‘শ্রমজীবী মানুষের রেশন ও পেনশনের নিশ্চয়তা রাষ্ট্রকে দিতে হবে’
Published: 24th, October 2025 GMT
“শ্রমসংস্কার আইনে বলা হয়েছে, প্রত্যেক শ্রমজীবী মানুষের একটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড থাকতে হবে। এই কার্ড তার স্বীকৃতি-সে একজন শ্রমিক, একজন শ্রমজীবী মানুষ। এই শ্রমজীবী মানুষের রেশন, আবাসন ও পেনশনের নিশ্চয়তা রাষ্ট্রকে দিতে হবে।”
শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের আকরাম খাঁ মিলনায়তনে ঢাকা জেলা ট্যাক্সি, ট্যাক্সিকার ও অটোরিকশা চালক শ্রমিক ইউনিয়ন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
প্যাসিফিক জিন্সের ৮ কারখানা আবারো চালু
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন,“আমাদের দেশের অন্যতম দক্ষ জনশক্তি হচ্ছে গাড়িচালকরা। তাদের নিবন্ধিত লাইসেন্স রয়েছে। পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স নিয়ে একজন দক্ষ জনশক্তি হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার পরই তিনি রাস্তায় নামতে পারেন। তাহলে এই দক্ষ মানুষদের যুগের পর যুগ এত অমানবিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয় কেন-এটা আমাদের খুঁজে দেখা দরকার।”
তিনি বলেন, “মৌলিক দাবিগুলো যেমন নিয়োগপত্র, ন্যায্য মজুরি-যা বাজারের মানদণ্ড নয় বরং যৌক্তিক আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। সেটা আদায়ে চালকদের নিজেদের মধ্যে সংগঠিত হতে হবে। একইসঙ্গে অন্যান্য সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করা দলগুলোর সঙ্গে কর্মসূচিভিত্তিক ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।”
আলোচনা সভায় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, “আমরা এমন একটি আইন চাই, যেখানে ড্রাইভারদের কর্মঘণ্টা, কর্মপরিবেশ, চাকরির নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা সুনির্দিষ্ট থাকবে। শ্রমসংস্কার আইনেও বলা হয়েছে, প্রত্যেক শ্রমজীবী মানুষের একটি রেজিস্ট্রেশন কার্ড থাকতে হবে। এই কার্ড তার স্বীকৃতি-সে একজন শ্রমিক, একজন শ্রমজীবী মানুষ। এই শ্রমজীবী মানুষের রেশন, আবাসন ও পেনশনের নিশ্চয়তা রাষ্ট্রকে দিতে হবে।”
তিনি বলেন, “হালকা যানবাহনের জন্য আমাদের লাইসেন্স আছে, কিন্তু শ্রম আইনে হালকা চালকদের কোনো স্বীকৃতি নেই। আমি ড্রাইভিং লাইসেন্স পেলাম হালকা যানের চালক হিসেবে, কিন্তু শ্রম আইনে তার স্বীকৃতি পেলাম না। কারণ, আমরা এতটাই ‘হালকা’ যে আইনেও আমাদের স্থান হয়নি।”
রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, “শ্রম আইনের ৫ নম্বর ধারায় বলা আছে-নিয়োগপত্র না দিয়ে কাউকে নিয়োগ করা যাবে না। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে নিয়োগপত্র হলো চাবি। কাল মালিক যদি বলেন, ‘কাল থেকে আর আসবেন না, চাবিটা দিয়ে যান’-তাহলেই শেষ। অথচ প্রত্যেক চালকের অভিজ্ঞতার একটা মূল্য আছে। বয়স যত বাড়ে, অভিজ্ঞতা বাড়ে; কিন্তু চাকরির ঝুঁকিও তত বাড়ে।”
ঢাকা/আসাদ/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন শ চয়ত শ রমজ ব আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
মাদক একটা ওয়ানওয়ে জার্নি, এটা দিয়ে ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না: উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছেন, ‘মাদক একটা ওয়ানওয়ে জার্নি, এটা দিয়ে ঢোকা যায়, বের হওয়া যায় না। এ পথে ঢুকলে ফেরার রাস্তা নেই। কাজেই আগেই সাবধান হতে হবে। অভিভাবকদের অনুরোধ করব, আপনাদের সন্তানদের সময় দিন। ব্যস্ততা থাকবে, কাজ থাকবে, কিন্তু সন্তানদের সময় দিন। সময় না দিলে সন্তানদের বিপথে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে।’
আজ রোববার দুপুরে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষকদের প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘যে শিক্ষকেরা আমাদের পড়িয়েছিলেন, তাঁদের বেতন ছিল অত্যন্ত কম। কিন্তু তাঁদের মধ্যে ডেডিকেশনের অভাব ছিল না। তাঁরা প্রচণ্ডভাবে ডেডিকেটেড ছিলেন ছাত্রদের প্রতি। খুবই যত্ন নিতেন আমাদের। তাঁদের তুলনায় আমাদের বর্তমান শিক্ষকদের বেতন অনেক ভালো। প্রাইমারি স্কুলে আমাদের যাঁরা পড়িয়েছেন ষাটের দশকের গোড়ার দিকে, একজন শিক্ষকের বেতন ছিল ৩২ টাকা। আমার বাবা বেতন পেতেন ৫০০ টাকার বেশি। তাঁরাও কিন্তু প্রচণ্ড ডেডিকেশন নিয়ে আমাদের শিখিয়েছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, আপনাদের (শিক্ষকদের) যথেষ্ট মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। আমি জানি, শিক্ষকদের কত সমস্যা। এরপরও আপনাদের আন্তরিকতা ধরে রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘নেপাল থেকে মালয়েশিয়াতে একজন কর্মী যায় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। আমাদের এখান থেকে যায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়। একই কাজের জন্য একই বেতনে। আমি পৃথিবীর অনেক দেশে গেছি। বাঙালি আছে সব জায়গাতে। অনেক ক্ষেত্রে চাকরি করছে, ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছি, সবচেয়ে কম বেতনে চাকরি করে বাঙালিরা। কারণ, প্রশিক্ষণের অভাব, শিক্ষার অভাব। আমাদের যে ম্যানপাওয়ার এজেন্ট আছেন, তাঁরাও প্রতারিত করেন। এটা আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থার ব্যর্থতা। এই মানুষগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা আমরা নিতে পারি নাই।’
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘লেখাপড়ার কোনো বিকল্প নেই। তোমাদের সামনে প্রচুর সুযোগ আছে। যে জাতি আগে লেখাপড়া শিখেছে, তারা আগে উঠতে পেরেছে। তোমরা লেখাপড়ার প্রতি মনযোগী হও। কারণ, আমাদের এর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের কোনো শর্টকাট নেই, কাজেই আমাদের কঠিন পথে এগোতে হবে। আমাদের সময়ের তুলনায় তোমাদের সুযোগ অনেক বেশি। তোমাদের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে, যোগ্যতা অর্জনের পথ একমাত্র লেখাপাড়া।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল কুদ্দুস সরকার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান, পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা জামান, মাগুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান প্রমুখ।