Risingbd:
2025-11-21@09:45:24 GMT

পোখরার দিন-রাত (শেষ পর্ব)

Published: 21st, November 2025 GMT

পোখরার দিন-রাত (শেষ পর্ব)

ভ্রমণের মুগ্ধতা তো থাকেই। অধিকাংশ ভ্রমণকারীই সৌভাগ্যবান। তারা একটা দেশের রূপ, আনন্দ বুকে নিয়ে আসে। আমার চোখটাই বোধহয় খারাপ। ধরা পড়ে যায় অন্য কিছু। কোনো এক চিলতে অন্ধকার, কোথাও একটু ব্যথা। 

সূচনা পর্ব পড়ুন: পোখরার দিন-রাত

পোখরার জৌলুসময় নাইট ক্লাব, ডান্স বার, ফ্রি মিক্সিংয়ের এক মিলনমেলা। পথে পথে আনন্দ উল্লাস। কিন্তু আমার চোখ গেলো কয়েকটা দুর্ঘটনায়। একরাতেই। একটা দেখলাম একদম চোখের পলকে। একদম ফাঁকা রাস্তা। ভয়ঙ্কর গতিতে বাইক চালিয়ে এলো এক যুবক। একটা গলি থেকে আরেকটা গলিতে ঘুরতে গেলো। রাস্তার বুকে পিষে চাকার বিশ্রি শব্দ হলো। তারপর বিকট এক শব্দ! মুহূর্তে দেখলাম বাইক একদিকে আর ছেলেটা ছিটকে আরেক দিকে। ধরাধরি করে তাকে তুললো আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কয়েকজন। ভাগ্যিস হেলমেট পরা ছিলো। বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু বিস্ময়কর হলো, তাকে অন্য যে দু’চারজন সড়ক থেকে তুললো সে তাদের গালি দিচ্ছিলো। গালির ভাষা তো বুঝি না, ধরন বুঝি। ধরনেই বুঝলাম বিকট গালিগালাজ হচ্ছে। উদ্ধারকারীরা বিরক্ত হয়ে পাল্টা গালি দিয়ে চলে গেলো। তারপর ছেলেটা টলতে টলতে বাইকের কাছে গিয়ে বসলো। উপুড় হলো, বোধহয় বমি করলো। আমি সরে গেলাম। ছেলেটার জন্য মায়া হলো। ছেলেই সে, যুবক নয়, সদ্য কৈশোরে পড়েছে। কার ছেলে? কী কারণে এতো রাতে অমন জোড়ে ফাঁকা রাস্তায় মদ খেয়ে ছুটতে হবে তাকে? জীবন তাকে কোন পথে নিয়ে ছোটাবে? 

নেপালে তিন রাত পোখরায় ছিলাম আর তার আগে-পরে চার রাত কাঠমান্ডুতে। দু’খানেই দেখলাম, রাত্রি কেমন নেশাময়, উদ্দাম, উচ্ছৃঙ্খল। দিনের বেলায় যে নেপাল মন্দিরে মন্দিরে ধূপ, ঘণ্টা, আরতিতে ভরপুর, নানা বাহারি খাবার, কতো রঙ-বেরঙের উপহার, বুদ্ধ, শিব আর গণেশের আশীর্বাদে ভরপুর সেই নেপাল রাতে যেন কোনো ডাইনীর কাঁধে ভর করে। উদ্দাম সুর, তীব্র নেশা আর যৌনতার ছড়াছড়ি পোখরায় আর কাঠমান্ডুতে। আর জুয়া খেলা তো আছেই। 

খুবই দুঃখের সঙ্গে খেয়াল করেছি নেপাল যেন ক্রমে তার তরুণ প্রাণগুলোকে ঠেলে দিচ্ছে সহজ টাকার দিকে। নেশা আর যৌনতায় ভরে ওঠে রাতের নেপাল, সে পোখরা কিংবা কাঠমান্ডু― যাই হোক। দু’কদম হাঁটতে গেলেই কানের কাছে এসে ফিসফিস করে কোনো দালাল হিন্দি ইংরেজি মিলিয়ে কথা বলে, ‘সুইট গার্ল, হট ড্যান্স, স্পেশাল ম্যাসাজ, চলে গা, মজা আয়ে গা, শস্তা হ্যায়, বড়িয়া হ্যায়।’ 

একসময় ঢাকার নীলক্ষেতে বই কিনতে গেলে বিব্রত হতাম। ওইটুকু ফুটপাত ধরে হাঁটতে গেলেই কানের কাছে এসে বলতো, ‘চটি লাগবো স্যার’ আরো পরে এসে বলতো, ‘নতুন সিডি আছে’। পথ আমার বড় প্রিয়। জীবনে চলার আনন্দ হলো পথে, পথে হাঁটা। কিন্তু যে পথে যৌনতার নানা উপসঙ্গ ছড়িয়ে থাকে সে পথ আমার নয়। মনে পড়ে, দেবদাসে একটা অংশ আছে, যেখানে দেবদাস মাতাল হয়ে ফুটপাতে পড়ে আছে আর চন্দ্রমুখী এসে বেহুঁশ দেবদাসকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। চলার পথে এমন বেহুঁশ, মাতাল বহু দেখেছি কাঠমান্ডুর ট্যুরিস্ট পাড়ায় (মূলত থামেলে) আর পোখরাতে। এইসব দেখে, হিমালয়ের কোলের এই নেপালকে তখন নিচে নেমে যেতে দেখি। তখন মনে হয় প্রদীপের নিচে অন্ধকার, পাহাড়ের নিচে অন্ধকার, সত্যের নিচে অন্ধকার স্তুপ হয়ে আসে, গাঢ় হয়ে আসে। মন খারাপ হয়ে যায়। গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থানে সুখ, শান্তি অনুসন্ধানের সাধন পথের বদলে এই নেশাময়, হৈহুল্লুড়ের বেপরোয়া পথ বড় বেদনার মতো বুকে বাজে। 

অপূর্ব সুন্দর সব ছেলে-মেয়েকে দেখা যায় রাত্রির নেপালের পথে-ঘাটে। ক্যাসিনোতে, বারে, ক্লাবে কিংবা বারের নিচে, ক্লাবের নিচে। তারা চুমু খাচ্ছে, জড়াজড়ি করছি। তাতে কোনো দোষ নেই হয়তো। হয়তো তারা প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা ভাড়া করা আদরের লোক। দোষটা এইখানে যে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে এরা প্রাপ্তবয়স্ক নয়। ব্যাংককের মতো অপ্রাপ্তবয়স্ক যৌনতা আর অপ্রাপ্তমনস্ক ভোগের দিকে এগুচ্ছে হিমালয় কন্যা। এটুকু মানতে কষ্ট হয়। ট্যুরিজমের সঙ্গে পূঁজিবাদ বরাবর নেশা আর যৌনতাকে মিলিয়ে দিতে চায়। এই মেলানোর ভবিষ্যৎ কিন্তু ভালো নয়। 

হোটেলের রিসিপশনে থাকা ছেলেটিও মাঝরাতে মদ আর মেয়ে মানুষ সংগ্রহের নোংরা ইঙ্গিত দিচ্ছে। সে ইঙ্গিত অস্বীকার করায় আমাদের পুরুষত্ব নিয়েই তাচ্ছিল্য করছে সে। এমনকি পরে আমাদের হেনস্তা করার পাঁয়তারা করেছে। 

পোখরায় ফেওয়া লেকের ধারে বসে আছি। এক তরুণ এসে হাজির। তার হাত ভর্তি উল্কি। সুন্দর করে হেসে বললো, ‘হ্যালো স্যার, হাউ আর ইউ’। কুশল বিনিময় করলো। জানতে চাইলো কেমন লাগছে পোখরা। আমি বললাম, ‘ইটস সো সিনিক অ্যান্ড পিসফুল’। এটুকু আর বলিনি যে রাতের পোখরা এতো সিনিকও নয়, পিসফুলও নয়। এক কথা দু’কথার পর জানালো সে ট্যাটু আর্টিস্ট। সবিনয়ে জানতে চাইলো, আমি ট্যাটু করাবো কি না? আমি বললাম, ‘মাই মাম উইল কিল মি, অ্যান্ড আই এম আ মুসলিম।’ কিন্তু চোরায় না-শুনে ধর্ম কথা। সে ইনিয়ে-বিনিয়ে বোঝাতে থাকলো, ট্যাটু জিনিসটা কতো ভালো। যখন আমাকে বুঝ দিতে পারছে না, সে নিজের টিশার্ট খুলে ফেললো, তার সারা শরীর ভর্তি ট্যাটু, একেকটা ট্যাটুর মাহাত্ম্য বোঝাতে থাকলো। যখন সে সুনিশ্চিত হলো যে, আমি ট্যাটু করাবোই না, তখন হুট করে বললো, ‘ক্যান ইউ বাই মি আ ড্রিঙ্ক মিস্টার’? আমি ধাক্কা খেলাম। আরে, এই অফার তো ছেলেরা মেয়েকে করে, কিংবা মেয়েরা ছেলেকে। যতোটুক ইংরেজি জানি আর পাশ্চাত্য সংস্কৃতি বুঝেছি তাতে বুঝি, ‘আমাকে একটু পান করাও’ মানে হলো ঘনিষ্ঠ হওয়ার ইঙ্গিত। এই ইঙ্গিত আমাকে একটা পুরুষ দিচ্ছে অপূর্ব সুন্দর ফেওয়া লেকের বেঞ্চে বসে। আমি হতভম্ব! এবার তার উদাম শরীরটার দিকে তাকাতেও আমার অস্বস্তি হতে লাগলো। আমি বুদ্ধের নাম জপে সামনে পাহাড় আর লেকের জলের দিকে মনোসংযোগ করলাম। লোকটা আমাকে ধ্যানস্ত দেখলো বোধহয় দু’তিন মিনিট। তারপর যা বললো তাতে বজ্রপাতের মতো, আমি সরে গেলাম। সে ইংরেজি-হিন্দি মিলিয়ে বোঝাতে চাইলো, তুমি খুব মিষ্টি, তোমাকে আমার ভালো লেগেছে, চলো আমার সাথে, আমিই তোমাকে পান করাবো, ম্যাসাজ দিয়ে দিবো, বিনা পয়সায় ট্যাটু করিয়ে দিবো, আমার জায়গাটা সুন্দর, চলো। 

আমি তড়িঘড়ি করে বললাম, ওই দেখো, আমার বন্ধুরা আসছে, আজ আমরা প্যারাগ্লাইডিংয়ে যাবো, আজ সময় নেই। সে জানতে চাইলো, আমরা কোন হোটেলে উঠেছি, কতো নাম্বার রুমে। আমি অন্য একটা হোটেলের রুম নাম্বার দিয়ে দিলাম। আমার ফোন নাম্বার জানতে চাইলো, আমি বললাম, আমি ফোন ব্যবহারে অতো দক্ষ নই, এখানে এসে সিমকার্ড নেইনি। এর মধ্যে সত্যিই আমার সফর সঙ্গীদ্বয় এসে হাজির। ওদেরকে এক পশলা বকা দিলাম― তোরা কেন এতে দেরি করলি, সাজগোজ করছিলি নাকি! ওরা নাস্তা খাওয়ার আগে আমার বকা খেয়ে আহত। আমি ওদের চেয়ে বেশি ওই লোকটাকে আহত করে উঠে পড়লাম। দ্রুত বললাম, চল পাহাড়, প্রকৃতি বহুত দেখলাম, নাস্তা খাই, আজ কিন্তু আমি ইংলিশ ব্রেকফাস্ট করবো।

নাস্তার টেবিলে ওরা পুরা ঘটনা শুনে ব্যাপক হাসাহাসি করলো। একজন বললো, ‘আপনার প্রেমে পড়ছে, গেলেই পারতেন।’ আমি তখনও পুরো ব্যাপারটা হজম করতে পারিনি। পরে ভেবেছি, আরে, আমাদের রমনা পার্কে বেড়াতে গেলে পিচ্চিরা বাদাম নিয়ে আসে, বাদাম বিক্রির চেয়ে বিরক্ত করে বেশি। এখানে তো দেখি তারচেয়ে বেশি বিরক্ত করে লোকজন। এ তো নিজেকেই বিক্রি করতে চায়, তাও আবার বিনা পয়সায়। দুনিয়াটা কেমন বেচাকেনার জায়গা হয়ে গেলো সেই নিয়ে আমি ওদের একটা সংক্ষিপ্ত বক্তৃতাও দিয়ে ফেললাম। ওরা যে নাস্তার সঙ্গে আমার ফ্রি বক্তৃতা পছন্দ করেনি সেটা আমি লিখিত গ্যারান্টি দিতে পারি। 

ছবি: লেখক

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন দর বলল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ভূমিকম্প কেন হয়, বিজ্ঞান কী বলে

যখন পৃথিবীর দুটি ব্লক হঠাৎ একে অপরের পাশ দিয়ে পিছলে যায়, তখন ভূমিকম্প অনুভূত হয়। যে তল বরাবর এই পিছলে যাওয়ার ঘটনা ঘটে, তা চ্যুতিতল বা ফল্ট প্লেন নামে পরিচিত। আর পৃথিবীপৃষ্ঠের নিচে যে স্থান থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়, সেটিকে বলা হয় হাইপোসেন্টার বা ভূমিকম্পের কেন্দ্র। ভূমিকম্পের কেন্দ্রের ঠিক ওপরে থাকা স্থানটিকে এপিসেন্টার বা উপকেন্দ্র বলা হয়।

অনেক সময় বড় ধরনের ভূমিকম্পের আগে ফোরশক বা পূর্বাভাস কম্পন হয়। এগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট ভূমিকম্প, যা পরে হওয়া বড় ধরনের ভূমিকম্পের একই স্থানে ঘটে। বড় ও প্রধান ভূমিকম্পকে মূল কম্পন বা মেইনশক বলা হয়। মূল কম্পনের পর পরবর্তী কম্পন বা আফটারশক হয়। ফলে মূল কম্পনের পরে একই স্থানে ঘটে ছোট ভূমিকম্প। মূল কম্পনের আকারের ওপর এটি নির্ভর করে। আফটারশক মূল কম্পনের কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস পরেও হতে পারে।

ভূমিকম্পের কারণ ও কোথায় ঘটে

পৃথিবীর চারটি প্রধান স্তর রয়েছে। অন্তঃস্থ কেন্দ্র, বহিস্থ কেন্দ্র, ম্যান্টল ও ভূত্বক। ভূত্বক ও ম্যান্টলের ওপরের অংশ পৃথিবীর পৃষ্ঠে একটি পাতলা স্তর তৈরি করে। এই স্তর একক কোনো খণ্ড নয়। এটি পৃথিবীপৃষ্ঠকে আবৃত করে থাকা অনেক ক্ষুদ্র টুকরা দিয়ে গঠিত। শুধু তা–ই নয়, এসব টুকরা ধীরে ধীরে নড়তে থাকে। একে অপরের পাশ দিয়ে পিছলে যায় এবং একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এসব টুকরাকে টেকটোনিক প্লেট বলে। এসব প্লেটের কিনারাকে বলা হয় প্লেট বাউন্ডারি। প্লেট বাউন্ডারি অনেক চ্যুতি নিয়ে গঠিত। বিশ্বের বেশির ভাগ ভূমিকম্প এই চ্যুতিতেই ঘটে। যেহেতু প্লেটের কিনারা রুক্ষ হয়, তাই প্লেটের বাকি অংশ নড়তে থাকলেও কিনারা পরস্পরের সঙ্গে আটকে যায়। যখন প্লেট যথেষ্ট দূরে সরে যায়, তখন চ্যুতির মধ্যে থাকা কিনারা আলাদা হয়ে ভূমিকম্প হয়।

ভূমিকম্পের সময় পৃথিবী কাঁপে কেন

চ্যুতির কিনারা আটকে থাকার সময় ও বাকি ব্লক নড়তে থাকার সময় শক্তি সঞ্চিত হতে থাকে। যখন চলন্ত ব্লকের বল চ্যুতির রুক্ষ কিনারার ঘর্ষণকে অতিক্রম করে ও তা আলাদা হয়ে যায়, তখন সেই সঞ্চিত শক্তি মুক্ত হয়। সেই শক্তি ভূমিকম্প তরঙ্গ আকারে পুকুরের ঢেউয়ের মতো চ্যুতির কেন্দ্র থেকে সবদিকে বিকিরণ করে। ভূমিকম্পের তরঙ্গ পৃথিবীর মধ্য দিয়ে চলার সময় পৃথিবীকে কাঁপায় এবং যখন তরঙ্গ পৃথিবীপৃষ্ঠে পৌঁছায়, তখন তারা মাটি ও এর ওপর থাকা সবকিছু—যেমন আমাদের ঘরবাড়ি—কাঁপিয়ে দেয়।

ভূমিকম্পের মাত্রা কীভাবে রেকর্ড করা হয়

ভূমিকম্প সিসমোগ্রাফ যন্ত্রের মাধ্যমে রেকর্ড করা হয়। এই যন্ত্র যে রেকর্ড তৈরি করে, তাকে সিসমোগ্রাম বলে। সিসমোগ্রাফের একটি ভিত্তি রয়েছে, যা মাটিতে শক্তভাবে স্থাপন করা হয় এবং একটি ভারী ওজন মুক্তভাবে ঝুলে থাকে। যখন একটি ভূমিকম্পের কারণে মাটি কাঁপে, সিসমোগ্রাফের ভিত্তিও কাঁপে কিন্তু ঝুলে থাকা ওজন কাঁপে না। পরিবর্তে, যে স্প্রিং বা তার থেকে, তা ঝুলে থাকে, সেগুলো সমস্ত নড়াচড়া শোষণ করে নেয়। সিসমোগ্রাফের কম্পনশীল অংশ ও নিশ্চল অংশের মধ্যে অবস্থানের যে পার্থক্য, সেটিই রেকর্ড করা হয়।

আরও পড়ুনভূমিকম্পের সতর্কবার্তা স্মার্টফোনে পাবেন যেভাবে২ ঘণ্টা আগেবিজ্ঞানীরা কীভাবে ভূমিকম্পের পরিধি পরিমাপ করেন

একটি ভূমিকম্পের আকার নির্ভর করে চ্যুতির আকার ও চ্যুতির ওপর পিছলে যাওয়ার পরিমাণের ওপর। বিভিন্ন চ্যুতি পৃথিবীপৃষ্ঠের নিচে অনেক কিলোমিটার গভীরে থাকায় বিজ্ঞানীরা কেবল একটি মাপার ফিতা দিয়ে তা পরিমাপ করতে পারেন না। পৃথিবীপৃষ্ঠে সিসমোগ্রাফে তৈরি সিসমোগ্রাম রেকর্ডিং ব্যবহার করে নির্ধারণ করা হয় ভূমিকম্পের পরিধি। একটি সংক্ষিপ্ত নড়বড়ে রেখা, যা খুব বেশি নড়ে না, তার অর্থ একটি ছোট ভূমিকম্প; আর একটি দীর্ঘ নড়বড়ে রেখা, যা প্রচুর নড়ে, তার অর্থ একটি বড় ভূমিকম্প। নড়াচড়ার দৈর্ঘ্য নির্ভর করে চ্যুতির আকারের ওপর। নড়াচড়ার পরিমাণ নির্ভর করে পিছলে যাওয়ার পরিমাণের ওপর।

ভূমিকম্পের আকারকে এর মাত্রা বা ম্যাগনিচিউড বলে। প্রতিটি ভূমিকম্পের জন্য একটি মাত্রাই থাকে। বিজ্ঞানীরা ভূমিকম্প থেকে সৃষ্ট কম্পনের তীব্রতা নিয়েও কথা বলেন। ভূমিকম্পের সময় আপনি কোথায় আছেন, তার ওপর নির্ভর করে তীব্রতা পরিবর্তিত হয়।

বিজ্ঞানীরা কীভাবে বলতে পারেন ভূমিকম্পের উৎপত্তি কোথায় হয়েছে

ভূমিকম্পের অবস্থান নির্ণয়ের জন্যও সিসমোগ্রাম কাজে আসে। পি তরঙ্গ আর এস তরঙ্গ নিয়ে তখন আলোচনা করা হয়। পি তরঙ্গ এস তরঙ্গের চেয়ে দ্রুতগামী। এ তথ্য বিজ্ঞানীদের বলতে সাহায্য করে ভূমিকম্পের উৎপত্তি কোথায় হয়েছে। বিষয়টি বোঝার জন্য পি ও এস তরঙ্গকে বজ্রপাত ও বজ্রধ্বনির সঙ্গে তুলনা করুন। আলো শব্দের চেয়ে দ্রুত ভ্রমণ করে, তাই একটি বজ্রপাতের সময় আপনি প্রথমে বজ্রপাতের ঝলকানি দেখতে পাবেন এবং তারপর বজ্রধ্বনি শুনতে পাবেন।

পি তরঙ্গ বজ্রপাতের মতো ও এস তরঙ্গ বজ্রধ্বনির মতো। পি তরঙ্গ দ্রুত ভ্রমণ করে এবং প্রথমে যেখানে আপনি আছেন, সেখানে পৃথিবী কাঁপায়। তারপর এস তরঙ্গ আসে এবং পৃথিবীকে কাঁপায়। আপনি যদি ভূমিকম্পের কাছাকাছি থাকেন, তাহলে পি ও এস তরঙ্গ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আসবে, কিন্তু আপনি যদি দূরে থাকেন, তবে দুটির মধ্যে আরও বেশি সময় থাকবে।

একটি সিসমোগ্রাফে রেকর্ড করা সিসমোগ্রামে পি ও এস তরঙ্গের মধ্যকার সময়ের ব্যবধান দেখে বিজ্ঞানীরা বলতে পারেন, ভূমিকম্প সেই অবস্থান থেকে কত দূরে হয়েছিল। সিসমোগ্রাফ থেকে ভূমিকম্পটি কোন দিকে হয়েছিল, তা বলা যায় না। শুধু কত দূরে ছিল তা বলা যায়।

বিজ্ঞানীরা ঠিক কোথায় ভূমিকম্প হয়েছে, তা নির্ধারণ করতে ট্রায়াঙ্গুলেশন নামে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেন। যদি আপনি একটি মানচিত্রে তিনটি ভিন্ন সিসমোগ্রাফের চারপাশে একটি বৃত্ত আঁকেন, যার প্রত্যেকটির ব্যাসার্ধ হলো সেই স্টেশন থেকে ভূমিকম্প পর্যন্ত দূরত্ব, তবে সেই তিনটি বৃত্তের ছেদবিন্দুই হলো উপকেন্দ্র।

বিজ্ঞানীরা কি ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিতে পারেন

বর্তমানে সুনামি, বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম তথ্য জানার সুযোগ মিললেও ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানার কার্যকর পদ্ধতি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। আর তাই যেকোনো নির্দিষ্ট চ্যুতিতে, বিজ্ঞানীরা জানেন যে ভবিষ্যতে কোনো এক সময় আরও একটি ভূমিকম্প হবে, কিন্তু কখন তা ঘটবে, তা বলার কোনো উপায় তাঁদের কাছে নেই।

সূত্র: ইউএসজিএস ডট গভ

সম্পর্কিত নিবন্ধ