রাইজিংবিডিতে প্রতিবেদনের পর বিরামপুর সেটেলমেন্ট অফিসে দুদকের অভিযান
Published: 21st, October 2025 GMT
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডি ডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিরামপুর উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিসে অভিযান চালায় দুদকের দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের একটি দল। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সহকারী পরিচালক মো.
গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাইজিংবিডিতে “বাড়ি বাড়ি গিয়ে জমির পর্চা বিক্রি? বিরামপুরের ‘থলের বেড়াল’ কারা?” শিরোনামে ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় বিরামপুরে। প্রতিবেদনটি দুদকের কর্মকর্তাদের নজরে আসে।
অভিযান চলাকালে অফিসের নানা অনিয়ম, ঘুষ-বাণিজ্য ও দালাল চক্রের সক্রিয়তার অভিযোগ যাচাই করে দুদক টিম। এ সময় অফিসে উপস্থিত একজন দালালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, যার মাধ্যমে বেশ কয়েকজন সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর সম্পৃক্ততার তথ্য উঠে আসে।
দুদক কর্মকর্তা খায়রুল বাশার বলেছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা বিরামপুর সেটেলমেন্ট অফিসে অভিযান চালিয়েছি। এই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ-বাণিজ্য, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। বিশেষ করে, প্রায় ১৮ একর সরকারি জমি অবৈধভাবে ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তরের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। দালালদের অবাধ দৌরাত্ম্য আছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট খতিয়ান, দাগ নম্বরসহ বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহ করেছি। এসব দলিল পর্যালোচনা করে প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাইজিংবিডির অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর এই অভিযানকে স্থানীয় সচেতন মহল গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তারা আশা করছেন, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঢাকা/মোসলেম/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
আপিলের সারসংক্ষেপ দিতে চার সপ্তাহ সময় পেল আসামিপক্ষ
নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুন মামলায় হাইকোর্টের দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে চার সপ্তাহ সময় পেয়েছে আসামিপক্ষ। এ–সংক্রান্ত শুনানি চার সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছেন আপিল বিভাগ।
আসামিপক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ ওই সময় পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
সাত খুন মামলায় ২০১৭ সালের ২২ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) তৎকালীন নেতা নূর হোসেন, র্যাব-১১-এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, সাবেক কোম্পানি কমান্ডার মেজর (অব.) আরিফ হোসেনসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। অপর ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
২০১৮ সালের ২০ নভেম্বর হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিতরা ২০১৯ সালে পৃথক আপিল এবং লিভ টু আপিল করেন। এর মধ্যে ‘তারেক সাঈদ মোহাম্মদ বনাম রাষ্ট্র’ শিরোনামে আপিলটি আজ আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী (অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড) আব্দুল হাই।
পরে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আপিল শুনানির দিন ধার্যের জন্য আবেদন করা হয়। চার সপ্তাহ পর শুনানি হবে। রাষ্ট্রপক্ষ ইতিমধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিয়েছে। আসামিপক্ষ এখনো দেয়নি।
আসামিপক্ষ থেকে সারসংক্ষেপ জমা দেওয়ার জন্য ছয় সপ্তাহ সময় চাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল হাই। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আদালত চার সপ্তাহ সময় দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিতে বলা হয়েছে।
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি লাশ, পরদিন মেলে আরেকটি লাশ। নিহত অন্য ব্যক্তিরা হলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম।
ঘটনার এক দিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা (পরে বহিষ্কৃত) নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। আইনজীবী চন্দন সরকার ও তাঁর গাড়িচালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় ১১ মে একই থানায় আরেকটি মামলা হয়। এ মামলার বাদী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। পরে দুটি মামলা একসঙ্গে তদন্ত করে পুলিশ।
দুই মামলায় ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত রায় দেন। রায়ে র্যাবের সাবেক ১৬ কর্মকর্তা-সদস্য এবং নারায়ণগঞ্জের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন ও তাঁর অপরাধজগতের ৯ সহযোগীসহ মোট ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া র্যাবের আরও ৯ সাবেক কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আরও পড়ুননারায়ণগঞ্জের সাত খুন: বিচার শেষ হচ্ছে না, স্বজনেরা হতাশ ২৭ এপ্রিল ২০২৪