ইউএনওদের সিইসি: ব্যালট বাক্স দখল করে বাড়ি যাওয়ার পর হাজির হলেন, সেটা যেন না হয়
Published: 22nd, October 2025 GMT
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার না করে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ইউএনওদের নির্বাচন ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত প্রশিক্ষণের উদ্বোধনীতে সিইসি এ আহ্বান জানান। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নাসির উদ্দীন। ইউএনওদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র দখল করে, বাক্স দখল করে বাড়ি চলে গেছে, আর আপনি গিয়ে হাজির হলেন, সেটা যাতে না হয়।’
নির্বাচনে সব কটি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের কাজটি ইউএনওদের গুরুত্বের সঙ্গে করতে হবে বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, কোনো সংকট দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে নিরসনের চেষ্টা করতে হবে। ঘটনা শেষ হয়ে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে হবে না। কোনো চাপের কাছে নতিস্বীকার করা যাবে না। আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হবে।
নাসির উদ্দীন বলেন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনও কারও চাপের কাছে নত হবে না। প্রচলিত আইন মেনেই নির্বাচন কমিশন সব নির্দেশনা দেবে।
ইউএনওদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, যে ধরনের কাজের দায়িত্বই পড়ুক না কেন, তা ন্যায়, আইনসংগত ও নিরপেক্ষভাবে পালন করতে হবে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও নির্বাচনী আচরণবিধির কিছু কিছু জায়গায় পরিবর্তন আসতে পারে, সেটি বিবেচনায় রাখতে হবে।
প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের জন্য ওসিভি (আউট অব কান্ট্রি ভোটিং) ও নির্বাচনী কার্যক্রমে যুক্ত ব্যক্তিদের জন্য আইসিপিভি (ইন কান্ট্রি পোস্টাল ভোট) সম্পর্কে প্রশিক্ষণার্থীদের ধারণা দেন আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি জানান, আগামী ১৬ নভেম্বরে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার অনলাইন অ্যাপ সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
নির্বাচনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা গুরুত্বপূর্ণ ও মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন বলে উল্লেখ করেন আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টির কাজ এখন থেকেই করতে হবে। প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে, সে আবহাওয়া এখন থেকে সৃষ্টি করতে হবে।
নির্বাচনী দায়িত্ব সাহসের সঙ্গে পালন করার পরামর্শ দেন নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম। ইউএনওদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ, নির্বাচন কমিশন সঠিক কাজ করা কর্মকর্তাদের পাশে থাকবে। তবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অন্যায় কাজ করলে কঠিন পরিণতির সম্মুখীন হতে হবে।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো মারামারি বা ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে উভয় পক্ষকেই ধরতে হবে। কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালত অবশ্যই আয়নার মতো স্বচ্ছ হতে হবে, যাতে পক্ষপাতিত্বের বিতর্ক সৃষ্টি না হয়। যাঁরা আগামী নির্বাচনে ভালো দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা থাকবে।
নির্বাচন পরিচালনাকালে কর্মকর্তাদের অতি উৎসাহী ও অতি সাহসী না হওয়ার পরামর্শ দেন নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত শুনতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তাহমিদা আহমদ বলেন, নিজেদের বিদ্যা, বুদ্ধি ও অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে কোনটা ভুল আর কোনটা সত্য, সে পার্থক্য বুঝে কাজ করতে হবে।
ভালো নির্বাচন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ। তিনি বলেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ভালো নির্বাচন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তাই কর্মকর্তাদের অর্পিত দায়িত্ব সঠিক ও সফলভাবে পালন করে বিশ্ব ও মানুষের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র স ন উল ল হ উদ দ শ র জন য ক জ কর র উদ দ
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক চিফ হুইফ আ স ম ফিরোজ, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইফ আ স ম ফিরোজ, তাঁর স্ত্রী দেলোয়ারা সুলতানা ও ছেলে রায়হান শাকিবের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল মঙ্গলবার পটুয়াখালীর দুদক কার্যালয়ের উপপরিচালক তানভীর আহমদ বাদী হয়ে পৃথক তিনটি মামলা করেন।
পটুয়াখালী-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ দশম জাতীয় সংসদে চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন।
আ স ম ফিরোজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদ থেকে আসামির মোট আয় ১৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪৪ হাজার ৯৫৬ টাকা। সর্বমোট ব্যয় ৫ কোটি ৯০ লাখ ৩ হাজার ৮৭৭ টাকা। আর তাঁর সঞ্চয় খাতে পাওয়া গেছে ৮ কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৩ টাকা। এ ছাড়া আসামির নামে ১১ কোটি ৯৫ লাখ ৬৭ হাজার ৫৬৩ টাকার সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছে দুদক। তাঁর নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৩ কোটি ২৯ লাখ ২৬ হাজার ৪৮৪ টাকার অতিরিক্ত সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে।
দেলোয়ারা সুলতানার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি ৬৮ লাখ ১১ হাজার ৮৯৭ টাকা আয় দেখিয়েছেন। তাঁর পারিবারিক ও অন্যান্য খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ১৮ লাখ ৩৩৪ টাকা। এ ছাড়া তাঁর সঞ্চয় খাতে ৫০ লাখ ১১ হাজার ৫৬৩ টাকা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া তাঁর নামে ১ কোটি ৫১ লাখ ১৩ হাজার ২১৭ টাকার সম্পদ রয়েছে। অনুসন্ধানে আসামির নামে আয়বহির্ভূত ১ কোটি ১ লাখ ১ হাজার ৬৫৪ টাকা অতিরিক্ত সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক।
রায়হান শাকিবের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামির মোট আয় ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৮১ হাজার ১২ টাকা। তাঁর সর্বমোট ব্যয় ১ কোটি ৭৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫৯৮ টাকা। তাঁর সঞ্চয় খাতে রয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ ৫ হাজার ৪১৪ টাকা। এ ছাড়া তাঁর নামে ৬ কোটি ৯১ লাখ ৯০ হাজার ৮৪২ টাকার সম্পদ রয়েছে। আসামির নামে আয়বহির্ভূত ৪ কোটি ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৪২ টাকা মূল্যের সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক।
মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক তানভীর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি আ স ম ফিরোজে নামে আয়বহির্ভূত অতিরিক্ত ৩ কোটি ২৯ লাখ ২৬ হাজার ৪৮৪ টাকা, তাঁর স্ত্রীর নামে ১ কোটি ১ লাখ ১ হাজার ৬৫৪ টাকা এবং তাঁর ছেলের নামে ৪ কোটি ২১ লাখ ৮৫ হাজার ৪২ টাকা মূল্যের আয়বহির্ভূত সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এসব সম্পদের সপক্ষে আসামিরা কোনো উপযুক্ত প্রমাণ দেখাতে পারেননি।