নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত
Published: 21st, November 2025 GMT
দারিদ্র্য, বাল্যবিবাহ এবং মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনোর বাধা—এই তিন কঠোর বাস্তবতা ছিল রুনা বেগমের জীবনরেখা। যেখানে বেশির ভাগ নারী অভাবের কাছে হার মানেন, সেখানে সিলেট নগরের এই নারী উদ্যোক্তা প্রমাণ করেছেন, ব্যর্থতা বা প্রতিকূলতা জীবনের শেষ কথা নয়; বরং নতুন শুরুর প্রেরণা। তিনি শুধু নিজে সফল হননি, আরও কয়েক শ নারীকে অর্থনৈতিক মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। রুনা বেগমের সংগ্রাম ও সাফল্য বাংলাদেশের নারী সমাজের জন্য এক অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।
রুনা বেগমের উদ্যোক্তা হওয়ার গল্পে কোনো বিলাসী পরিকল্পনা ছিল না, ছিল চরম অভাবের তাড়না। টাইলসমিস্ত্রি স্বামীর অনিশ্চিত আয়ে যখন নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা, তখন শৈশবে মায়ের কাছে শেখা নকশিকাঁথা সেলাই তাঁকে আলোর পথ দেখায়। ৪৫০ টাকায় প্রথম কাঁথাটি বিক্রি হওয়ার ঘটনাটিই ছিল তাঁর আত্মবিশ্বাসের প্রথম পুঁজি। এ ঘটনা থেকেই তিনি উপলব্ধি করেন, মেধা ও শ্রম দিয়ে ঘরে বসেই অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব।
তবে এই পথে হাঁটা সহজ ছিল না। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন নারীর পণ্য নিয়ে হেঁটে দোকানে দোকানে যাওয়াকে ভালো চোখে নিতেন না পাড়া-প্রতিবেশীরা। কটূক্তি শুনতে হয়েছে, এমনকি স্কুটি চালিয়ে পণ্য সরবরাহ করার সময়ও সমালোচিত হতে হয়েছে। রুনা বেগম সেসব সমালোচনাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তাঁর এই দৃঢ়তা আজ পাড়া-প্রতিবেশীর বাঁকা চোখকে সম্মানে রূপান্তর করেছে।
রুনা বেগম কেবল নিজের অভাব দূর করেননি, প্রায় ৪০০ গ্রামীণ ও সুবিধাবঞ্চিত নারীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। এই নারীরা তাঁর নকশা করা কাঁথার কাজ ঘরে বসেই করেন, যা তাঁদের পরিবারের খরচ মেটাতে স্বামীর আয়ে সহযোগিতা করে। এ মডেলের মাধ্যমে আমরা দেখি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) কীভাবে স্থানীয় অর্থনীতির চালিকা শক্তি এবং নারী ক্ষমতায়নের মূল ভিত্তি হতে পারে। রুনা বেগমের নকশিকাঁথা এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো আন্তর্জাতিক বাজারেও যাচ্ছে। এ উদ্যোগ প্রমাণ করে, সঠিক নকশা, মানসম্মত পণ্য ও একাগ্রতা থাকলে দেশীয় হস্তশিল্প বৈশ্বিক বাজারেও নিজেদের স্থান করে নিতে পারে।
রুনা বেগম একজন সমাজসেবীও। তিনি রক্তদান এবং অসংখ্য নারীকে মোটরসাইকেল চালানো শিখিয়ে এক নতুন সামাজিক ভূমিকা পালন করছেন। রুনা বেগমের সাফল্য সরকারকেও একটি বার্তা দেয় : নকশিকাঁথার মতো ঐতিহ্যবাহী শিল্প ও নারী উদ্যোক্তাদের সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং ঋণ–সুবিধা দেওয়া হলে তা বেকারত্ব দূরীকরণ ও গ্রামীণ অর্থনীতিকে মজবুত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। রুনা বেগমের মতো আরও নারী উদ্যোক্তা দেশের অনেক এলাকায় আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের দৃষ্টান্ত আরও অনেক নারীর জন্য প্রেরণা হতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উদ য ক ত ব গম র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
সলিলের গানের ভেতরেই ছিল মিছিলের স্লোগান
‘গণসংগীত মানুষের রক্তে আগুন জ্বেলে দিয়েছে, উজ্জীবিত করেছে, মুক্তির পথ দেখিয়েছে’—আজ শহীদ মিনারে এই উচ্চারণে আবারও ফিরে এলেন সলিল চৌধুরী। বুধবার, সন্ধ্যায় উদীচীর আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত হলো কিংবদন্তি গণসংগীতকার সলিল চৌধুরীর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন ‘সতত সলিল’।
আলোচনা, গান, কবিতা ও নৃত্যে সজ্জিত এই আয়োজন ছিল একাধারে স্মরণ, শ্রদ্ধা ও চেতনার পুনর্জাগরণ। সভাপতিত্ব করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুল আলম। আলোচনায় অংশ নেন লেখক–গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সায়েম রানা এবং উদীচী কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সহসাধারণ সম্পাদক ইকবালুল হক খান।
সলিল চৌধুরী সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে আলোচকেরা বলেন, জাতির যে ঐতিহাসিক ধারাক্রম রয়েছে, সেই ধারার এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ের একজন অন্যতম পুরোধা ব্যক্তি ছিলেন সলিল চৌধুরী। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলার মানুষের প্রতিটি লড়াই–সংগ্রামে গণসংগীত মানুষের রক্তে আগুন জ্বেলেছে, মানুষকে উজ্জীবিত করেছে, মানুষকে তার মুক্তির পথ দেখিয়েছে। সলিল চৌধুরী ছিলেন সেই গণসংগীতের একজন কিংবদন্তি কারিগর। তাঁর হাত ধরে গণসংগীত পেয়েছে এক নতুন মাত্রা। তিনি কবিতাকে, মিছিলের স্লোগানকে যেমন গানে রূপান্তর করেছেন, তেমনি তাঁর রচিত সংগীত হয়ে উঠেছে মিছিলের স্লোগান। বক্তারা আরও বলেন, ‘গণমানুষের মুক্তির বাণী নিয়ে যে গান, তা আমাদের যুগে যুগে রাষ্ট্রব্যবস্থায় শাসকশ্রেণি থেকে শুরু করে অনেকেরই পছন্দের নয়। তাই হয়তো আমাদের সমাজে গণসংগীত যথাযথ স্বীকৃতি পায়নি। কিন্তু তারপরও মানবমুক্তির প্রতিটি লড়াইয়ে, প্রতিটি সংগ্রামে গণসংগীত আমাদের শক্তি জোগায়, সাহস জোগায়। বাংলা আধুনিক গানের অবিস্মরণীয় সুরস্রষ্টা ও গণসংগীতের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তি সলিল চৌধুরীর তৈরি করা গণসংগীত সর্বকালের জন্য প্রাসঙ্গিক।’
আলোচনা শেষে আয়োজন মাতিয়ে তোলে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। বৃন্দগান পরিবেশন করে উদীচী সংগীত বিভাগ ও ‘কোরাস’। একক গান করেন তানভীর আলম সজীব এবং মনসুর আহমেদ। বৃন্দনৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন; একক নৃত্যে অংশ নেন আদৃতা আনোয়ার প্রকৃতি। আবৃত্তিতে অংশ নেয় উদীচী আবৃত্তি বিভাগ; একক আবৃত্তি করেন শাহেদ নেওয়াজ।
আলোচনা শেষে আয়োজন মাতিয়ে তোলে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা