রাজশাহী নগরে ভরাট করা পুকুর পুনরুদ্ধারে অভিযান
Published: 25th, November 2025 GMT
রাজশাহী নগরে রাতারাতি ভরাট হওয়া একটি পুকুর উদ্ধারে নেমেছে প্রশাসন। আজ মঙ্গলবার থেকে পুকুরটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হয়েছে। বিকেলে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার আ ন ম বজলুর রশীদ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘোষণা দেন, ‘এখন থেকে রাজশাহীতে আইন অমান্য করে আর কোনো পুকুর ভরাট হবে না। এই পুকুর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে এবং জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হবে।’
রাজশাহীতে আগে অনেক পুকুর ভরাট করা হয়েছে। ভরাট বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেই পুকুরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। এবার নগরের মোল্লাপাড়া মৌজায় ৬৩ শতাংশ আয়তনের পুকুরটি গত কয়েক দিন ধরে ভরাট করা হচ্ছিল। পুকুরটির মালিক খাইরুল ইসলাম খোকন ও মাহমুদুল হাসান। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার থেকে পুকুরটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে।
আজ বিকেলে পুকুরের কাছে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরটির প্রায় ৯০ ভাগ ভরাট করে ফেলা হয়েছে। যাঁরা পুকুর ভরাট করছিলেন, তাঁরা যে সেচযন্ত্র দিয়ে পানি তুলে পুকুরটি শুকাচ্ছিলেন, সেটি আজও সেখানেই ছিল। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেটি জব্দ করা হয়।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের পক্ষ থেকে আগামীকাল বুধবার নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানায় একটি নিয়মিত মামলা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আজ সকাল ১০টা থেকে নগরের কাশিয়াডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক শিউলি খানমের নেতৃত্বে ১০ জন পুলিশ, আনসারের ল্যান্স নায়েক আবু শাহিদ মোল্লার নেতৃত্বে বেলা ১১টা থেকে সাতজন আনসার সদস্য অবস্থান নেন। তাঁরা পুকুরের পুনঃখনন শেষ হওয়া পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পর্যায়ক্রমে পাহারায় থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থলে ছিলেন বোয়ালিয়া থানা ভূমি কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফ হোসেন। তিনি জানান, গত শুক্রবার তাঁদের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী ইসরাইল হক ঘটনাস্থলে (পুকুর) এলে তাঁরা (ভরাটকারী) বলেছিলেন, অন্য কাজের জন্য তাঁরা বালু মজুত করছেন। পরে শুক্র ও শনিবার রাত-দিনে পুকুরটি ভরাট করা হয়। খবর পাওয়ার পর আজ সারা দিন পুকুরটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কাজ করা হয়। তিনটি খননযন্ত্র দিয়ে পুকুরে ফেলা বালু তোলা হচ্ছে। পরে এই বালু নিলামে বিক্রি করা হবে। কাল বুধবার সকাল থেকে একইভাবে আবার খননকাজ করা হবে।
এ সময় জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো.
বিকেল সোয়া চারটার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার আ ন ম বজলুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের সিটি করপোরেশনের যে জলাধার সংরক্ষণ আইন রয়েছে, সেই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমরা যখনই খবর পেয়েছি যে, একটি পুকুর ভরাট হচ্ছে, তখনই আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। পুকুরটিকে আমরা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাব। সে জন্য এক্সাভেটর কাজ করছে। আমাদের বার্তা হচ্ছে যে, সিটি করপোরেশন এলাকায় যে আইন রয়েছে, সেই আইনটি বলবৎ থাকবে। যাঁরা পুকুর ভরাট করেছেন, আইন অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুকুরটি পুনঃখনন করতে যে ব্যয় হবে, সেই ব্যয় তাঁদের কাছ থেকে আদায় করা হবে। ভবিষ্যতে সিটি করপোরেশন এলাকায় আর কোনো পুকুর ভরাট হবে না।’
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য পুকুরের মালিকের কোনো ঠিকানা বা মুঠোফোন নম্বর জোগাড় করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রাজশাহীতে পুকুর ভরাট ও দখল নিয়ে ২০১৪ সালে ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের’ পক্ষে হাইকোর্টে একটি রিট করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে নগরে পুকুর গণনা করে বোয়ালিয়া ভূমি কার্যালয়। খতিয়ান, দাগ নম্বর, জমির পরিমাণসহ মোট ৯৫২টি পুকুরের তালিকা পাওয়া যায়। এর মধ্যে ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত পুকুর ৪৮টি। বাকিগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন। পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) গবেষণা অনুযায়ী, তিন বছরে রাজশাহী শহরে ২৪ ফুট এবং গ্রামে ২০ থেকে ৩৫ ফুট পর্যন্ত পানির স্তর নেমে গেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ক র ভর ট পর ব শ র ট কর
এছাড়াও পড়ুন:
কুষ্টিয়ায় বিএনপির প্রার্থী বদলের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ
কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমীর বিএনপির মনোনয়ন বাতিল করে কুমারখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল ইসলাম আনছার প্রামাণিককে দলের প্রার্থী করার দাবিতে কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কর্মী-সমর্থকরা।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তৃণমূল বিএনপির ব্যানারে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের খোকসার মোড়াগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মিছিল শুরু হয়। এরপর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে কুমারখালীর জিলাপিতলা বাজারে গিয়ে শেষ হয়।
আরো পড়ুন:
বাকৃবি শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধ
পাবনা-৩: বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন না করলে চাচা-ভাতিজার একজন স্বতন্ত্র হওয়ার ঘোষণা
মিছিলে কুমারখালী ও খোকসা উপজেলার কয়েকশত নেতাকর্মী অংশ নেয়। তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় এবং পথচারীরা ভোগান্তিতে পড়ে।
এ বিষয়ে কুমারখালী পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে মেহেদী রুমীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যিনি দীর্ঘ ১৭ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে ছিলেন না। তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ।’’
নন্দলালপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘‘মেহেদী আহমেদ রুমীকে পরিবর্তন করে আনছার প্রামাণিককে মনোনয়ন না দিলে এই আসনে ধানের শীষকে বিজয়ী করা সম্ভব হবে না। এখানে রুমী সাহেব থাকলে জামায়াত জিতে যাবে। তাই পরিবর্তন করে আনছারকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।’’
খোকসা ইউনিয়নের যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘মেহেদীকে পরিবর্তন করে আনছারকে মনোনয়ন দিলে বিপুল ভোটে ধানের শীষের বিজয় হবে। না হলে বড় ধরনের ভরাডুবি ঘটবে।’’
ঢাকা/কাঞ্চন/বকুল