প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক বিশেষ করে টিভি, রেডিও ও অনলাইন পত্রিকাসহ সবার জন্যই একটি বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।

তিনি বলেছেন, “সাংবাদিকদের একটা বেসিক স্যালারি দিতে হবে, যেটার একটা লিমিট আমরা ঠিক করতে চাই। এরপর আপনারা অভিজ্ঞতা-দক্ষতার ভিত্তিতে ইনক্রিমেন্ট দেবেন। ১২-১৫ হাজার টাকা সাংবাদিকের বেতন হতে পারে না। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক বিশেষ করে টিভি, অনলাইন পত্রিকাসহ সবার জন্যই একটি বেতন কাঠামো করে দিয়ে যেতে চাই।”

আরো পড়ুন:

বর্ণাঢ্য আয়োজনে বেরোবি সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

ইবি প্রেসক্লাবের সভাপতি আবির, সম্পাদক নাজমুল

রবিবার (২৬ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

দায়িত্ব পালনকালে নিজের মন্ত্রণালয়ের সংস্কার বাস্তবায়নসহ সাংবাদিকদের বেতনভাতা, পত্রিকার প্রচার সংখ্যা, নতুন পত্রিকা ও টিভির লাইসেন্স প্রদান, গণমাধ্যম আইনসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন তথ্য উপদেষ্টা।

বিকেলে ডিআরইউর শফিকুল কবির মিলনায়তনে মিট দ্য রিপোর্টার্স এ উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ। 

ডিআরইউর সভাপতি আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।

সাংবাদিক সুরক্ষা বিষয়ক প্রস্তাবনাটি শিগগির চূড়ান্ত হবে বলে উল্লেখ করে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, “আমরা গণমাধ্যম আইনও পর্যালোচনা করছি। আগের সরকার একটা আইন করেছিল। তারা যেভাবে রাষ্ট্র ও সাংবাদিকদের সম্পর্ক দেখতে চেয়েছিল, সে অনুযায়ী ওই আইন তৈরি হয়েছিল। আমরা সেটি নতুনভাবে বিশ্লেষণ করছি।”

“আমরা ওয়েজ বোর্ডের বিষয়ে বারবার চেষ্টা করেছি। নোয়াবসহ মালিকপক্ষের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে বসে সমাধান আনতে চেয়েছি। কিন্তু গত তিন–চার মাসে তেমন সাফল্য পাইনি,” যোগ করেন উপদেষ্টা।

তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “আমরা চাইব বিজ্ঞাপনের হার বাড়ুক। কিন্তু এই সুবিধা আমরা দেব, এর জন্য আমরা সাংবাদিকদের জন্য একটা বেসিক স্যালারি স্ট্রাকচার প্রস্তাব করে যেতে চাই। সাংবাদিকদের যদি এই বেসিক স্যালারি না দেওয়া হয়, তাহলে ওই পত্রিকা বা আউটলেটকে আমরা এই সুবিধা দেব না।”

তথ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, “পত্রিকা মালিক ও সম্পাদকরা যদি ইমিডিয়েটলি এটা বাস্তবায়নের উদ্যোগ না নেন, তাহলে আমরা এই সংস্কারের দিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করব। কারণ আমরা সরকার থেকে সুবিধা দেব, জনগণের টাকায় ৯০০ টাকার বদলে ১৮০০ টাকা বিজ্ঞাপন দেব। কিন্তু আপনি সাংবাদিকদের ন্যায্য বেতন দেবেন না, এতে যে নৈতিক সংকট তৈরি হয়- তাতে সাংবাদিকরা এখানে-ওখানে খ্যাপ মারে, রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির মধ্যে ঢুকে যায়। এটা বন্ধের জন্য অবশ্যই সাংবাদিকদের ডিগনিফাইড লাইফ দিতে হবে।”

পত্রিকার আজগুবি প্রচার সংখ্যার বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, “যদি কোনো পত্রিকার প্রচারসংখ্যা ৩ লাখ বলা হয়, অথচ বাস্তবে ১ লাখ ৫০ হাজার। তাহলে তারা নির্দিষ্ট হারে বিজ্ঞাপন পাবে না। বড় পত্রিকা বা রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত কিছু পত্রিকা ফোন করে বাড়তি বিজ্ঞাপন পায়, এই অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। আমরা চাই, ন্যায্যতা বজায় রেখে হার বাড়ুক, কিন্তু ভুয়া প্রচার সংখ্যা যেন না দেখানো হয়।”

মাহফুজ আলম আরো বলেন, “যেসব পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয় না বা কনটেন্ট সামান্য পরিবর্তন করে একাধিক পত্রিকায় ব্যবহার করা হয়, আমরা গত কয়েক মাস ধরে এগুলোর তালিকা তৈরি করেছি। আমরা প্রস্তুত আছি, যদি আপনারা (গণমাধ্যম) সমর্থন দেন, তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”

দেশে বেসরকারি টেলিভিশনের জন্য কোনো আইন নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “গত ১৫–১৬ বছরে অনেক টেলিভিশনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো অনেক সময় ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত প্রভাবের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রায় সব বড় ব্যবসায়ী গ্রুপেরই একটা করে টেলিভিশন আছে। আমরা চাই, টেলিভিশন সম্প্রচার নীতিমালা করা হোক, যেন এই খাত নিয়ন্ত্রিত, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হয়।”

স্থায়ী গণমাধ্যম কমিশন গঠনের সুপারিশের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী গণমাধ্যম কমিশনের কাজ অনেক ব্যাপক হবে এবং এখানে সরকারের কোনো প্রতিনিধি থাকবে না। সেক্ষেত্রে কমিশন তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনেকগুলো সংস্থার কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে। ওই সংস্থাগুলোর মহাপরিচালক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা বলেছেন যে এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার বিষয়। তাদের মধ্যে একটা অনীহা ও অনাগ্রহ দেখেছি। এটা আসলে পলিসিগত বিষয়, হয়ত আমরা শুরু করে দিয়ে যেতে পারব। কিন্তু পরবর্তী সরকারকে কাজটা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে ভালো কিছু হবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা জানান, সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা তারা বেঁধে দিতে চান না। বেশিরভাগ সাংবাদিক সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী না। তাদের সদিচ্ছা, নতুন কিছু জানার আগ্রহ, ব্যক্তিগত পড়াশোনা গুরুত্বপূর্ণ। চারণ সাংবদিক মোনাজাত উদ্দিনের উদাহরণও টানেন তিনি।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পরিচয় মিলছে না পাবনা জেনারেল হাসপাতালের এক নির্বাক নারীর

পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক অজ্ঞাতনামা নারী। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ওই নারী কথা বলতে না পারায় মিলছে না তার নাম-পরিচয়। তাকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয় ওই নারী। সালোয়ার-কামিজ পড়া নারীটির বয়স আনুমানিক ৩০ বছর। গায়ের রঙ ফর্সা। ধারণা করা হচ্ছে তিনি বিবাহিত। তার কোন আত্মীয়-স্বজন তাকে হাসপাতালে ফেলে চলে গেছে। তারপর থেকে হাসপাতালের ইনএনটি বিভাগে ভর্তি আছেন তিনি।

পাবনার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সদস্যরা বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে তাকে হাসপাতালে দেখতে পান। তার খোঁজখবর নিয়ে নাম পরিচয় ঠিকানা জানার চেষ্টা করে। তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তিনি কোনো কথা বলছেন না। কাগজে কিছু একটা লিখে বোঝানোর চেষ্টা করলেও সেটাও সম্পূর্ণ লিখতে পারেননি। তার হাতের লেখা ও সুন্দর। 

সংগঠনের মডারেটর কাওসার হোসেন বলেন, “তিনি কিছু খাচ্ছেন না, কারো সাথে কোন কথা বলছেন না। তার চলাফেরা করতে কষ্ট হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ভাল কোন ফ্যামিলির মেয়ে তিনি ভাল পরিবারের মেয়ে। তার উপরে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালানোর কারণে তিনি শারীরিক মানসিকভাবে চরম বিপর্যস্ত হয়ে আছেন। কিন্তু মানসিক বিপর্যস্ত দেখে হাসপাতালে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করার। কিন্তু তার নাম-পরিচয়-ঠিকানা না জানার কারণে সেখানেও ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না।” 

এ বিষয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাক্তার রফিকুল হাসান বলেন, “আমি মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকদের বলেছি তার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য। তার শারীরিক যে কোন চিকিৎসা আমরা দিব। কিন্তু তার যদি মানসিক সমস্যা থাকে তাহলে সেই চিকিৎসা তো আমাদের পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। তখন তো তাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। রোগীর কিছু হলে এর দায়ভার কে নেবে বলেন? প্রশাসনের সাথে কথা বলে দেখি কি করা যায়।”

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের মডারেটর কাওসার হোসেন সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “অবস্থায় তরুণীটির নাম পরিচয় জানা জরুরি। ছবির এই মেয়েটিকে যদি কেউ চিনে থাকেন তাহলে যোগাযোগ করুন। আপনাদের সহযোগিতায় মেয়েটি নতুন জীবন ফিরে পেতে পারে। সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে। যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর: ০১৭৮৮-২১১২৫৬।”

ঢাকা/শাহীন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ