একদল মানুষ দেশে নতুন করে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েমের চেষ্টা করছে: মামুনুল হক
Published: 25th, November 2025 GMT
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ হতে হবে জুলাই সনদের ভিত্তিতে। কিন্তু একদল মানুষ চায়, বিগত দিনে যেমনিভাবে একটি দল ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল, এখনো একইভাবে সবকিছু চলুক। এ ক্ষেত্রে আমার বার্তা হলো, বাংলার মানুষ রক্ত দিয়ে ফ্যাসিবাদ বিদায় করেছে নতুন কোনো ফ্যাসিবাদের হাতে স্বাধীন বাংলাদেশের মাটি ইজারা দেওয়ার জন্য নয়। যারা দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনৈতিক হিস্যা দিতে চায় না, তাঁরা একদলীয় ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে নতুন করে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েমের চেষ্টা করছে।’
মঙ্গলবার দুপুরে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পাইলট সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মামুনুল হক এ কথা বলেন। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি, নির্বাচনকালীন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত ও খেলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে উপজেলা খেলাফত মজলিস।
মামুনুল হক বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস হচ্ছে সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনীতির ইতিহাস। আমাদের দেশে একদল মানুষ রয়েছে, যারা রাতে হিন্দুদের ছোবল মারত, আবার দিনে ওঝা হয়ে ঝাড়ত। তারাই সংখ্যালঘুদের নিয়ে রাজনীতি করেছে।’ তিনি বলেন, ‘ইসলাম ক্ষমতায় গেলে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মের মানুষ সঠিক অধিকার পাবে। এমনকি তাদের অধিকার যারা হরণ করেছে, তা-ও পাই পাই করে আদায় করে দেওয়া হবে।’
মামুনুল হক আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের যেসব দেশপ্রেমী ইসলামি দল ও রাজনৈতিক পক্ষগুলো বাংলাদেশকে ভালোবাসে, যারা দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত দেখতে চায়, পুরোনো ধারা পাল্টে নতুন বন্দোবস্ত দেখতে চায়, যারা জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামীর বাংলাদেশ দেখতে চায়—তাদের হাতে হাত রেখে জুলাই চেতনায় নতুন ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। কারণ, আগামীর নির্বাচন শুধু প্রতীকের নির্বাচন নয়। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটের নির্বাচন।’ তিনি উপস্থিত সবাইকে গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
কটিয়াদী উপজেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মাওলানা তাফাজ্জুল হক রাশিদীর সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-২ আসনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রার্থী মাওলানা শফিকুল ইসলাম রুহানী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মাওলানা আবদুল আজিজ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা হেদায়েত উল্লাহ হাদী, অর্থসম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ম ন ল হক জ ল ই সনদ র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তরুণ অবরুদ্ধ, পরে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা
ফরিদপুরের নগরকান্দায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক তরুণকে অবরুদ্ধ করে একদল লোক। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার গোড়াইল বাজারে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে থানায় আনে।
এদিকে ওই ঘটনার সময় গোড়াইল বাজারের অদূরে ওই তরুণের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করে একদল লোক। এ সময় তারা বাড়ির সামনে একটি পাটখড়ির গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
গ্রেপ্তার তরুণ (২১) গত বছর নগরকান্দা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। বর্তমানে তিনি গোড়াইল বাজারে একটি ফার্মেসিতে সহকারী হিসেবে কাজ করেন। থানায় আনার পর তাঁর বিরুদ্ধে সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই তরুণ তাঁর ফেসবুক আইডিতে কাবা শরিফের ছবি বিকৃত করে ধর্মীয় অবমাননাকর বাক্য লিখে পোস্ট করেন। গতকাল বিকেলে ওই মন্তব্যের স্ত্রিনশট ফেসবুকে ছড়িয়ে পরে। সন্ধ্যার পর থেকে গোড়াইল বাজার এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে আশপাশের গ্রাম থেকে লোকজন এসে ওই তরুণের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তখন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই বাজারের কয়েকজন ওষুধের দোকানের সাটার নামিয়ে ওই তরুণকে আটকে রাখেন। এর মধ্যেই বাজারে জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। পরে বিষয়টি নগরকান্দা থানার পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানানো হয়।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নগরকান্দার ইউএনও দবির উদ্দিন ও নগরকান্দা থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পরিস্থিতি ততক্ষণে উতপ্ত হয়ে ওঠে। ওই ওষুধের দোকান জনতা ঘিরে ফেলে। দোকানের সামনে থেকে হ্যান্ডমাইকে আইন হাতে তুলে না নেওয়ার জন্য জনতার উদ্দেশে কথা বলেন স্থানীয় আলেম সমাজের প্রতিনিধি ও জনপ্রতিনিধিরা। এ সময় ইউএনও দবির উদ্দিন এক দিনের মধ্যে দৃশ্যমান শাস্তির আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে ওই তরুণকে উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়।
লস্করদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাত নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হিরু ফকির বলেন, পুলিশ ওই তরুণকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর গোড়াইল বাজার থেকে আনুমানিক এক কিলোমিটার দূরে তাঁর বাড়ির দিকে ছুটে যায় একদল লোক। তারা ওই তরুণের বাড়ি ভাঙচুর করে। ফিরে আসার পথে ওই বাড়ির সামনে একটি পাটখড়ির গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে স্থানীয় মানুষের সহায়তায় সেই আগুন নেভানো হয়।
নগরকান্দা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাইবার সুরক্ষা আইনের ২৬ ও ২৭ ধারায় ওই তরুণকে আসামি করে মামলা করেছেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, ওই তরুণের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেই স্কিনশর্ট তিনি দেখেছেন। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে নানা ধরনের গুজব ছড়ানোর সুযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ দল দিয়ে পরীক্ষা করা হবে। প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটন করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ওই তরুণের বাড়িতে ভাঙচুরের বিষয়ে ওসি রেজাউল করিম বলেন, ঘটনাটা তেমন বড় কিছু নয়। ওই এলাকায় বর্তমানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।