আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়ার সাতটি আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ জেলা বিএনপির ২৩ নেতাকে ঢাকায় ডেকেছে বিএনপি। আগামীকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম (বাদশা) বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ১২ অক্টোবর বিকেলে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জেলার সব আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠক করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন যাঁকেই দেওয়া হোক না কেন, তাঁর পক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

রেজাউল করিম আরও বলেন, ওই বৈঠকের পর বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর) আসন বাদে অন্য পাঁচটি আসনে পাঁচজন নেতাকে ফোন করে নির্বাচনের জন্য মাঠে কাজ করার নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ধারাবাহিক সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ওই পাঁচ নেতাসহ মনোনয়নপ্রত্যাশী ও জেলা বিএনপির ২৩ নেতাকে আগামীকাল গুলশান কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। সেখানে মনোনয়নের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা ছাড়াও নির্বাচন ঘিরে দলীয় কর্মপন্থা ও ধানের শীষকে বিজয়ী করতে নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা আসতে পারে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত বৈঠকে তারেক রহমান স্পষ্ট নির্দেশ দেন, ধানের শীষের মনোনয়ন যাঁকে দেওয়া হবে, তাঁকে বিজয়ী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মনোনয়ন না পেলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদসহ স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে প্রার্থী করা ছাড়াও দলীয়ভাবে মূল্যায়ন করা হবে। তবে দলে কোনো বিশৃঙ্খলা করা চলবে না।

জেলা বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন পাঁচটি আসনে দলের পাঁচ নেতাকে টেলিফোন করে নির্বাচনের জন্য মাঠে নামার নির্দেশ দেওয়ায় মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্যরা ভেতরে-ভেতরে হতাশ হন। তবে এ নিয়ে কেউ এখনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি।

গত বৈঠকে আলোচনার একপর্যায়ে উঠে আসে বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে শরিক দলের প্রার্থী ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নার প্রসঙ্গ। এবারের বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম। তিনি বলেন, শরিক দলকে আসন ছেড়ে দিলে আইন সংশোধন না করা পর্যন্ত ধানের শীষ প্রতীকে অন্য দলের কেউ নির্বাচন করতে পারবেন না। এ অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইতিমধ্যে জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মীর শাহে আলমকে এ আসনে মাঠে নামতে বলেছেন। আগামীকালের বৈঠকে এ বিষয়েও চূড়ান্ত নির্দেশনা আসতে পারে।

ঢাকায় ডাক পাওয়া নেতাদের মধ্যে আছেন বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে তারেক রহমানের ফোন পাওয়া সাবেক সংসদ সদস্য কাজী রফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সহিদ-উন-নবী (সালাম), সোনাতলা উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম আহসানুল তৈয়ব (জাকির), সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান ও জেলা বিএনপির উপদেষ্টা শাহ মো.

শাহজাহান আলী।

বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে তারেক রহমানের টেলিফোন পাওয়া জেলা বিএনপির সহসভাপতি মীর শাহে আলম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির জেলা সভাপতি আবদুল বাছেদ ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি এম আর ইসলাম (স্বাধীন)। বগুড়া-৩ (দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘি) আসনে তারেক রহমানের ফোন পাওয়া আদমদীঘি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মহিত তালুকদার, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ফজলুল বারী তালুকদার ও বগুড়া শহর বিএনপির সভাপতি হামিদুল হক চৌধুরী।

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ফোন পাওয়া একমাত্র নেতা হিসেবে বৈঠকে ডাক পেয়েছেন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন। বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনে তারেক রহমানের টেলিফোন পাওয়া জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক গোলাম মো. সিরাজ ছাড়াও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য মাহবুবুর রহমান (হারেজ), ধুনট উপজেলা বিএনপির সভাপতি তৌহিদুল আলম (মামুন), কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান (খোকন) ও শেরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বৈঠকে ডাক পেয়েছেন।

বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসনে প্রার্থী হওয়ার কথা আছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। এ দুটি আসন থেকে বৈঠকে ডাক পেয়েছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহবুবর রহমান, জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম (বাদশা), জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন এবং আলী আজগর তালুকদার (হেনা), দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার (লালু) এবং গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিলটন।

জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দলের হাইকমান্ড থেকে টেলিফোন করে আগামীকাল চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বিকেল চারটায় বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। বৈঠকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্দেশনা দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স ব ক ত র ক রহম ন র আগ ম ক ল র রহম ন ইসল ম উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি নেতাকে ১০ লাখ টাকার চেক দেওয়া কর্মীর অ্যাকাউন্টে আছে ৩৪১২ টাকা

ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আছে মাত্র ৩ হাজার ৪১২ টাকা। অথচ সমাবেশ মঞ্চে সুনামগঞ্জ–১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির এক নেতাকে নির্বাচনে খরচের জন্য ১০ লাখ টাকার একটি চেক দিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছেন নূর কাসেম (৩৭) নামের এক কর্মী।

সুনামগঞ্জ–১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী ওই নেতার নাম কামরুজ্জামান কামরুল। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তাঁর বাড়ি তাহিরপুর উপজেলায়।

আরও পড়ুনসমাবেশ মঞ্চে বিএনপি নেতাকে ১০ লাখ টাকার চেক দিলেন এক কর্মী১৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনসমাবেশ মঞ্চে কর্মীর দেওয়া ১০ লাখ টাকার সেই চেক ফেরত দেবেন বিএনপি নেতা৬ ঘণ্টা আগে

গতকাল শনিবার বিকেলে নির্বাচনী এলাকা জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজারে আয়োজিত এক সমাবেশ মঞ্চে বিএনপির কর্মী নূর কাসেম নির্বাচনে খরচের জন্য কামরুজ্জামানের হাতে ১০ লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন। চেকটি হাতে নিয়ে সমাবেশে থাকা নেতা–কর্মীদের দেখান কামরুজ্জামান।

নূর কাসেম নামের বিএনপির ওই কর্মীর বাড়ি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের মান্দিয়াতা গ্রামে। মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিনি মূলত পেশায় কৃষক। তবে ইট কেনাবেচার ছোটখাটো ব্যবসা আছে তাঁর। লেখাপড়া জানা নেই। কোনোমতে স্বাক্ষর করতে পারেন। তিনি বিএনপিতে তেমন সক্রিয় না হলেও তাঁর বাবা প্রয়াত মো. সামসুদ্দিন বিএনপির রাজনীতি করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর স্ত্রী, পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে আছে।

নূর কাসেম জানান, বর্তমানে তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৩ হাজার ৪১২ টাকা আছে। ১০ লাখ টাকার চেক দেওয়ার বিষয়ে নূর কাসেম বলেন, ‘আমি ওনারে (কামরুল) ভালা পাই। উনি গরিবের লাগি ভালা। তাই মনের আবেগে দিছি। আমার অত টেকা নাই। এখন যদি মাইনসে কয়, এই টেকা দিত অইব, শ্রীপুর বাজারে আমার একটা ভিটা আছে, ইটা বিক্রি কইরা দিমু।’

তাহিরপুর থেকে জামালগঞ্জে গিয়ে কেন চেক দিলেন জানতে চাইলে নূর কাসেম জানান, তিনি সমাবেশ দেখতে গিয়েছিলেন। মানুষ দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। পরে তিনি একটি মালা ও চেক তুলে দেন কামরুজ্জামানের হাতে। এখন বিষয়টি নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন জানিয়ে নূর কাসেম বলেন, ‘আমি খারাপ মানুষ না। কাম করি খাই। আমার কোনো ধান্দা নাই। আমি শিক্ষিত না, রাজনীতি অততা বুঝিও না। মন থাকি ওনারে ভালা পাই। এর লাগি দিছি।’

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কামরুজ্জামান এরই মধ্যে জানিয়েছেন, ওই কর্মী ভালোবেসে টাকা দিলেও তিনি নেবেন না। বিষয়টি তিনি নেতা–কর্মীদের ভালোবাসা হিসেবেই দেখছেন। কামরুজ্জামান বলেন, সমাবেশে হাজার হাজার লোক ছিলেন। কেউ ফুল, কেউ কাগজ, কেউ টাকার মালা দিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। কেউ ১০, কেউ ১০০, কেউ ৫০০ টাকার নোটের মালা দিয়েছেন। তেমনি নূর কাসেম হঠাৎ মঞ্চে এসে তাঁকে ১০ লাখ টাকার একটি চেক দিয়েছেন।

নূর কাসেমের বিষয়ে কামরুজ্জামান বলেন, ‘এটি দলের প্রতি, আমার প্রতি তাঁর (নূর কাসেম) ভালোবাসা। আমি তাঁর ভালোবাসাটা গ্রহণ করব, চেকটি ফেরত দেব। আজ (রোববার) বিকেলে আমার একটি কর্মসূচি আছে, সেখানে ওই কর্মীর হাতে চেকটি তুলে দেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, গতকাল বিকেলে বিএনপির ৩১ দফার প্রচার ও ধানের শীষের পক্ষে জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজারে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন কামরুজ্জামান কামরুল। একপর্যায়ে কর্মীরা তাঁকে ফুল ও টাকার মালা গলায় দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। তখন নূর কাসেম নামের এক কর্মী মঞ্চে উঠে কামরুজ্জামানের হাতে নির্বাচনে খরচের জন্য একটি চেক তুলে দেন। কামরুল সেটি হাতে নিয়ে দেখেন, ১০ লাখ টাকার চেক। পরে তিনি চেকটি সমাবেশে উপস্থিত দলের নেতা–কর্মীদের দেখান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ–১ আসনে কামরুজ্জামান ছাড়া দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত নজির হোসেনের স্ত্রী সালমা নজির, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বিএনপি নেতা হামিদুল হক আফিন্দী, ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আবদুল মোতালেব খান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১০ লাখ টাকার সেই চেক কর্মীকে ফেরত দিলেন বিএনপি নেতা
  • বিএনপি নেতাকে ১০ লাখ টাকার চেক দেওয়া কর্মীর অ্যাকাউন্টে আছে ৩৪১২ টাকা
  • খুলনার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ঢাকায় ডেকেছে বিএনপি, ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠক করবেন তারেক রহমান
  • ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা রেখে ফেব্রুয়ারিতে বইমেলা আয়োজনের দাবি
  • মহিলা ক্রীড়া সংস্থার নতুন কমিটি নিয়ে বিতর্ক-ক্ষোভ
  • আলফাডাঙ্গা বিএনপির নতুন কমিটিকে ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন কমিটি’ বলছেন দলের অনেক নেতা
  • নির্বাচনী প্রস্তুতিতেই এখন পূর্ণ মনোনিবেশ বিএনপির
  • উদীচী ঢাকা মহানগরের সভাপতি রতন সিদ্দিকী, সাধারণ সম্পাদক কংকন নাগ
  • ফরিদপুরের তিন উপজেলায় বিএনপির সাংগঠনিক কমিটি ঘোষণা