ব্যাটিং শোধরানোর চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের
Published: 28th, October 2025 GMT
ভালো শুরুর পর হুট করেই ছন্দ হারানো। এরপর পথ হারিয়ে এলোমেলো হয়ে যাওয়া। আলোর দিশাও খুঁজে না পাওয়া। সবশেষে বিষাদময় সমাপ্তি। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশের ব্যাটিং চিত্রগুলো প্রায় দিন একই রকম। দুয়েকটি দিন ভালো ক্রিকেট বাদে ব্যাটিংয়ে হাপিত্যেশ সময় কাটাতে হয় বাংলাদেশকে। ব্যাটসম্যানরা যখন ভালো করেন তখন আবার রেকর্ডের পাতা ঘাঁটাঘাঁটি করা লাগে।
কিন্তু সেই সময় সুখের দিন বর্তমান সময়ে কালেভদ্রে কমই আসছে। ব্যাটিং শোধরানে এখন সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের। চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বাজেভাবে হারের পর অধিনায়ক লিটনের কাঠগড়ায় দাঁড় হয়েছেন ব্যাটসম্যানরা।
বিশেষ করে মিডল অর্ডারে শামীমের ব্যাখ্যাতীত শটে আউট হওয়ায় চরম মাত্রায় বিরক্ত লিটন। সচরাচর পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে অধিনায়ক নির্দিষ্ট কাউকে উদ্দেশ্য করে কোনো বার্তা দেন না কিংবা খারাপ করলে তেমন সমালোচনা করেন না। কিন্তু গতকাল চট্টগ্রামে ম্যাচ হারের পর সঞ্চালকের ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই লিটন কোনো রাগডাক না রেখেই শামীমকে নিয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন এভাবে, “শামীম হোসেনের ব্যাটিং দেখে আমি খুবই হতাশ। এটা (ব্যাটিং) নিয়ে ভাবতে হবে ওকে; সবসময় শুধু এসেই ব্যাটিং উপভোগ করতে পারবেন না, দায়িত্ব নিতে হবে।”
সিরিজ বাঁচিয়ে রাখার লক্ষ্যে বুধবার দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। যে ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ব্যাটিংয়ে ভুল শুধরানো। আগের রাতে ম্যাচ খেলে আজ সারাদিন বিশ্রামে কাটিয়েছেন ক্রিকেটাররা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে কিছুদিন আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। যেই সিরিজেও ব্যাটিং একদমই ভালো হয়নি। প্রতিটি ম্যাচই শেষ মুহূর্তে গিয়ে জিতে বাংলাদেশ সিরিজ জিতেছে। কিন্তু সব সময়ই শেষেও ভালো হবে সেই নিশ্চয়তা নেই। যেমনটা গতকাল হয়েছিল সাগর পাড়ের স্টেডিয়ামে। ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বের ঘাটতি আছে, নিবেদনে কমতি আছে বলে মনে করছেন সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান।
রাইজিংবিডিকে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘‘আমরা নিয়মিতই ব্যাটিং খারাপ করছি। অথচ ব্যাটিংয়ে গভীরে গিয়ে কাজ করবে এমন কাউকে আমরা নিয়োগ দিচ্ছি না। তাতে তো ক্ষতিটা ব্যাটসম্যানদের আরো বেশি হচ্ছে। তারা যতক্ষণ না পর্যন্ত সুক্ষ্ম বিষয়গুলো ধরতে পারবে ততক্ষণ এই ব্যর্থতার মোড়কে আটকে থাকবে।”
এছাড়া ব্যাটসম্যানদেরও শেখার তাড়নার ঘাটতি থাকতে পারে বলে অনুভব হচ্ছে আকরামের, “একই ভুল তারা বারবার করছেন। মনে হচ্ছে, আগের ভুলগুলো শুধরানোর কোনো কাজই তারা করেননি। অথচ তাদের নিজেরও নিজেদের ব্যাটিং নিয়ে গভীরভাবে কাজ করা উচিত। সব বিসিবি দেবে, সব বিসিবি করবে সেই আশায় বসে থাকলে কিন্তু সীমাবদ্ধতার ভেতরে আটকে যাবে।”
সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল মনে করছেন, ব্যাটসম্যানরা খারাপ সময় কাটাচ্ছেন কিন্তু তাদের নিয়ে কাজ করা হচ্ছে না। সেজন্য মাঠে গিয়ে বারবার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাদেরকে। আশরাফুল বলেছেন, “বারবারই মনে হচ্ছে তারা উইকেট গিফট করে আসছে যেটা আসলে মেনে নেওয়া কঠিন। এটা আসলে প্রায়ই হচ্ছে। শামীম যেটা শেষ ম্যাচে করেছে সেটা কোনো ব্যাটসম্যানের পক্ষে করা কঠিন। তবুও হয়েছে। আসলে ক্রিকেটে খারাপ দিন যায়, ভালো দিন আসে। কিন্তু আমাদের খারাপ দিনটাই নিয়মিত আসছে ব্যাটিংয়ে। আশা করছি একটা ভালো ব্যাটিং দুয়েক দিনের মধ্যেই ভালো হবে।”
এই সিরিজের আগে লিটন বলেছিলেন, তারাও চান বিশ্বকাপের আগে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে। প্রথম ম্যাচেই ক্যারিবীয়ানদের চ্যালেঞ্জে মুখ থুবড়ে পড়েছে ব্যাটিং। ২৪ ঘণ্টারও কম সময় পর দ্বিতীয় ম্যাচ। এবার কী ভুল শুধরাতে পারবে লিটন অ্যান্ড কোং?
চট্টগ্রাম/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ওসমান হাদির ওপর হামলায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি নাগরিক কোয়ালিশনের
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত সবাইকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানিয়েছে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো সংস্কারে নাগরিক উদ্যোগ নাগরিক কোয়ালিশন।
আজ শনিবার সংগঠনটি এক বিবৃতিতে এই দাবি জানায়।
ওসমান হাদির ওপর দুর্বৃত্তের গুলির ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ জানিয়ে বিবৃতিতে নাগরিক কোয়ালিশন বলেছে, এ ঘটনা পরিকল্পিত এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠন প্রক্রিয়ার ওপর সরাসরি আঘাত। ওসমান হাদির ওপর আক্রমণ বাংলাদেশের নাগরিক জীবনে ও রাজনীতিক প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত ভয়ংকর ঘটনা। রাজনৈতিক ও সামাজিক পর্যায়ে প্রভাবশালী শীর্ষ নেতাদের ওপর এ ধরনের ‘অ্যাসাসিনেশন’ প্রচেষ্টা রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে যেমন ব্যাহত করে, একই ভাবে দেশের সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিতে পারে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নাগরিক কোয়ালিশন মনে করে, এই আক্রমণ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ওসমান হাদির মতো আরও অনেক সামনের সারির তরুণ-তরুণী জুলাই যোদ্ধাদের জীবন কী পরিমাণ ঝুঁকিতে আছে! রাষ্ট্র জুলাই যোদ্ধাদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে বলে সংগঠনটি মনে করে না।
এই পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনটি সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি কাঠামো তৈরি করে জুলাই আন্দোলনের নেতাদের বিশেষ সুরক্ষা প্রদান করতে রাষ্ট্র জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত এক বছরে শতাধিক রাজনৈতিক কর্মী হত্যার ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অধিকাংশ ক্ষেত্রে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত ও আইনের আওতায় আনার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। এতে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দক্ষতা, নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠেছে।
নাগরিক কোয়ালিশন আরও বলেছে, প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুলিশ ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের আইনি ও প্রশাসনিক সংস্কারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এই পরিস্থিতিতে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের জাতীয় নির্বাচন কতটা শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ হবে, তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। নাগরিক সমাজ সরকারকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য এবং প্রত্যেক নাগরিককে নিরাপদে ভোট প্রদানের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ওসমান হাদির দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চিকিৎসাধীন ওসমান হাদির জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের চিকিৎসা সহায়তার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তা নিশ্চিত করার আহবান জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এ রকম মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সে জন্য সরকারসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে বিবৃতিতে।