যুক্তরাষ্ট্রে ডানপন্থীরা কেন এখন ভারতীয়দের আক্রমণ করছে
Published: 21st, November 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (এফবিআই) পরিচালক ক্যাশ প্যাটেল ‘এক্স’-এ (সাবেক টুইটার) তাঁর অনুসারীদের দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। এরপরই এক্স–এর চরম ডানপন্থী খ্রিষ্টান ও শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী অ্যাকাউন্টগুলো থেকে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য ও মিম দিয়ে তার পোস্ট ভরিয়ে তোলা হয়।
একজন উগ্র ডানপন্থী ধর্মগুরু ক্যাশ প্যাটেলের পোস্টের নিচে মন্তব্য করেছেন, ‘নিজের দেশে ফিরে যাও এবং তোমাদের বালির দেবতার পূজা করো।’
আরেকজন মন্তব্য করেছেন, ‘আমার দেশ থেকে বেরিয়ে যাও।’ এ ধরনের কিছু কিছু প্রতিক্রিয়া লাখ লাখবার দেখা হয়েছে। তা–ও এগুলো ছিল অপেক্ষাকৃত কম আক্রমণাত্মক মন্তব্য।
জাতিগত বিদ্বেষের একই ধরনের শিকার হয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি, সাবেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বিবেক রামস্বামী এবং সিভিল রাইটসবিষয়ক সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হারমিত ধিলোঁ। হোয়াইট হাউস, পররাষ্ট্র দপ্তর এবং টেক্সাস ও আরকানসাসের গভর্নরের দীপাবলি–সংক্রান্ত পোস্টেও একই ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য দেখা গেছে।
ডানপন্থীদের মধ্যে বিস্ময়কিছু ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন রক্ষণশীল এসব ঘটনায় হতবাক। কারণ, ডানপন্থী রাজনীতিকদের একটি অংশ এখন তাঁদেরও নিশানা করছে। বিবেক রামস্বামী পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘পরিচয়ভিত্তিক রাজনীতি বাদ দিন। আমরা আপনার গায়ের রং বা ধর্ম নিয়ে চিন্তা করি না, আপনার চরিত্রের গুরুত্ব দিই।’
অন্যদিকে, দীর্ঘকাল ধরে কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিনদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী বিদ্বেষ ছড়ানো ডানপন্থী ধারাভাষ্যকার ডিনেশ ডি’সুজা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘৪০ বছরের কর্মজীবনে আমি কখনো এমন ভাষা দেখিনি। ডানপন্থীরা আগে এমন কথা বলত না। তবে আমাদের পক্ষ থেকে কে এই ধরনের ঘৃণ্য অবমাননাকে বৈধতা দিল?’
উদ্বেগজনক প্রবণতাএ ধরনের অবমাননাকর ভাষা নতুন না হলেও রাজনৈতিক ডানপন্থীদের দিক থেকে এ ধরনের কথাবার্তা ক্রমশ বেশি চোখে পড়ছে। একবার প্রান্তিক বলে বিবেচিত ব্যক্তিরা এখন প্রকাশ্যে আসছেন এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কঠোরভাবে প্রায় সব ধরনের অভিবাসনে কড়াকড়ি করার পর কিছু এমএজিএ (মাগা নামে পরিচিত) সমর্থক এখন প্রকাশ্যে বলতে শুরু করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র শুধু শ্বেতাঙ্গ খ্রিষ্টানদেরই থাকা উচিত।
অনলাইনে ভারতবিদ্বেষ এবং চরম ডানপন্থা নিয়ে গবেষণা করেন স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক সিদ্ধার্থ ভেঙ্কটারমাকৃষ্ণান। তিনি বলেন, আসলে আক্রমণ আসছে ঘরের ভেতর থেকেই।
ভারতীয় অভিবাসী এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন বা যাঁদের ভারতীয় বলে মনে করা হয়, তারা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান অভিবাসীবিরোধী আন্দোলনের নিশানায় পরিণত হয়েছেন। সেন্টার ফর দ্য স্টাডি অব অর্গানাইজড হেটের গবেষকেরা গত এক বছরে ‘এক্স’-এ ভারতবিরোধী মনোভাবের ব্যাপক বৃদ্ধি নথিভুক্ত করেছেন। এ ধরনের প্রবণতা কমার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না।
এক্সের ভূমিকাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক রাকিব নায়েক বলেন, তাঁর দল শুধু অক্টোবরেই ভারতীয় ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিনদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ ও বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষ প্রচার করা প্রায় ২ হাজার ৭০০টি পোস্ট রেকর্ড করেছে। এর আংশিক কারণ হতে পারে, ইলন মাস্কের অধীন প্ল্যাটফর্মের নানা পরিবর্তন। আগে যেসব বর্ণবাদী কনটেন্ট মডারেটররা সরিয়ে দিতেন, এখন সেগুলো উৎসাহিত ও প্রসারিত হচ্ছে।
এইচ–১বি ভিসা এবং অর্থনৈতিক ক্ষোভঅনলাইনে ভারতীয় অভিবাসীবিরোধী বিদ্বেষের সবচেয়ে নিয়মিত নিশানা হলো এইচ–১বি ভিসা কর্মসূচি। এই ক্যাটাগরির ভিসার প্রধান সুবিধাভোগী হচ্ছেন ভারতীয় নাগরিকেরা। এই কর্মসূচির মাধ্যমে উচ্চদক্ষতাসম্পন্ন বিদেশিদের যুক্তরাষ্ট্রে বিশেষ ক্ষেত্রে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়।
ট্রাম্প সমর্থক শিবিরের মধ্যে এই ভিসা নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ট্রাম্পের ডেপুটি চিফ অফ স্টাফ স্টিফেন মিলারের মতো ভিসাবিরোধীরা ভারতের বিরুদ্ধে ‘অভিবাসন নীতিতে নানা প্রতারণা’ করার অভিযোগ তুলেছেন।
বর্তমানে, চরম ডানপন্থী অ্যাকাউন্টগুলো ভারতীয় অভিবাসীদের নিয়মিতভাবে প্রতারক হিসাবে তুলে ধরছে। তাদের অভিযোগ, এসব ভারতীয় তাদের যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ বেতনের চাকরি থেকে বঞ্চিত করছে। এজন্য তাঁরা এদের নির্বাসনের দাবি জানাচ্ছেন।
এসব ডানপন্থী মার্কিন নাগরিকের অভিযোগ, ভারতীয় অভিবাসীরা শুধু তাদের জাতি বা বর্ণের লোকদের ভালো ভালো চাকরিতে নিয়োগ দিয়ে থাকে। এই ডানপন্থীরা ভারতীয়দের অপরিষ্কার বা দুর্গন্ধযুক্ত বলে গতানুগতিক ছাঁচে ফেলে দেন এবং হাতে করে খাওয়াসহ অন্যান্য আচরণকে সাংস্কৃতিক পশ্চাৎপদতা হিসেবে তুলে ধরেন।
হোয়াইট হাউসের আইজেনহাওয়ার এক্সিকিউটিভ অফিস ভবনে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের পতাকা। ২১ জুন ২০২৩, ওয়াশিংটন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড নপন থ এ ধরন র কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মানিকগঞ্জে হালনাগাদ নেই সরকারি ওয়েবসাইট
মানিকগঞ্জে বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের ওয়েবসাইটগুলো দীর্ঘদিন ধরে হালনাগাদ না হওয়ায় সেবাগ্রহীতারা ডিজিটাল সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারি সেবা ডিজিটালাইজেশনের যুগে জেলার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ওয়েবসাইটে নেই সদ্য প্রকাশিত তথ্য, আপডেট নেই নিরাপত্তা প্রোটোকল। এমনকি অনেক লিংক ঠিকমতো কাজও করে না। ফলে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দিন দিন পুরনো ও অরক্ষিত ওয়েবসাইটগুলো ‘সাইবার নিরাপত্তা’ ঝুঁকিতে রয়েছে।
জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ‘চিকিৎসকের সহকারী পাচ্ছেন নির্বাচন কর্মকর্তার ফোন কল’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন প্রকাশের পর কয়েকটি দপ্তর ওয়েবসাইটগুলো হালনাগাদ করলেও বেশিরভাগ ওয়েবসাইট বছরের পর বছর অরক্ষিতভাবে পড়ে আছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতিটি সরকারি দপ্তরকে নিয়মিত ওয়েবসাইট হালনাগাদ করতে হবে। মাসে অন্তত একবার আপডেট নিশ্চিত করতে হবে। আর অ্যাক্সেসিবিলিটি ও নিরাপত্তা মানদণ্ডও পূরণ করতে হবে। কিন্তু মানিকগঞ্জে খুব কম ওয়েবসাইটই এসব মানদণ্ড অনুসরণ করছে।
জেলার সরকারি বিভিন্ন ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগ, শিক্ষা বিভাগ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, এলজিইডি, বন বিভাগ, উপজেলা পর্যায়ের সরকারি দপ্তরসহ অন্তত ১৫টির বেশি ওয়েবসাইটে সর্বশেষ তথ্য আপডেট করা হয়নি। কিছু ওয়েবসাইট খুলতেই সার্ভার এরর দেখায়। আবার কোথাও পুরনো নোটিশ এখনো প্রথম পাতায় ঝুলছে। আর কয়েকটি ওয়েবসাইট শুধু কর্মকর্তা কর্মচারিদের তথ্য আপডেট করেন। কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের তথ্য আপডেট করেন না। আবার কোন কোন দপ্তরের কর্মকর্তা কয়েক বছর আগে বদলি হলেও তার নাম এখনও ওয়েবসাইটে শোভা পাচ্ছে।
বেউথা এলাকার রিয়াদ হাসান বলেন, “ওয়েবসাইটগুলোতে কিছু তথ্য থাকলেও প্রয়োজন মাফিক তথ্য থাকে না। নিয়মিত হালনাগাদ না করায় অনেক সময় নট ফাউন্ড লেখা আসে। এতে সময় নষ্ট হয়, আবার অনেক সময় ভুল তথ্য নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়।”
নারী উদ্যোক্তা খাদিজা বেগম জানান, সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী নির্ধারিত সেবার হালনাগাদ তথ্য ওয়েবসাইটে পাওয়া যায় না। উন্নয়ন প্রকল্পের পূর্নাঙ্গ তথ্যও ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করা হয় না। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সরকারি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
সাংবাদিক সোহেল হোসেন বলেন, “আমি প্রায় সময় বিভিন্ন দপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু বেশিরভাগ সাইটেই বছরের পর বছর কোনো আপডেট নেই। অনেক ওয়েবসাইটে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের তথ্য পর্যন্ত সঠিক নয়। যে কর্মকর্তা তিন বছর আগে বদলি হয়ে গেছেন, তার নাম এখনো সেখানে আছে।”
সুশাসনের জন্য নাগরিক ( সুজন) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “সরকারি তথ্য পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ওয়েবসাইট। কিন্তু মানিকগঞ্জের ওয়েবসাইটগুলোর এই নাজুক অবস্থা ডিজিটাল সেবাকে পুরোপুরি ব্যাহত করছে। শিক্ষার্থী, চাকরিপ্রার্থী, গবেষক, সাংবাদিক কেউই প্রয়োজনীয় তথ্য সময় মতো পাচ্ছেন না। জেলা পর্যায়ের ওয়েবসাইটগুলো দেখলে মনে হয় দায়িত্বপ্রাপ্তদের নজরদারি নেই।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ও ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বলেন, “শুধু হালনাগাদ না থাকা নয়, এসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অত্যন্ত দুর্বল। কোনো সিস্টেমে কোথায় দুর্বলতা আছে এবং সেই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে কেউ ঢুকতে পারে কি না এটা পরীক্ষা করাই হলো VAPT (ভালনারেবিলিটি অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড পেনেট্রেশন টেস্টিং)। সরকারি নির্দেশে থাকার পরও এসব মানা হচ্ছে না। ফলে এসব ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীরা ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। একটি নিরাপদ, গতিশীল ও নিয়মিত পরিচালিত ওয়েবসাইট শুধু প্রশাসনিক সেবাই সহজ করে না; এটি সরকারি সিস্টেমের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি করে। এই পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি।”
মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( শিক্ষা ও আইসিটি) ফারজানা প্রিয়াংকা বলেন, “ওয়েবসাইটগুলো হালনাগাদ বিষয়ে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা প্রতিটি দপ্তরকে ওয়েবসাইট আপডেটের জন্য নির্দেশ দিয়েছি। কয়েকটি দপ্তর কাজ শুরু করেছে, বাকিরাও দ্রুত সম্পন্ন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।”
ঢাকা/এস