Prothomalo:
2025-12-13@08:14:37 GMT

সুপারিশে অসংগতি দেখছে বিএনপি

Published: 29th, October 2025 GMT

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ জমা দিয়েছে, তাতে অনেকগুলো অসংগতি দেখছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, ঐকমত্য কমিশনে আলোচিত হয়নি বা ঐকমত্য হয়নি, এমন বিষয়ও এতে সংযুক্ত করা হয়েছে। সুপারিশমালার সঙ্গে দেওয়া সংযুক্তিতে ভিন্নমতের কোনো উল্লেখ নেই।

এই বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ পৃথকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

এর মধ্যে সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল বিকেলে সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার বদলে জাতীয় অনৈক্য প্রতিষ্ঠার একটা প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, যে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করেছে, সেই স্বাক্ষরিত সনদবহির্ভূত অনেক পরামর্শ বা সুপারিশ, সনদ বাস্তবায়নের আদেশের খসড়ায় যুক্ত করা হয়েছে।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গণভোট আয়োজনের বিষয়ে কমিশনের সুপারিশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বা নির্বাচনের দিন অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে।

এই বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, হয়তোবা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমস্যাটা নিয়ে আবার আলোচনা হতে পারে। এখানে একটা নতুন বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে যে সংবিধান সংস্কার পরিষদের নামে একটা আইডিয়া এখানে সংযুক্ত করা হয়েছে। যেটা আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে কখনো টেবিলে ছিল না, আলোচিত হয়নি। এ বিষয়ে কোনো ঐকমত্য হয়নি।

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় দলের পক্ষ থেকে নেতৃত্বদানকারী বিএনপির এই নেতা বলেন, আসন্ন যে নির্বাচনটা হবে, সেই নির্বাচনটা হবে জাতীয় সংসদের নির্বাচন। জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যগণ নির্বাচিত হবেন। এখন সেই সংসদ সদস্যদের যদি সংবিধান সংস্কার পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়, সেটা তো জাতীয় সংসদেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন জাতীয় সংসদে কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা তো আলোচিত হয়নি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ের কোনো সুপারিশ বা এ বিষয়ে কোনো আলোচনা না হওয়ার পরও এই সুপারিশমালার মধ্যে হঠাৎ করে যে পরবর্তী জাতীয় সংসদ একই সঙ্গে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করবে, উনারা এই সিদ্ধান্তটা আরোপ করতে পারেন না। চাপিয়ে দিতে পারেন না।’

ঐকমত্যের বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্তের সুযোগ নেই

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট অনুষ্ঠানের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির অব্যবহিত পর অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে যথোপযুক্ত সময়ে অথবা ওই নির্বাচনের দিন এই আদেশ অনুসারে গণভোট অনুষ্ঠান করা হইবে।’

এই বিষয়ে গতকাল বিকেলে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির অবস্থান ছিল যে গণভোট আর নির্বাচন একই দিনে হবে দুটো ব্যালটের মাধ্যমে। এই ব্যাপারে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনের দিন দুইটা ব্যালটের মাধ্যমে গণভোট হবে।

আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের অনেকগুলো রেকমেন্ডেশন (সুপারিশ) ছিল, যেগুলো ঐকমত্যে আসে নাই।.

..কিছু ঐকমত্যের পরিপ্রেক্ষিতে সমাধান হতে হবে, ঐকমত্যের বাইরে গিয়ে কে কী বলছে; কে কী রেকমেন্ড করছে, এটা তাদের ব্যাপার। আমাদের সেখানে কোনো অসুবিধা নাই। কিন্তু ঐকমত্যের বাইরে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। যেহেতু বিএনপি এখানে ঐকমত্য পোষণ করে না, সেদিকে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।’

উচ্চকক্ষের প্রতিনিধি নির্বাচন প্রসঙ্গে

সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ ৮৪টি দফা সম্ভবত, সেখানে বিভিন্ন দফায় আমাদের এবং বিভিন্ন দলের কিছু ভিন্নমত আছে। বিস্ময়করভাবে আজকে যে সংযুক্তিগুলো দেওয়া হলো সুপারিশমালার সঙ্গে, সেখানে এই ভিন্নমতের (নোট অব ডিসেন্ট) কোনো উল্লেখ নেই।’

গণভোটে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে রায় এলে যে প্রক্রিয়ায় এই সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেই ভিন্নমতসহ সেটি বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্য থাকবে বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। কিন্তু জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশে ভিন্নতা দেখছেন উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যে প্রশ্নগুলো আমি দেখলাম, এখানে বলা হয়েছে আপার হাউসে অর্থাৎ উচ্চকক্ষে নিম্নকক্ষের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে আসনের মধ্য দিয়ে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। এই রকম তো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত হয়েছে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে ১০০ সদস্যের এবং তারা কীভাবে কোন পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবে, সেটার ব্যাপারে তো ঐকমত্য হয়নি।’

উচ্চকক্ষের এখতিয়ার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বলা আছে যে অর্থবিল এবং আস্থা বিল বাদে, আস্থা ভোট বাদে সব বিষয় উচ্চকক্ষে উত্থাপন করা হবে। এখানেও কর্মপরিধি কার্যপরিধি-সংক্রান্ত নোট অব ডিসেন্ট আছে যে উচ্চকক্ষ যেহেতু নির্বাচিত নয় সরাসরি সে ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনীসহ অন্যান্য বিষয় তাঁরা বিবেচনা করতে পারেন না। জনগণের সরাসরি নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কারও নেই। এই বিষয়গুলো আলোচিত হওয়ার পরেও নোট অব ডিসেন্ট থাকার পরেও তাঁরা সরাসরি এই আদেশের সংযুক্তিতে রেখেছেন। এগুলো কোনোভাবে বিবেচনা করা যায় না।’

‘অটো পাসের’ মতো বিষয় সংবিধানে থাকতে পারে না

আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে গণভোটে পাস হওয়া প্রস্তাবগুলো অনুমোদন না করলে এগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে বলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ করেছে, তার কঠোর সমালোচনা করেছেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এটা একটা হাস্যকর ব্যাপার। সংবিধানের কোনো বিষয় সংশোধিত হওয়ার পরে এটা একটা আইন। সেই আইনটা পার্লামেন্টে যথাযথভাবে পাস হওয়ার পরে যখন স্পিকার সই করে রাষ্ট্রপতির কাছে দেবেন, রাষ্ট্রপতি সই হওয়ার পরে সেটা তখন আইনে পরিণত হবে। সেটা সংবিধান সংশোধন হোক বা অন্য আইন, ...পরীক্ষায় অটো পাসের মতো কোনো বিষয় তো সংবিধানে থাকতে পারে না। এগুলো কীভাবে সুপারিশে এল, আমি জানি না।’

এই আইনগুলো সংশোধনের ক্ষেত্রে এবং সুপারিশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত বলে মন্তব্য করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আরও অনেক বিষয় আছে। এখানে কয়েক শ পৃষ্ঠার সংযুক্তি আছে। এগুলো দেখে আমরা খুব শিগগির কালকে অথবা তার পরের দিন বিস্তারিত কথা বলব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ জ ল ই জ ত য় সনদ ঐকমত য র হওয় র পর য ক ত কর ব এনপ র আল চ ত দ বল ন অন ষ ঠ উল ল খ সদস য গণভ ট ত হয়ন

এছাড়াও পড়ুন:

আওয়ামী লীগের ভোট পেতে একটি দল তাদের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না: সালাহউদ্দিন আহমদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘একটি দল আওয়ামী লীগের ভোট প্রাপ্তির জন্য আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না।’

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন। বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, মিরপুর বাঙলা কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, তিতুমীর কলেজ, ঢাকার বিভিন্ন ইউনিটের নারীনেত্রী এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ও বর্তমান নেতারা অংশ নেন।

একটি দলকে ইঙ্গিত করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ইনিয়ে-বিনিয়ে বলছে যে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল। আমরা মাঝেমধ্যে জিজ্ঞাসা করি, সেই মুক্তিযুদ্ধ কি পাকিস্তানের পক্ষে ছিল? জনগণের সামনে কিছুদিন পরে তারা হয়তো বলবে যে তারাই একমাত্র মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, আমরা করিনি। এ রকম অনেক বক্তব্য আপনারা ভোটের ময়দানে শুনতে পাবেন। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ অনেক সচেতন। এখন আর ধর্মের বিড়ি বিক্রি করে বাংলাদেশের জনগণের সামনে ভোট চাওয়া যাবে না। তারপরও আমাদের মাঠে–ময়দানে পরিকল্পনা নিয়ে যেতে হবে।’

আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘যারা নিজের দেশের নাগরিককে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা করেছে, নারী–শিশুনির্বিশেষে শতসহস্র মানুষকে হত্যা করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, এই ইতিহাস যেন আমরা ভুলে না যাই।’

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত ‘শ্বেতপত্র’–এর কথা উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ যে পরিমাণ টাকা তছরুপ করেছে, সেটা দিয়ে বাংলাদেশের দুটি শিক্ষা বাজেট করা যায়। তিনটি স্বাস্থ্য বাজেট করা যায়। ব্যাংকিং ও নন–ব্যাংকিং ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর থেকে যে লুটপাট হয়েছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় যে ঋণ দেওয়া হয়েছে, যেটি তছরুপ হয়েছে, সেটা দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। ১৪টি মেট্রো সিস্টেম নির্মাণ করা যেত। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে ব্যাংকিং লুটপাটের মধ্য দিয়ে, সেটা বিলিয়ন ডলারে না বলে অঙ্কে বোধ হয় ২৯ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা প্রসঙ্গেও অনুষ্ঠানে কথা বলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক যাত্রাকে বিভিন্নভাবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য গণতন্ত্রের উত্তরণ হতে হবে। সেই গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি সফল ঘোষণা গতকাল হয়েছে, যেটাকে আমরা তফসিল বলছি, নির্বাচনী তফসিল।’

কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘কেউ কেউ বলেছে নো পিআর, নো ইলেকশন। কেউ কেউ বলেছে আগে স্থানীয় সরকার ইলেকশন, না হলে নো ইলেকশন। আর কেউ কেউ বলেছে একই দিনে গণভোট আর নির্বাচন হলে আমরা মানি না। আমি কারও নাম নিতে চাই না। তারা গণতন্ত্রের বিপক্ষের শিবির। তারা নিজেদের মতো করে গণতন্ত্র চায়। তাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা আলাদা।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আওয়ামী লীগের ভোট পেতে একটি দল তাদের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • মর্গ্যান গার্লস স্কুলে পরীক্ষাকালীন সময়ে জামায়াত প্রার্থীর সভা,  ক্ষোভ
  • ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের পদত্যাগের চান মুঠোফোন ব্যবসায়ীরা, সার্ক ফোয়ারা মোড় অবরোধ