ইন্টারঅপারেবিলিটির পথে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস দেরিতে হলেও ভালো শুরু
Published: 18th, October 2025 GMT
প্রায় ১৪ বছর পর দেশে এমএফএস (মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস) খাতে ইন্টারঅপারেবিলিটি শুরু হতে যাচ্ছে—এটা সত্যিই খুশির খবর। বেটার লেট দ্যান নেভার। বাজারের প্রবৃদ্ধি, নতুন প্লেয়ার যুক্ত হওয়া এবং ইভেন প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য এই পরিষেবাটি একেবারেই বেসিক স্তরের প্রয়োজন। আমার এই লেখায় স্বাভাবিক কারণেই এমএফএস-সংক্রান্ত ইন্টারঅপারেবিলিটির দিকেই বেশি ফোকাস করব।
ইন্টারঅপারেবিলিটির মূল কাজটি শুরু হয়েছিল টেলিকম খাতে। শুরুতে সবাই ছিল ইনডিপেনডেন্ট অপারেটর; কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই টেলিকমে ইন্টারঅপারেবিলিটি চালু হয়। আমি তখন দেশের নম্বর-১ অপারেটরে কাজ করি। শীর্ষস্থানীয়, পেশাদার এবং গ্লোবাল প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তারা ইন্টারঅপারেবিলিটির মতো বেসিক ফ্যাসিলিটি আটকে রাখেনি। পরবর্তী সময়ে এই ইন্টারঅপারেবিলিটিকে ভিত্তি করে তারা নতুন প্রোডাক্ট লঞ্চ করে, যা মোবাইল টু মোবাইল নামে পরিচিত। কল এস্টাবলিশমেন্টের ক্ষেত্রে টিঅ্যান্ডটি এর চ্যানেল কনস্ট্রেইন্ট ও স্কার্সিটির কারণে মোবাইল টু মোবাইল প্রোডাক্ট লঞ্চ করা হয়েছিল।
যাহোক, প্রসঙ্গে ফিরি। ইন্টারঅপারেবিলিটির মূল জায়গাটা আমার কাছে এমএফএস টু-এমএফএস। এখানে আমরা যে সুফল আশা করছি, আমার ধারণা, তা খুব তাড়াতাড়ি বা খুব বড় আকারে না–ও ঘটতে পারে। উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। তবে প্রাইসিং আমার হিসাবমতে সঠিক হয়নি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া খুব বেশি গ্রাহক এটি ব্যবহার করবেন বলে মনে হয় না। প্রাইসিং আরও মেটিক্যুলাসভাবে করলে বাজারটা আরও ভাইব্র্যান্ট হতো। নতুন খেলোয়াড় (নিউ এনট্রান্টস) আসছে— কাস্টোমার অ্যাকুইজিশন, ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) কমানো, বিনিয়োগ ও ঋণের সহজলভ্যতা—সবকিছুর জন্যই এটি অত্যন্ত জরুরি ছিল।
প্রাইসিং আসলে আসে সেগমেন্টেশন থেকে। প্রাইসিং নির্ধারণ করার সময়ে প্রথমেই ভাবতে হবে—এই প্রাইসিংটা আসলে কার জন্য? আমার কাছে মনে হয়েছে এ ক্ষেত্রে কাস্টমার সেগেমেন্টেশনকে উপেক্ষা করা হয়েছে। ব্যাপারটা ‘ধরলে হবে’ টাইপ না—ডেটা দেখে নিশ্চিত হতে হবে। কাস্টমার সেগমেন্টটি আসলে এটা অ্যাফোর্ড করতে পারবে কি পারবে না, তারা কী করবে আর কী করবে না—এসব আগে বোঝা জরুরি।
আর প্রাইসিং ঠিক করার ক্ষেত্রে একটা সুইট স্পট বের করে নিতে হয় বা ঠিক করতে হয়। তারও ঘাটতি আছে বলে আমার মনে হয়েছে। সুইট স্পটের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে বলতে গেলে একটি উদাহরণ দেওয়া যায় যে এমএফএসের শুরুর দিকে (এখন সবচেয়ে বেশি মার্কেট শেয়ার নিয়ে ব্যবসা করছে) আমরা সেই ব্র্যান্ডের প্রাইসিং ঠিক করেছিলাম। আজ ১৩ বছর পরেও সেই প্রাইসিং মার্কেটে রিলেভেন্ট আছে।
তবে যেহেতু শুরু হয়েছে, প্রাইসিং শিগগিরই ঠিক করে ফেলা সময়ের ব্যাপার মাত্র। মনে রাখতে হবে, এমএফএস একটি ডিপেনডেন্ট ইন্ডাস্ট্রি—ব্যাংক, টেলিকম, হ্যান্ডসেট এবং ইন্টারনেট—এই চারটি ইন্ডাস্ট্রির যেকোনো একটিতেও যদি ফাঁক থাকে বা ঠিকভাবে ফাংশন না করে, তাহলে inclusivity প্রভাবিত হবে বা হচ্ছে। বিশেষ করে হ্যান্ডসেট ও ইন্টারনেট ইন্ডাস্ট্রি আমার মতে ঠিকমতো কাজ করছে না।
আমার জানা মতে ছোট এমএফএস অপারেটরগুলোর বেশ কিছু এখনো এনপিএসবি-তে কানেক্টেড নয়। তাহলে এই সুবিধার বড় অংশই সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হচ্ছে না। আর এই ফ্যাসিলিটিটি থেকে সবচেয়ে বড় সুবিধা নিতে পারত সেই অপারেটর, যার মাল্টি-ওয়ালেট ফিচার আছে। আমার জ্ঞানমতে এই ফিচার আপাতত একজনেরই আছে; কিন্তু তাদের সেই সুবিধা নেওয়ার ক্যাপাসিটি পর্যাপ্ত নয়।
মূলকথা হলো দেরিতে হলেও বাজার মোটামুটি পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। যৌক্তিক বিনিয়োগ থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি সুফল পেতে হলে সতর্কভাবে কাজ করতে হবে। আমার হিসেবে এটি চার খেলোয়াড়ের বাজার। সাত খেলোয়াড় হলে বাজার অতিরিক্ত ক্রাউডেড হবে এবং গ্রাহকসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের মধ্যে বড় ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। এর ওপর আমরা এই খাত চালানোর মতো পর্যাপ্ত যৌগ্য অনুষঙ্গ ও জনশক্তিও এখনো পাই না, এটিও বাস্তবতা।
রেজাউল হোসেন মার্কেট ট্রান্সফরমেশন স্পেশালিস্ট
[email protected]
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইন্টারঅপারেবিলিটির পথে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস দেরিতে হলেও ভালো শুরু
প্রায় ১৪ বছর পর দেশে এমএফএস (মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস) খাতে ইন্টারঅপারেবিলিটি শুরু হতে যাচ্ছে—এটা সত্যিই খুশির খবর। বেটার লেট দ্যান নেভার। বাজারের প্রবৃদ্ধি, নতুন প্লেয়ার যুক্ত হওয়া এবং ইভেন প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য এই পরিষেবাটি একেবারেই বেসিক স্তরের প্রয়োজন। আমার এই লেখায় স্বাভাবিক কারণেই এমএফএস-সংক্রান্ত ইন্টারঅপারেবিলিটির দিকেই বেশি ফোকাস করব।
ইন্টারঅপারেবিলিটির মূল কাজটি শুরু হয়েছিল টেলিকম খাতে। শুরুতে সবাই ছিল ইনডিপেনডেন্ট অপারেটর; কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই টেলিকমে ইন্টারঅপারেবিলিটি চালু হয়। আমি তখন দেশের নম্বর-১ অপারেটরে কাজ করি। শীর্ষস্থানীয়, পেশাদার এবং গ্লোবাল প্রতিষ্ঠান হওয়ায় তারা ইন্টারঅপারেবিলিটির মতো বেসিক ফ্যাসিলিটি আটকে রাখেনি। পরবর্তী সময়ে এই ইন্টারঅপারেবিলিটিকে ভিত্তি করে তারা নতুন প্রোডাক্ট লঞ্চ করে, যা মোবাইল টু মোবাইল নামে পরিচিত। কল এস্টাবলিশমেন্টের ক্ষেত্রে টিঅ্যান্ডটি এর চ্যানেল কনস্ট্রেইন্ট ও স্কার্সিটির কারণে মোবাইল টু মোবাইল প্রোডাক্ট লঞ্চ করা হয়েছিল।
যাহোক, প্রসঙ্গে ফিরি। ইন্টারঅপারেবিলিটির মূল জায়গাটা আমার কাছে এমএফএস টু-এমএফএস। এখানে আমরা যে সুফল আশা করছি, আমার ধারণা, তা খুব তাড়াতাড়ি বা খুব বড় আকারে না–ও ঘটতে পারে। উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। তবে প্রাইসিং আমার হিসাবমতে সঠিক হয়নি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া খুব বেশি গ্রাহক এটি ব্যবহার করবেন বলে মনে হয় না। প্রাইসিং আরও মেটিক্যুলাসভাবে করলে বাজারটা আরও ভাইব্র্যান্ট হতো। নতুন খেলোয়াড় (নিউ এনট্রান্টস) আসছে— কাস্টোমার অ্যাকুইজিশন, ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) কমানো, বিনিয়োগ ও ঋণের সহজলভ্যতা—সবকিছুর জন্যই এটি অত্যন্ত জরুরি ছিল।
প্রাইসিং আসলে আসে সেগমেন্টেশন থেকে। প্রাইসিং নির্ধারণ করার সময়ে প্রথমেই ভাবতে হবে—এই প্রাইসিংটা আসলে কার জন্য? আমার কাছে মনে হয়েছে এ ক্ষেত্রে কাস্টমার সেগেমেন্টেশনকে উপেক্ষা করা হয়েছে। ব্যাপারটা ‘ধরলে হবে’ টাইপ না—ডেটা দেখে নিশ্চিত হতে হবে। কাস্টমার সেগমেন্টটি আসলে এটা অ্যাফোর্ড করতে পারবে কি পারবে না, তারা কী করবে আর কী করবে না—এসব আগে বোঝা জরুরি।
আর প্রাইসিং ঠিক করার ক্ষেত্রে একটা সুইট স্পট বের করে নিতে হয় বা ঠিক করতে হয়। তারও ঘাটতি আছে বলে আমার মনে হয়েছে। সুইট স্পটের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে বলতে গেলে একটি উদাহরণ দেওয়া যায় যে এমএফএসের শুরুর দিকে (এখন সবচেয়ে বেশি মার্কেট শেয়ার নিয়ে ব্যবসা করছে) আমরা সেই ব্র্যান্ডের প্রাইসিং ঠিক করেছিলাম। আজ ১৩ বছর পরেও সেই প্রাইসিং মার্কেটে রিলেভেন্ট আছে।
তবে যেহেতু শুরু হয়েছে, প্রাইসিং শিগগিরই ঠিক করে ফেলা সময়ের ব্যাপার মাত্র। মনে রাখতে হবে, এমএফএস একটি ডিপেনডেন্ট ইন্ডাস্ট্রি—ব্যাংক, টেলিকম, হ্যান্ডসেট এবং ইন্টারনেট—এই চারটি ইন্ডাস্ট্রির যেকোনো একটিতেও যদি ফাঁক থাকে বা ঠিকভাবে ফাংশন না করে, তাহলে inclusivity প্রভাবিত হবে বা হচ্ছে। বিশেষ করে হ্যান্ডসেট ও ইন্টারনেট ইন্ডাস্ট্রি আমার মতে ঠিকমতো কাজ করছে না।
আমার জানা মতে ছোট এমএফএস অপারেটরগুলোর বেশ কিছু এখনো এনপিএসবি-তে কানেক্টেড নয়। তাহলে এই সুবিধার বড় অংশই সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হচ্ছে না। আর এই ফ্যাসিলিটিটি থেকে সবচেয়ে বড় সুবিধা নিতে পারত সেই অপারেটর, যার মাল্টি-ওয়ালেট ফিচার আছে। আমার জ্ঞানমতে এই ফিচার আপাতত একজনেরই আছে; কিন্তু তাদের সেই সুবিধা নেওয়ার ক্যাপাসিটি পর্যাপ্ত নয়।
মূলকথা হলো দেরিতে হলেও বাজার মোটামুটি পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। যৌক্তিক বিনিয়োগ থেকে অপেক্ষাকৃত বেশি সুফল পেতে হলে সতর্কভাবে কাজ করতে হবে। আমার হিসেবে এটি চার খেলোয়াড়ের বাজার। সাত খেলোয়াড় হলে বাজার অতিরিক্ত ক্রাউডেড হবে এবং গ্রাহকসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের মধ্যে বড় ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। এর ওপর আমরা এই খাত চালানোর মতো পর্যাপ্ত যৌগ্য অনুষঙ্গ ও জনশক্তিও এখনো পাই না, এটিও বাস্তবতা।
রেজাউল হোসেন মার্কেট ট্রান্সফরমেশন স্পেশালিস্ট
[email protected]