প্রয়াত চিন্তক ও লেখক বদরুদ্দীন উমর তাঁর লেখনীর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ইতিহাসের লেখাকে উঁচু স্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি এক বিরল পণ্ডিত, যিনি কোনো ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক সাহায্য ছাড়াই নিজের শ্রমে ও ঘামে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। ইতিহাসের ভেতর দিয়ে তিনি রাজনৈতিক দর্শনকে বিশ্লেষণ করতে ভালোবাসতেন।

শুক্রবার রাজধানীর বেঙ্গল শিল্পালয়ে জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন আয়োজিত বদরুদ্দীন উমর স্মরণানুষ্ঠানে এসব কথা বলেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। গত ৭ সেপ্টেম্বর বদরুদ্দীন উমর মারা যান।

রেহমান সোবহান বলেন, একাডেমিক জগতে যেখানে অনেকেই ক্যারিয়ার বা খ্যাতির জন্য লেখেন, তিনি লিখতেন একান্ত দায়বোধ থেকে। জ্ঞানচর্চাকে তিনি দেখতেন দায়িত্ব হিসেবে, পেশা হিসেবে নয়। এদিক দিয়ে তিনি অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের মতো, যিনি জ্ঞানের জন্যই জ্ঞানচর্চা করতেন, প্রকাশ বা পদোন্নতির জন্য নয়।

বদরুদ্দীন উমর এমন একজন মানুষ, যিনি চাইলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অধ্যাপক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হতে পারতেন। কিন্তু তিনি বেছে নিয়েছিলেন রাজনীতির কঠিন, অনিশ্চিত, বিপজ্জনক পথ। কারণ, তাঁর বিশ্বাস ছিল, পরিবর্তন আসতে পারে কেবল জনগণের মধ্য দিয়েরেহমান সোবহান, অর্থনীতিবিদ

তবে রাজ্জাক স্যার খুব বেশি বই প্রকাশ করেননি, আর উমর ছিলেন তাঁর প্রজন্মের সবচেয়ে প্রগলভ লেখকদের একজন— এমন মন্তব্য করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, তাঁর দুই খণ্ডের ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়’ বইটি প্রকাশিত হয় প্রথমে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে, পরে কেমব্রিজ ও ভারতের বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে। এসব লেখায় তিনি শ্রমিক শ্রেণির ইতিহাসকে তুলে ধরেন, যা স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনীতি বোঝার ক্ষেত্রে এক অনন্য অবদান।

বদরুদ্দীন উমর শুধু তাত্ত্বিক গবেষকই নন, একজন রাজপথের কর্মীও বলেও উল্লেখ করেন রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, বদরুদ্দীন উমর এমন একজন মানুষ, যিনি চাইলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অধ্যাপক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হতে পারতেন। কিন্তু তিনি বেছে নিয়েছিলেন রাজনীতির কঠিন, অনিশ্চিত, বিপজ্জনক পথ। কারণ, তাঁর বিশ্বাস ছিল, পরিবর্তন আসতে পারে কেবল জনগণের মধ্য দিয়ে।

জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক রওনক জাহান পরিচয়ের প্রাথমিক পর্বের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘১৯৭২ সালের পর অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের মারফতে আমার সঙ্গে বদরুদ্দীন উমরের পরিচয়। পরিচয়ের অনেক আগে আমি তাঁর নাম শুনেছিলাম।’

বদরুদ্দীন উমর স্মরণানুষ্ঠানে আলোচক ও আয়োজকেরা। রাজধানীর বেঙ্গল শিল্পালয়ে; ২৪ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বদর দ দ ন উমর র জন ত প রক শ

এছাড়াও পড়ুন:

শপথ নিলেন নির্বাচিত চাকসু নেতারা, ফেসবুক পোস্টের জেরে ছিলেন না একজন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচিত প্রার্থীরা শপথ নিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় তাঁরা শপথ নেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের (ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভবন) মিলনায়তনে এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ধর্ষণ ঘটনা নিয়ে ফেসবুক পোস্ট দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া চাকসুর নির্বাহী সদস্য আকাশ দাস শপথ অনুষ্ঠানে আসেননি।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শপথ গ্রহণের এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শহীদ হৃদয় চন্দ্র তড়ুয়া ও শহীদ মো. ফরহাদ হোসেনের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার চাকসুর নির্বাচিত প্রার্থীদের এ শপথ পড়ান। আর হল সংসদের প্রতিনিধিদের শপথ পড়ান সংশ্লিষ্ট আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষ।

শপথ অনুষ্ঠান শেষে চাকসু ও হল সংসদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন বলেন, চাকসু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য জরুরি একটি অঙ্গ। দীর্ঘদিন ধরে চাকসু ছিল না। শিক্ষার্থীরা বিভিন্নভাবে তাঁদের দাবি তুলে ধরেছেন। এখন তাঁরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাঁদের যেসব চাওয়া রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে কথা বলতে পারবেন এবং এর মাধ্যমে তাঁদের পরস্পরের মধ্যে যে সহমত–শ্রদ্ধাবোধ, সেগুলো জাগ্রত হবে।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী, চাকসুর সাবেক ভিপি আ ম শামসুজ্জামান (হিরা), এস এম ফজলুল হক, মাজহারুল হক শাহ, মো. জসিম উদ্দিন ও জিএস আ ফ ম মাহমুদুর রহমান প্রমুখ।

এর আগে চলতি ১৫ অক্টোবর চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভিপি ও জিএস পদে ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত মো. ইব্রাহীম সাঈদ বিন হাবিব নির্বাচিত হন। এ ছাড়া এজিএস পদে ছাত্রদলের আয়ুবুর রহমান নির্বাচিত হন। এর বাইরে বাকি ২৩টি পদের ২২টিতেও ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা জয়ী হন।

সমালোচনার পর শপথে অনুপস্থিত

বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে পোস্ট করে সমালোচিত হওয়ার পর শপথে অনুপস্থিত ছিলেন আকাশ দাস। গতকাল বুধবার রাতে তিনি এ পোস্ট দিয়েছিলেন। আকাশ দাস চাকসু নির্বাচনে শিবির-সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন।

আকাশ দাসের দেওয়া পোস্টে তিনি ধর্ষণ-কাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগীকেও দায়ী করেন। এ ছাড়া তদন্ত করলে ভুক্তভোগী ব্যক্তির দোষ বেশি পাওয়া যাবে বলেও উল্লেখ করেন। যদিও এক ঘণ্টার মধ্যে তিনি পোস্ট মুছে দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হয়। পাশাপাশি চাকসু ও হল সংসদের নির্বাচিত নেতারাও আকাশ দাসের সঙ্গে শপথ নিতে আপত্তি জানান।

শপথ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আকাশ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু আমি শপথ অনুষ্ঠানে গেলে সংঘাতমূলক পরিস্থিতি হতো, তাই আমি যাইনি।’

অনুপস্থিত থাকা প্রতিনিধিদের শপথ কীভাবে নেওয়া হবে, তা জানতে চাইলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের কাজ ছিল নির্বাচিত করা। আমরা নির্বাচিত করে দিয়েছি, বাকিটা প্রশাসনের দায়িত্ব।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসনিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, কেন্দ্রীয় সংসদের জয়ী প্রার্থীরা চাকসুর সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আলাদাভাবে শপথ নিতে পারবেন। তবে আকাশ দাসের বিষয়ে যেহেতু অভিযোগ এসেছে, তাই তাঁর বিষয়ে চাকসুর নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন।

আরও পড়ুনবুয়েটের ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে চাকসু নেতার পোস্ট, সমালোচনার পর মুছে দিয়ে দুঃখ প্রকাশ১৮ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভেতরে সমন্বয় সভা, বাইরে এনসিপির দুই পক্ষের হাতাহাতি
  • মালাইকার বয়স নিয়ে গোলক ধাঁধায় নেটিজেনরা
  • সন্দ্বীপের শিক্ষা কর্মকর্তার ভিডিও ভাইরাল, নানা সমালোচনা
  • সৌম‍্যর এত প্রশংসা করবেন না, নজর লাগবে: ফারিয়া
  • ইসরায়েল ইস্যুতে সিনেটে জেরার মুখে পড়লেন কুয়েতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ট্রাম্পের মনোনীত গালিব
  • পাবনায় দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যু, গ্রেপ্তার ২
  • কুবিতে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ২ 
  • টেস্ট অধিনায়কের শর্ট লিস্টে চারজন!
  • শপথ নিলেন নির্বাচিত চাকসু নেতারা, ফেসবুক পোস্টের জেরে ছিলেন না একজন