‘অনলাইন পত্রিকাসহ সবার জন্যই আমরা বেতন কাঠামো দিয়ে যেতে চাই’
Published: 26th, October 2025 GMT
প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক বিশেষ করে টিভি, রেডিও ও অনলাইন পত্রিকাসহ সবার জন্যই একটি বেতন কাঠামো বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
তিনি বলেছেন, “সাংবাদিকদের একটা বেসিক স্যালারি দিতে হবে, যেটার একটা লিমিট আমরা ঠিক করতে চাই। এরপর আপনারা অভিজ্ঞতা-দক্ষতার ভিত্তিতে ইনক্রিমেন্ট দেবেন। ১২-১৫ হাজার টাকা সাংবাদিকের বেতন হতে পারে না। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক বিশেষ করে টিভি, অনলাইন পত্রিকাসহ সবার জন্যই একটি বেতন কাঠামো করে দিয়ে যেতে চাই।”
আরো পড়ুন:
বর্ণাঢ্য আয়োজনে বেরোবি সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
ইবি প্রেসক্লাবের সভাপতি আবির, সম্পাদক নাজমুল
রবিবার (২৬ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) ‘মিট দ্য রিপোর্টার্স’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
দায়িত্ব পালনকালে নিজের মন্ত্রণালয়ের সংস্কার বাস্তবায়নসহ সাংবাদিকদের বেতনভাতা, পত্রিকার প্রচার সংখ্যা, নতুন পত্রিকা ও টিভির লাইসেন্স প্রদান, গণমাধ্যম আইনসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন তথ্য উপদেষ্টা।
বিকেলে ডিআরইউর শফিকুল কবির মিলনায়তনে মিট দ্য রিপোর্টার্স এ উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ।
ডিআরইউর সভাপতি আবু সালেহ আকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।
সাংবাদিক সুরক্ষা বিষয়ক প্রস্তাবনাটি শিগগির চূড়ান্ত হবে বলে উল্লেখ করে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, “আমরা গণমাধ্যম আইনও পর্যালোচনা করছি। আগের সরকার একটা আইন করেছিল। তারা যেভাবে রাষ্ট্র ও সাংবাদিকদের সম্পর্ক দেখতে চেয়েছিল, সে অনুযায়ী ওই আইন তৈরি হয়েছিল। আমরা সেটি নতুনভাবে বিশ্লেষণ করছি।”
“আমরা ওয়েজ বোর্ডের বিষয়ে বারবার চেষ্টা করেছি। নোয়াবসহ মালিকপক্ষের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে বসে সমাধান আনতে চেয়েছি। কিন্তু গত তিন–চার মাসে তেমন সাফল্য পাইনি,” যোগ করেন উপদেষ্টা।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “আমরা চাইব বিজ্ঞাপনের হার বাড়ুক। কিন্তু এই সুবিধা আমরা দেব, এর জন্য আমরা সাংবাদিকদের জন্য একটা বেসিক স্যালারি স্ট্রাকচার প্রস্তাব করে যেতে চাই। সাংবাদিকদের যদি এই বেসিক স্যালারি না দেওয়া হয়, তাহলে ওই পত্রিকা বা আউটলেটকে আমরা এই সুবিধা দেব না।”
তথ্য উপদেষ্টা আরো বলেন, “পত্রিকা মালিক ও সম্পাদকরা যদি ইমিডিয়েটলি এটা বাস্তবায়নের উদ্যোগ না নেন, তাহলে আমরা এই সংস্কারের দিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই পুনর্বিবেচনা করব। কারণ আমরা সরকার থেকে সুবিধা দেব, জনগণের টাকায় ৯০০ টাকার বদলে ১৮০০ টাকা বিজ্ঞাপন দেব। কিন্তু আপনি সাংবাদিকদের ন্যায্য বেতন দেবেন না, এতে যে নৈতিক সংকট তৈরি হয়- তাতে সাংবাদিকরা এখানে-ওখানে খ্যাপ মারে, রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির মধ্যে ঢুকে যায়। এটা বন্ধের জন্য অবশ্যই সাংবাদিকদের ডিগনিফাইড লাইফ দিতে হবে।”
পত্রিকার আজগুবি প্রচার সংখ্যার বিষয়ে মাহফুজ আলম বলেন, “যদি কোনো পত্রিকার প্রচারসংখ্যা ৩ লাখ বলা হয়, অথচ বাস্তবে ১ লাখ ৫০ হাজার। তাহলে তারা নির্দিষ্ট হারে বিজ্ঞাপন পাবে না। বড় পত্রিকা বা রাজনৈতিকভাবে সংযুক্ত কিছু পত্রিকা ফোন করে বাড়তি বিজ্ঞাপন পায়, এই অনিয়ম বন্ধ করতে হবে। আমরা চাই, ন্যায্যতা বজায় রেখে হার বাড়ুক, কিন্তু ভুয়া প্রচার সংখ্যা যেন না দেখানো হয়।”
মাহফুজ আলম আরো বলেন, “যেসব পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয় না বা কনটেন্ট সামান্য পরিবর্তন করে একাধিক পত্রিকায় ব্যবহার করা হয়, আমরা গত কয়েক মাস ধরে এগুলোর তালিকা তৈরি করেছি। আমরা প্রস্তুত আছি, যদি আপনারা (গণমাধ্যম) সমর্থন দেন, তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”
দেশে বেসরকারি টেলিভিশনের জন্য কোনো আইন নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “গত ১৫–১৬ বছরে অনেক টেলিভিশনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এগুলো অনেক সময় ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত প্রভাবের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রায় সব বড় ব্যবসায়ী গ্রুপেরই একটা করে টেলিভিশন আছে। আমরা চাই, টেলিভিশন সম্প্রচার নীতিমালা করা হোক, যেন এই খাত নিয়ন্ত্রিত, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হয়।”
স্থায়ী গণমাধ্যম কমিশন গঠনের সুপারিশের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী গণমাধ্যম কমিশনের কাজ অনেক ব্যাপক হবে এবং এখানে সরকারের কোনো প্রতিনিধি থাকবে না। সেক্ষেত্রে কমিশন তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনেকগুলো সংস্থার কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে। ওই সংস্থাগুলোর মহাপরিচালক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা বলেছেন যে এটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়ার বিষয়। তাদের মধ্যে একটা অনীহা ও অনাগ্রহ দেখেছি। এটা আসলে পলিসিগত বিষয়, হয়ত আমরা শুরু করে দিয়ে যেতে পারব। কিন্তু পরবর্তী সরকারকে কাজটা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে ভালো কিছু হবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা জানান, সাংবাদিকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা তারা বেঁধে দিতে চান না। বেশিরভাগ সাংবাদিক সাংবাদিকতার শিক্ষার্থী না। তাদের সদিচ্ছা, নতুন কিছু জানার আগ্রহ, ব্যক্তিগত পড়াশোনা গুরুত্বপূর্ণ। চারণ সাংবদিক মোনাজাত উদ্দিনের উদাহরণও টানেন তিনি।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পর্কোন্নয়নের ইঙ্গিত দিয়ে আবারও ভারত-চীন সরাসরি ফ্লাইট চালু
পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর রোববার থেকে ভারত ও চীনের মধ্যে আবারও সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হয়েছে। এটি দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে একটি প্রতীকী পদক্ষেপ। দুই দেশের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ পদক্ষেপ জরুরি।
ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ সংস্থা ইন্ডিগো স্থানীয় সময় রাত ১০টায় কলকাতা থেকে গুয়াংঝুতে প্রথম দৈনিক ফ্লাইটটি পরিচালনা করে। ভারত ও হংকংয়ের মধ্যে নিয়মিত ফ্লাইট চলছে। আর রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে সাংহাই ও গুয়াংঝুর অতিরিক্ত ফ্লাইট নভেম্বর থেকে চালু হবে।
আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে বিশ্বের দুই জনবহুল দেশ ভারত ও চীন একে অপরের কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী। ২০২০ সালে দুই দেশের সেনাসদস্যদের মধ্যে প্রাণঘাতী সীমান্ত সংঘাতকে কেন্দ্র করে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক উষ্ণ হতে শুরু করে।
ভারত সরকার বলেছে, নতুন করে ফ্লাইট চলাচল শুরু হওয়ার বিষয়টি দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে।
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ৫০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ভারত মস্কোর তেল কিনে রাশিয়াকে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালাতে সাহায্য করছে। এ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য সহযোগী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। আর এমন প্রেক্ষাপটে দিল্লি-বেইজিং সম্পর্ক উষ্ণ হতে শুরু করে।
আরও পড়ুনভারত-চীন কাছাকাছি এলে যুক্তরাষ্ট্র কি এশিয়ায় ধাক্কা খাবে২৪ আগস্ট ২০২৫চীনের সঙ্গের ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় বন্দর শহর কলকাতার সম্পর্কটা কয়েক শতাব্দী পুরোনো। অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনের সময় থেকেই দুই পক্ষের সম্পর্ক আছে। ওই সময় চীনা ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য করতে কলকাতায় যেতেন।
কলকাতার চায়না টাউন এলাকার সামাজিক সংগঠনের নেতা চেন খোই কুই বলেন, ‘আমাদের মতো যেসব মানুষের চীনে আত্মীয়স্বজন আছে, তাদের জন্য এটা দারুণ খবর। আকাশপথের এ যোগাযোগ দুই দেশের বাণিজ্য, পর্যটন ও ব্যবসায়িক ভ্রমণকে আরও এগিয়ে নেবে।’
আরও পড়ুনভারত কি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার পথে হাঁটছে১০ জুলাই ২০২৫