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্রে হচ্ছে এই সয়াবিন। চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সয়াবিন কিনছে না। ফলে ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এই পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ববাজারে দাম কমে গেলে যুক্তরাষ্ট্রে সয়াবিন চাষের পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে, তবে ব্রাজিল তার সয়াবিন আবাদ আরও বাড়ানোর পথে রয়েছে। পানীয় পণ্যের দাম ২০২৬ সালে ৭ শতাংশ ও ২০২৭ সালে প্রায় ৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চলতি বছর সারের দাম সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ বাড়তি। চাহিদা বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতা ও কিছু অঞ্চলে সরবরাহ–ঘাটতির কারণে এ দাম বেড়ে যাওয়া। ২০২৬ ও ২০২৭ সালে দাম প্রায় ৫ শতাংশ কমতে পারে। তবু ২০১৫-১৯ সালের গড় দামের তুলনায় তা অনেক বেশি থাকবে। এর কারণ হলো উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, রপ্তানি সীমাবদ্ধতা ও চলমান আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা।
চীন ইতিমধ্যে নাইট্রোজেন ও ফসফেট সার রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। অন্যদিকে পটাশ সরবরাহকারী বড় দেশ বেলারুশ এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে। রাশিয়া ও বেলারুশ—উভয় দেশই সারের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত নতুন শুল্কের সম্মুখীন।
দেশে কেন দাম বেশিবিশ্ববাজারে দাম কমলেও দেশের বাজার দাম না কমার অন্যতম প্রধান কারণ ডলারের দামের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। গত তিন বছরে ডলার দাম অনেকটা বেড়েছে। সেই সঙ্গে দেশের অনেক আমদানি পণ্যে শুল্ক বেশি বলে মনে করেন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে দাম কমছে না। বাজারে চাহিদা কত বা কখন কোন পণ্য আমদানি করতে হবে, সে বিষয়ে যথাযথ তথ্যের ঘাটতি আছে। ফলে সময়মতো পণ্য আমদানি হয় না।
আরেকটি বিষয় হলো দেশে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, তার অনেক কিছু উৎপাদিতও হয়। কিন্তু বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় এসব পণ্যের সরবরাহে টান পড়েছে। বাজারের পণ্যমূল্যে তার প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তিন বছর আগে দেশে ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে ১২২ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েক মাস ধরে আমদানির ঋণপত্র খোলাও কমেছে। এতে আমসদানিতে চাপ পড়ছে।
দেশের বাজার উচ্চ মূল্যের কারণ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক সেলিম রায়হান বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি, কৃষি ও খাদ্যপণ্যের দাম কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয়, শুল্ক ও করের চাপ ও বাজার ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতার কারণে দাম কমছে না। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যন্ত অতি মুনাফা ও অস্বচ্ছ বাণিজ্যিক শৃঙ্খলের কারণেও বাজারে কৃত্রিমভাবে উচ্চমূল্য বিরাজ করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে টাকার অবমূল্যায়ন। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তাপর্যায়ে পড়ছে না।
সেলিম রায়হান আরও বলেন, এ ছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণ ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বিনিয়োগকারীরা নতুন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না। পণ্য পরিবহন ও আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরবরাহ শৃঙ্খল দুর্বল হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে বাজারে পণ্যের ঘাটতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
দেশে তিন বছর ধরেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। সম্প্রতি তা কিছুটা কমলেও সেপ্টেম্বর মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত আগস্ট মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ।