বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহালের নির্দেশ–সংবলিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
Published: 3rd, December 2025 GMT
বাগেরহাটে আগের মতো চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করতে নির্দেশ–সংবলিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আজ বুধবার ৬১ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়েছে।
বাগেরহাটে সংসদীয় আসন চারটি থেকে কমিয়ে তিনটি আসন করা-সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেটের বৈধতা নিয়ে করা এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ১০ নভেম্বর হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন।
হাইকোর্টের রায়ে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, সর্বশেষ ২০২২ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে ২০২৩ সালের ১ জুলাই উল্লেখিত গেজেট অনুসারে আগের মতো সংসদীয় আসন নম্বর ৯৫ (বাগেরহাট-১), আসন নম্বর ৯৬ (বাগেরহাট-২), আসন নম্বর ৯৭ (বাগেরহাট-৩) এবং আসন নম্বর ১৯৮ (গাজীপুর-৬) পুনর্বহাল করে গেজেট প্রকাশ করতে নির্দেশ দেওয়া হলো। রায় ও আদেশ গ্রহণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
এর আগে হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পরপরই ওই রায় স্থগিত চেয়ে নির্বাচন কমিশন এবং গাজীপুর-৬ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী মো.
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, রিট আবেদনে সংযুক্ত গত ৪ সেপ্টেম্বরের গেজেট নোটিফিকেশনের (ইসির প্রজ্ঞাপন) সংসদীয় আসন নম্বর ৯৫ (বাগেরহাট-১), আসন নম্বর ৯৬ (বাগেরহাট-২), আসন নম্বর ৯৭ (বাগেরহাট-৩) এবং আসন নম্বর ১৯৮ (গাজীপুর-৬) গঠন–সম্পর্কিত অংশটুকু অবৈধ, আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হলো।
রিট আবেদনকারী পক্ষ জানায়, বাগেরহাটে আগে চারটি আসন ছিল, একটি কমিয়ে গাজীপুরে একটি আসন বাড়ানো হয়েছিল। বাগেরহাট-৪ আসন কেটে গাজীপুর-৬ আসন করা হয়েছিল।
পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি পেয়েছেন বলে জানান রিট আবেদনকারীদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট বাগেরহাটে আগের মতো চারটি সংসদীয় আসন পুনর্বহাল করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গেজেট প্রকাশ করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে হাইকোর্টের রায়ের পরপরই নির্বাচন কমিশনসহ অন্যরা আপিল বিভাগে পৃথক আবেদন করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চেম্বার আদালত এ বিষয়ে পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন। আবেদন দুটি এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এ আবেদনের নিষ্পত্তি না হলে বাগেরহাটের চারটি ও গাজীপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসনে তফসিল ঘোষণা করতে পারবে না নির্বাচন কমিশন।
১৯৬৯ সাল থেকে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল। সে অনুযায়ী বাগেরহাট-১ ছিল চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত; বাগেরহাট-২ ছিল বাগেরহাট সদর-কচুয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত; বাগেরহাট-৩ ছিল রামপাল-মোংলা উপজেলা নিয়ে এবং বাগেরহাট-৪ ছিল মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা উপজেলা নিয়ে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে বাগেরহাটের চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনে নামে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তারা গড়ে তোলে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি এবং হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।
নির্বাচন কমিশন গত ৪ সেপ্টেম্বর এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। এতে চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে বাগেরহাটকে তিন আসনে ভাগ করা হয়। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বাগেরহাট প্রেসক্লাব, বাগেরহাট জেলা বিএনপি, জেলা জামায়াতে ইসলামী, বাগেরহাট জেলা আইনজীবী সমিতি, সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন, বাগেরহাট জেলা ট্রাক ট্যাংকলরি কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বাগেরহাট-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মো. শেখ মাসুদ রানা ওই রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে ১০ নভেম্বর ওই রায় দেওয়া হয়। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় আজ প্রকাশিত হলো।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আপ ল ব ভ গ র ব গ রহ ট ১ আসন থ ক আসন ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশে টিউলিপের কারাদণ্ডের রায়ে যুক্তরাজ্যে কী প্রভাব পড়তে পারে
ঢাকার একটি আদালত আজ পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের একটি মামলার রায়ে যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে দুই বছরের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। এই রায়ের ফলে টিউলিপের এমপি পদ থাকবে কি না বা তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যতে এর প্রভাব পড়বে কি না, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাজ্যের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জন ট্রাসলার প্রথম আলোকে বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশের একটি আদালতের দেওয়া দুই বছরের কারাদণ্ড ভোগ করার প্রয়োজন নেই। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই বা এমন কোনো আইনি বন্দোবস্ত নেই, যেটা এই কারাদণ্ড কার্যকর করবে। তা ছাড়া যুক্তরাজ্যের আদালতগুলো সম্ভাব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, ন্যায়বিচারের মানদণ্ড এবং মানবাধিকার নিয়ে ঝুঁকির বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাজ্যের আদালতগুলো প্রত্যর্পণের যেকোনো অনুরোধ প্রায় নিশ্চিতভাবেই প্রত্যাখ্যান করবেন।
ব্রিটিশ আইনজীবী জন ট্রাসলার বলেন, এমনকি বাংলাদেশ তাঁকে (টিউলিপ) নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করলেও প্রত্যর্পণের জন্য যুক্তরাজ্য তা স্বীকার করতে বাধ্য নয়। এই দণ্ডাদেশ তাঁর যুক্তরাজ্য পার্লামেন্ট সদস্যের পদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ, যুক্তরাজ্যের নির্বাচনী আইনে কেবল যুক্তরাজ্যে ১২ মাস বা তার বেশি মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত হলে এমপি পদ বাতিল বা অযোগ্যতা আরোপ হয়।
আরও পড়ুনটিউলিপের সাজা নিয়ে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে কী বলা হয়েছে৩ ঘণ্টা আগেএই রায়ের ফলে টিউলিপকে কোনো সমস্যায় পড়তে হতে পারে কি না, সে বিষয়ে এই আইনজীবী বলেন, তাঁর একমাত্র বাস্তব ঝুঁকি হলো বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশ যদি ইন্টারপোলের মাধ্যমে ‘রেড নোটিশ’ জারি করাতে পারে, তাহলে কিছু দেশে তাঁর চলাচলে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হলে এ ধরনের নোটিশ চ্যালেঞ্জ করা যায়।