‘সবজি কিনতেই জীবন শেষ, মাছ-মাংসের চিন্তা করার সাহসই পাই না’
Published: 21st, October 2025 GMT
শারীরিক প্রতিবন্ধী আবদুল হামিদের (৬৫) সংসারে তিনি আর তাঁর স্ত্রী। ছোট্ট একটি বসতভিটাই তাঁদের একমাত্র সম্বল। ভিক্ষাবৃত্তিতেই চলে সংসার। মাস শেষে হাতে আসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। আজ মঙ্গলবার ভোরে ঘর থেকে বের হয়েছিলেন হামিদ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রোদে আর প্রচণ্ড গরমে ঘুরে পেয়েছেন ২০০ টাকা। সেই টাকা নিয়েই পা বাড়ান বাজারের দিকে। কিনেছেন ২৫০ গ্রাম রসুন, একটি লাউ, কিছু আলু আর কয়েক আঁটি শাক। এতেই শেষ হয়ে যায় তাঁর দিনের সম্বল। মাছ-মাংসের দোকানের দিকে একবার তাকিয়েছিলেন বটে, কিন্তু পা বাড়াতে পারেননি। চোখে ছিল কেবল অসহায় এক দীর্ঘশ্বাস। শাকসবজি হাতে ধীরে ধীরে ফিরে যাচ্ছিলেন বাড়ির পথে।
আজ দুপুর ১২টার দিকে জামালপুর শহরের সকাল বাজারে কথা হয় আবদুল হামিদের সঙ্গে। তাঁর বাড়ি ইসলামপুর উপজেলার কলাবান্দা এলাকায়। শরীর ভালো থাকলে তিনি প্রতিদিন জামালপুর শহরে ভিক্ষা করতে আসেন। তাঁর এক ছেলে ও দুই মেয়ে। সবার বিয়ে হয়ে গেছে। একমাত্র ছেলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকেন, কিন্তু মা–বাবার খোঁজখবর রাখেন না। একসময় রিকশা চালাতেন হামিদ। কিন্তু পায়ের সমস্যার কারণে এখন আর পারেন না। তাই ভিক্ষা করেই কোনো রকমে স্ত্রীকে নিয়ে দিন কাটান।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘বাজারে জিনিসপত্রের দাম শুনি মাথা ঘুরি যায়। কত কষ্ট করে কইটা ট্যাহা পাই। সেই ট্যাহা নিয়ে বাজারে গেলে কোনোডারই লাগাল পাই না। শাক, আলু আর বেগুনের যে দাম, মাছ-গোশত কিনার সাহস পাইনে। দেহুন ওই সকাল থ্যাইকা যে কইডা ট্যাহা পাইলাম, লাউ, আলু আর শাক কিনতেই শেষ। দুজন মানুষ খাই, তাই চলতি পারছি না।’
জামালপুর শহরের সবচেয়ে বড় সকাল বাজার ঘুরে আজ সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দেখা গেছে, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে, বেগুন ১২০ থেকে ১৪০, আলু ২৫, মরিচ ১৫০ থেকে ১৬০, শসা ৮০ থেকে ১০০, করলা ৮০ থেকে ১০০, টমেটো ১০০ থেকে ১২০, শিম ১৫০ থেকে ১৬০, পেঁপে ২০, পটোল ৫০ থেকে ৬০, বরবটি ১০০, লেবু ৮০, ঢ্যাঁড়স ৬৫, বিভিন্ন শাক ৪০ এবং মিষ্টিকুমড়া ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাউ প্রতিটি ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শহরের শফি মিয়ার বাজার, বানিয়া বাজার, ফৌজদারি মোড় বাজার ও বউ বাজারেও প্রায় একই দামে এসব শাকসবজি বিক্রি হচ্ছে।
সবজির চড়া দামে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। আজ মঙ্গলবার.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে ফেরত পাঠানো হলো অন্তঃসত্ত্বা সোনালী বিবি ও তাঁর শিশুসন্তানকে
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ‘পুশ ইন’ করার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আটক অন্তঃসত্ত্বা নারী সোনালী বিবি ও তাঁর শিশুসন্তানকে ভারতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সোনামসজিদ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়। তবে সোনালী বিবির স্বামীকে ফেরত নেয়নি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
এর আগে গত ২৬ সেপ্টেম্বর এক রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে চার সপ্তাহের মধ্যে সোনালী বিবিদের ভারতে ফিরিয়ে নেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্ট।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলা থেকে কাজের সন্ধানে সোনালী বিবি ও তাঁর পরিবার দিল্লি গিয়েছিল। গত জুন মাসে বাংলাদেশি সন্দেহে তাঁদের ধরা হয়। তারপর সীমান্ত দিয়ে জোর করে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়। গত ২০ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের আলীনগর থেকে সোনালী বিবি, তাঁর স্বামী, সন্তানসহ ভারতের ছয় নাগরিককে আটক করে পুলিশ। ওই ছয় ভারতীয় নাগরিক হলেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূম জেলার ধিতোরা গ্রামের দানিশ শেখ (২৮), তাঁর স্ত্রী সোনালী বিবি (২৬), তাঁদের ৮ বছর বয়সী ছেলে এবং সুইটি বিবি (৩৩) ও তাঁর ১৬ ও ৬ বছর বয়সী ছেলে। তাঁদের মধ্যে সোনালী বিবি অন্তঃসত্ত্বা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজু আহমেদ জানান, ওই ছয়জনের মধ্যে সোনালী বিবির স্বামী দানিস শেখসহ বাকি চারজনকে ফেরত নেয়নি বিএসএফ।
বিজিবির মহানন্দা ব্যাটালিয়নের (৫৯ বিজিবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ আইসিপিতে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে পুশ ইনের শিকার অন্তঃসত্ত্বা ভারতীয় নারী সোনালী খাতুন ও তাঁর ৮ বছরের সন্তানকে সুস্থ ও নিরাপদ অবস্থায় বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় মহানন্দা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত ছিলেন।
হস্তান্তর শেষে মহানন্দা ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক সাংবাদিকদের বলেন, বিএসএফের এই অমানবিক পুশ ইন কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড এবং দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পুশ ইনের এই কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় মানবিক সংকটের সৃষ্টি করছে এবং উভয় দেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার পথে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
২০ আগস্ট ওই ছয় ভারতীয়কে আটকের পর দুটি শিশু ছাড়া বাকি চারজনের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা করে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ১ ডিসেম্বর আদালত ওই চারজনকে জামিন দেন। দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে রাত আটটার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তাঁরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নয়াগোলা এলাকার বাসিন্দা সোনালী বিবির আত্মীয় ফারুক হোসেনের জিম্মায় তাঁদের জামিন দেওয়া হয়। তবে জামিনে মুক্তির দেড় ঘণ্টা পর ওই দিনই রাত সাড়ে নয়টার দিকে তাঁদের হেফাজতে নেয় পুলিশ।
ভারতীয় নাগরিক হওয়ার যাবতীয় প্রমাণ সাপেক্ষে প্রথমে কলকাতা হাইকোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্ট সোনালী বিবিদের ফেরত আনার নির্দেশ দেন। তা সত্ত্বেও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তেমন উদ্যোগী হচ্ছিল না। এ পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার দেশটির প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী মানবিক কারণে সোনালী বিবিদের দ্রুত ফেরত আনার নির্দেশ দেন। গত বুধবার সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সুপ্রিম কোর্টকে কেন্দ্রীয় সরকারের সম্মতির কথা জানান। এরপর আজ শুক্রবার সোনালী বিবি ও তাঁর সন্তানকে ফিরিয়ে নিল ভারত।