Prothomalo:
2025-11-27@05:30:14 GMT

ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই...

Published: 27th, November 2025 GMT

‘গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, পুকুরভরা মাছ আর ঘরভরা সন্তান’—এই ছিল একসময় বাঙালির আদর্শ সুখী পরিবারের প্রত্যাশা। এখন গোয়ালভরা গরুও নেই, পুকুরভরা মাছও নেই, গোলাভরা ধানও নেই। তবে সুখের কথা, ঘরভরা সন্তানের কোনো অভাব নেই। এই অভাব নেই-এর প্রভাব নিয়ে ভেবেছিলাম আর লেখালেখি করব না—আমার ধারণাটাই হয়তো ভুল। কারণ, সেসব লেখা (প্রথম আলোতেই প্রকাশিত) হালে পানি পায়নি, কারও সমর্থন তো দূরের কথা।

আমার অজ্ঞতাপ্রসূত অনধিকারচর্চা হিসেবে হয়তো তিরস্কৃতও হয়েছে। তবে কয়েক দিন আগে একজন রিকশাচালকের টেলিভিশন ক্যামেরায় দেওয়া মন্তব্যটি শুনে কিছুটা আশ্বস্ত হলাম। জ্ঞানী-গুণীরা না হলেও একজন সাধারণ শ্রমিকের উপলব্ধি থেকে আমার বিশ্বাসের সমর্থন তো পেলাম। তাঁর কথার মধ্যে আমার বিশ্বাসেরই প্রতিধ্বনি খুঁজে পেলাম। তিনি বলেছিলেন, এ দেশ ‘ফেরেশতা’ এলেও চালাতে পারবেন না, কারণ এ দেশে শুধু মেট্রোরেলের নিচে যত মানুষ রাত যাপন করে, পৃথিবীর বহু দেশেও এত মানুষ নেই।

মানবসম্পদ যে শুধু আশীর্বাদই নয়, উপচে পড়া এ সম্পদ যে অভিশাপও হতে পারে, একজন বিজ্ঞ নয়—অজ্ঞ (?) সাধারণ মানুষের কথার মধ্যে তার পর্যবেক্ষণ লক্ষ করা গেল। তবে এ তো অতি সাধারণ একজন মানুষের পর্যবেক্ষণ। এ প্রসঙ্গে কিছু অসাধারণ মানুষের পর্যবেক্ষণ লক্ষ করা যাক।

ভারতের বিখ্যাত লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী খুশবন্ত সিংয়ের একটি মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য,  ‘.

..আমি মোটামুটি নিশ্চিত, আজকের দারিদ্র্য, অজ্ঞতা, বস্তি, দুর্নীতি ও অপরাধ—এসবের বেশির ভাগই অতিরিক্ত জনসংখ্যা এবং আমরা যে আত্মঘাতী হারে সন্তান জন্ম দিচ্ছি, তার ফল।’ কথাগুলো আমাদের ক্ষেত্রেও
শতভাগ প্রযোজ্য।

অজ্ঞতা, উদাসীনতা, ধর্মীয় বিধিবিধানের অপব্যাখ্যা ইত্যাদি কারণে এ সমস্যা আমাদের এই ক্ষুদ্র দেশের জন্য কী দুর্ভোগ যে ডেকে আনছে, তা বোঝার ক্ষমতা যে আমাদের নেই তা নয়। কিন্তু জনতুষ্টির বিবেচনায় রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে লেখক, বুদ্ধিজীবী, তথা সিভিল সোসাইটি—সবাই বিষয়টিকে সচেতনভাবে এড়িয়ে যান (অধম ক্ষমাপ্রার্থী)।

স্বাধীনতার সময় আমাদের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি, পঞ্চাশ বছর পর তা এসে দাঁড়িয়েছে আঠারো কোটিতে (সরকারি হিসাবে, বাস্তবে তা কুড়ি কোটি ছাড়িয়ে যাবে)।

কিছুদিন আগে একটি বিদেশি সংবাদমাধ্যমে একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের একটি দেশে আঠারো কোটি মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম।’

এই সংগ্রাম থেকেই জন্ম নিচ্ছে যত অশিক্ষা, অপরাধ, প্রতারণার নব নব কৌশল। প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়বে একচিলতে জমির জন্য ভাইয়ের হাতে ভাই খুন, চাঁদাবাজি, দখলদারি ইত্যাদি নিয়ে খুনোখুনি, তথা নানা ধরনের অপমৃত্যু। মানুষের জীবনের যেন কোনো মূল্য নেই। সরবরাহ বেশি হলে মূল্য কমে যাওয়া—অর্থনীতির এ সাধারণ নিয়ম যেন এ ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

একটি মানবশিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার বেঁচে থাকার অধিকারও প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাভাবিক পন্থায় সুযোগ না পেলে যেকোনো পন্থায় সে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবেই। চুরি, ডাকাতি, সন্ত্রাস ইত্যাদির জন্মও এভাবেই। তবে ‘কচু কাটতে কাটতে ডাকাত’—একপর্যায়ে বেঁচে থাকার এ যুদ্ধ ওপরে ওঠার সংক্ষিপ্ত পন্থা হয়ে ওঠে।

আমাদের দেশে এই শর্টকাট পন্থাটি সমাজের সর্বস্তরেই অত্যন্ত জনপ্রিয়। বহু বিত্তশালীর উত্থানের পেছনেও এই শর্টকাট পন্থা সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিও এই সমাজবিধ্বংসী কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করেছে। তরুণেরা লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, হচ্ছে।

উইনস্টন চার্চিলের একটি মন্তব্য মনে পড়ছে, ‘ইন্ডিয়ান্স ব্রিড লাইক রেবিট’ (ভারতীয়দের প্রজনন ইঁদুরের মতো) । মন্তব্যটি আমাদের জন্য অত্যন্ত অপমানজনক এবং ক্ষুব্ধ হওয়াও স্বাভাবিক, কিন্তু কথাটি কি একেবারেই মিথ্যা?

স্বাধীনতার সময় আমাদের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি, পঞ্চাশ বছর পর তা এসে দাঁড়িয়েছে আঠারো কোটিতে (সরকারি হিসাবে, বাস্তবে তা কুড়ি কোটি ছাড়িয়ে যাবে)।

আরও পড়ুনজনসংখ্যা, উন্নয়ন ও বৈষম্যের মধ্যে সম্পর্ক কী১১ নভেম্বর ২০২৫

কলকারখানা, বাসস্থান ইত্যাদির প্রয়োজনে নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, পাহাড়-পর্বত—কিছুই রেহাই পাচ্ছে না। এ ছাড়া উপায়ই-বা কী। চারদিকে শুধু ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই। প্রকৃতিকে এভাবে বিধ্বস্ত করলে সে তার প্রতিশোধ নেবেই। ২১ নভেম্বরের ভয়ংকর দুর্যোগ আমাদের জন্য কি একটি ওয়েকআপ কল নয়? ঢাকা শহর মানুষের ভারে ন্যুব্জ। শুধু ঢাকাই নয়, সারা দেশের চিত্রও একই।

আমরা জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিণত করব, লাখ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করব—এসব জনতুষ্টিমূলক মেঠো বয়ান অনেক শুনেছি। যাঁরা এসব আশ্বাসবাণী শোনান, তাঁরা নিজেরাও জানেন, যে গতিতে আমাদের জনসংখ্যা বাড়ছে, কোনো উন্নয়ন প্রচেষ্টা তথা কর্মসংস্থান সৃষ্টি এর সঙ্গে পাল্লা দিতে সমর্থ হবে না।

‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি

সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।’

এ শুধু গান নয়, বাস্তব। এ দেশের মাটি, জল, হাওয়া, ষড়্‌ঋতুর বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি আর কোথাও কি খুঁজে পাওয়া যাবে? ভূস্বর্গ পাওয়া যাবে, মাটির পৃথিবী নয়। আমরা যাঁরা দেশটাকে, মাতৃভূমিকে ভালোবাসি, তাঁদের ভেবে দেখতে হবে। অন্তত এই একটি বিষয়ে কোনো জনতুষ্টির রাজনীতি নয়।

স্বল্পমেয়াদি কসমেটিক সমাধানের চেষ্টা না করে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের চেষ্টা করতে হবে—এ আমাদের জাতীয় সমস্যা, সব সমস্যার মূল।

সৈয়দ আব্দুল হাদী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, সংগীতশিল্পী

*মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র জ জনস খ য র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা : মানবিক গুণাবলির প্রশ্ন-১

দেশের সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ এমবিবিএস ভর্তিতে আবেদন শেষ হয়েছে। এখন শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১২ ডিসেম্বর।

লিখিত পরীক্ষার বিষয় থাকবে: জীববিজ্ঞান-৩০, রসায়ন-২৫, পদার্থবিজ্ঞান-১৫, ইংরেজি-১৫ এবং সাধারণ জ্ঞান, প্রবণতা ও মানবিক গুণাবলি মূল্যায়ন-১৫ নম্বরের।

১. একজন চিকিৎসক তার রোগীর সঙ্গে সহানুভূতিশীল আচরণ করছেন। রোগীর কথা চিকিৎসক মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। প্রয়োজনে মানসিক সাপোর্টও দিচ্ছেন। এটি একজন চিকিৎসকের কোন মানবিক গুণাবলির উদাহরণ?
ক.  সততা
খ. সহানুভূতি
গ. ন্যায়বিচার
ঘ. আত্মনিয়ন্ত্রণ

২. ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে একটি বড় দুর্ঘটনা ঘটল। সেখানে আপনার একজন আপনজন আহত হলেন। তখন আপনি কী করবেন?
ক. শুধু তারই চিকিৎসা করবেন
খ. নিয়ম মেনে সবচেয়ে ক্রিটিক্যাল রোগীকে আগে চিকিৎসা করবেন
গ. অন্য ডাক্তারকে ডাকবেন
ঘ. আতঙ্কিত হবেন

৩. একজন চিকিৎসক, তার রোগীর ব্যক্তিগত অনেক তথ্য গোপন রাখেন। এটি সেই চিকিৎসকের কোনো মানবিক গুণের প্রকাশ?
ক. সততা
খ. দায়িত্বশীলতা
গ. গোপনীয়তা রক্ষা
ঘ. শৃঙ্খলা

৪. সাংস্কৃতিক পার্থক্যের কারণে অনেক রোগী কোনো কোন ধরনের চিকিৎসা প্রত্যাখ্যান করে থাকে, আপনি সেই রোগীকে কী করবেন?
ক. তাকে একটু জোর করবেন
খ. তার সিদ্ধান্তকে সম্মান করবেন
গ. পরিবারের ওপর চাপ দেবেন
ঘ. সংস্কৃতির প্রেক্ষাপট বোঝে নিয়ে বিকল্প ব্যাখ্যা দেবেন

৫. হাসপাতালে একজন রোগীর মৃত্যু হলো। তার পরিবারকে এই সংবাদটি জানানোর সময় আপনি তাকে কোথায় নিয়ে গিয়ে বলবেন?
ক. ব্যস্ত করিডরে ডেকে
খ.  প্রাইভেট রুমে নিয়ে গিয়ে
গ. ফোনে জানাব
ঘ.  পরে বলব

মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষায় ১০০টি প্রশ্নের প্রতিটি ১ নম্বর করে মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাফল্য তোমাকে অসুখীও করে তুলতে পারে: ইয়ামালকে পরামর্শ নাদালের
  • নরসিংদীতে ২২ ঘণ্টার ব্যবধানে ট্রেন দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত
  • ঢাকায় বিএনপির প্রার্থী সানজিদা ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা
  • রাঙামাটিতে কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে অটোরিকশার সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু
  • শেখ হাসিনার দুই ব্যাংক লকার থেকে ৯ কেজি ৭০৭ গ্রাম স্বর্ণ উদ্ধার
  • হাসিনার দুটি লকারে ৮৩২ ভরি সোনার গয়না
  • শেখ হাসিনার দুটি লকারে ৮৩২ ভরি সোনার গয়না
  • বিয়ে বাড়ির খাবার খেয়ে একজনের মৃত্যুর অভিযোগ, হাসপাতালে ১৭
  • মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা : মানবিক গুণাবলির প্রশ্ন-১