Prothomalo:
2025-11-02@06:24:26 GMT

তুমি সখা বৃক্ষের

Published: 16th, September 2025 GMT

‘গহন কোন বনের ধারে’ প্রকৃতিপুত্র দ্বিজেন শর্মার প্রায় কবিতার মতো ছন্দময় গদ্যে লেখা বহুল পঠিত বইটা আমাকে সম্মোহিত করে রাখে, যখনই বইটি হাতে তুলি। চলমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক উদ্বেগের ভেতরে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত কোটি মানুষের জীবন। মধ্যশরতের তাপপ্রবাহে হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়ার শব্দ। ইদানীং প্রকৃতি তার ছন্দে নেই। মাটি ছেড়ে গাছগাছালির শুকনো ডালপালা, ঝরাপাতারা দল বেঁধে মাঠের ওপর দিয়ে ছুটছে দিকহারা আকাশ ছুঁতে চাওয়া দালানকোঠা ঘেঁষে, দেয়াল পেরিয়ে কুমুদিনী হাসপাতালের উঁচু ছাদের হলুদ চুড়োর ওপর দিয়ে কোথা দিয়ে কোথায় কোন দিকে উড়ে যাচ্ছে, তার ঠিকঠিকানা নেই। ডাকিনীর শাঁই শাঁই ছুটে যাওয়ার শব্দ পাচ্ছি। খানিক পরে চাতালের সবুজ টিনের চালে চড়বড় করে বৃষ্টির শব্দে ভাবনার রেশ এলোমেলো হয়ে যায়। তার পরপরই একটানা মল্লার রাগে বৃষ্টির শব্দ—জনহীন বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ, দূরের গ্রাম, ধুলোময় গাছপালা, উন্নয়নের তপ্ত নিশ্বাসে শুকিয়ে যাওয়া বিপর্যস্ত একচিলতে লৌহজং নদ, নদের উত্তর পাড়ে পড়ন্ত বেলার অভিশপ্ত চিতা, নাটমন্দিরের সারা দিন রোদে পোড়া উদ্‌ভ্রান্ত উঠোন—শরতের থেকে থেকে বৃষ্টিতে সব এখন ধুয়েমুছে জুড়িয়ে নিচ্ছে নিজেদের। সময়-সন্ন্যাসীর জটাজালে পড়ে সে ঘূর্ণি বাতাস বজ্রপাতে আরও পাগল হয়ে ওঠে। এদিকে দোর আঁটা ঘরে বসে বুকের ভেতর তোলপাড় হতে থাকে, এ যাত্রায় টিকবে তো সব!

সময়টা বড় খারাপ যাচ্ছে, কি ঘরে কি বাইরে। বাইরের সন্ত্রাস-হাওয়ার তোড়ে ছিটকে ঘরে এলে ঘর তখন হয়ে ওঠে কারাগার। সেই কারাগারে বসেই এই সব ঝড়ের শব্দ শুনতে পাই, পাই বৃষ্টির শব্দও। এইটুকুই যা স্বস্তি। পৃথিবীর এই গভীরতর অসুখের দুঃসময়ে খুব মনে পড়ে প্রকৃতিপুত্র অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মাকে।

সময়টা বড় খারাপ যাচ্ছে, কি ঘরে কি বাইরে। বাইরের সন্ত্রাস-হাওয়ার তোড়ে ছিটকে ঘরে এলে ঘর তখন হয়ে ওঠে কারাগার। সেই কারাগারে বসেই এই সব ঝড়ের শব্দ শুনতে পাই, পাই বৃষ্টির শব্দও। এইটুকুই যা স্বস্তি। ধুলোময়, শব্দময়, ধোঁয়াময়, দুর্গন্ধময় প্রায় দম বন্ধ হওয়া পৃথিবীর নিশ্বাস নেওয়ার এই বুঝি সময়। অথচ সূর্য উদয় থেকে অস্ত পর্যন্ত আমরা ভয়ে কাঁটা হয়ে বসে থাকি পৃথিবীর আঁধার খোঁড়লে। পৃথিবীর এই গভীরতর অসুখের দুঃসময়ে খুব মনে পড়ে প্রকৃতিপুত্র অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মাকে। তিনি ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর একরাশ অভিমান নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।

দ্বিজেন শর্মা—প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে একটি অপরিহার্য সম্পদ, বৈষয়িক সম্পদ, তা আমাদের মনে করিয়ে দিতেন সব সময়। মনে করিয়ে দিতেন, আমাদের স্বার্থক্ষুধা এতটাই প্রবল যে নদীগুলোকেও গ্রাস করছি। ভয়ংকর ভবিতব্য আঁচ করতে পেরে একটি পরিকল্পিত নগর দেখার ইচ্ছা তাঁকে তাড়িত করত। যিনি কলম হাতে যোদ্ধার মতো সাহস করেছিলেন আদিবাসী অরণ্যজীবনের দর্শন ও বিজ্ঞান থেকে শক্তি নিয়ে দেশের ক্ষতবিক্ষত বনভূমি ও ক্ষয়িষ্ণু প্রকৃতির পক্ষে রুখে দাঁড়াতে। তিনি মনে রেখেছিলেন এবং অন্যকেও মনে করিয়ে দিতেন, ‘রৌদ্র, ব্যাপ্তিস্থান ও শ্যামলীমার মতো আদিকালের প্রভাবগুলোই আমাদের দেহ ও মনের স্রষ্টা। আপন স্বাভাবিক পরিবেশচ্যুত সব জীবের নিয়তি একটিই—ধ্বংস; কোথাও দ্রুত, কোথাও শ্লথ আর এই সাধারণ নিয়ম থেকে মানুষের অব্যাহতি নেই। এই সব জীবনোপকরণ থেকে শহর মানুষকে ছিনিয়ে এনেছে, জবরদস্তি চালিয়েছে, তাদের অভাবি রেখেছে, হতাশ ও অসুখী রেখেছে, নিষ্পিষ্ট করেছে। এমনকি নির্বীর্যও করে ফেলেছে। জীবনের অত্যন্ত জরুরি তিনটি সুখ—রৌদ্র, ব্যাপ্তিস্থান ও শ্যামলীমা হারিয়ে অট্টালিকার গর্ভে আটক ও পেট্রলের ধোঁয়ার গন্ধে অভ্যস্ত হয়ে ওঠা মানুষ বড় বড় শহরে বন্দী ও অসুখী জীবন কাটায়। মানুষের জীবনে এই তিনটি শর্ত পূরণ করা না হলে কখনোই তার দেহ ও মনের স্বাস্থ্যোদ্ধার ঘটবে না।’

রৌদ্র, ব্যাপ্তিস্থান ও শ্যামলীমার মতো আদিকালের প্রভাবগুলোই আমাদের দেহ ও মনের স্রষ্টা। আপন স্বাভাবিক পরিবেশচ্যুত সব জীবের নিয়তি একটিই—ধ্বংস; কোথাও দ্রুত, কোথাও শ্লথ আর এই সাধারণ নিয়ম থেকে মানুষের অব্যাহতি নেই।দ্বিজেন শর্মা

আমাদের দেশে এই সব কথা কি কেউ মনে রাখে? দ্বিজেন শর্মার দীর্ঘ নিশ্বাস ‘কুরচি তোমার লাগি’ গ্রন্থের প্রতিটি প্রবন্ধে ছড়িয়ে আছে তাঁর এই সব আবেদন। মানুষ ভেবেছিল, একদিন প্রকৃতির ওপর সে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করবে। কিন্তু তার সেই উচ্চাশা এখন হতাশায় পর্যবসিত হয়েছে। প্রকৃতিকে বশ মানাতে গিয়ে আজ সে নিজেই কোণঠাসা। নিরুপায় মানুষ এখন প্রকৃতির সঙ্গে কথা বলতে চায়, কিন্তু প্রকৃতির ভাষা তো সে জানে না!

‘পৃথিবীর গভীরতর অসুখ’ শিরোনামে একটি লেখায় অসাধারণ বর্ষারণ্য মাধবকুল ভ্রমণের বেদনায় স্মৃতি গভীর দীর্ঘশ্বাসের মতো মিশে আছে।.

..‘খটখট আওয়াজে হঠাৎ আমার চিন্তায় ছেদ পড়ে। পাহাড়ের অনেক ওপরে কারা গাছ কাটছে। জলমর্মর চাপা পড়ে। প্রতিধ্বনিত এই নিঝুম শব্দস্রোতে কর্ণবিদারী হয়ে ওঠে। অসহ্য! আমি ওপরের দিকে তাকাই। জমাট অন্ধকারে কিছুই দৃষ্ট হয় না। খাশিয়াপুঞ্জির আলোর ফুলকিতে পরিবেশ আরও ভৌতিক হয়ে ওঠে। প্রকৃতির ওপর বলতকাররত কারা এই লম্পট? করাতকল, ইটভাটার মালিকের লোক? না, সরাসরি তারা কেউ নয়। এ হলো ঘনীভূত লোভের লাল জিহ্বা। আমি চিকো মান্দিস নই। এই জিহ্বা টেনে ধরার সাহস আমার নেই। অসহায় আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি।’ তাঁর পরম সৌভাগ্য যে আজকের দলবদ্ধভাবে সিলেটের সাদাপাথর চুরির কাণ্ডটি তাঁকে দেখতে হয়নি!

লাগাতার ভোগবাদ ও অন্যায় লুটতরাজ, যুদ্ধ, অত্যাচার নিয়ে আজ গোটা বিশ্ব দুঃসহ যন্ত্রণা পাড়ি দিচ্ছে। সে যন্ত্রণা দ্বিজেন শর্মা প্রাণ দিয়ে উপলব্ধি করতেন। সে যন্ত্রণারই নাম দিয়ে ছিলেন পৃথিবীর ‘গভীরতর অসুখ’। তিনি ছিলেন আশাবাদী মানুষ। বলতেন, ‘প্রজ্ঞা মানুষকে চিরদিন সংকট উত্তরণে আনুকূল্য দিয়েছে, এ যুগেও তা ব্যর্থ হবে না।...

দ্বিজেন শর্মা আমাদের জন্য তাঁর জীবনের স্মৃতিকথা রেখে গেছেন। সে এক অমূল্য সম্পদ। এই স্মৃতিকথা, মধুময় পৃথিবীর ধূলিতে তাঁর জীবনের একটি ধারাবাহিক নিরাভরণ আখ্যান। স্মৃতিকথা পড়তে পড়তে যেমন অকপটে তাঁর জীবনসাধনা জেনে নেওয়া যায়, তেমনি তাঁর সমকালের বহুকৌণিক প্রতিচ্ছবিও দেখতে পাই। শৈশবেই তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন প্রকৃতির প্রেমে, সে মুগ্ধতা থেকেই তিনি হেঁটে গেছেন নিসর্গের পথে তাঁর বিশ্লেষণী দৃষ্টি নিয়ে। শিক্ষালাভ ও শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা, একাত্তরে প্রাণ হাতে নিয়ে জীবনযুদ্ধে বেঁচে থাকার উপাখ্যান, জীবনের তাগিদেই অনুবাদকের কাজ নিয়ে সোভিয়েত রাশিয়ায়—সেখানেও ছিল তাঁর অন্য রকম স্বপ্ন। সেই স্বপ্নভঙ্গের দিনলিপি, অবশেষে দেশে ফেরা প্রকৃতির মাঝে; গবেষণায় নিজেকে সমার্পণ করেছেন বৃক্ষ, গুল্ম, তৃণলতায়। সবই তিনি লিখেছেন কী অসাধারণ অনুপম ভাষায়। কোথাও না আছে আমিত্বের বড়াই, না কাউকে খাটো করার বাগাড়ম্বরতা। দ্বিধাহীন ভাষায় প্রকাশ করেছেন সমাজতন্ত্রের প্রতি তাঁর স্বাভাবিক-সহজাত ভালোবাসার কথা। এরই ভেতরে দেখতে পাই সোভিয়েত রাষ্ট্রের আমলাতান্ত্রিক অন্দরমহলের ভয়াবহ দুর্নীতির কথা। তখনই তিনি অনুভব করেছিলেন, পৃথিবীর আলো ক্রমে কমে আসছে। সতর্ক করে গেছেন বারবার তাঁর লেখায়, কথায়, কাজে। যেখানেই গেছেন, আমাদের প্রত্যাশার ঘট পূর্ণ করেছেন।

লাগাতার ভোগবাদ ও অন্যায় লুটতরাজ, যুদ্ধ, অত্যাচার নিয়ে আজ গোটা বিশ্ব দুঃসহ যন্ত্রণা পাড়ি দিচ্ছে। সে যন্ত্রণা দ্বিজেন শর্মা প্রাণ দিয়ে উপলব্ধি করতেন। সে যন্ত্রণারই নাম দিয়ে ছিলেন পৃথিবীর ‘গভীরতর অসুখ’। তিনি ছিলেন আশাবাদী মানুষ। বলতেন, ‘প্রজ্ঞা মানুষকে চিরদিন সংকট উত্তরণে আনুকূল্য দিয়েছে, এ যুগেও তা ব্যর্থ হবে না।...সমাজ সজীব সত্তা বিধায় তার অন্তর্নিহিত পুনর্গঠনশক্তি আছে, সে আত্মরক্ষা করতে জানে, এভাবে হয়তো নিজে বাঁচবে, আমাদেরও বাঁচাবে।’ বর্তমান যে সংকট থেকে নাভিশ্বাস উঠছে পৃথিবীর, তা থেকে নিশ্চয়ই আমরা একদিন বেরিয়ে আসব। কেবল প্রয়োজন একটি প্রকৃতিবান্ধব ব্যবস্থা, যে ব্যবস্থা ক্রমাগত লোভ ও দখলি মনোভাব থেকে আমাদের সরিয়ে আনবে, ঠিক এ রকমই একটি পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতেন দ্বিজেন শর্মা।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রক ত র জ বন র আম দ র র জ বন র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ