নতুন রূপে নদীপথে ফিরছে শতবর্ষী স্টিমার পি এস মাহসুদ
Published: 25th, October 2025 GMT
শুক্রবার সকাল ১০টা। ঢাকার সদরঘাটের ১১ নম্বর পন্টুনের সামনে বেশ জটলা। সবার চোখ শতবর্ষী স্টিমার পি এস মাহসুদের দিকে। কারও চোখে পুরোনো স্মৃতি, কারও চোখে উচ্ছ্বাস। নদীকেন্দ্রিক ঐতিহ্যের জীবন্ত প্রতীক পি এস মাহসুদ তিন বছর পর আবার ঢাকার নদীপথে ফিরছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) জানিয়েছে, আগামী ১৫ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে চলাচল শুরু করবে এই ঐতিহাসিক জলযান। ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতি শুক্রবার সকালে ছেড়ে যাবে বরিশালের উদ্দেশে। পরদিন শনিবার আবার ফিরবে ঢাকায়। যাত্রাপথে পর্যটকেরা উপভোগ করবেন নদী আর দক্ষিণাঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
পি এস মাহসুদ ১৯২২ সালে কলকাতার গার্ডেন রিচ ওয়ার্কশপে নির্মিত হয়। বেলজিয়ামের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ১৯৮৩ সালে নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ লিমিটেডের মাধ্যমে স্টিমারটির স্টিম ইঞ্জিনকে ডিজেল ইঞ্জিনে রূপান্তর করা হয়। ১৯৯৫ সালে মেকানিক্যাল গিয়ার সিস্টেমে রূপান্তর করা হয়।
পি এস মাহসুদে জীবন রক্ষাকারী লাইফ জ্যাকেট, লাইফ বয়া, ফায়ার এক্সটিংগুইসারের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। পি এস মাহসুদ শতবর্ষ ধরে নৌপথে কোনো দুর্ঘটনা ছাড়া নিরাপদভাবে নিরবচ্ছিন্ন যাত্রী ও পর্যটনসেবা দিয়ে আসছে।
ঢাকা থেকে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে চলাচল করত স্টিমারটি। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর যাত্রীর অভাবে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে স্টিমারটির চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিন বছর ধরে অচল থাকা প্যাডেল স্টিমারটিকে নতুন রূপে সাজানো হয়েছে। ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে এর সংস্কারকাজ করা হয়েছে বলে বিআইডব্লিউটিসি জানিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার স্টিমারটির ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জে পরীক্ষামূলক যাত্রা শেষে নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
উপদেষ্টা জানান, পি এস মাহসুদের পাশাপাশি আরও তিনটি পুরোনো স্টিমার—পি এস অস্ট্রিচ, পি এস লেপচা ও পি এস টার্ন সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নদীপথের ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও নদীভিত্তিক পর্যটনের সম্ভাবনা বিস্তৃত করার লক্ষ্যে এটা করা হবে।
শতবর্ষী স্টিমার পি এস মাহসুদ তিন বছর পর আবার নদীপথে যাত্রী পরিবহন শুরু করছে। গতকাল শুক্রবার সদরঘাটেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ক রব র স শতবর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে নদীবন্দরের সীমানা নিয়ে উত্তেজনা, বিক্ষোভে পিছু হটল বিআইডব্লিউটিএ
কক্সবাজার শহরে নদীবন্দরের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আজ রোববার দুপুরে শহরের বাঁকখালী নদীর কস্তরাঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে পিছু হটেন বিআইডব্লিউটিএর (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ) কর্মকর্তারা।
স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ কস্তুরাঘাট এলাকায় নদীবন্দরের সীমানা নির্ধারণে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা আসবেন—এমন খবরেই সকাল থেকেই স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হতে থাকেন। সকাল ৯টা থেকে বদরমোকাম, কস্তুরাঘাট ও পেশকারপাড়ার লোকজন গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ শুরু করেন। এতে ওই এলাকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ১১টার দিকে একই জায়গায় কয়েক শ নারী-পুরুষ এক হয়ে মানববন্ধন করেন। পরে দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা কস্তুরাঘাট এলাকায় পৌঁছান। এরপর উত্তেজনা আরও বাড়ে। শেষ পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণের কাজ বন্ধ করেই ফিরে যায় বিআইডব্লিউটিএ।
বিআইডব্লিউটিএ ও জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত ১ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর বাঁকখালী নদীর ওই অংশে উচ্ছেদ অভিযানে ৪৯৬টি অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে প্রায় ৬৩ একর জমি উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার জমি আবার দখলের ঝুঁকি থাকায় কাঁটাতারের বেড়া ও সীমানা পিলার দেওয়ার উদ্যোগ নেয় বিআইডব্লিউটিএ।
যা বলছেন বিক্ষোভকারীরা
অবরোধকারীদের দাবি, উচ্ছেদ হওয়া স্থানের মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন খতিয়ানভুক্ত জমিও রয়েছে। পারুল আক্তার নামের এক নারী বলেন, ‘আমাদের খতিয়ান আছে, খাজনাও দিচ্ছি। ক্ষতিপূরণ না দিয়ে বা আলোচনা না করে ঘরবাড়ি ভাঙা ও কাঁটাতার দেওয়া চলবে না।’
সাবিনা ইয়াছমিন নামের আরেক নারী বলেন, অনেক পাকা ভবন যখন তৈরি হলো, তখন কেউ থামাননি। এখন হঠাৎ উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে অনেকেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ক্ষতিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এ জায়গায় স্থায়ী কোনো অবকাঠামো হতে দেবেন না।
স্থানীয় বাসিন্দাদের এ মানববন্ধনে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন। তাঁদের একজন কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও জেলা মহিলা দলের সভাপতি নাসিমা আকতার। তিনি বলেন, বাঁকখালী নদীর দখল নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পৃথক তিনটি মামলা রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ নিয়েও হাইকোর্টে তিনটি মামলা হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না করে ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করে জায়গাজমিতে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা অন্যায়। আলোচনার মাধ্যমে সংকটের নিরসন না করলে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
কর্মসূচিতে থাকা জেলা যুবদলের প্রচার সম্পাদক ও আইনজীবী মো. ইসমাইল বলেন, বিআইডব্লিউটিএর উচ্ছেদ করা জমিতে অসংখ্য মানুষের খতিয়ানভুক্ত জমি রয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে তিনিসহ ৭৭ জন মামলা করেছেন।