এক জালে ধরা পড়ল ৬০ মণ ইলিশ, বিক্রি সাড়ে ১৪ লাখ টাকায়
Published: 28th, October 2025 GMT
অন্যান্য দিনের মতোই আজ মঙ্গলবার দুপুরে নদীতে জাল ফেলেছিলেন পাঁচ জেলে। তবে দিনটা ছিল ব্যতিক্রম। নদী থেকে জাল তুলতেই তাঁরা দেখেন ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। ওজনে যা পুরো ৬০ মণ।
আজ সন্ধ্যায় কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীতে এ ঘটনা ঘটে। যে জালটিতে মাছ ধরা পড়েছে, এটি ছিল জেলে মোহাম্মদ ঈমান হোসেনের। তিনি টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা। ধরা পড়া এসব ইলিশ স্থানীয় কায়ুকখালীয়া বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে দাম পড়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টাকা।
স্থানীয় জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জালটি ১০০ থেকে ১৫০ ফুট লম্বা ছিল। সাগরে জোয়ার শুরু হলে পাঁচজন মাঝি মিলে নৌকা দিয়ে নাফ নদীতে জালটি ফেলে আসেন। এরপর সন্ধ্যার দিকে ভাটা শুরু হলে জাল তোলার কাজ শুরু হয়। দুই পাশে ১২ জন জেলে কোমরে রশি বেঁধে এ জাল টেনে পাড়ে তোলেন। সেখান থেকে বিভিন্ন বাহনে মাছ ফিশারিঘাটে নিয়েছেন তাঁরা।
টেকনাফের কায়ুকখালীয়া খালের হাকিম ফিশারিজের পরিচালক মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দুপুরে জাল ফেলার পর সন্ধ্যায় তোলা হয়। এরপর স্থানীয় বাজারে আনা হয় মাছগুলো। প্রতিটি ইলিশ মাছের ওজন ছিল ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম। স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ মাছগুলো কিনেছেন।
পরে ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ বলেন, প্রতি কেজি ইলিশ তিনি ৬০০ টাকায় কিনেছেন। সব মিলিয়ে দাম দিয়েছেন ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এরপর এসব ইলিশ তিনি বরফ দিয়ে রেখেছেন। আগামীকাল এসব চট্টগ্রামে পাঠানো হবে। সেখানে ভালো দামে বিক্রি করবেন বলে তাঁর আশা।
জানতে চাইলে উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুর সাফারি পার্কে দুটি শাবকের জন্ম দিল দুই নীলগাই
মায়ের ছায়ায় ছায়ায় ঘুরে বেড়ায়। বাদামি রঙের রোমশ শরীর। স্বভাবে চনমনে। কিছুটা গরুর বাছুরের মতো দেখতে, তবে মুখাবয়ব লম্বাটে। দুটি নীলগাইয়ের শাবক তারা। শাবক দুটি মায়েদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছে বনজুড়ে। পাঁচ-ছয় দিন ধরে গাজীপুর সাফারি পার্কের কোর সাফারি এলাকায় বনের ভেতর তাদের দেখা মিলছে। মানুষের ছায়া দেখলেও শাবকদের নিয়ে দৌড়ে বনের অন্য প্রান্তে ছুটে যাচ্ছে মায়েরা।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২১ অক্টোবর প্রথমবার তারা শাবক দুটি দেখতে পায়। এরপর প্রতিদিন খাবার খেতে এলে নির্দিষ্ট স্থানে তাদের দেখা মিলছে। তবে শাবক দুটি স্ত্রী না পুরুষ, তা জানা যায়নি। নিরাপত্তার কারণে কাছাকাছি গিয়ে তা নির্ধারণের চেষ্টাও করেনি কর্তৃপক্ষ।
পার্কের বন্য প্রাণী পরিদর্শক মো. রাজু আহমেদ জানান, আগেও কয়েকবার সেখানে নীলগাই শাবক জন্ম দিয়েছে। সর্বশেষ দুটি শাবকসহ এখন নীলগাইয়ের পালে সদস্যসংখ্যা ১১। এর মধ্যে পূর্ণবয়স্ক ৯টি। এর মধ্যে ছয়টি পুরুষ ও তিনটি স্ত্রী নীলগাই।
আজ সোমবার দুপুরে পর্যটক বাসে চড়ে কোর সাফারির মূল ফটক পেরিয়ে বেশ কিছুটা ভেতরে গিয়ে দূর থেকে দেখা মেলে দুটি পূর্ণবয়স্ক মা নীলগাইয়ের। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের পাশে দেখা যায় শাবক দুটিকে। পর্যটক বাস দেখে অভ্যস্ত হওয়ায় তারা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে বনের ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মা নীলগাই দুটি বনের পাশের খোলা জায়গায় নেমে আসে। নেমে আসে দুটি শাবকও। মাঝেমধ্যে মায়ের দুধ পান করছিল তারা। আবার হেঁটে বেড়াচ্ছে। কিছুদূর গিয়ে হঠাৎ দৌড়ে বনের ভেতর শাবক নিয়ে লুকিয়ে পড়ে মা দুটি। আবার বনের অন্য প্রান্তে দেখা যায় তাদের। পুরো সময় ধরে শাবক দুটি মায়ের কাছাকাছি অবস্থান করছিল।
পার্কের বন্য প্রাণী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, নীলগাই সাধারণত শাবকের বিষয়ে সতর্ক থাকে। তারা শাবকের নিরাপত্তায় অনেক সময় কিছু না খেয়ে দীর্ঘ সময় তাদের নিরাপত্তা দিতে থাকে। এ জন্য এদের শাবক দেখার সুযোগ কম হয়। পার্কে সম্প্রতি জন্ম নেওয়া শাবকগুলো একটু পরিণত হওয়ায় মায়েরা তাদের নিয়ে বাইরে আসা শুরু করেছে। নীলগাই সাধারণত একসঙ্গে একটি থেকে তিনটি শাবকের জন্ম দেয়। জন্মের পর প্রায় ছয় মাস ধরে বাচ্চাগুলো দুধ পান করে। এরপর তারা মায়েদের সঙ্গে অন্যান্য খাবার খাওয়ায় অভ্যস্ত হতে থাকে। অ্যান্টিলোপ প্রজাতির মধ্যে নীলগাই সবচেয়ে বড় প্রাণী। পুরুষ নীলগাইয়ের শিং থাকে। এদের গায়ের রং হয় কিছুটা কালচে। একই প্রজাতির স্ত্রীদের ক্ষেত্রে শিং থাকে না। স্ত্রী নীলগাইয়ের রং হয় কিছুটা বাদামি। এরা প্রাপ্তবয়স্ক হয় দুই বছরে। পুরুষ প্রাপ্তবয়স্ক হতে সময় নেয় পাঁচ বছর।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, একসময় বাংলাদেশের প্রকৃতিতে এই প্রাণী দেখা যেত। কিন্তু পরিবেশগত বিভিন্ন কারণে ১৯৪০ সালের পর থেকে এ দেশের বনাঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রাণীটিকে আর দেখা যায়নি। তাই নীলগাইকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। তবে বিভিন্ন সময় বিক্ষিপ্তভাবে ভারত সীমান্ত এলাকার বাংলাদেশ অংশে বেশ কিছু নীলগাই স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে ধরা পড়েছে। এরপর সেগুলোকে সাফারি পার্কে এনে রাখা হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে উদ্ধার হওয়া একটি স্ত্রী নীলগাইকে প্রথমে গাজীপুর সাফারি পার্কে আনা হয়। পরে দিনাজপুরের রামসাগর জাতীয় উদ্যান থেকে আনা হয় একটি পুরুষ নীলগাই। এই দুটি নীলগাই ভারতীয় বনাঞ্চল থেকে বাংলাদেশে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। সাফারি পার্কে আসার পর দুটি নীলগাই থেকে পর্যায়ক্রমে শাবক পাওয়া গেছে।
গাজীপুর সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তারেক রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গাজীপুর সাফারি পার্কে নীলগাই নিয়মিত শাবকের জন্ম দিচ্ছে। পার্কের উন্মুক্ত ও উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত হওয়ায় বংশবিস্তার ঘটছে।