পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের দুর্বল স্থানের আকার বাড়ছে
Published: 18th, October 2025 GMT
পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের একটি অঞ্চল দ্রুত দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে পৃথিবী চৌম্বকক্ষেত্রের আকার বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, দক্ষিণ আটলান্টিকের ওপরে থাকা দুর্বল চৌম্বকক্ষেত্রের স্থানটির আকার ২০১৪ সাল থেকে ক্রমাগত বাড়ছে, যা বর্তমানে ইউরোপের প্রায় অর্ধেক আয়তনের সমান অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত রয়েছে।
২০১৩ সালে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা সোয়ার্ম মিশন চালু করে। এই মিশনে তিনটি স্যাটেলাইট বা উপগ্রহ একই কক্ষপথে কাজ করছে। শক্তি ও দিক পরিমাপ করে সোয়ার্ম পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের তথ্য ধারাবাহিকভাবে সংগ্রহ করছে। সোয়ার্মের স্যাটেলাইটে ধারণ করা তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দক্ষিণ আটলান্টিক অ্যানোমালি বা এসএএ নামের একটি বিস্তৃত অঞ্চলে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র অস্বাভাবিকভাবে দুর্বল। এই এলাকার মধ্য দিয়ে যাওয়া মহাকাশযান উচ্চ মাত্রার বিকিরণের সংস্পর্শে আসে। এতে মহাকাশযানের ত্রুটি, যন্ত্রের ক্ষতি হওয়াসহ অস্থায়ী ব্ল্যাকআউটের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
ডেনমার্কের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী ক্রিস ফিনলে জানিয়েছেন, দক্ষিণ আটলান্টিক অ্যানোমালি কেবল একটি একক ব্লক নয়, এটি দক্ষিণ আমেরিকার কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে আফ্রিকার দিকেও পরিবর্তিত হচ্ছে। এই অঞ্চলে এমন কিছু ঘটছে, যা চৌম্বকক্ষেত্রকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে। ২০২০ সাল থেকে আফ্রিকার দক্ষিণ-পশ্চিম আটলান্টিকের একটি অংশে শক্তি দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। সাধারণত দক্ষিণ গোলার্ধের কোর থেকে চৌম্বকক্ষেত্রের রেখা বেরিয়ে আসে। তবে দক্ষিণ আটলান্টিক অ্যানোমালির নিচে একটি অঞ্চল রয়েছে, যেখানে অপ্রত্যাশিতভাবে চৌম্বকক্ষেত্র কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসার পরিবর্তে কেন্দ্রে ফিরে যায়।
গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সাইবেরিয়ার ওপর পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র শক্তিশালী হলেও কানাডার ওপর বেশ দুর্বল। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী ক্রিস ফিনলে জানান, যখন আপনি পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র বোঝার চেষ্টা করছেন, তখন মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ, এটি একটি দণ্ড চুম্বকের মতো।
সূত্র: আর্থ ডটকম
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প থ ব র চ ম বকক ষ ত র চ ম বকক ষ ত র র দ র বল
এছাড়াও পড়ুন:
রাশিয়ায় হামলা চালাতে ইউক্রেনকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র দিচ্ছেন না ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে কাঙ্ক্ষিত টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করতে প্রস্তুত নন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি হোয়াইট হাউস থেকে খালি হাতে ফিরেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, তিনি ও ট্রাম্প দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে কথা বললেও এ বিষয়ে কোনো বিবৃতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ, পরিস্থিতি আরও খারাপ হোক, যুক্তরাষ্ট্র তা চায় না।’
বৈঠকের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিয়েভ এবং মস্কোকে তারা ‘যেখানে আছে সেখানে থামার’ এবং যুদ্ধ শেষ করার আহ্বান জানান।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার এক দিন পর জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পুতিনের সঙ্গে ফোনে আলোচনায় দুই নেতা হাঙ্গেরিতে বৈঠকে বসতে রাজি হন।
জেলেনস্কি মনে করেন, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার তেল ও জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে আঘাত হানলে পুতিনের যুদ্ধ অর্থনীতি মারাত্মকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে।
ট্রাম্প অবশ্য ইউক্রেনকে এ ক্ষেপণাস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি একেবারে উড়িয়ে দেননি। তবে শুক্রবার জেলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউসের বৈঠকে তাঁর বক্তব্য ছিল অস্পষ্ট।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আশা করি তাদের এটি লাগবে না। আশা করি, আমরা টমাহক নিয়ে না ভেবেই যুদ্ধ শেষ করতে পারব। আমার মনে হয়, আমরা যুদ্ধ শেষ করার বেশ কাছাকাছি আছি।’
ট্রাম্প এই অস্ত্রটিকে ‘বড় ব্যাপার’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য এই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রয়োজন। ইউক্রেনকে টমাহক সরবরাহ করলে সংঘাত আরও বাড়তে পারে, তবে সেগুলো পাঠানোর বিষয়ে আলোচনা চলবে।
টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়টি পুতিনকে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করতে উৎসাহিত করেছে কি না, বিবিসির এমন প্রশ্নে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, সেই হুমকি (ক্ষেপণাস্ত্রের) ভালো, তবে সেই হুমকি সব সময়ই আছে।
ইউক্রেনের নেতা ইঙ্গিত দেন, টমাহকের বিনিময়ে তাঁর দেশ ড্রোন দিতে পারে। এতে ট্রাম্পের মুখে হাসি ও তাঁকে সম্মতিসূচক মাথা নাড়তে দেখা যায়।
জেলেনস্কি মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপ সুরক্ষিত করার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ভূমিকার প্রশংসা করে ইঙ্গিত দেন, মার্কিন নেতা ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ শেষ করতে সেই গতিকে কাজে লাগাতে পারেন।
বৈঠকের পর হোয়াইট হাউসের বাইরে একজন সাংবাদিক জেলেনস্কির কাছে জানতে চান, পুতিন কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে চান নাকি বুদাপেস্টে ট্রাম্পের সঙ্গে পরিকল্পিত বৈঠকের মাধ্যমে শুধু সময় নিচ্ছেন—এ বিষয়টি তিনি কীভাবে দেখছেন।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি জানি না।’ তবে তিনি যোগ করেন, ইউক্রেনের টমাহক পাওয়ার সম্ভাবনা রাশিয়াকে ‘ভীত’ করেছে। কারণ, এটি একটি শক্তিশালী অস্ত্র।
ইউক্রেন টমাহক পাবে কি না, ওয়াশিংটন ছেড়ে যাওয়ার সময় তিনি বিষয়টি নিয়ে আরও আশাবাদী কি না, জানতে চাইলে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি বাস্তববাদী।’
ইউক্রেনীয় নেতা আরও ইঙ্গিত দেন, বর্তমান যুদ্ধরেখা বরাবর যুদ্ধ থামানোর ট্রাম্পের পরামর্শে তিনি রাজি হতে পারেন।
জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা যেখানে আছি, সেখানে থামতে হবে। তিনি ঠিক, প্রেসিডেন্ট ঠিক।’ তিনি যোগ করেন, এর পরের পদক্ষেপ হবে ‘কথা বলা’।
পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে লিখেছেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আলোচিত বিষয় সম্পর্কে জানাতে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ফোন করেছেন। এখন প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে যতটা সম্ভব জীবন রক্ষা করা, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ইউরোপে সবাইকে শক্তিশালী করা।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে এই আলোচনাকে ‘ফলপ্রসূ’ বলে অভিহিত করেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ইউকে মানবিক সহায়তা ও সামরিক সমর্থন পাঠানো অব্যাহত রাখবে।
গতকাল শুক্রবার একজন সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেছিলেন, পুতিন নতুন একটি শীর্ষ সম্মেলনের জন্য সম্মত হয়ে সময় নষ্ট করছেন কি না। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি উদ্বিগ্ন।’
আরেক সাংবাদিক যখন জিজ্ঞেস করেন, বুদাপেস্টে সম্ভাব্য আলোচনায় জেলেনস্কি থাকবেন কি না, তখন ট্রাম্প বলেন, পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে ‘খারাপ সম্পর্ক’ আছে।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সবার জন্য স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে চাই। আমাদের তিনজনের অংশগ্রহণে থাকবে, তবে এটি আলাদা হতে পারে।’