পছন্দের এক ঠিকাদার পৌনে ২৯ কোটি টাকার সড়ক সংস্কার প্রকল্পের কাজ না পাওয়ায় ফেনী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে। গতকাল সোমবার রাতে ফেনী পৌরসভা ভবনের প্রকৌশলীর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্তের নাম কামরুল হাসান। তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি। তাঁর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া অন্য ঠিকাদারের হয়েও কাজ করে তাঁর প্রতিষ্ঠান।

পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘নোডাল সিটি প্রকল্প’-এর আওতায় ফেনী শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক ও সংলগ্ন এলাকার উন্নয়নকাজে ২৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মূল্যায়নে প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (পিডিএল) সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজের জন্য নির্বাচিত হয়। গতকাল রাতে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পৌরসভার চুক্তি সম্পন্ন হয়।

পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির উদ্দিন বলেন, চুক্তির বিষয়টি জেনে কামরুল হাসান রাতে তাঁর কক্ষে প্রবেশ করেন। অন্য একটি প্রতিষ্ঠান কাজ না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁকে গালাগাল করেন ও হুমকি দেন।

জাকির উদ্দিন বলেন, ‘তিনি আমাকে একটি নির্দিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে চাপ দিয়েছেন। অফিসে এসে ল্যাপটপ ও ফাইলপত্র তছনছ করেন তিনি। আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, কে তোকে স্বাক্ষর করতে বলছে, তোর হাত কেটে নেব।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কামরুল হাসান। তিনি বলেন, ‘প্রকৌশলীর সঙ্গে আমার তর্ক হয়েছিল অন্য বিষয়ে। তিনি আমার কিছু কাজের বিল পরিশোধ না করে কমিশন দাবি করে আসছেন। তাঁকে লাঞ্ছনার অভিযোগ সত্য নয়।’

ফেনী পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক গোলাম মো.

বাতেন বলেন, ঘটনাটি শোনার পর পুলিশকে জানানো হয়েছে। কামরুল হাসান দরপত্রে একটি পক্ষের হয়ে অংশ নিয়েছিলেন, কাজ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কমিশন দাবির অভিযোগ ভিত্তিহীন।

জানতে চাইলে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সামছুজ্জামান বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন আলাল প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি দলীয়ভাবে গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রসভ র প রক শ ন বল ন ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

বিদ্যালয়ের ভবন বানাতে পাহাড়ে কোপ, দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত

চট্টগ্রামে পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠেছে নগরের হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। বিদ্যালয় চত্বরে নতুন ভবন নির্মাণের নামে প্রায় দেড় মাস ধরে পাহাড় কাটা হয়েছে। তবে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর এখন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়ের একটি অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। কাটা হয়েছে বেশ কয়েকটি গাছ। এগুলো পরিষ্কার করে জমি সমতল করার কাজও চলছে।

চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল আমিন ভবন নির্মাণের জন্য ছাড়পত্র চেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে আবেদন করেন। কিন্তু ২৭ ফেব্রুয়ারি অধিদপ্তরের পরিচালক সোনিয়া সুলতানা লিখিতভাবে জানিয়ে দেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুসারে পাহাড় বা টিলা কাটা যাবে না। তবু বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের প্রস্তুতিমূলক কাজের আড়ালে পাহাড় কাটা চলতে থাকে।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক নিজামী পাহাড় কাটার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের সংকট রয়েছে, তাই ভবন নির্মাণ করা দরকার। পাহাড়টি সামান্য কাটার কথা ছিল। কিন্তু বেশি কাটা হয়েছে। তবে তিন সপ্তাহ ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে।

এক সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র বাতিল করা হবে। ভবন নির্মাণ আর এগোবে না। কোনো পাহাড় কাটা হবে না। পাঁচতলা ভবনটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা।মো. কামরুল আহসান, নির্বাহী প্রকৌশলী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর

পরিবেশ অধিদপ্তর ২ ডিসেম্বর গিয়ে পাহাড় কাটার কাজ বন্ধ করে দেয়। জানতে চাইলে অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম নগর কার্যালয়ের পরিচালক সোনিয়া সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড় ও গাছ কেটে ভবন তৈরির কোনো সুযোগ নেই। আইন অমান্য করে পাহাড় কাটা হলে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে তিনি ভবন নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক এ এস এম এমদাদুল কবীরের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন।

এ এস এম এমদাদুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়টি ঘটে থাকলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। শিগগিরই বিদ্যালয়ে প্রতিনিধিদল পাঠাবেন। কতটুকু পাহাড় কাটা হয়েছে, কেন কাটা হয়েছে—এসব বিষয় খতিয়ে দেখবে ওই কমিটি।

দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত

মহসিন স্কুলের ভবন নির্মাণ চলছে ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায়। এ প্রকল্পে সারা দেশে ৩২৩টি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের আরও চারটি সরকারি বিদ্যালয়ে ৬ থেকে ১০ তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু মহসিন স্কুলে অনুমতি ছাড়া পাহাড় কাটার অভিযোগ ওঠায় এ প্রকল্পের দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র বাতিল করা হবে। ভবন নির্মাণ আর এগোবে না। কোনো পাহাড় কাটা হবে না। পাঁচতলা ভবনটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নথি বলছে, ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাহাড় কাটার অভিযোগে মামলা হয়েছে ৮০টি। কিন্তু অধিকাংশ মামলাই অর্থদণ্ডে নিষ্পত্তি হয়েছে।

পাহাড় কাটার ঘটনায় পরিবেশকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ২ ডিসেম্বর দুপুরে পাঁচ পরিবেশকর্মী ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক নিজামীর কাছে পাহাড় কাটার বিষয়ে জানতে চান। তাঁরা প্রধান শিক্ষককে বলেন, পাহাড় কেটে ভবন হতে পারে না।

পরিবেশকর্মী রিতু পারভী বলেন, ‘গাছ কাটার খবর শুনে গিয়ে দেখি পাহাড়ও কাটা হচ্ছে। আরও কাটার প্রস্তুতি ছিল। আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের আর কোনো উদাহরণ তৈরি হতে দেব না।’

পাহাড়ের সঙ্গে কাটা হয়েছে কয়েকটি গাছ। সম্প্রতি তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদ্যালয়ের ভবন বানাতে পাহাড়ে কোপ, দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত