মা নুসরাত বেগমের সঙ্গে মহিষের মাংস কিনতে বেরিয়েছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ৫২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম রাফি।

আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের সময় রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশালের কসাইটুলিতে একটি ভবনের নিচতলায় নয়নের মাংসের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁরা। হঠাৎ ভূমিকম্প শুরু হয়। তীব্র ঝাঁকুনিতে দোকানের সামনে থাকা ক্রেতাদের ওপর ভবনের ছাদের রেলিং ভেঙে পড়ে।

এই ঘটনায় গুরুতরভাবে আহত হন রাফিউল ও তাঁর মা নুসরাত। স্থানীয়রা তাঁদের উদ্ধার করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে যান। রাফিউলকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। তাঁর মা নুসরাত হাসপাতলে চিকিৎসাধীন। তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন।

বংশালের কসাইটুলির যে ভবনটির ছাদের রেলিং ভেঙে পড়েছে, সেটিতে থাকেন সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী মো.

রাওনাক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভূমিকম্পে পুরো বিল্ডিং দুলছিল। ওপর থেকে কিছু পড়ার আওয়াজ শুনে তিনি নিচে যান। দেখেন, নিচের গলিতে একজন শিশুসহ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আহতদের কয়েকজন ধরে দ্রুত রিকশা ও ভ্যান করে হাসপাতালে নিয়ে যান। ততক্ষণে নিচের অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছেন।

মাংসের দোকানটিতে শুক্রবার মহিষ জবাই করে বিক্রি করা হয়। এই মাংস কিনতে ভবনটির নিচে অনেকে ভিড় করেছিলেন।

দুপুর একটার দিকে দেখা যায়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গের সামনে বসে কান্না করছেন রাফিউলের সহপাঠী ইমতিয়াজ উদ্দিন নাদিম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুনেছি, রাফিউল তাঁর মায়ের সাথে বাজার করতে গিয়েছিল। সকালে ফেসবুক গ্রুপে দেখলাম। রাফিউলের একটা ছবি দেওয়া। মুখ থেকে রক্ত বের হচ্ছে। এখানে এসে দেখি, সে আর নেই। ওর মা গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন।’

রাফিউলের আরেক বন্ধু অপু প্রথম আলোকে বলেন, ‘সে (রাফিউল) খুবই শান্তশিষ্ট একটা ছেলে ছিল। আমাদের সঙ্গে এক সাথে ক্লাস করেছে। তাঁর মারা যাওয়ার ঘটনা আমরা কোনোভাবেই মানতে পারছি। কী বলব ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’

জানা গেছে, রাফিউলের গ্রামের বাড়ি বগুড়া। তাঁরা দুই ভাই-বোন। বাবা চাকরি করেন দিনাজপুরে। হলে সিট পেলেও মা ও বোনের সঙ্গে বংশালের বাসায় থাকতেন তিনি।

ভূমিকম্পে হতাহতের খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান রাফিউলের একমাত্র বোন।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাজহারুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ২০ জনের মতো আহত ব্যক্তি এখানে আসেন। এর মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

মিটফোর্ড হসপিটালে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন নিহত রাফিউলের মা নুসরাত। দায়িত্বরত চিকিৎসক লুৎফুন নেসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নুসরাতের সিটি স্ক্যান করেছি। তেমন বড় কোনো ইনজুরি আমরা পাইনি। তিনি মোটামুটি শঙ্কামুক্ত বলা যায়।’

নিহত বাকি দুজন হলেন আব্দুর রহিম (৪৮) ও তাঁর ছেলে মেহরাব হোসেন রিমন (১২)। তাঁরা রাজধানীর সুরিটোলা স্কুলের পেছনে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে এই ভূমিকম্প হয়। বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির তীব্রতা ছিল ৫ দশমিক ৭। উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদী। ভূমিকম্পটিকে মাঝারি মাত্রার বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক র ফ উল র ভ ম কম প

এছাড়াও পড়ুন:

গাজীপুরে ভূমিকম্পে তাড়াহুড়ায় শতাধিক শ্রমিক আহত

গাজীপুরসহ সারাদেশে শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে অনুভূত কয়েক সেকেন্ডের শক্তিশালী ভূমিকম্পে মুহূর্তেই সৃষ্টি হয় ব্যাপক আতঙ্ক।

উঁচু ভবন দুলতে শুরু করলে ঘরবাড়ি, অফিস, শিল্পকারখানা, দোকানপাট থেকে মানুষ দ্রুত খোলা জায়গায় ছুটে যায়। গাজীপুরে বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানায় শ্রমিকরা ভয়ে নামতে গিয়ে শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছে। 

মহানগরীর টঙ্গী এলাকায় ভূমিকম্পের সময় পিনাকি গার্মেন্টস এবং ফ্যাশন প্লাস গার্মেন্টস-এর শ্রমিকদের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। শ্রমিকরা দ্রুত ভবন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলে গেট এবং সিঁড়িতে প্রচণ্ড ভিড় ও হুড়োহুড়ির সৃষ্টি হয়। এসময় হুড়োহুড়ির কারণে অনেক শ্রমিক পদদলিত হন। এ ঘটনায় শ্রমিকরা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং আতঙ্কে অনেকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তাৎক্ষণিকভাবে আহতদের টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন টঙ্গী পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ওহেদুজ্জামান বলেন, “আতঙ্ক বের হতে গিয়ে অনেক শ্রমিক আহত হয়েছে। তাদের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।” 

এছাড়াও মহানগরীর বাসনে বাসন থানাধীন কোজিমা লিরিক কারখানা, লীবাস টেক্সটাইল লি., হাসান তানভীর কারখানা, ডে ফ্যাশন কারখানা, কোস্ট টু কোস্ট কারখানা এবং জেলার শ্রীপুর থানাধীন ডেনিম্যাক ডেনিম লি. কারখানার শ্রমিকরা ভূমিকম্পের সময় তাড়াহুড়া করে নামতে গিয়ে অনেকেই আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের ইমারজেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ইশরাত জাহান অ্যানি বলেন, “আমরা সবাই জানি একটা ভূমিকম্প হয়ে গেলো। ভূমিকম্প হওয়ার ১০ মিনিটের মধ্যে আমরা প্রচুর রোগী পাই। এদের অধিকাংশই কারখানা শ্রমিক। এদের মধ্যে অনেকেই ভয়ে অসুস্থ হয়েছেন। আমরা অন্তত শতাধিক মানুষকে চিকিৎসা দিয়েছি। যাদের অবস্থা গুরুতর, তাদের অন্য হাসপাতালে পাঠিয়েছি।”

ঢাকা/রেজাউল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ