জুলাই সনদ অনুযায়ীই সংবিধান সংস্কার করতে হবে: আলী রীয়াজ
Published: 28th, October 2025 GMT
জুলাই সনদ অনুযায়ীই সংবিধান সংস্কার পরিষদকে সংবিধানে পরিবর্তন আনতে হবে। সে ক্ষেত্রে চাইলেও আগামী জাতীয় সংসদ তাদের ইচ্ছেমতো সংবিধানে পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন, সংযোজন, বিয়োজন করতে পারবে না। এমনটি জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
আজ মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
দীর্ঘ আলোচনার পর রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে সই করলেও এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে মতভেদ রয়েই গেছে। এর মধ্যেই ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশের একটি খসড়া অন্তর্বর্তী সরকারকে আজ দিয়েছে। সরকারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’ জারি করতে।
খসড়ায় বলা হয়েছে, পরবর্তী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিতদের নিয়ে গঠিত সংবিধান সংস্কার পরিষদ প্রথম অধিবেশন শুরু থেকে ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কারের কাজ শেষ করবে। এই কাজ শেষ হওয়ার পর সংবিধান সংস্কার পরিষদ বিলীন হয়ে যাবে প্রথাগত সংসদে।
সংবিধান সংস্কার পরিষদকে ‘কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার’ (গাঠনিক ক্ষমতা) দেওয়া হলেও তারা নিজেদের মতো করে সংস্কার করতে পারবে না বলে স্পষ্ট করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। কেন পারবে না—এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার দেওয়া হচ্ছে এই বিবেচনা থেকে যে মৌলিক সংস্কার করা হবে। তবে তাদের গাইড করবে জুলাই জাতীয় সনদ। কন্সটিটুয়েন্ট পাওয়ার মানে এই নয় যে যা খুশি তাই লিখতে পারা যাবে।
সংবিধান সংস্কার পরিষদে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে, সংস্কারের যেসব প্রস্তাবে তাদের আপত্তি বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে, তারা তাদের মতো করে সংস্কার করতে পারবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, গণভোটের প্রস্তাবটি এসেছে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার আলোচনায়, যেখানে প্রস্তাব ছিল সবকিছুই জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার। জনগণ যদি রায় দেয়, তাহলে রাজনৈতিক দল তার ভূমিকা নির্ধারণ করবে। কমিশন মনে করে, কোনো রাজনৈতিক দল জনগণের রায় পাওয়া জিনিসকে কেবল নিজস্ব দলীয় অবস্থান থেকে বিবেচনা করবেন না।
সংবিধানসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দিতে এবং বাস্তবায়নের পথ নির্দেশ করতে দুটি বিকল্প সরকারের হাতে রয়েছে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, সরকারের সংবিধান সংস্কার–বিষয়ক আদেশের অধীন একটি গণভোটের আয়োজন হবে। দ্বিতীয় বিকল্পেও বলা হচ্ছে যে সরকার একটি আদেশ জারি করবে। সেই আদেশের অধীন গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। গণভোটে একটিমাত্র প্রশ্ন থাকবে। তবে ওই আদেশের তফসিলে যে ৪৮টি বিষয় আছে, সেগুলোকে অন্তর্বর্তী সরকার বিল আকারে প্রস্তুত করে জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারে।
দুটি প্রস্তাবের মধ্যে কমিশন কোনটিকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে—সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, যে দুটি বিকল্প দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে গণভোটের তফসিলে। সরকার চাইলে এগুলো আইনি সাংবিধানিক ভাষায় পরিবর্তন করে বিলের আকারে দিতে পারে অথবা জুলাই জাতীয় সনদে যে ভাষায় লেখা আছে, সেভাবে দিতে পারে। এটা সরকারের ওপরে। কমিশন আশা করে, এটা বিল আকারে দেওয়া যায়, সরকার দেবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত সরকারের। ফলে একটার চেয়ে আরেকটা শ্রেয়, এভাবে কমিশন বিবেচনা করেনি।
গণভোটে সংস্কারের প্রস্তাবগুলো পাস না হলে কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, ‘গণভোটে যদি পাস না হয়, তার মানে হলো জনগণ সেটা প্রত্যাখ্যান করেছে।…গণভোটে পাস না হলে বুঝতে হবে জনগণ তা গ্রহণ করছে না।’
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় থাকলেও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ কয়েকটি দল এখনো জুলাই সনদে সই করেনি। তবে কমিশন আশা করছে, শেষ পর্যন্ত সব দলই সনদে সই করবে।
চূড়ান্ত দিন পর্যন্ত এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করলে কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, যারা স্বাক্ষর করেনি, তাদের সঙ্গে কমিশনের অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রয়েছে। তারা যেন স্বাক্ষর করে, সেই অনুরোধ প্রকাশ্য ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগে করা হয়েছে। এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে আদেশ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটা জানলে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হবে। কমিশন আশা করে যে তারা তা দেখবে, বিবেচনা করবে এবং স্বাক্ষর করবে। কমিশনের মেয়াদ আরও তিন দিন আছে। কমিশন আশা করে, এই মেয়াদের মধ্যেই তারা স্বাক্ষর করবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব ধ ন স স ক র পর র য় জ বল ন স স ক র কর জ ল ই সনদ প রস ত ব সরক র র গণভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ পেশ দুপুরে
‘জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫’-এর বাস্তবায়ন কাঠামো ও আইনি ভিত্তিসংক্রান্ত চূড়ান্ত সুপারিশ তৈরি করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে সরকারের কাছে এই চূড়ান্ত সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করবে কমিশন।
কমিশনের সুপারিশে সনদ বাস্তবায়নের জন্য সাংবিধানিক আদেশ জারির প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই আদেশের ওপর গণভোট নেওয়া হবে। গণভোটে জনগণ ‘হ্যাঁ’ ভোট দিলে সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেবে আগামী সংসদ। এজন্য সংসদ সদস্যদের নিয়ে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠনের প্রস্তাবও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাস্তবায়ন শেষ হলে পরিষদ বিলুপ্ত হবে, তবে সংসদ কার্যক্রম চলমান থাকবে। বহুল আলোচিত ‘নোট অব ডিসেন্ট’ ও গণভোটের সময়সীমা নির্ধারণ করবে সরকার।
রাজনৈতিক সমঝোতা হলেও জটিলতা আইনি ভিত্তি ঘিরে
কমিশন-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সনদের মোট ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হলেও, সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন কাঠামো নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। আইনি ভিত্তির প্রশ্নে সব দল গণভোটে একমত হলেও, গণভোটের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে অভিন্ন মত পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় কমিশন সনদ ও এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া দুটি পৃথক সুপারিশ হিসেবে সরকারকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
কমিশনের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংস্কার প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া ৩০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৫টি দল স্বাক্ষর করেছে, তবে ৫টি দল আপাতত স্বাক্ষর করেনি। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত ছাত্র-তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জানিয়েছে, আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত তারা সনদে স্বাক্ষর করবে না। কমিশন তাদের উদ্বেগ বিবেচনায় নিয়ে আশ্বস্ত করেছে যে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সংসদ ভবনে দীর্ঘ পর্যালোচনা ও বিশেষজ্ঞ মতামত
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর থেকেই এর বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত কাঠামো নির্ধারণে কাজ করছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সোমবারও সংসদ ভবনের কমিশন কার্যালয়ে বৈঠক করেন সদস্যরা। সেখানে সনদের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ, ভুলত্রুটি শনাক্ত ও সংশোধনের পাশাপাশি আইন বিশেষজ্ঞ, বিচারপতি ও শিক্ষাবিদদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়। বাস্তবায়নের সাংবিধানিক ও আইনি দিকগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়। দলগুলোর জমা দেওয়া মতামতও বিশ্লেষণ শেষে চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হয়, যাতে ভবিষ্যতে কোনো আইনি জটিলতা না হয়।
চূড়ান্ত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস
সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত কমিশনের সমাপনী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের উপস্থিতিতে সরকারকে এই সুপারিশ হস্তান্তর করা হবে। পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
কমিশন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, সরকারের কাছে সুপারিশ হস্তান্তরের পাশাপাশি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ ও গণভোটের সময় নির্ধারণ বিষয়ে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে অনুরোধ জানানো হবে। সরকার গণভোটের আগে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ–২০২৫’ নামে একটি সাংবিধানিক আদেশ জারি করবে। ওই আদেশের ওপরই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে—যেখানে সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে নাগরিকদের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেওয়ার সুযোগ থাকবে। জনগণ ‘হ্যাঁ’ ভোট দিলে, নতুন সংসদ একযোগে আইনসভা ও সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে। সংবিধান সংশোধন, পরিমার্জন ও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সম্পন্ন হলে পরিষদ বিলুপ্ত হবে, তবে সংসদ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
সংস্কারই জাতীয় ঐকমত্যের প্রতিফলন
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “রাজনৈতিক দল, আইনজ্ঞ, বিচারপতি, শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বিস্তৃত আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতেই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশ তৈরি করা হয়েছে।” বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। কমিশনের পক্ষ থেকে কিছু বিষয়ে বিকল্প প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে, যেখান থেকে সরকার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যেই সরকার তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা কমিশনের গঠন থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রদান পর্যন্ত সব নথি, ভিডিও, অডিও ও আলোকচিত্র সংরক্ষণের ওপর জোর দেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জা“তি হিসেবে আমরা কীভাবে কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি এগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মূল্যবান দলিল। এসব নথি ক্যাটাগরি অনুযায়ী সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে গবেষকরা তা ব্যবহার করতে পারেন। টেলিভিশনে প্রচারিত আলোচনা, বৈঠকের ভিডিও ও চিঠিপত্র সবকিছু সংরক্ষিত থাকলে তা হবে ইতিহাসের জীবন্ত দলিল।”
সংস্কার বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি আহ্বান
বৈঠকে কমিশনের সদস্যরা জুলাই সনদের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নেও সরকারের উদ্যোগ চেয়েছেন জানিয়ে সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা এমন এক কাঠামো তৈরি করেছি যা একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করবে।” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি মূল দায়িত্বের (বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন) একটি ছিল কাঠামোগত সংস্কার বাস্তবায়ন। রাজনৈতিক দলগুলো পার্থক্য সত্ত্বেও সংস্কারের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল এটাই বড় প্রাপ্তি।
কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে ৩১ অক্টোবর। এরপরও সরকারের প্রয়োজনে ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কমিশন সদস্যরা।
সাহসী সিদ্ধান্ত না নিলে এই সুযোগ হারাব: বদিউল আলম মজুমদার
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সরকারের দৃঢ়তা ও সাহসিকতা এখন জরুরি। গণঅভ্যুত্থানে যে ত্যাগ ও রক্ত ঝরেছে, সেই আত্মত্যাগ যেন অর্থবহ হয়। এই সুযোগ হারানো যাবে না।”
বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, “গণঅভ্যুত্থানে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল, কমিশনের আলোচনাগুলোতেও একই আন্তরিকতা ও সৌহার্দ্যের প্রতিফলন দেখা গেছে।”
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো অত্যন্ত ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গে আলোচনা করেছে। ভবিষ্যতেও যেন এই সৌহার্দ্য বজায় থাকে—এটাই প্রত্যাশা।”
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান সরকারকে দুর্নীতি দমন কাঠামো সংস্কারে দ্রুত ও দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
শহীদ পরিবারের প্রত্যাশা: সংস্কার নিশ্চিত হোক
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার জানান, যত শহীদ পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা সবাই বলেছে সংস্কার বাস্তবায়ন না হলে তাদের প্রিয়জনদের ত্যাগ বৃথা যাবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সরকার জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের যাত্রা ও অগ্রগতি
চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। দীর্ঘ আলোচনার পর রাজনৈতিক দল, বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের মতামতের ভিত্তিতে ‘জুলাই জাতীয় সনদ–২০২৫’ প্রণয়ন করা হয়।
গত ১৭ অক্টোবর ঐতিহাসিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ ২৪টি রাজনৈতিক দল ও জোট সনদে স্বাক্ষর করে। দুই দিন পর, ১৯ অক্টোবর গণফোরামও আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষর করে। কমিশনের আশা, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া স্পষ্ট হলে এনসিপিসহ বাকি দলগুলোও সনদে স্বাক্ষর করবে।
ইতিহাসের পথে নতুন অধ্যায়
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে বলেন, “এই সনদ কেবল রাজনৈতিক চুক্তি নয়, এটি ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র কাঠামোর ভিত্তি স্থাপনের দলিল।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জাতি এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। এই সংস্কার সফল হলে বাংলাদেশ নতুন ইতিহাসের সূচনা করবে।”
ঢাকা/এএএম/ইভা